কবি মল্লিক ও জেদ্দার ঈদ পূনমিলনী এবং কিছু কষ্টের ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ১১ আগস্ট, ২০১৩, ০৭:০৩:৫৯ সন্ধ্যা
আজ ১০-০৮-২০১৩ তারিখে জেদ্দায় একটি ঈদ পূনমিলনী ও সাংস্কৃতিক সন্ধায় আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলাম। নিজের পরিবারের নতুন মেহমানের আগমনের অপেক্ষায় বাসায় থাকা যখন জরুরী ছিল ঠিক সেই সময়টাতে এ ধরনের প্রোগ্রামে যাওয়া আমার জন্য বেমানান ছিল। আগ্রহটা ছিল আমার বেশী। কারন এ ধরনের প্রোগ্রাম এখন জেদ্দায় হয় না। গত তিন বছর থেকে হয় নাই। যতক্ষন ছিলাম ততক্ষন ভালই লাগলো। বিশেষ মেহমানের বক্তব্য শুনে চলে আসতে হয়েছিল। কারন বাসার অবস্থান কারাটা ছিল অত্যান্ত জরুরী। যাক
জেদ্দার প্রবাসীদের ঈদ পূনমিলনী নিয়ে আমার কিছু অভিযোগ,অভিজ্ঞতা রয়েছে।
জেদ্দাতে প্রথম এ ধরনের একটি প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করি সেটা আজ থেকে প্রায় ১৫ বা ১৬ বছর পূর্বে। জেদ্দার শহরের কিলো ১৪ এর একটি ক্লিনিকের ছাদে। প্রায় ৭০০ দর্শকের উপস্থিতে সেই প্রোগ্রাম হয়েছিল। দর্শক নন্দিত সেই প্রোগ্রামে যাদের সাথে দেখা হয়েছিল তাদের মধ্যে কেউ কেউ আজ দেশে আছেন আবার কেউ কেউ এ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। যারা দুনিয়া থেকে চলে গেছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
সেই অনুষ্ঠানে তিনজনকে মনে হয়েছিল জেদ্দার সাংস্কৃতিক বোদ্ধা বা নেতা। আমার বন্ধু ঢাকার ইঊছুফ খান (বর্তমানে দেশে) ছিল ঐ দিনের নাট্যনুষ্ঠানে প্রধান চরিত্র। গ্রীণ (মেইকআপ) রুমে সবাই অপেক্ষা করছিলেন কয়েকজনের ভাইয়ের। যারা আসার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা। সামান্য দেরীতে সেই ভাইরা আসলেন। আমি এই প্রথম তাদেরকে দেখলাম।
পান্জাবী পরা দেখতে সুদর্শন,চেহারায় গাম্ভীর্যের ছাপ,চলনে বলনে আভিজাত্য - সব মিলিয়ে প্রথম দর্শনে আমি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। একজন ছিলেন জনাব আলতাফ ভাই। যিনি একই সাথে কবি ও ভাল শিল্পী ও ছিলেন। বর্তমানে দেশে আছেন।
আরেকজন ছিলেন যিনি বর্তমানে জেদ্দার বৃহত্তর ইসলামী আন্দোলনের প্রধান ও বাংলাদেশী কমিউনিটি অন্যতম ব্যক্তিত্ব জনাব শাহিদুল ইসলাম। তিনি ঐ অনুষ্ঠানের ধারা ভাষ্য বর্ণনা করেছিলেন। দরাজ গলায় শব্দের ঝংকারে অনুষ্ঠানটি অন্য রকম একটি আবহ তৈরী হয়েছিল।সম্ভবত তিনি একটি গানও গেয়েছিলেন। তবে এই দুজন ই গ্রীণ রুমে বসে গোটা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন।
আমার দেখা জেদ্দাতে সাংস্কৃতিক অংগনের অত্যান্ত পরিচিত এবং সম্ভাবনাময় ব্যক্তিদের মধ্যে যে কয়জন আছেন তাদের মধ্যে এই দুই জনের আবেদন ছিল সবচেয়ে বেশী।
আরো কয়েকজন ভাই আছেন, যারা এখনো আছেন জেদ্দায়, যাদের এখনো সমন্নয় হলে অনেক বড় অনুষ্ঠান করা যায়। এর মধ্যে আপাদমস্তক সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব জনাব আব্দুল্লাহ আলফারুক- সাংস্কৃতি সংগঠক,জনাব আনোয়ার হোসেন মজুমদার - কৌতুক অভিনেতা, জনাব রঈস উদ্দিন- নাট্যকার,জনাব মাওলানা আলমগীর হোসাইন -অভিনেতা ও শিল্পী,জনাব এনায়েত উল্লাহ - নাট্যকার ও সুরকার,জনাব হোসাইন আহমদ - সাইমুম শিল্পী,জনাব আলফু ভাই - অভিনেতা ও আলী আসকর -নাট্যকার প্রমুখ। শুধুমাত্র আলফু ভাই ও আলী আসকর ভাই দেশে অবস্থান করছেন। অতীব দুঃখজনক হল আনোয়ার হোসেন ভাই এখন প্রবাসী মজুমদার হয়ে জেদ্দাতে নির্জন শহরের বাসিন্দা। অর্থ্যাৎ জেদ্দার মুল কমিউনিটির আড়ালে রয়েছেন বর্তমান শক্তিমান ব্লগার প্রবাসী মজুমদার।
মাত্র কিছু দিন আগ পর্যন্তও প্রবাসীরা অপেক্ষা করতো একটি ঈদ পূনমিলনীর। যার পরিকল্পনা,পরিচালনায় হত তিনি জনাব শাহীদুল ইসলাম ভাই। তিনি এখনও আছেন আরো ভাল সামাজিক অবস্থানে। কিন্তু না জানা কারনে জেদ্দা প্রবাসীদের সেই মিলন মেলা আর হয় না।
আমি এত গুলো কথা লিখলাম এজন্য যে, জেদ্দায় একটি বড় আকারে ঈদ পূনমিলনী বা নিয়মিত সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম অথবা বৃহত পরিসরে সকল প্রবাসীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করা মোটেই অসম্ভব নয়।বরং সকল প্রকার কলাকুশলী থাকার পরও কেন হচ্ছে না এটা আমার কাছে একটি রহস্য। রহস্য এই কারনে যে, যাদেরকে জানতাম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বান্ধব বড় মনের মানুষ তারা অনেক বড় কিছু করতে পারতেন। কেন পারেন না, সেটা মস্তুবড় রহস্য।
আরেকটি কারন হতে পারে - সাহিত্য সাংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা সওয়াবের কাজ,বা দ্বীনি কাজ হিসাবে গণ্য হতে পারে এই বিশ্বাসের অভাব - বিশ্বাসী মানুষগুলোর মধ্যে।
আল্লাহই ভাল জানেন এর সুরাহা কীভাবে হতে পারে। বা পরিবর্তন টা আর কত শিক্ষা হবার পর হবে। তবে প্রত্যাশা করি। আশা আকাংখার অপর নাম তো ঈমান। ঈমান হারা হতে চাই না।
শেষ করছি বাংলার শেখ সাদি মরহুম মাওলানা কবি মল্লিক (রঃ) একটি ব্যক্তিগত উপদেশ দিয়ে। তিনি জেদ্দায় ছিলেন বেশ কিছু দিন। আমি তার ব্যক্তিগত খাদেম ছিলাম। অবশ্য এই খেদমতের জন্য কেউ আমাকে দায়িত্ব দেন নি।
দেখা করতে এসে যে দিন দেখলাম রমজান মাসে ইফতারের পূর্বে মাত্র তিন চারটি খাজুর,এক গ্লাস পানি,কয়েকটি পাকোড়া নিয়ে তৃপ্তি সহকারে বসে আছেন একা। অপেক্ষা করছেন আযানের।
এই দৃশ্য দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি বাংলার শেখ সাদি। কারন শেখ সাদি এমনি একটি সফরে গিয়ে এমন এক অবস্থায় পড়েছিলেন। তিক্ততা বাড়াবার প্রয়োজন নাই।
যাক - তিনি আমার দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলেন। পরিচয় নিলেন, জিজ্ঞেস করলেন অনেক কিছু। আমার কাছে মনে হল এই লোকটির মধ্যে সাহাবী কবি হযরত হাস্সান বিন সাবিত (রাঃ) গুনাবলী রয়েছে।
তার পর আমি তার খাদেম হ্ওয়া,কাপড় চোপড় সাফ করা,যে কয়দিন ছিলেন জেদ্দায় তার সার্বক্ষনিক সাথে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। তিনি আমাকে তার একটি প্রিয় তুর্কি টুপি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন অনেক ব্যথা্,বেদনা,অপমান,তুচ্ছ তাচ্ছিল্য,অবমূল্যায়ন,অমর্যাদাকর আস্ফালনের কথা। কিন্তু এই সব কিছুর পর ও তার শপথে ছিলেন অটল। তিনি বলেন - দেখ আল্লাহর রাসূল (সঃ) জীবিত থাকতে আবু বকর,ওমর,ওসমান, আলী বা অন্য যে কোন সাহাবীর জন্য মদীনা মসজিদের মিম্বর ছেড়ে দেন নি। বা রাসূলের মিম্বরে দাড়িয়ে কিছু বলার সুযোগ কোন সাহাবীর হয়নি। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল সাহিত্য চর্চা করার ক্ষেত্রে। রাসূলের প্রিয় কবি হযরত হাস্সান বিন সাবিত কে নিজের মিম্বর ছেড়ে দিয়ে রাসুল (সঃ) দোয়া করতেন হে আল্লাহ জিবরীলের মাধ্যমে সাহায্য করুন হাস্সানকে। মরহুম মল্লিক ভাই ইতিহাসের বিরল এই ঘটনা বলে নিজেকে দাবী করতেন যে, একদিন সময় আসবে যখন ইসলামী আন্দোল তার এনার্জি খরছ করবে এই অঙ্গনে এখন থেকে অনেক বেশী ইনশাআল্লাহ। আজকের জেদ্দার ছোট্ট পরিসরের ঈদ পূনমিলনী অনুষ্ঠানের বিশেষ অথিতি এরকমই প্রত্যাশা করেছেন। আমার বিশ্বাস হয়তো আগামীতে জেদ্দার সকল প্রবাসীর একটি ঈদপূলনী হবে। পলিসি মেকাররা যখন কথা বলেন তখন বিশ্বাসটা আরো বেড়ে যায়। হয়তো আগামীতে ১০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে জেদ্দার ঈদপূনমিলনী হবে।
ঈদপূনমিলনীর সভাপত্বি করেছেন - জনাব আব্দুল্লাহ আল ফারুক উপস্থাপনায় ছিলেন জনাব হোসাইন আহমাদ - বিশেষ অতিথী ছিলেন সর্ব জনাব এ এন সিরাজুল ইসলাম - প্রধান অতিথী ছিলেন - জনাব শাহিদুল ইসলাম।
একটি হোটেলের বল রুমে অনুষ্ঠিত জেদ্দার একমাত্র ঈদ পূনমিলনীতে সর্ব স্থরের প্রবাসীরা অংশ গ্রহন করেছিল।
অনুষ্ঠানের বাড়তি আকর্ষন ছিল - ব্লগার আবু জারীরের একক কৌতুক পরিবেশনা।
বিষয়: বিবিধ
১৫৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন