প্রবাসে আনন্দ বেদনার ঈদ - পর্ব - ১
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ০৯ আগস্ট, ২০১৩, ০৫:২৩:৪৪ বিকাল
এক)
নাম আব্দুল ওয়াহাব। দেশের বাড়ি হল পাকুন্দিয়া। ৯০ এর দশকের অতি আলোচিত মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার পীর মতিউর রহমানের পাশের বাড়ি।ব্যক্তিগত ভাবে তিনি পীর সাহেবের ভক্ত। সউদি আরবে এসেছেন সেই ১৯৯৪ সালে। একটি সবজি ফার্মে চাকরি করনে। এখনো আছেন। তিনি আমার এক সময়ের সহকর্মী। আমাদের ঈদ বলতে ছিল সকাল বেলা ঈদের সালাত আদায় করার পর মেসের সবাই মিলে এক সাথে সেমাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া। এই সম্মিলীত ঈদ নিদ্রা চলে আছর পর্যন্ত। জোহরের নামাজ কাযা। প্রবাসের ঈদ বলতে বিকাল বেলা মার্কেটে গিয়ে বন্ধু বান্ধবদের সাথে সময় কাঠানো। বাড়ির সুখ দু:খ ভাগ করা।
সউদি আরবের ব্যচেলার ঈদ মোটামোটি এই হয়ে থাকে। ফ্যমেলি ওয়ালা প্রবাসীদের ঈদ ব্যচেলারদের চাইতে একটু আনন্দের হয়। এটা টের পেয়েছি যখন আমি নিজে ফ্যমেলি ওয়ালা হয়েছি। তার পর ও দেশে থেকে আপনজন পরিবেষ্টিত হয়ে ঈদ করা আর প্রবাসে ঈদ করার পার্থক্য অনেক। এই কষ্টটা তারাই বুঝবে যারা প্রবাস নামের জেল খানায় আবদ্ধ। আব্দুল ওয়াহাব ভাইর পরিবারের দায়িত্বটা বেড়েছে। তাই তিনি ঈদের দিন ও কাজে যান।তার কাছে ঈদ বলতে বেতনের বাহিরে কিছু বেশী পয়সা আসা। তবে প্রবাসের ঈদের আনন্দ বেদনার আরো কিছু বিষয় রয়েছে।
দুই)
প্রবাসী বলতে সব প্রবাসীর ঈদের প্রসঙ্গ নয় । বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশী বা বাঙ্গালীর পরিচয় প্রবাসী নয়। মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক প্রবাসী আর বিলাতি প্রবাসীরা, উভয় শ্রেনী একরকম নয়।
যদিও উভয় শ্রেনী আপন নীড় থেকে বাহিরে অবস্থান।
তাহলে কেমন করে এক রকম নয়।প্রকারে সমান নয়।সামাজিক সম্মান মর্যাদাও সমান নয়। আবার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকাতায় সমান নয়।
তা প্রথমে পরিস্কার করা প্রয়োজন। কেননা এই কারনটা প্রবাসীদের ঈদ আনন্দ বেদনা, ইত্যাদি ভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
সহজ করে বললে, বলবো মোটা দাগে প্রবাসীরা দুই প্রকার। প্রথম প্রকার হল, মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। যারা আসল বাংলাদেশী প্রবাসী।
আর ২য় প্রকার প্রবাসী হল, বিলাতি প্রবাসী।
আরেক প্রকার প্রবাসী ইদানিং যোগ হয়েছে। তারা হলেন সমাজের উচুস্তরের মহান! মানুষজন। অবশ্য তারা প্রবাসী নয়। বরং বলা যায় তারা বাংলাদেশের জন্য স্বদেশী প্রবাসী।
মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদেরকে সুশীল বান্ধব মিডিয়া সাধারনত বলে থাকে মরু প্রবাসী। আবার নাটকে বা পত্রিকার কলামে এদেরকে চিত্রিত করা হয় মধ্যপ্রাচ্য লেবার প্রবাসী হিসাবে। কিছু সুশীল প্রোডাক্ট বুদ্ধিজীবি আছেন যারা আবার মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের মধ্যে জঙ্গিবাদকে দেখতে পান। মৌলবাদী অর্থনীতিবীদ ডঃ আবুল বারাকাত সাহেব বিরাট গবেষনা করে দেখিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা শতকরা ১৩% অর্থ পাঠায় বাংলাদেশের জঙ্গীদেরকে। অবশ্য এই অর্থনীতিবীদের দৃষ্টিতে জঙ্গি বলতে শুধুমাত্র জামায়াত শিবিরকেই বুঝিয়ে থাকেন। আবার রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় চেয়ারে বসা প্রধানমন্ত্রী একবার বলেই বসলেন,মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা হল জামায়াত বিএনপির ভোটার। মোটামোটি এই হল আমাদের সুশীল সমাজ, মিডিয়া এবং রাষ্ট্র কতৃক চাপিয়ে দেয়া মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরদর পরিচিতি।
তিন)
আমি আগেই বলেছি এই মরু লেবাররা ই হল আসল প্রবাসী। কারন এদের রোজগারের শতভাগ রেমিটেন্স পাঠায় দেশে। তাদের সকল আবেগ,আবেদন,ইচ্ছা,স্বপ্ন,চাওয়া পাওয়া,দু:খ বেদনা - সবকিছুই দেশকে নিয়ে। এর মধ্যে কোন কৃত্রিমতা নেই। নেই কোন অভিনয়।নিখাদ দেশ প্রেম যাকে বলে।
বিপরীত চিত্র হল আমাদের বিলাতি প্রবাসীদের। লন্ডন,আমেরিকা,কানাডা সহ অন্যান্য দেশে অবস্থানরত ভাই বোনদের অবস্থা ভিন্ন রকম।তারা প্রথম বেশ কয়েক বছর চলে যায় সেই সমস্ত দেশের গ্রীন কার্ড সংগ্রহ করতে করতে। এমন ও অনেক ভাই বোন আছেন যারা সাদা চামড়ার দেশে স্থায়ী নিবাস গড়ার জন্য দেশের সকল সম্পত্তি বিক্রি করে সকল টাকা নিয়ে যান।তার পর সেই সমস্ত দেশে নিজেদের সামাজিকতা রক্ষা করতে গিয়ে বছরে কিছু দান দক্ষিণা করেন। এই পর্যন্ত তাদের রেমিটেন্স প্রবাহ। এর যুক্তিসংগত কারন ও রয়েছে। তাদের সকল চিন্তা চেতনা,চেষ্টা তদবির হয় ঐ দেশের স্থায়ী হওয়া।কিন্তু মরু লেবারদের এই চিন্তা করার কোন আইনি সুযোগ,অধিকার নেই।
আগামী পর্বে
বিষয়: বিবিধ
১২৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন