আবিস্কারের নেশায় ডিজিটাল ২০২১ (পর্ব ২)
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ২৮ জানুয়ারি, ২০১৩, ০১:৫৯:২৮ দুপুর
৭১ মডেল - ৭ ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষন। মেশিনটির প্রচারকদের দাবী অনুযায়ী এই ভাষনই হওয়ার কথা ছিল স্বাধীনতার ব্যরোমিটার।কিন্তু হল বিপরীত অনেক কিছু।
২৩ এ মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত প্রেম পিরিতি চলল ইতিহাসের সেরা কসাই ইহয়ার সাথে।গোটা জাতিকে বিশ্বাস, অবিশ্বাসের দোলাচলে রাখে এই আজব মেশিনটি।
২৪ শে মার্চের রাতে হানাদার জেনারেল রাও ফরমান আলীকে টেলিফোন ১০নাম্বার থেকে।আকুতি আমাকে গ্রেফতার কর নতুবা ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।
নাটকের প্রথম পর্বের শেষ দৃশ্যের মত আজব মেশিনের ওভারহোলিং করতে আত্মসমর্পন।নয় মাসই এই ওভারহোলিং চলে আপন ঠিকানায়। দিশাহীন জাতীর কপালে জোটে কালো রাত ২৫ শে মার্চ ১৯৭১।
----------------------------------------------------------------
২৪,২৫,২৬,২৭ মার্চ ১৯৭১ মেশিনটির সকল স্পেয়ারপার্টসগুলো রপ্তানী হয়ে যায় ভারতে। স্থান হয় কলিকাতার হোটেল আর গরুদেবের আন্দর মহলে।
আরাম কেদারা,ফুল শষ্যা আর লাল নীল পরী নিয়ে চললো রনাঙ্গনহীন এক অসম যুদ্ধের রিহার্সসেল।চলতে থাকলো তা ৩ অথবা ৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত।
যুদ্ধ হল দেশের ভিতর। কিন্তু কলিকাতার হোটেলে বসে যারা মহান! যুদ্ধ করলেন তারাই হলেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।এই কারিশমা হল ঐ আজব মেশিনের।যারা রণাঙ্গনে একদিনের জন্য ও বাতাশ খাইতে গেলেন না তারা আজব মেশিনের লেবেল গায়ে দিয়ে উদয় হলেন দেশের খোদমুখতার (মালিক) হয়ে।
আর যারা কাদামাটির সাথে কামড়ে, রণাঙ্গনে যুদ্ধ করলেন। তিনারা পেলেন নতুন এক মজাদার স্বাধীনতার দেশ।
মেজর জলীল নব্য রাজাকার নামের তীলক পরিয়ে স্বাধীনতার প্রথম প্রহরে কারাগারে প্রবিষ্ট হলেন।
----------------------------------------------------------------
মেশিনের কোরাস - ৩০লক্ষ এবং আড়াই লক্ষ।
কিন্তু লক্ষনীয় যে, এই মেশিনের কোন বড় যন্ত্র সেই ৩০ লক্ষ বা আড়াই লক্ষের তালিকায় পাওয়া যায় না।(তখনকার এম এল এ বা এমপি)। বরং ১৬ ডিসেম্বর এর পরই শুত্রু মুক্ত সবুজ বাংলায় আগমন হল অথবা আবার আমদানী করা হল মেশিনের সকল যন্ত্রাংশের।
-----------------------------------------------------------------
নতুন পরিবেশে নতুন স্থান সমুহে পুরাতন মেশিনের জায়গায় এই আজব মেশিনের প্রতিস্থাপন হল।
মেশিনটির সার্বক্ষনিক দেখভাল করার জন্য গঠিত হল একটি বিশেষ বাহিনী। যদিও তখন লাল, নীল, রক্ষী বাহিনী নামের অনেক পাগলা ঘোড়া ছিল। মাঝে মাঝে এদেরকে দাবড়ানো হত রণাঙ্গনের মু্ক্তিযোদ্ধাদের উপর।
বেয়াদব ও বেয়াড়া এই সব সতেজ (অস্ত্র) তাজা দানবগুলো ২৭ হাজারেরও বেশী বনি আদমকে বলি করে মেশিনের স্বায়ীত্বের জন্য পেশ করা হয়।
----------------------------------------------------------------
সার্টিফিকেট - মহান এবং একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে নিজেদের সকল পর্যায়ের নেতা নেত্রীদের সার্টিফিকেট সংগ্রহের প্রয়োজন দেখা দেয়। প্রয়োজনটা বড় ছিল বিধায় ঘষামাঝাটা একটু বেশী করে করা হয়েছে। পরিকল্পনাটা ও নেয়া হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি।
জেনারেল ওসমানী সর্টিফিকেট দেন রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে।তা তার জন্য ছিল স্বাভাবিক। কারন তিনি তাদেরকে জানতেন। কিন্তু যারা,ওপারের আত্মীয়?
গোলক ধাধায় পড়ে মেশিনের লেভেল গায়ে রয়েছে। আবার ওপারের আত্মীয় হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এমন মুক্তিযোদ্ধাদেরকে! কিভাবে সাটিফিকেট বিতরণ করা যায়?
যেহেতু এটা একটা মেশিন মাত্র। তাই সত্য মিথ্যা,ন্যায় নীতি,নৈতিকতা ইত্যাদি ছিল বস্তুবাদ মেশিনের কাছে বাতুলতা।মেশিনের প্রয়োজনে সব কিছু হালাল। যখন যা করা প্রয়োজন তখন তা করতে ই হবে। অতীতে লা ইলাহার প্রয়োজন ছিল, বর্তমানে নাই, তাই এই নিরপরাদ কালেমাটাকে জাতীর কপাল থেকে বিতাড়িত করা সবই আমাদের ঐতিহ্যবাহী মেশিনের কেরেশমা।
আগামী পর্বে
বিষয়: বিবিধ
১২৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন