তাকওয়া অর্জনের মাসে আমাদের মন ও মনন এবং করণীয়।পর্ব -৪
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ০৩ আগস্ট, ২০১৩, ০৬:৫৩:৫৬ সন্ধ্যা
৩য় পর্বের পর
হযরত বিলাল (রাঃ) কে জানেনা, এমন মুসলমান হয়তো পৃথিবীতে নেই। তিনি মানব ইতিহাসে নির্যাতিত বনি আদমের সিম্বল। একাডেমিক কেরিয়ার বলতে কিছুই ছিলনা।রাসূল পরিচালিত মদিনা মসজিদের আসসুফফা মারকাজের ছাত্র ছিলেন।নিজের সামাজিক অবস্থান তেমন কিছুই ছিলনা। গোলামীর জীবন থেকে তিনি যে ভাবে ইসলামকে আত্মস্থ করেছিলেন তার তুলনা ইতিহাসে বিরল। তার তুলনা তিনি নিজে।
মক্কার চরম অবহেলীত এক অখ্যাত দাস, ইতিহাসে হয়ে গেলেন সরদারদের সরদার, তথা নেতাদের নেতা। হযরত ওমর (রাঃ) সবসময় বলতেন,সাঈদুনা বিলাল অর্থ্যাৎ আমাদের নেতা বিলাল। হযরত বিলালের বোধ বিশ্বাস আর চেতনা কেমন ছিল তা একটি ঘটনায় প্রকাশ পায়।
ঘটনাটি আমাদের জন্য বড়ই শিক্ষনীয়।বিশেষ করে বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্যাতিত মানুষগুলোর জন্য অনুকরনীয় একটি দৃষ্টান্ত।
রাসূল (সঃ) পরিচালিত ইসলামী আন্দোলনের মক্কি জীবনের ২য় ভাগ। দ্বীনের দ্বায়ীদের তথা সাহাবীদের উপর শারিরীক নির্যাতনের যুগ। মক্কার তাগুত শক্তি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে ভাগ করে নির্যাতন করতো। হযরত বিলাল (রাঃ)কে নির্যাতনের দায়িত্ব পড়ে ওমাইয়া বিন খলফের উপর। নির্যাতনের এমন কোন পন্থা বাদ রাখা হয় নাই যা বিলালের উপর প্রয়োগ করা হয় নাই। কিন্তু পাহাড়ের মত অটল ছিলেন তিনি। নিজের জীবন নিয়ে তিনি কখনো চিন্তুা করেননি।
উত্তপ্ত বালুকার উপর চিত করে শুইয়ে বিলাল (রাঃ) এর বুকের উপর পাথর চাপা দেয়া হত। মক্কার শাহবাগী মার্কা ছেলেদেরকে লেলিয়ে দেয়া হত বিলালকে নির্যাতন করার জন্য। বিলাল (রাঃ) এর পেশা ছিল কামার। উমাইয়া লোহা লাল করে বিলালের গায়ে ছেক দিত। বিলালকে দিয়ে বিভিন্ন জিনিস পত্র বানিয়ে মজুরী দেয়া হত না। এরকম দিনের পর দিন বিলালকে রিমান্ডের পর রিমান্ড করার পর যখন তারা কোন ভাবে এক চুল পরিমান ও নড়াতে পারলো না। তখন বাধ্য হয়ে বিলাল (রাঃ) এর বৃদ্ধ মাকে উমাইয়া এবার নিয়ে আসলো। হযরত বিলালের মা ও তখন মুসলমান হয়ে ছিলেন। কিন্তু উমাইয়া তা জানতো না। উমাইয়া বিলালের মাকে বলল, তুমি তোমার ছেলেকে বুঝাও। নতুবা তোমাকে সহ ছেলেকে ও আমি এভাবে নির্যাতন করে করে শেষ করে দিব।
বৃদ্ধ মা কলিজার টুকরা ছেলের শিয়রে বসে মাথায় হাত বুলাতে থাকলেন। হযরত বিলাল তখন বেহুশ অবস্থায় ছিলেন। মা ডেকে বিলালকে পানি পান করালেন।
অল্প পানি আর মায়ের স্লেহপরশ পেয়ে বিলালের চেতনা ফিরে আসলো। হযরত বিলাল তার মাকে দেখে হাঁসতেছিলেন। মা বললেন বাবারে আমিও তো মুসলমান হয়েছি। তুমি এদের কথা মত কিছুক্ষনের জন্য রাসূল (সঃ) কে মন্দ কথা (গালাগালি) বললেই মুসলমানিত্ব চলে যাবে না। রাসূল (সঃ) এর অনুমতি দিয়েছেন। হযরত বিলাল তখন ও হাঁসতেছিলেন। মা জিজ্ঞেস করলেন বাবা হাঁসতেছ কেন? হযরত বিলাল মাকে জড়িয়ে ধরে বললেন - মা, আজ আমার বিজয় হয়েছে। গোটা তাগুত শক্তি আমি বিলালের সাথে পারলোনা। তাদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় মা আপনাকে নিয়ে এসেছে সুপারিশ করার জন্য, আমি এজন্য হাঁসতেছিলাম।
চিন্তা করুন, ব্যবহারিক মুসলামান কাকে বলে? আমারা ঐ অবস্থায় হলে হয়তো কোন কৌশলের আশ্রয় নিতাম। যদিও আজ বাংলাদেশের হযরত বিলালের যোগ্য উত্তরসূরীরা সেই একই ভুমিকা পালন করছে।
আমি ইতিহাসের বইতে পাইনি হযরত বিলালকে কতদিন রিমান্ড দেয়া হয়েছিল মক্কার কুফরী আদালত থেকে, তবে ২০১৩ সালে সাঈদুনা বিলালকে অনুকরণ,অনুসরণ করতে পেরেছে সাঈয়াদুশ শাবাব (সৎ ও মেধাবী যুবকদের নেতা) শিবির সভাপতি ভাই দেলাওয়ার হোসাইন। এ যুগের উমাইয়ারা শিবির সভাপতিকে ৫৩ দিন রিমান্ড দিয়েছে। ঐ যুগে উমাইয়াদের পরিচয় ছিল কাফেরদের সরদার। আর এ যুগের উমাইয়াদের পরিচয় হল আদালত পাড়ার বিবেকহীন কালো গাঊন পরা কিছু ব্যক্তি।স্থান, কাল, পাত্র ভিন্ন। কিন্তু চরিত্রের রুপায়ন একই।
আমরা রমজানের শিক্ষা - তাকওয়া নিয়ে লিখছিলাম। তাকওয়ার ব্যবহারিক কিছু অতীত দৃষ্টান্ত গত তিনটি পর্বে লিখেছিলাম। এই পর্বে হযরত বেলাল (রাঃ) জীবন থেকে কিছু লিখার ইচ্ছা করেছিলাম। কিন্তু বেশ কিছু দিন পার হয়ে গেল ব্লগে বসার সুযোগ পাইনি। যাক,
ব্যক্তি জীবনে তাকওয়ার প্রভাব প্রতিফলিত হয় তাদের যারা বিবেকদ্বারা পরিচালিত হন। রমজানে যে শিক্ষা, সেটা তারাই গ্রহন করতে পারেন যারা ব্যক্তি জীবনে হন মুত্তাকী। আর মুত্তাকীর এই সামগ্রিক গুনটি অর্জন করতে হলে ব্যক্তিকে অবশ্যই তার বিবেককে সদা জাগ্রত রাখতে হয়। পাহারদার এর ভুমিকায়। যে যত বেশী তার বিবেক দিয়ে পরিচালিত হন তিনি তত বেশী মুত্তাকী হতে পারেন।
ইসলাম ব্যক্তির বিবেককে সদা জাগ্রত থাকার এবং তার চেতনা ও অনুভুতিকে অত্যান্ত তীব্র করার শিক্ষা দেয়। রমজান মাসের গোটা আয়োজনটাই হল এই চেতনাকে শাণিত করার মহান আল্লাহর বার্ষিক প্রোগ্রাম। আমরা দিনের বেলায় সহজ লভ্য যে বিষয়গুলো পরহেজ করি, ঠিক একই ভাবে জীবনের বাকি অঙ্গনে মহান আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলার নাম হল তাকওয়া।
বিবেকের বিরুদ্ধে না চলার যে শিক্ষা আমরা রমজান মাসের দিনের বেলায় বাস্তবিক ই করি, দেখা যায়একই ব্যক্তি তার রাজনীতিতে,অর্থনীতিতে সেই চর্চা করতে চায় না বা ইচ্ছা করে করতে চায় না। এজন্য ইসলামে ধর্মনিরপেক্ষতা,জাতিয়তাবাদ,সমাজতন্ত্র ইত্যাদি মানব রচিত মতবাদ গুলো হারাম। একজন মুত্তাকী ব্যক্তি কখনো মুনাফিক হতে পারে না। সে কখনো তার জীবনকে বিভক্ত করে চলতে পারে না। ভাগা ভাগি করে জীবন পরিচালনা করার নাম মুনাফিকি।
রমজানের শিক্ষা কেন আমাদের সমাজে দেখা যায় না। আমাদের রাজনীতিবীদরা ঠিকই ইফতার মাহফিল করেন। কিন্তু সর্বপরি আল্লাহকে ভয় করার নীতিতে তাদের রাজনীতি করেন না। এর কারন কি?
আলেম ওলামা শিক্ষিত সব শ্রেনীর মধ্যে এই সমস্যাটা প্রকট। দেখা যায় - যে ব্যক্তি আনুষ্ঠানিক ইবাদতে খুবই সিরিয়াস। কিন্তু রাজনীতি করেন ধর্মনিরপেক্ষ বা সমাজতন্ত্রের। এটা কখনো কোন মুসলাম,ঈমানদার ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। সমস্যাটা এই জায়গায়। এই শ্রেনী চরিত্রের মুসলামানরাই ইসলাম ও মুসলামানদের জন্য হয় বড় বিপদের কারণ।
তাইতো মুসলামান বিচারপতি রমজান মাসে রোজা রেখে রায় লিখেন আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে মুসলামান দেশে মুসলামানরা রাজনীতি করতে পারবে না।
৩য় পর্বের লিংক
http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/1876/IBNAHMED/20576
বিষয়: বিবিধ
১২৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন