তাকওয়া অর্জনের মাসে আমাদের মন ও মনন এবং করণীয়।পর্ব - ৩

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ০৮ জুলাই, ২০১৩, ০৭:০৮:০৮ সন্ধ্যা

২য় পর্বের পর -

তাকওয়ার গুনটি মানুষকে কীভাবে উচ্ছমার্গে পৌছায় তার আরো কয়েকটি নমুনা পেশ করছি।

হযরত ওমর (রাঃ) একদিন মক্কা শরীফের কোথাও যাচ্ছিলেন। দেখেন যে চাকর নফররা মালিকদের সাথে খেতে বসেনি বরং একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তিনি রাগান্বিত হয়ে মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন,ব্যাপার কি!নিজেদের ভূত্যদের সাথে এরূপ বৈষম্যমূলক ব্যবহার করা হচ্ছে কেন? অতঃপর তিনি ওই চাকর নফরদেরকে ডেকে জোর পূর্বক মনিবদের সাথে ভোজনে বসিয়ে দেন।

সিয়াম পালন করার ক্ষেত্রে যে তিনটি মৌলিক বিষয় পালনীয় তা সবার জন্য সমান।

সোবহে সাদেক থেকে পানাহার মুক্ত থাকা,খাদ্য গ্রহন না করা,আর বৈধ যৌন সম্ভোগ না করা। এগুলো ধনী গরীব সবার জন্য সমান।

সিয়ামের শিক্ষা আমাদের সমাজের ওপরের মানুষগুলো গ্রহন করলে গার্মেন্টস শিল্পের মালিক শ্রমিক বিরোধটা মিটে যেত। একজন মালিকের কত সম্পদের প্রয়োজন? শ্রমিকের প্রাপ্যটা বুঝিয়ে দেবার জন্য প্রয়োজন শিল্প মালিকের অন্তুরে আল্লাহর ভয় বিদ্যমান থাকা।মালিকদেরকে আইন দিয়ে বাধ্য করা লাগতো না।আর শিল্প পূলিশ নামের দৈত্য দিয়ে নিরিহ শ্রমিক ভাই বোনদেরকে পিঠাতে হতনা।

তবে একক ভাবে আমাদের শিল্প মালিকদের দ্বায়ী করাটা মোটেই সঠিক বিচার হবে না। আসল কারণ টা আরো ওপরে। মাথায় যিনি বসে আছেন, তিনি তো নিজের জিহবাকে ইবলিশের কাছে ইজারা দিয়েছেন।নিন্দুকেরা বলে 'বাংলাদেশে নাকি ইবলিশ তার দায়িত্ব দিয়েছে আমাদের এই গণতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রীকে।'

দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন বোনের মেয়ের বিয়েতে ৪৪ জনের বিরাট লটবহর নিয়ে যান তখন বুঝা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুখে মদিনার সনদ আওড়ালেও অন্তরে মোটেই আল্লাহর ভয় নেই।নুন্যতম দ্বায়বোধ যদি আমাদের প্রধামন্ত্রীর হত তাহলে জাতীয় সংসদে দাড়িয়ে তিনি মিথ্যার পর মিথ্যার বেসাতি করতেন না।

কি জবাব দিবেন তিনি আগামী কাল মহান আল্লাহর কাছে। দেশের নারি শ্রমিকরা সিয়ামের প্রথম সেহরীর খাবার জন্য আন্দোলন করতে হয় আর তিনি বিলাতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় পয়সার অপচয় করছেন একান্ত পারিবারিক অনুষ্ঠানে।


মদিনার সনদে পরিচালিত শাসন কেমন ছিল? কেমন ছিলেন সেই সময়ের রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তিরা? কেমন ছিল তাদের বোধদ্বয়? দুটি উদাহরন -

হযরত ওমর ক্ষমতায়।ছেলে আব্দুল্লাহ দেখেন তার পিতা মাথায় বিরাট আকারের একটি বস্তা নিয়ে বায়তুলমালের দিকে যাচ্ছেন।ছেলে আব্দুল্লাহ বললেন, আপনি একি করছেন, আমাকে বললে তো আমি এই কাজ করতাম। হযরত ওমর (রাঃ) বলেন,বাবা আমি ইচ্ছা করে এই কাজ করছি। কারন আমি খলিফা হবার পর আমার কাছে মনে হয়েছে আমি কিছুটা অহংকারী হয়ে গেছি। ক্ষমতা পেয়ে অহংকারী আচরণ করলে আগামী কাল মহান আল্লাহর কাছে জবাবদীহি করতে পারবো না। তাই নিজেকে বাধ্য করেছি অহংকার মুক্ত থাকার জন্য।এই ক্ষমতা চিরদিনের জন্য নয়। তাই নিজেকে ঠিক রাখতে হবে।

হযরত ওমর (রাঃ) খলিফা। তিনি এবং তার শুরা (পরিষদ) সদস্যদের নিয়ে হজ্জ করতে মক্কার মিনায় অবস্থান করছেন। ওমর (রাঃ) তাবুতে আসছেন লোকজন। দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে। অভাব অভিযোগ শুনছেন এবং তার সমাধান করছেন। এমন সময় একটি মহিলা দল খলিফার তাবুতে আসলো। মহিলা দলের নেত্রীকে দেখেই ওমর (রাঃ) দাড়িয়ে গেলেন।মদিনা থেকে হজ্জ করতে আসা মহিলা দলের নেত্রী হযরত ওমরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনি আজ আমাদের খলিফা। কিন্তু আপনার কি মনে পড়ে আপনি এই মক্কার খাত্তাবের ছেলে ওমর। আপনার পিতা মারা যাবার পর আপনাকে আপনার মা লালন পালন করেছেন। আপনার মা, আপনাকে এই মিনার পাশে ওয়াদি আল মাহসারে প্রতিদিন মারতেন। আপনি ছাগল চরাতেন। ছাগলের রাখাল ছিলেন। আজ আপনি আমাদের রাখাল হয়েছেন। এটা আপনাকে মহান আল্লাহ বানিয়েছেন। আমরা যে খেমায়(তাবুতে) আছি তার চাইতে আপনার টা উত্তম। আপনার বাহন আমাদের চাইতে বেশি। এগুলো পেলেন কোথা থেকে? কে আপনাকে এই অধিকার দিয়েছে? জনগণের পয়সা দিয়ে আপনি ব্যক্তিগত ইবাদত (হজ্জ) করতে এসেছেন? আপনার সাথীদের সবাই বায়তুলমাল থেকে খরছ করছেন।

আমীরুল মুমিনীন আল্লাহকে ভয করুন বলে মহিলা দলের এই নেত্রী থামলেন।

হযরত ওমর এতক্ষণ চুপ চাপ শুনছিলেন। হযরত ওমরের সাথীদের কেউ কেউ নারী নেত্রীকে থামাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হযরত ওমর (রাঃ) সবাইকে দাড়িয়ে থেকে শুনতে বললেন।নেত্রীর বক্তৃতা শেষ হলে হযরত ওমর সকল অভিযোগের জবাব দিলেন।এবং নিজের জন্য যে বাহনটি (খচ্চর) রাষ্ট্রের ছিল তা তিনি ফেরত দিলেন। যে তাবুতে ছিলেন সেটা ছেড়ে দিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান গ্রহন করলেন। পুরো হজ্জ এভাবে সম্পাদন করলেন। মদিনায় আসার পর তিনি রাষ্ট্রীয় আইন করে দিলেন আগামীতে কেউ হজ্জে যেতে হলে নিজের খরছে যেতে হবে। অবশ্য সেই মহিলা নেত্রীকে ৭ বছরের জেলে যেতে হয় নাই। আবার ডিজিটাল কোন বিচারপতি ও তাকে রিমান্ডে পাঠাননি। বরং

এ্ই মহিলা নেত্রীকে মদিনা মসজিদের তত্বাবধায়ক হিসাবে নিয়োগ দিলেন। যদিও এই নারি রাসূলের যুগেও একই দায়িত্ব পালন করতেন।

ইসলামে যেমন প্রথম ইসলাম গ্রহনকারী নারী। তেমন প্রথম শহীদ হলেন নারী।তেমন মদিনা মসজিদের প্রথম মিম্বর তৈরী করে দিয়েছিলেন এই সেই নারী।

যে শক্তিটা সোনালী যুগের মানুষগুলোকে দায়িত্ববোধ তৈরী করতো সেই মানষিক ভিত্তি,শক্তিটা পবিত্র রামাদান মোবারকের আসল শিক্ষা। প্রস্তুত আছেন তো।

আমরা একজন আরেকজনকে সাহায্য করলে হয়তো কিছুটা তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে পারি।


আগামী পর্বে ...........হযরত বিলাল (রাঃ) ...

২ পর্বের লিংক -

http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/1876/IBNAHMED/20551#.UdqoyDt9Gr4

বিষয়: বিবিধ

১৫৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File