মুহতারাম, কাওমী মাদ্রাসার কতৃপক্ষের কাছে বিনীত আবেদন।

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০১:২০:০৫ দুপুর

বাংলাদেশে কতটি কওমী মাদ্রাসা রয়েছে। এগুলোর কোন পরিসংখ্যান কারো কাছে আছে কি না সন্দেহ। তবে বলা হয় তিন লক্ষ মাদ্রাসা রয়েছে কওমী নিসাবে (সিলেবাসের)। সে হিসাব মেনে নিয়ে বলা যেতে পারে এই মাদ্রাসা সমুহে কর্মসংস্থান হয়েছে দেশের বিরাট একটি অংশের।

লেখা পড়া এবং দেশ গঠনে তাদের ভুমিকা, ইত্যাদির বিচারে এই জনগোষ্টী মোটেই উপেক্ষার নয়। বরং রাষ্ট্র ও সরকারে তাদের অংশগ্রহন এবং মতামত বিচার্য বিষয় হওয়া উচিত।

কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় হল আমাদের কাওমী হাজরাত নিজেরা ও চান না বা বিষয়টা এড়িয়ে চলেন।

সমাজের সচেতন অংশ বলে যারা, তারা বিরাট এই জনগোষ্ঠিকে হিসাবে খাতায় ই রাখতে চায় না।

অথচ গনতান্ত্রিক দেশে এই বিরাট গনমানুষের বোধ বিশ্বাসের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত সংবিধানের মাধ্যমে।আমাদের সংবিধানে যে ভাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বীকৃতি রয়েছে।

বাস্তবতা হল কাওমী মাদ্রাসার শিক্ষক ছাত্র সবাই বৃহত জনগোষ্ঠীর ই প্রতিনিধিত্ব করেন।

দুটো উদাহারন দেই।

এক)

গত আওয়ামী আমলে জাতীয় মসজিদের খতীব আল্লামা ওবাইদুল হক সাহেবকে অপদস্ত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে ছিল বাসার কারেন্টের লাইন কেটে দেয়া। সরকারী গাড়ী ব্যবহার করতে না দেয়া। জাতীয় মসজিদের খতীব হিসাবে প্রাপ্য রাষ্ট্রীয় সম্মান না দেয়া ইত্যাদি। তখন জাতীয় পত্রিকা (সরকার সমর্থক) খতীব সাহেবের সাক্ষাৎকার ছাপে। খতীব সাহেবের নাতির বয়সের সাংবাদিক প্রশ্ন করেন আপনি ১৯৭১ সালে কি করেছিলেন?

খতীব সাহেব মিডিয়া এড়িয়ে চলতেন। তবে ঐ সাংবাদিককে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বসেন। আপনার বয়স কত? আপনার বাপের বয়স কত? আমি ঢাকায় আছি সেই ১৯৬৬ সাল থেকে। মাদ্রাসা আলিয়ায় ছিলাম প্রধান হেড মুহাদ্দীস। এখন আছি জাতীয় মসজিদে। আমি ১৯৭১ সালে কি করেছিলাম তা জানতে হলে আপনার দাদা অথবা আপনার পত্রিকার সম্পাদকের আব্বাকে জিজ্ঞেস করুন। সাংবাদিক সাহেব থতমত খেয়ে ঐদিনের মত চলে গেলেন।

অবশ্য পরবর্তীতে ঐ পত্রিকার সাংবাদিক নিজের টেবিলে বসে একটা সাক্ষাৎকার তৈরী করে ছাপান নিজ পত্রিকায়। এবং তখন কিছু রামপন্থী আর বামপন্থি বুদ্ধিজীবিরা কলাম লিখে খতীব সাহেবে পদত্যাগ দাবী করেন। আমাকে তথ্যটা জানিয়েছিল খতীব সাহেবের জামাই।একই সাথে লেখাপড়া করেছিলাম বেশ কিছু দিন।


মঈন ফখরুদ্দিনের আমলে এই খতীব সাহেবের সামনে হাটুগেড়ে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল সুশীল বান্ধব পত্রিকার সম্পাদকবৃন্দ। এগুলো ইতিহাস। আজ মাত্র কয়েকজন ব্লগার যে ভাষায় আল্লাহ রাসূলকে গালি দিল মনে পড়ছে খতীব সাহেব (রঃ) কে।

দুই)

আল্লামা আজিজুল হক সাহেব গত আওয়ামী টার্মে জেল থেকে বের হয়েই জেদ্দায় এসেছিলেন। তিনি আমাদের দাদা হুজুর। তার ছাত্রদের কাছে আমাদের তালিম। দাওয়াত খেতে দাদা হুজুরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, হুজুর আমাদের কাওমী মাদ্রাসার হাজারাত সবাই কেন একই প্লাট ফরমে আসেন না।এর কারন কি হতে পারে। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষন। তারপর বললেন জাবাবটা কি তোমার জানা নাই। আমি চুপ চাপ আছি দেখে বললেন আমরা কাওমী নিসাবের সবাই যদি এক হতাম তাহলে তো আমি জেলে যাওয়া লাগতো না।

আমি মসজিদের ভিতর মানুষ খুন করেছি এই অপবাদে জেলে যাওয়া লাগতো না।

তার পর চারদিকে তাকিয়ে তিনি বললেন দেশে যত কওমী মাদ্রাসা আছে সেগুলোর উস্তাদরা যদি আগামী কাল ময়দানে আসে তাহলে বাংলাদেশে ইসলামের বিরোদ্ধে কেউ কথা বলার থাকবে না।

কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। উনি কয়েকটা উদাহারন দিলেন কিভাবে আমাদের কাওমী হাজরাতরা নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থের কাছে বৃহত স্বার্থ উপেক্ষিত হয়।উপস্থিত সবাই বিমর্ষ হলেন। আফসোস করলেন।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কি করা উচিত কাওমী হাজরাতের। তা কি মুরাকাবা বা ইস্তিখিরা করা প্রয়োজন?না আপনাদের ইলম কি বলে?

একই কান্ড ঘটেছিল ককেশীয় এলাকায় (রাশিয়ার কমিনিষ্ট আমলে)। ৭০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে আবার মাদ্রাসা তৈরী করতে।

আপনারা জাতীর রাহবার। শুধু দ্বীনি ময়দানে না থেকে জীবনের সামগ্রিক ক্ষেত্রে অগ্রসর হউন। দেশের জনগন আপনাদের সাথে আছে।

নিজেদেরকে শুধু চারদেয়ালের ভিতর আবদ্ধ না রেখে প্রকৃত সুন্নাতে নববীর আমলে আসুন।

জাতী অপেক্ষায় আছে।

বিষয়: রাজনীতি

১৩৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File