কেমন আছ?

লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ২২ আগস্ট, ২০১৮, ১২:৪২:১১ রাত



আমি তখন দিকভ্রান্ত। এক শূণ্যতা গ্রাস করে আছে আমাকে। কৃষ্ণগহ্বরে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছি আমি। আমি বুঝতে পারছি চরম অধঃপতন হচ্ছে আমার, কিন্তু নিজেকে সংবরণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি পুরোটাই। আমার কর্ম ও করণিয় খেয় হারিয়ে ফেলেছে। খুব তুচ্ছ করছি নিজকে দিনের পর দিন। আমি তখনো ধরতে পারিনি দুঃখবোধটাও সম্পদ। সেটা সংরক্ষণ করে রাখতে হয় নিরবে, গোপনে। অথছ আমি চাইছিলাম সেটা ভাগ করার।

সুমনকে বললাম আমাকে একটা নাম্বার দিও বেঁছে। শুধু কথা বলব অন্য কিছু'না। সুমনের বিশাল অভিজ্ঞতা প্রেম ও নারীর। কিছু কিছু মানুষ আছে প্রেম নিজ থেকেই ধরা দেয় ওদের কাছে। একটা নয়, দুইটা নয় একাধিক এবং যারা একই সাথে একাধিক প্রেমে জড়ায় নিশ্চয় তাদের চারিত্রিক ত্রুটিও থাকবে। সেসব কথা অন্যদিন হবে। সুমন আমাকে একটা নাম্বার ঠিকই দিল। আমি নাম্বারটা নিয়ে রেখে দিলাম, কোন পরিচয় আর জানতে চাইনি।

- হ্যালো নাদিয়া বলছেন?

- হুম

- কেমন আছেন?

- জ্বি ভাল। তবে আপনাকেতো চিনতে পারলামনা।

- আমাকে চিনবেননা, আমিও আপনাকে চিনিনা

- তাহলে ফোন করলেন যে? নাম্বারই বা কোথায় পেলেন?

- সেটা জানা কি খুব জরুরী?

- না জরুরী না, আর প্রয়োজনও নেই। আমি রাখছি। আর কখনো ফোন করবেননা আমাকে।

নাদিয়া ফোন কেটে দিল। কিন্তু আমার কিছু যায় আসেনা। এভাবে কিছুদিন ফোন করতে থাকলে নাদিয়া আর কাটবেনা সেই আস্থা আমার ছিল নিজের উপর। হলোও তায়। প্রতিদিন বা দু'একদিন পরপর ফোন করতে থাকলাম সন্ধ্যা সাতটায়। আমার কেন যেন মনে হতো সন্ধ্যা সাতটা টা উৎকৃষ্ট সময় ফোন করার জন্য। সেসময় নাদিয়া ফ্রি থাকবে এবং আবেগপ্রবণ থাকবে।

রোমান্টিক ভাবনার জন্য রাতটা খুব কাজের। আসলে আলো-ছায়া বা অন্ধকার মানুষের মনে ভিন্ন মাত্রায় প্রভাব ফেলে। আলোর শব্দ গুলো এক প্রকার আর অন্ধকারের শব্দগুলো ভিন্ন। এইযে আমরা প্রতিদিন ভোরে জাগি এবং তারপর থেকে শব্দগুলো খেয়াল করি? যে যেখানেই থাকিনা কেন গ্রাম বা শহরে। শহরে হলে কাকের স্বর, গাড়ির হর্ণ এসব শুনব আগে আর গ্রামে হলে পাখির কিচিরমিচির হবার সম্ভবনা বেশী।

এইযে দিনের বেলার আলো এবং শব্দগুলো মানুষকে ভাবনার জগতে থাকতে দেয়না। মনোসংযোগ নষ্ট করে দেয়। তারপর দিনের বেলায় মানুষ নানান কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন তার পক্ষ্যে সম্ভব হয়না গভীর কিছু ভাবার। তখন সে যা ভাববে সব বাস্তবতার নিরিখে ভাববে। কিন্তু রাতের চিহ্ণ ভিন্ন। রাতের চিন্তায় চাইলে একজন মানুষ পুরো বিষ্ম ভ্রম্মান্ড ঘুরে আসার ক্ষমতা রাখে। যত আবোল তাবোল ভাবনা সব রাতেই সম্ভব। সারারাত আধো ঘুমে আধো জাগরণে কতো প্রেম হয়ে যায়। রাতের ভাবনার প্রেমিকার কাছে দিনের আলোতে থাপ্পর খাওয়াও অস্বাভাবিক কিছু না।

নাদিয়া আমাকে উপেক্ষা করতে পারেনি। তার সাথে একটা সম্পর্ক ঠিকই হয়ে গেল। সে একটা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। ছোট দুই ভাই আছে তার। আমার সাথে দেখা করতে চায়। বাড়ি মহেশখালি। আমরা কেউ কাউকে দেখিনি তখনো। কেবল মোবাইলের কথোপকথোন ছাড়া। সময় এবং স্থান নির্ধারণ হলো আমরা দেখা করব কক্সবাজার। সে তার বান্ধবীর সাথে আসবে। স্কুলের একটা কাজ আছে সেটা বলে আসবে বাড়িতে, আর রাতে তার খালার বাসায় থেকে পরের দিন ব্যাক করবে।

আমি ফোন দিলাম মাসুমকে। মাসুম এনজিওতে জব করে পড়ালেখার পাশাপাশি। কক্সবাজার পোষ্টিং। নির্দিষ্ট সময় নাদিয়া আসল এবং দেখা করল মাসুম। আমি একটা বিশেষ কাজে আটকা পরে যেতে পারিনি সেটা বলতে বলেছিলাম।

মাসুমের কাছে আমি আর কিছুই জানতে চাইনি। নাদিয়ার সাথেও যোগাযোগ হয়নি আর কোনদিন। আমি মোবাইলের সিমটা পাল্টিয়ে নিলাম। আমার আসলে কথা বলার রোগ পেয়ে বসেছিল। অন্য কিছু আমার উদ্দেশ্য ছিলনা।

কেমন আছ নাদিয়া?

বিষয়: বিবিধ

৫৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File