অগল্প
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১১:২৮:০২ সকাল
মিরু'র সাথে পরিচয় হবার প্রথম দিককার ঘটনা। তখনো মিরু চরিত্রটা মিরু হয়ে উঠেনি। নারু, পারু এমন আরো কিছু শব্দ ঘুরপাক খাচ্ছিল মনের চারপাশে। পারু'কে একদিন দেখেছিলাম ইপিঝেট মোড়ে। বাস এর জন্য অপেক্ষা করছিল। আমি ফিরছিলাম অপিষ সেরে। অপিষ থেকে বের হয়ে টাইটা খুলে ফেলতাম তারপর বাসে ঝুলে চলে আসতাম। বাসের ভেতরের দিকে ছিলাম বলে আর ডাক দিইনি পারুকে। সে অনেক পরের কথা। আরো আগে যখন আমি কলেজে ছিলাম তখনকার কথা বলছিলাম।
মিরু'কে বললাম তুমি চলে যাও, আমার বাস কখন আসে ঠিক নেই। মিরু কি যেন ভাবল ক্ষণিক। হয়তো ভাবছিল আরেকটু দাঁড়াবে কিনা কিংবা অন্য কিছু। আমি তখনো মেয়েদের মৌন ভাষাগুলো বুঝার মতো পরিপক্ক হয়ে উঠিনি। আচ্ছা বলে সে উঠে বসল রিকশায়। আমি অবাক হলাম রিকশা ড্রাইভারকে আগে থেকেই কিছু না বলে বা দরদাম ঠিক না করে কেন উঠে পড়ল। এটা কি পরিচিত রিকশা ড্রাইভার? সে কী করে জানে এই রিকশা যাবেই তার গন্তব্যে। না, পরে খেয়াল করলাম রিকশায় বসেই কী যেন বলছে। তার গন্তব্যের ঠিকানাই হবে নিশ্চয়।
বাস আসল আরো মিনিট বিষেক পর। চকবাজার থেকে পুুরো জ্যাম হয়ে আসে। কলেজ গেইটে তায় মাঝেমাঝে থামায়ওনা। কেউ যদি নামার থাকে তাহলে একটা চান্স থাকে চলন্ত অবস্থায় দৌঁড়ে গিয়ে উঠে পরা। নিউমার্কেট এসে অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেল বাস। বেশ কয়েকটা সিট ফাঁকা। আমি দ্বন্দে পড়ে গেলাম কোনটাতে গিয়ে বসব? জানলার পাশেরটা নিশ্চয়। হোক একটু রোদ তবুও মানুষ, প্রকৃতি আর ভাবতে ভাবতে যাওয়া যাবে। বসে বসে মিরু'কে ভাবা যায়। সে কোথায় যাচ্ছে, কোথায় তার বাসা বা বাড়ি, কে কে থাকে ওখানে ইত্যাদির একটা চিত্রপট আঁকা যাবে মনেমনে।
টাইগারপাস এসে হাত সিগনাল। হাত সিগনাল বলছি একারণে যে লাল সবুজ বাতির কোন ব্যাপার নয়, ছিলওনা, ট্রাফিক পুুলিশ হাত ইশারা করে এই দিককের গাড়িগুলো থামালেন দুই চার মিনিট এর জন্য। রাস্তার ওপারের মহিলাটাকে আমি চিনি। মহিলাটা কেন হাতঘড়ি পরেনা সেটাও জানি। কেন সে মধ্যবয়ষ্ক পুরুষটাকে কয়টা বাজে বলে সময় জিজ্ঞাসা করছে তাও জানি। সেই গল্পটাই বলি আজ।
কোরবানীর গরু জবাই হয়ে গেছে সকাল নয়টার দিকে। গরু জবাই করার ব্যাপারগুলোতে আমি থাকিনা, দূর থেকে দেখি কেবল। আমার বাম হাতে জোরটা একটু কম, তায় আমি ধস্তাধস্তি কিং ভারী ওজনদার যে কোন কাজকে এভয়েড করে চলি। চামড়া ছিলা থেকে মাংস ভাগ করার কাজগুলোতে আমি খুব সক্রিয় থাকি। আমরা সেবার তিন পরিবার মিলে কোরবান করেছি। ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি সাত ভাগে কোরবান। সাতটা পরিবার এক হাজার করে দিলে সাত হাজার দিয়ে গরু পেত। আরো কিছু খরচ হতো সেগুলো ভাগের হিসেবে যত পরে সবাই দিয়ে দিত। সেই সাত ভাগ কমে যখন তিন পরিবার মিলে একটা গরু কোরবানী হবে আর গরুর দামও যেখানে সেই ছোট বেলার দাম এর চাইতে চারগুণ বেশী তাহলে বুঝতেই হবে আমাদের আর্থিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে।
কাটাকুটি অনেক হল এবার একটু ফাঁকি দেবার পালা। এক ফাঁকে চলে এলাম ঘরে। আমার পিছু পিছু এক মহিলা এসে দরজার কড়া নাড়ল। ভাবলাম মাংস নেবার জন্য আসল। বললাম এখনো তো ঘরে মাংস আসেনি একটু পর আসুন। বাইরে ভাগভাটোয়ারা চলছে, একটু পর ঘরে আসলেই পাবেন। ওনি বললেন মাংসের জন্য আসিনি আমার অন্য কথা আছে।
সেই অন্যকথায় মজে গেল সবাই। পাকঘরে বাবা কাটছেন নলা আর মা চুলায় তুলে দিলেন প্রথম রান্নার মাংসটা। আরো বেশ কিছু মাংস রয়ে গেছে, কেটে সাইজ করতে হবে। মহিলাও বসলেন একটা পিরি নিয়ে, কাজ করছেননা, অনবরত কথা বলে যাচ্ছেন। বাবা আর মা শুনে যাচ্ছেন। পাশে দুই বোন মহা বিরক্ত হচ্ছে সেইসব কথা শুনে। সবচেয়ে বেশী বিরক্ত হচ্ছে বাবা কেন এই মহিলাকে বের করে দিচ্ছেনা। বাবা আরো খুটিয়ে খুটিয়ে প্রশ্ন কেন করছে।
মহিলার বাবা হচ্ছেন কাষ্টম এর বড় অফিসার। মহিলার মাথায় একটু সমস্যা আছে সে নিজেই স্বীকার গেল। মহিলা স্কুল টিচার। স্কুলের একটা ট্রেনিং ক্যাম্পে পরিচয় আমার খালুর সাথে। সেই থেকে দু'জনের সখ্যতা এবং তারা পরে বিয়ে করে সংসার শুরু করে দেন। সবার কাছে গোপন ছিল ব্যাপারটা। খালুু বিভিন্ন অজুহাতে স্কুুলের কাজে গ্রাম থেকে শহরে আসে সেটা এই নববিবাহিত স্ত্রির জন্যই। আমাদের কারো বিশ্বাস হচ্ছেনা তবুও গোপনে খবর পাঠানো হল খালুকে আসার জন্য। খালুর আদ্যপান্ত যখন সব বলেই দিচ্ছে তায় কিছুুটা সন্দেহ থেকে যায় কোথাও কিছু ঘাপলা আছে নিশ্চয়। তখনতো আর মোবাইল ছিলনা হাতেহাতে, ল্যান্ডফোন ছিল। ল্যান্ডফোনেই গ্রামে খবর দেয়া গেল খালু যেন অতি সত্বর শহরে চলে আসেন।
মহিলা স্ত্রীর দাবী নিয়ে আসছেন তায় এর একটা বিহীত না করে যাবেননা। রাতে থেকে গেলেন। আমরাও দোদল্যমনায় পড়ে আর সামাজিক হইহল্লা ভেবে ব্যাপারটা গোপনে কী হল জানার জন্য মহিলাকে রাতে থাকার অনুমতি দেয়া গেল। তাছাড়া আগামীকাল খালু আসলে সামনা সামনি জিজ্ঞাসা করে সত্যটা জানা যাবে।
পরের দিন ভোরে মহিলা লাপাত্তা। খুব একটা লাভ ক্ষতি হয়নি, নামাজের নতুন জায়নামাজ, কিছু টাকা পয়সা। সবার পকেট হাতিয়ে যা পেয়েছেন আর দুই একটা শাড়ি নিজের শরীর এর সাথে মিশিয়ে যা নিতে পেরেছেন নিয়ে লাপাত্তা। খালুর কাছে আবার খবর পাঠালাম আর আসতে হবেনা। খালু এসেছিলেন আরো অনেক পরে। তখন জানা গেল সম্ভবত কোন এক বাস জার্নিতে এই মহিলার সাথে পরিচয়, যেতে যেতে খালুকে সব জিজ্ঞাসা করেছিলেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। পেশা স্কুুল শিক্ষক, বাড়ী কোথায় এসব বলেছিলেন তখন। সেটাকে পুঁজি করে এই কান্ডটা ঘটালেন। টাইগার পাসে প্রায়ই দেখা যায় মহিলাটাকে। যখনই দেখি দেখতাম কাউকে না কাউকে সময় জিজ্ঞাসা করছে। কাউকে টার্গেট করে কথা বলার এটাও একটা অজুহাত।
মিরু'কে আমি বলেছিলাম এই গল্পটা। জানিনা মিরু এটাকে গল্প হিসেবে নিয়েছে নাকি সত্য ঘটনা হিসেবে। তার অনুভূতি আমি বুঝতে পারিনি।
বিষয়: বিবিধ
৭০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন