প্রিয় নক্ষত্র, খোলা চিঠি তোমার কাছে।
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ১২ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৭:১৮ দুপুর
প্রিয় নক্ষত্র, খোলা চিঠি তোমার কাছে।
-
প্রিয় নায়ক ম্যাশ। আহত হলাম। আপনাকে অনেক পছন্দ করতাম শুধু খেলার জন্য নয়। একদিন আপনি একটা কথা বলেছিলেন আমার মনে গেঁথে আছে। অনেক গভীর থেকে আসা কথাটায় আপনাকে মনের আকাশে একজন অনন্য উজ্বল নক্ষত্র হিসেবেই দেখে আসছিলাম মনের মণিকৌটায়। সবাই যখন ক্রিকেট পাগল হয়ে আপনাদের নায়ক মহানায়ক, অতিমানব বানিয়েে মাথায় তুলে নাচতে শুরু করল আপনি বলেছিলেন এমনটা আমাদের প্রাপ্য নয়, আমরা দেশের জন্য শুধু খেলছিমাত্র। দেশের জন্য আন্য আরো অনেকে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। খেলাকে এতো উপরে উঠানো উচিত নয়। সম্ভবত উদাহরণ দিতে গিয়ে আপনি পোষাক শ্রমিকদের কথা বলেছিলেন। এইযে নিজেকে অতিমানব না ভাবা এবং সরলতা ও বিচক্ষণতা এবং দেশপ্রেম সব মিলিয়ে আপনাকে আমি অনেক ব্যতিক্রম একজন হিসেবেই ভাবতাম। রাজনীতির লোভটা সামলাতে পারলেননা এখানেই এসে আমার সেই মনো নক্ষত্র এর পতন হয়ে গেল।
দেশে এমন কোন লোক ছিলনা আপনাকে পছন্দ করতনা, করেনা না বলে আমি করতনা বলছি এই কারণেই যে, রাজনীতির জার্সি গায়ে দেয়ার সাথে সাথে আপনি বিভক্ত হয়ে গেলেন রাজনীতি বিচারে। আর আমার অভিব্যাক্তি হলো আপনি স্বাভাবিক সময়ে স্বাভাবিক রাজনীতিতে আসেননি। আপানি এসেছেন এমন একটা সময়ে যখন একটা দল বা সরকার তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রশ্নের সম্মুখিন, যারা উন্নয়নের জোয়ার তুলে মানুষকে ভোলাতে চায়, শেয়ার লুট, ব্যাংক লুট, ইলায়াস আলীদের মতো হাজার হাজার গুম, সাগর রুণির মতো হাজার হাজার হত্যার দায়ে প্রশ্নের সম্মুখীন। আরো একটা বিশেষ শব্দ ইচ্ছে করে ব্যাবহার করলামনা কেননা সময় স্বাভাবিক নয়, আমার মতো সাধারণ মানুষ কথা বলতে ভয় পায় এবং যাদেরকে প্রতিনিয়ত মানুষ ভয় পাচ্ছে আপনি সেই পালে হাওয়া দিচ্ছেন এখানেই আমার নক্ষত্রের পতন।
আপনি এই পালে হাওয়াটা এই দুঃশাসন এর আগের টার্মে কিংবা ভবিষ্যতে স্বাভাবিক হলে তখন আসলে নক্ষত্র তার স্থানচ্যুতি হতোনা সেটা নিশ্চিত। অনেকেই বলছেন নতুনরা আসুক, ভালরা আসুক, রাজনীতি পরিবর্তন হোক। কিন্তু সমস্যা হল সেই পালের অনেক ভালদেরকেইতো তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে ফেলে দেয়া হচ্ছে, আপনার ভাল ইমেজটা কেটে গেলে আপনাকে ছুড়ে ফেলবেনা তার নিশ্চয়তাও কোথায়! আজকে আপনাকে লাগছে একটা চমক দেখাবে বলে, আমরা চমকিতও হলাম! ইতিমধ্যে আপনার পক্ষে বিপক্ষে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছে পুরো জাতি। আপনি আর সবার রইলেননা। যারা বলছে ভাল লোক রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন কিন্তু এসবতো আবেগি গদবাঁধা কথা, রাজনীতির মতো বিশাল এক প্লাটফর্মে আসারওতো একটা প্রস্তুতি প্রয়োজন, আপনার ইচ্ছা, দর্শন, কী করতে চান, কী বার্তা নিয়ে আসলেন? কী কী পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক কিভাবে করতে চান ইত্যাদি এসব বিষয়ে হোম ওয়ার্ক ছাড়ায় নেমে পড়া এটা অন্য সবাই করে, আপনি সেই তথাকথিত পথে আসলে আর ব্যাতিক্রম রইল কোথায়? লোকাল উন্নয়ন, সাহায্য সহযোগিতা যেটা এলাকা কেন্দ্রিক সেটা রাজনীতি না করলেও করা যায় এবং মানুষ উপক্রিত হয়। ইলিয়াস কাঞ্চন অনেক মহৎ কাজ করেও তার মূল্যায়ন হয়না উল্টো হুমকি খায়। রাজনীতিতে না আসাতে তাকে কেউ ভাল না বাসতে পারে অশ্রদ্ধা বা ঘৃণা করবেনা।
অনেকে বলতে চায় রাজনীতি বদলানোর জন্য আপনাদের প্রয়োজন, কিন্তু এসবতো ঠুনকো জবাব, বদলানোর লক্ষণতো প্রথমেই দেখলাম কোন পালে হাওয়া দিলেন, যে পাল বৈধতা খুঁজে ফেরে সারাক্ষণ। এবার আসা যাক দুই কদম সামনে এগোয়, বর্তমান নির্বাচনে ব্যালট ছিনতায়, কেন্দ্রে আসতে না দেয়া, জাল ভোট হওয়া এসব যখন হবে তখন আপনার কী অবস্থান হবে? আপনিতো একটা দল থেকে মনোনয়ন নিচ্ছেন সেই দলের সমর্থক এবং কর্মীরা যখন এসব করবে তার দায়টা কে নেবে? আপনার কাঁধে নিশ্চয়!
পরিশেষে বলি আমি দুঃখিত, আমার নক্ষত্রটার পতন হয়ে গেছে। আপনাকে দেখলে এখন আর বাংলাদেশের ছবি ভেসে উঠবেনা, খেলার ছবি ভেসে উঠবেনা, আপনি পুরো দেশের মানুষের ভালবাসাটাকে নিজ হাতেই বিভক্ত করে নিলেন। আপনার জন্য শুভ কামনা। ভাল থাকুন। সুস্থ্য রাজনীতি করুন।
বিষয়: বিবিধ
৭২৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাশরাফির নড়াইল ২ আসনে আওয়ামী লীগের আরও ১৬ জন নেতা নমিনেশন পেপার তুলেছে।
সে সব নেতারা ও তাদের কর্মী বাহিনীরা নিশ্চয়ই দলের জন্য বছরের পর বছর খেটে যাচ্ছে । এখন তাদের সামনে যদি এমন একজনকে নামিয়ে দেওয়া হয় যে কখনও রাজনীতিতে ছিলই না তাহলে এসব নেতা ও তাদের কর্মীরা কি সেটা সহজে মেনে নেবে। যারা দলের জন্য খাটছিল একটা নির্দিষ্ট সময়ে ভাল একটা পজিশনে যাবার জন্য , বাইরে থেকে উড়িয়ে এনে জুড়িয়ে বসানো একজন লোকের জন্য তাদের সে চেষ্টা বৃথা গেল।
নির্বাচনে যদি জিতেও যায় মাশরাফি তাহলে নিজ এলাকায় তার কর্মী বাহিনী কারা হবে ? যে ১৬ জন নেতা তার কারণে মনোনয়ন পেলো না তারা কি তার পেছনে শ্রম দেবে? কিংবা দলীয় ক্যাচাল কিভাবে সামাল দেবে মাশরাফি যে কি না রাজনীতিতে একেবারেই শিশু?
আসলে শেখ হাসিনা মাশরাফিকে দিয়ে জনগনের পালস বুঝে নিয়েছে। মাশরাফিকে মনোনয়ন দেবেন না (এটা মাশরাফিও হয়ত জানে)উনি , বলবেন আগামী ওয়ার্ল্ড কাপ পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাও।
এটা বলে শেখ হাসিনা জনগনের মজয় করে নেবেন (বাংলাদেশের জন গনের মন কিভাবে জয় করতে হয় সেটা হাসিনার চেয়ে ভাল কেউই পারে না)।
মন্তব্য করতে লগইন করুন