সাউদি রাজকীয় ফরমানে বাংলাদেশীরা যে সুযোগ সুবিধা পেতে পারেন এবং আমাদের দায়ীত্ব।

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ১৬ মে, ২০১৩, ০৩:৩৩:১২ দুপুর

সমস্যার শুরুটা হয়েছিল সেই হাইব্রিড, উদ্দিন সরকারের আমল থেকে। মইন ফখরুদ্দিন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন সাহেবের ছোট কটুম্ব ছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমরা আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সাথে সম্পর্ক এমন জায়গায় পৌছাবো যেখান থেকে কেউ নামাতে পারবেনা। আইএমএফ সরকার তাদের কথা রেখেছিলেন।মঈনের ঘোড়া উপহার আর আমাদের শ্রম বাজার ভারতকে দিয়ে তারা সেই ওয়াদা পূরণ করেছিল।

আরেকটি কথা আমাদের এই করিৎকর্মা উপদেষ্টা জনাব ইফতেখার সাহেবের আরো পরিচয় আছে। তিনি আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা জনাব ফারুক সাহেবের ছোট ভাই। আবার বিএনপির উপদেষ্টা জনাব এনাম চৌধুরীর ও সহদোর।যেহেতু এই পরিবার বাংলাদেশের সুশীল বান্ধব মিডিয়ার আপন, তাই এই অজানা তথ্যগুলো বাঙ্গাল জানতে পারে নাই।অবশ্য বর্তমানে ঐ হাইফেন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সিংগাপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর।

মূলত সাউদি আরবের সমস্যাগুলো তার হাত দিয়েই শুরু।

তার পর ভারতীয় বস্তাভরা টাকা আর মইন ফখরুদ্দিনের যৌথ প্রযোজনার নির্বাচন। ২০০৮ সালের সাজানো নির্বাচনে মহাজোট তথা শেখ হাসিনার ক্ষমতায়ন।যাত্রা শুরু নব্য বাকশাল ডিজিটাল যুগের।

শেখ হাসিনা তথা ডিজিটাল সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাউদি প্রবাসীদের সাথে এ পর্যন্ত কুতকুতি খেলা খেলেছেন।


অসত্য আর নির্জলা মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হাজির হয়েছিলেন। আবার কখনো খুকুমনি আমাদের প্রিয় মন্ত্রী। আবার কখনো বেয়াই মন্ত্রী।জেদ্দাতে একটি দলীয় প্রোগ্রামে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে খুবই বেকায়দায় পড়তে হয়েছিল। তবে সবার একই অসত্য উচ্ছারণ।

দেশে যেমন একটার পর একটা অসত্য আর মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনা করছেন। ঠিক সেভাবে ২২ লক্ষ প্রবাসীদেরকে প্রতারিত করতেন এবং আজ ও করছেন।

আসল ঘটনা হল,সাউদি রাজকীয় ফারমানে যে সুযোগ আমাদের জন্য অবারিত হল তার সাথে বর্তমান ডিজিটাল সরকারের কোন দেনদরবার ছিলনা।দীপু মনি এসেছিলেন অন্য একটি কাজে। তখন দেশের মানবাধিকার নিয়ে শুনানী চলছিল জার্মানে। তিনি সাউদি আরব এবং মধ্যপ্রচ্যের সদয় কামনার জন্য এসেছিলেন। এবং তাদেরকে ধন্যবাদ দিতে। ঐদিনের স্থানীয় পত্রিকায় সেই রিপোর্ট রয়েছে। সেই পেপার কাটিং আমার কাছে রয়েছে।তাই যে সুযোগ রাজকীয় ফরমানে এসেছে এটা শুধু মাত্র আমাদের জন্য নয় বরং সব দেশের জন্য।

প্রবাসীরা যে সমস্ত সুযোগ গ্রহন করতে পারেন।

এক) যাদের ট্রান্সফার করা প্রয়োজন তারা সহজেই নতুন কোম্পানীতে যেতে পারবেন।নতুন কোম্পানীটা অবশ্যই গ্রীণ হতে হবে।দেখে শুনে যাবেন। তাড়াতাড়ি করার প্রয়োজন নেই।সময় আরো বাড়তে পারে।

দুই) যাদের আকামা নবায়ণ নেই বর্তমান কোম্পানীর কারনে। তাদেরকে নতুন কোম্পানী থেকে ডিমান্ড লেটার নিয়ে এসে সাউদি লেবার অফিসের মাধ্যমে ট্রান্সফার সম্ভব।এই ক্ষেত্রে ভাল মোয়াক্কিফ (মাধ্যম) ধরতে হবে।

তিন) যারা কফিল থেকে পলাতক বা কফিল পলাতক হিসাবে লেবার অফিসে পাসপোর্ট জমা দিয়েছে। তাদের জন্য সুযোগ রয়েছে।

প্রথমত তারা জাওয়াজাত থেকে প্রিন্ট আউট তুলবেন। তারপর পাসপোর্ট এর কপি এবং প্রিন্টআউটটি নিয়ে নতুন একটি কোম্পানীর ডিমান্ড লেটার সংগ্রহ করবেন। অবশ্যই সেই ক্ষেত্রে ভালো এবং শক্ত একটি গ্রীণ কোম্পানী চয়েজ করা ভাল হবে। এই কাগজ নিয়ে গেলে বাংলাদেশ এম্বেসী নতুন পাসপোর্ট দিয়ে দিবে। তার পর পুরাতন পাসপোটের ডাটা ট্রান্সফার করে আপনি নতুন কোম্পানীতে বৈধ হয়ে যাবেন।এই ক্ষেত্রে নিজেকে সব কিছু করতে হবে। কোন দালাল ধরে অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।

চার) ২০০৮ এর আগে যারা ওমরাতে এসেছেন তাদের জন্য একই সুযোগ রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরো সহজ। তারা নতুন একটি ভাল কোম্পানীর ডিমান্ড লেটার সংগ্রহ করে এম্বেসী থেকে পার্সপোট সংগ্রহ করবেন। তার পর নতুন কোম্পানীতে ট্রান্সফার।এই ক্ষেত্রে ২০০৮ এর পর যারা এসেছেন ওমরাতে তাদের জন্য কি আইন তা এখনো পরিস্কার নয়।

পাচ) যে সমস্ত ভাইরা তাদের ফ্যামেলী নিয়ে এসেছেন ওমরাতে তারাও একই সুযোগ গ্রহন করতে পারবেন। তবে এই বিষয়ে এখনো কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। সেটা ওয়ার্ক পারমিট আকারে করতে হবে না সরাসরি হাউজ ওয়াইফ হিসেবে করতে হবে তা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জানা যাবে।

যে সুযোগটা দেয়া হয়েছে তা সাউদি রাজকীয় ফরমানের আওতায়। এখানে আমাদের অথর্ব,অযোগ্য,ব্যর্থ,ফ্যসিষ্ট সরকারের কোন লবিং ছিল না। এই সুযোগ সব দেশের জন্য অবারিত।তার পর ও আমাদের সরকারকে এবং এম্বেসীকে ধন্যবাদ।

ইন্ডিয়ানরা এই সুযোগ গ্রহন করছে শত ভাগ। ইতিমধ্যে ইন্ডিয়ান এম্বেসী কয়েকটি বুথ খুলেছে বিভিন্ন শহরে। যারা দেশে চলে যেতে চাচ্ছে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে নতুন কোম্পনীতে ট্রান্সফার করে দিচ্ছে। এ জন্য লোকাল কিছু লোককে তারা নিয়োগ করেছে। তারা বড় বড় কোম্পনীর প্রয়োজনীয়তা,সুযোগ বিবেচনা করে ট্রান্সফার করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। আপনারা জানেন সাউদি আরবে প্রায় ২০০ এর অধিক কোম্পানী রয়েছে যা ইন্ডিয়ান সরকার ও সাউদি সরকারের যৌথ মালিকানায়। ইন্ডিয়ান কমিউনিটির ব্যবসায়ী,প্রফেশনালিষ্ট,এবং রাজনৈতিক নেতাদেরকে নিয়ে একটি সেল গঠন করেছে। তারা এম্বেসীকে সহযোগীতা দিচ্ছে।

প্রশ্ন করতে পারেন কিভাবে নতুন পাসপোর্ট দিচ্ছে।

আপনারা জানেন যে সমস্ত কোম্পানী বা কফিল (হরুব) পলাতক হিসাবে জাওয়াজাতে পাসপোর্ট জমা দিয়েছিল।সেগুলো তারা এখন ব্যবহার করছে।

এখানে একটি আইনি সহযোগিতা নিচ্ছে। সাউদি সরকার বাধ্য হরুব ওয়ালা এই পাসপোর্টগুলো তার এম্বেসীকে ফেরত দিতে। ইন্ডিয়ান এম্বেসী সেই পাসপোর্ট এর বিপরীত নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করছে তার দেশের জনগনের জন্য।

বিপরীতে আমার দেশের এম্বেসী তাদের সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছে। প্রথমত যারা দেশে চলে যেতে চাচ্ছে তাদের আউটপাস ইস্যু করছে গত সপ্তাহ থেকে। এই কাজে তারা এত ব্যস্ত যে, নিজেদের জনবল দিয়ে সম্ভব না হওয়াতে স্থানীয় বাংলাদেশী স্কুল থেকে ছাত্রদের সাহায্য নিচ্ছে। আমি গত কাল জেদ্দা কনস্যুলেটের গিয়েছিলাম অবস্থা দেখতে।আমার কাছে মনে হয়েছে রানা প্লাজার সামনে দাড়িয়ে থাকা লাশের প্রতিক্ষায় স্বজন।এত লোক কেন? দেশে চলে যেতে চাচ্ছে। তাদের কি কোন প্রতিকার নেই। আমরা জানি সাউদিতে একজন লোক করতে পারলে, তার গোটা পরিবার চলে এই রোজগার দিয়ে। একটা লোক চলে যাওয়া মানে একটি পরিবারের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়া। এই ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ানদের মত আমাদের প্রবাসী কমিউনিটির সম্মানীত সিনিয়র সদস্য,রাজনৈতিক নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কিছু করার আছে।এটা সকলের সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা।

একটা লোকও যদি সাউদি রাজকীয় ফরমানের সুযোগে এখানে বৈধ থাকতে পারে তাহলে একটি পরিবার বাঁচবে। কনস্যুলেটের ও কিছু করার আছে। কিন্তু কনস্যুলেট যে জনবল তা দিয়ে তারা আউট পাস দিতে দিতে ই সময় শেষ। তাদের ইচ্ছা থাকা সত্তেও হয়তো সেই সক্ষমতা নেই। যে পরিস্থিতি দেখলাম জেদ্দা কনস্যুলেটের সামনে তাতে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করা বা আইনি সহযোগিতা করা তাদের জন্য সত্যি কষ্টকর। তিনটা সাউদি পুলিশের গাড়ি সামাল দিচ্ছে শুধু লোকদের সামাল দিতে।এতগুলো লোক দেশে গিয়ে কি করবে?

একজন সামান্য প্রবাসী হয়ে আমার আবেদন জেদ্দার প্রবাসী ব্যবসায়ী,ভাল প্রফেশনালিষ্ট,রাজনৈতিক নেতৃত্ব সবার কাছে। এই সুযোগ টা কাজে লাগান।

আমরা গতকাল আমাদের পরিচিত (সমস্যাগ্রস্থ) ভাইদেরকে নিয়ে যতটুকু পেরেছি ততটুকু ইনফরমেশন দেবার চেষ্টা করেছি।

ইতিমধ্যে আমি একজন রাজনৈতিক নেতা,জেদ্দার কয়েকজন কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব এবং প্রাক্তন ছাত্র নেতাদের কাছে একই আবেদন করেছি।আমি বলেছি আপনারা অনেক মিটিং করেন। আপনাদের আশে পাশের লোকদেরকে সহযোগিতা করার জন্য গ্রুপ ভিত্তিক অনেক কিছু করার আছে।

যা করতে পারি।

ভাল কোম্পানী,ভাল কফিলের ব্যবস্থা করা।এটা এখন সবচেয়ে বেশী জরুরী। এবং এম্বেসীর সহযোগিতা নেয়া। প্রয়োজনে কনস্যুলেটকে লোকবল দিয়ে সহযোগিতা করা।

আমার বিশ্বাস একটা লোক ও যদি আপনার মৌখিক সহযোগিতায় এখানে বৈধ হতে পারে তাহলে তার আত্মীয়স্বজনরা আপনার জন্য দোয়া করবে।

সর্ব শেষ একটি হাদীসে রাসূল (সঃ) বলছি।

বিশ্ব নেতা, বিশ্বনবী, মানবতার একমাত্র বন্ধু মোহাম্মদ সালল্লাহু আলাইী ওয়া সাল্লাম বলেছেন। সেই তোমাদের মধ্যে উত্তম যে মানুষের উপকারে আসে।



আপনাদেরকে মোবারকবাদ।

বিষয়: বিবিধ

২৯২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File