তাকওয়া অর্জনের মাসে আমাদের মন ও মনন এবং করণীয়।পর্ব -২
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ০৭ জুলাই, ২০১৩, ০৩:৫৫:২৮ দুপুর
১ম পর্বের পর
উদাহরন - ১
ইমাম আবু হানিফা (রঃ) কাপড়ের ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি নিজের শরীক ব্যবসায়ী হাফ্স ইবনে আব্দুর রহামানের কাছে কিছু কাপড় বিক্রীর জন্য পাঠান। ইমাম বলে দেন যে, একখানা কাপড়ে কিছু খুঁত আছে তা ক্রেতাকে জানিয়ে দিতে হবে।
হাফস সেই কাপড় বিক্রী করে দেন কিন্তু খুঁতের কথা বলতে ভুলে যান।খুঁতপূর্ণ কাপড়ের বিনিময়ে তিনি পুরো দাম আদায় করেন। এই চালানের দাম ছিল ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার দিরহাম।আবু হানিফা (রঃ) তাঁর শরীককে ক্রেতার সন্ধান নিতে বলেন কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও ক্রেতার সন্ধান পাওয়া যায়নি। এরপর তিনি তার শরীক থেকে পৃথক হন এবং গোটা চালানের দাম আল্লাহর পথে দান করে দেন। নিজের পবিত্র সম্পত্তির সাথে তিনি সেটা মিশাতেও চাননি। এখানে কোন বাহ্যিক মনিটরিং অথরিটি কাজ করেনি। বরং ইমামের তাকওয়াই বাধ্য করেছে ভুক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠায়।
উদাহরন - ২
প্রখ্যাত ইমাম ইউনুছ বিন ওবায়েদের নিকট বিভিন্ন মূল্যের কাপড় বিক্রীর জন্য রক্ষিত ছিল।এক রকমের কাপড় প্রতি জোড়ার দাম ছিল চারশো দিরহাম। অপর এক ধরনের কাপড়ের প্রতি জোড়ার দাম ছিল দু'শো দিরহাম। তিনি নিজের ভ্রাতুস্পুত্রকে দোকানে রেখে সালাত পড়তে যান।এ সময় একজন ক্রেতা আসে এবং চারশো দিরহাম মূল্যের জোড়া চায়। ছেলেটি তাকে দু'শো দিরহাম মূল্যের জোড়া দেখায়।সেটা তার পছন্দ হয় সন্তুষ্ট চিত্তে খরিদ করে নিয়ে যায়।
সালাত আদায় করে ফেরত আসতে রাস্তায় দেখা ইমাম উক্ত কাপড় চিনতে পেরে জিজ্ঞাসা করেন ক্রেতাকে, সে ওটা কত দামে খরিদ করেছে? সে জবাব দেয় চারশো দিরহাম। তিনি বলেন, এটা তো দু'শো দিরহাম মূল্যের কাপড়। যাও ওটা ফেরত দিয়ে এস। ক্রেতা জবাব দিল,এ কাপড় আমাদের দেশে পাঁচশো দিরহাম মূল্যে পাওয়া যায়। তাই আমি ওটা সন্তুষ্ট চিত্তেই খরিদ করেছি। ইমাম বললেন,তোমাকে তা ফেরত নিতে ই হবে।কারণ ইসলামের ব্যাপারে হীত কামনার চেয়ে উত্তম কাজ আর কিছু হতে পারে না। এই বলে তিনি ক্রেতাকে দোকানে নিয়ে যান এবং দু'শো দিরহাম ফিরিয়ে দেন।
তার পর ভ্রতুস্পুত্রকে এই বলে তিরস্কার করেন।'তোর লজ্জা করলো না? তোর মনে আল্লাহর ভয়ের সৃষ্টি হলো না?শতকরা একশো ভাগ লাভ করিস। আর জনগনের কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রাখিস না?'ছেলেটি শপথ করে বললো যে, ক্রেতা খুব খুশী হয়েই কাপড় কিনেছিল। এতে ইমাম বললেন,'তুই নিজের জন্য যা পছন্দ করিস - তা অপরের জন্যও পছন্দ করতে হয়,একথা ভুলে গেলি কেন?
দেখুন এখানে মাত্র দু'শো দিরহামের ব্যাপার মাত্র। কোন গোয়েন্দা অথবা কনজুমার অথরিটি কেউ ই ছিলনা। বরং নিজের ভিতর থেকেই পরকালীন জাবদিহীতার ভয়ে ই তিনি ক্রেতাকে বাধ্য করলেন অতিরিক্ত টাকা ফেরত নিতে।
ইসলামী শরীয়া মতে ক্রেতা সন্তুষ্ট হলেই ব্যবসা হালাল হয়ে যায়।তবে বিক্রয়লব্ধ লাভের পরিমান এমন হতে পারবে না যা সমকালীন বাজারমু্ল্যের তুলনায় অনেক বেশী। এই বেশীর পরিমান কতটুকুন হবে তা ঠিক করবে ব্যবসায়ী নিজেই। আর এর পিছনে কাজ করবে তার তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয়।
এখানে রাষ্ট্র যতই বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা করুক না কেন কিছুই করতে পারবেনা। বরং যাদেরকে এই কাজে নিয়োগ দেয়া হবে তারাই কুইক মানি কামানোর ব্যবস্থা করবেই। যা আমাদের বর্তমান সময়ের চিত্র।
রমাদান আসলেই সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করে। কারন তারা তাদের মত ই সিয়াম পালনকারী মুসলমান ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। আর সরকার তার নির্বাচনী ফান্ডের জন্য বিভিন্ন সিন্ডিকেট করে সেই ব্যবস্থা করে দেন। যেমন কুইক রেন্টাল নামক টাকা বানানোর ডিজিটাল ব্যবস্থাপত্র। আর যাই হউক ৩ টাকা ইঊনিটের দাম গুনতে হচ্ছে এখন ১৭ টাকা। এরাও মুসলমান! এই প্রকৃতির মুলসলমান নেতারা নাকি ফজরের নামাজ পড়ে রাষ্ট্রীয় আচার শুরু করেন।
আগত রমদানে তারাও সিয়াম পালন করবেন। ঘটা করে ইফতার মাহফিল করবেন।আবার এরা নিজেদেরকে ইসলাম ও মুসলমানের কল্যাণকামী হিসাবে প্রচার করবেন। আগেকার সিয়াম পালনকারী মুসলমান আর বর্তমান সিয়াম পালনকারীদের মধ্যে পার্থক্য এই জায়গায়। আমরা রামাদানের সিয়ামকে একটি আনুষ্ঠানিক ইবাদত মনে করি। আমাদের সম্মিলীত ভুল এই জায়গায়। সিয়াম সামাজ পরিবর্তনের একটি বিরাট ভুমিক রয়েছে তার হিসাব আমরা রাখি না।
যারা তাকওয়া ভিত্তিক জীবন যাপনে চেষ্টা করতেন, তারা আজ সবাই মুক্ত পরিবেশে নেই। হয় তারা জেল বন্ধী না হয় তারা গুম হয়েই আছেন।বাহিরে যারা আছেন তারা জেলের চাইতে ও আরো মহা আতংকে রয়েছেন। যে মাসটিকে আমরা স্বাগত জানাবো সেই মাসের একটি নাম হল 'শাহরুল মোয়াসা'। সহমর্মিতা,ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরী হওয়া,জাতীয় ঐক্য তৈরী হওয়ার মাস রামাদান।(হাদীসটি সাহাবী সালমান আল ফারসীর বর্ণনা)
আমাদের প্রশ্ন - রাষ্ট্র,রাষ্ট্রের নির্বাহী,বিচার বিভাগের সিয়াম পালনকারীরা কি? এই সব মজলুম মানুষগুলোর খবর নিবেন।জানতে চাইবেন কেমন করে তারা সিয়াম চর্চা করছেন,করবেন। কেমন হবে জালিম আর মজলুমের সিয়াম পালন।
(ইমাম আবু হানিফা এবং এরকম আরো কিছু ইতিহাসখ্যাত ঘটনা জানতে হলে পড়ুন আব্দুল হালিম আল- জুনদীর গ্রন্থ 'আবু হানিফা বাতলূল হুররিয়াতি আত্ তাছামুহি ফিল ইসলাম')
আগামী পর্বে ...........
১ম পর্বের লিংক -
http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/1876/IBNAHMED/20320#.Udk7DDt9Gr4
বিষয়: বিবিধ
১৮০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন