শাহবাগের তারুন্য কি আমাদের চিরচেনা সেই তারুন্য?
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৫:৪৫:৫৮ বিকাল
শাহবাগের গনজাগরন বা জমায়েত যা বলি না কেন এটা এখন বাংলাদেশের একটি বিতর্কিত আলোচিত বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
টানা ৬দিন চল্ল। জনদুর্ভোগের কথা বাদই দিলাম।দুটো হাসপাতালের মুমর্ষ রুগিদের কি করুন পরিনতি?
অবশ্য আমাদেরকে চেতনায় পেয়ে বসেছে! তাই সচেতন সাংবাদিকদের ক্যমেরায় বা পত্রিকার পাতায় সেই জনদুর্ভোগের বা আনলাকিদের কোন খবর নেই।
এটি শাহবাগের তারুন্যের মানবতার প্রকাশ্য দৃশ্য!
দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি এখন মরলে শান্তি পাবেন। ৬৯ এর ছাত্র নেতা বর্তমানে আওমীলীগ নেতা তোফায়েল সাহেব বলেছেন তিনি এখন তৃপ্ত।তিনি মারা গেলে ও পরম শান্তি পাবেন।
মানুষ স্বাভাবিক ই মরতে চায় না। কিন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেক টিভি টকশোর বক্তারা পর্যন্ত শাহবাগের নয়ানভিরাম দৃশ্য দেখার পর এই আকাংখা করছেন? আমাদের সিনিয়র কিছু সিটিজেন প্রকাশ্যে জীবনটা সাঙ্গ করতে আশা প্রকাশ করেছেন।
তবে আমরা সবাই মিলে তাদের জন্য দোয়া করতে চাই তারা যেন বেশী দিন ইহকালে অবস্থান করেন। আরো দেশ জাতিকে খেদমত! করার সুযোগ পান।
লাকির নামের শাহবাগের সেই হিরকখন্ড! আহত হলেন। তাকে মেরেছেন তারই বড় ভাই তুল্য নমস্য ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক।
ছাত্র ইউনিয়ন সংবাদ সম্মেলন করবে বলেছিল কিন্তু শাহবাগের প্রধান নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রীর) হস্তক্ষেপে তা বাতিল হয়ে যায়।
স্পীকারের কাছে স্বারক লিপি দেয়া হয়েছে। দাবী গুলোর মধ্যে শুধু আর ফাসি সীমাবদ্ধ নয়।
এখন প্রধান দাবী হয়েছে ইসলামের,মুসলিম সেন্টিমেন্টের গলায় ফাস দিতে হবে।
২০১৩ সালের অগ্নিকন্যা লাকির পরিচয়,প্রাক্তন ছাত্রলীগের নেতা ও বর্তমান স্বাচিব নেতা ইমরানের পরিচয় ইতিমধ্যে জানতে পেরেছে আমজনতা।
সেই পরিচয় জানার পরও আমাদের মিডিয়া এটাকে সার্বজনীন একটা আন্দোলন,গোটা দেশ উথাল,জেগে উঠেছে তরুন প্রজন্ম,২য় ৭১ শুরু হয়েছে ইত্যাদি আবেগী ভাষায় চিত্রিত করছে।আমাদের মিডিয়াকে চেনার বড় সুযোগ তৈরী হয়েছে। যে সমস্ত বিএনপি,জামাতের তাদের সিদ্ধান্ত নেবার সুযোগ তৈরী করে দিয়েছেন আমাদের বর্তমান কিছু অতি উৎসাহী মিডিয়া।
বিএনপির নেত্রী হয়তো নিজের চুল নিজে ছিড়তেছেন।নিজের আপন লোকদের মিডিয়া কিভাবে বিএনপির রাজনীতির কবর রচনা করছেন এটা দেখে। অবশ্য এখন তার করার কিছু নাই।
কয়েকটি জিজ্ঞাসা ও কিছু অভিব্যক্তি -
এক) শাহবাগে যারা একত্রিত হয়েছেন তারা সবাই কি বাংলাদেশের তরুনদের প্রতিনিধিত্ব করেন? ছাত্র ইউনিয়ন, আর ছাত্রলীগ কি একমাত্র বাংলাদেশের তরুন্? দেশের মানুষ তো ছাত্রলীগকে চাপাতিলীগ হিসাবেই জানতো।
ছাত্র দল ছাত্র শিবির সহ দেশের অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের ছাত্র রা কি তরুন প্রজন্ম নয়?
দুই) যে দাবী করা হয়েছে স্পীকারের কাছে সেগুলোর সাথে কি দেশের সবাই একমত। বিএনপি ও জামায়াতের ভোট সংখ্যা হল প্রায় ৪২%। দেশের ৪২% মানুষের মতামত কি শাহবাগে প্রতিফলিত হয়েছে?মিডিয়া কি তার দায়ীত্বশীল ভুমিকা রাখছে।
আমরা তো ইতিপূর্বে ৭৫ (বাকশাল) পূর্ব কিছু মিডিয়ার এ্ই একই ভুমিকা দেখেছিলাম। দেশ কি সত্যি ফ্যসিষ্ট শাসনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে? মাহমুদুর রহমানে ভাবিষ্যৎবানী কি সত্যি হতে যাচ্ছে।
তিন) শাহবাগের ছয়টি দাবি —
১. কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।
কে দিবে?যে সরকারের সহযোগিতায় এই জমায়েত সেই সরকার না আদালত?আদালত কি এর পর সত্যিই মানষিক চাপ,রাজনৈতিক চাপ,সরকার প্রধানের চাপ,একদলীয় সংসদের চাপ, এ সবগুলো অনৈতিক পেশার উপেক্ষা করে সঠিক ন্যায় বিচার করতে পারেব
২. আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদীপক্ষের মতো রাষ্ট্রপক্ষও যাতে সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য আপিল করতে আইন সংশোধন, আপিল বিভাগে সর্বোচ্চ তিন মাসের মামলায় রায় নিশ্চিত ও এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণার বিধান রহিত করা, জামায়াত-শিবিরসহ ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।
রায়ের বাস্তবায়নের সাথে সরকার নিবন্ধিত একটি দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে এটা কি রাজনীতি না অন্য কিছু? আমাদের মিডিয়া এটাকে যেভাবে নিশ্পাপ একটি গনজাগরণ বলতে চাচ্ছে?।আমাদের মিডিয়া কি মহান সাংবাদিকতার এথিক্স মেনে চলছেন। বিবেক কি বলে? মজার ব্যাপার হল যারা দাবী করছেন তাদের বিগত দিনের ভোট প্রাপ্তির হার হল ০.৫%। আর যাদের কে নিষিদ্ধ করার দাবী করা হচ্ছে তাদের বিগত জাতীয় নির্বাচনগুলোতে ভোট প্রাপ্তির হার হল ১০% থেকে ১২%। এটা কোন গনতন্ত্রের স্পিরিট।না এটা সেই থিক থিকে অন্ধকার বাকশালের আওয়াজ।
৩. জামায়াত-শিবিরসহ ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ ও গৃহযুদ্ধের হুমকিদাতা জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা।
শাহবাগে যারা সরাসরি গৃহযুদ্ধের হুমকি দিয়ে বক্তৃতা করলেন তাদের টা কি বিচারের আওয়তায় আনা হবে? না শুধুমাত্র সেই ৭১ এর এক চিমটি চেতনা থাকার কারনে তারা মাফ পেয়ে যাবেন।
৪. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দল, শক্তি, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।
আমাদের শিল্পমন্ত্রী ও তার দল কি এই বিচারের আওতায় আসবে।তিনি তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে দুই কুকুরের কামড়া কামড়ি বলেছিলেন।না তিনি বামপন্থি হওয়ার করনে তাকে এবং তার দলকে মাফ করে দেয়া হবে?
৫. পঁচাত্তরের পরে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন ছেড়ে দেয়া যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার ও আলবদরদের আবার গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
কেন ৭৫ এর পর। ৭৫ এর পূর্বের ৪০ হাজার জাসদ কর্মীদের কি বিচার হবে না। স্বাধীন দেশে যারা (রক্ষি বাহীনি) মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করলো তাদের অপরাধ কি পাকহানাদরদের চাইতে লুঘু?
৬. যুদ্ধাপরাধীদের বিভিন্ন ব্যবসায়ী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা, ফোকাস, রেটিনা কোচিং সেন্টারসহ সব প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ ও তাদের সব ধরনের আয়ের উত্স খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের গণমাধ্যম দিগন্ত টিভি, নয়া দিগন্ত, আমার দেশ, সংগ্রাম, সোনার বাংলা ব্লগসহ নিষিদ্ধ করতে হবে।
এটা কি প্রগতিশীলতার নমুনা?
এটা কি মুক্তবুদ্ধির মানুষদের দাবী?
এটা কি কোন গনতান্ত্রিক মনমানষিকতার চাহিদা হতে পারে। গনমাধ্যম বন্ধ করা হবে এই দাবী আবার গনমাধ্যমের সহাযোগিতায় হচ্ছে।
যে ব্লগাররা শাহবাগে একত্রিত হলেন তারাই আবার তাদের সমগোত্রীয় ব্লগারদেরকে নিশ্চিন্ন করবেন।
এই দাবী তো পশু সমাজ ও কল্পনা করে না। প্রবাদ আছে কাক কাকের গোশত খায় না।কিন্তু বাংলাদেশের তথাকথিত মুক্তবুদ্ধির মানুষগুলো সেই কর্মটি করে দেখাচ্ছে।নিজেদেরকে মুক্তবুদ্ধির মানুষ বলেন আর দাবী হল দানবের মত।
যে ব্যাংকটি বার বার এপ্লাস পায় ব্যাংকিং জগতে।তা বন্ধ করতে হবে? আমার বিশ্বাস যারা দাবী করছেন তাদের মা বাপ ভাই বোনদের মধ্যে অনেকের ই ইসলামী ব্যংকের একাউন্ট আছে।
মিডিয়া দলন,নিপিড়ন,বন্ধ করা এগুলো তো ফ্যসিষ্ট সমাজের চিহ্ন।
তাহলে কি আমার দেশের সেই ঐতিহাসিক রিপোট টা সত্যি।
শাহবাগের জমায়েত ফ্যসিষ্ট মানষিকতার বহিপ্রকাশ।তাই বলতে চাই,
যে তারুন্য দুর্নীতির বিরোদ্ধে কথা বলে না,
যে তারুন্য ধর্ষনের বিরোদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারে না,
যে তারুন্য মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে ভুমিকা পালনে এগিয়ে আসতে পারে না।
সেই তারুন্য কে ঘৃণা করি।
যে তারুন্য ফ্যসিষ্ট শক্তির কামলা খাটে
সেই তারুন্য আমার জাতির অংশ নয়। এই তারুন্যকে ভাড়ায় খাটাচ্ছে দেশ,জাতীর দুশমনেরা। এরা তারুন্যের নামে কলংক। এরা বন্ধা তারুন্য।
সত্যিকার দেশ,জাতি,স্বাধীনতা সার্বভৌমত্তের পাহারাদার যে তরুন তারাই আমাদের গর্ব। তারাই সত্যিকার তারুন্যের প্রতীক। শাহবাগে যারা জড়ীত হয়েছে ওরা আমাদের সেই চিরচেনা তারুন্য নয়।
বিষয়: বিবিধ
১২৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন