রোহিঙ্গা কথন
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ১২ মে, ২০১৮, ০৯:১৭:৩২ রাত
" আজিয়ে রোজা হালিয়ে ঈদ
তোম্মা হাঁদে ফিতফিত।"
শব্দগুলো যখন কানে এল, স্থির থাকা গেলনা। চলে যেতে হল শৈশবে। কথাটার অর্থ হল আজ রোজা কাল ঈদ, তোমার মা কাঁদে ফিতফিত। ছোটবেলায় রমজান এবং ঈদের আগে আমরা এসব বলে বলে আনন্দ পেতাম। এগুলো আঞ্চলিক বা লোকজ ভাষা। ভাষাটা চট্টগ্রামের। শুনতে একটু বেখাপ্পা লাগে, সেটা ভাষার ধরণ যতটা না, তার চাইতে অর্থটা। 'তোম্মা' মানে তোর মা, মা এর সাথে তুই তুকারি তারপর কান্নার ধরণটা ফিতফিত। মাকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য যেন। চট্টগ্রামের আজকালকার ছেলেমেয়েরা এভাবে আর আনন্দ করেনা। সময়, শিক্ষা, প্রযুক্তি ইত্যাদি প্রভাবে বর্তমান চট্টগ্রাম সমাজও তাদের ছেলেমেয়েদের শুদ্ধ ভাষায় অভ্যস্থ্য করে তুলছে। আজকালকার ছেলেমেয়েরা বাড়ীর উঠোন পাবে কোথায় এভাবে দল বেঁধে আনন্দ হৈ হুল্লুড়ে মেতে উঠার।
এতদিন পরে তবুও যখন কথাগুলো শুনলাম ছোটদের মুখেই তায় ভাবতে বাধ্য হলাম। কথাগুলোর অর্থ যাই হোকনা কেন লাইন দু'টোর ছন্দের কারনে টিকে গেছে বলে আমার ধারণা। দরজার বাইরে গলিটাতে রোহিঙ্গা শিশুরা খেলছিল। ইচ্ছে হল উঁকি দিয়ে দেখি। হাতের অপিষ থেকে এসে হালকা চা নাস্তা সেরে দেখব ভাবতে ভাবতে শব্দগুলো হারিয়ে গেল। আর শোনা যাচ্ছেনা। নিশ্চয় ছোটদের দলটা খেলতে খেলতে অন্য দিকে চলে গেছে। আমিও তায় বসে পড়লাম কিবোর্ডে হাত।
লিখতে লিখতে ভাবছিলাম, লাইন দু'টোর কথা। শুধুই কী 'মা' কে অপমান করা হয়েছে? আরও কী কিছুু আছে সেখানে? মা কেন কাঁদবে? রমজান কিংবা ঈদ এগুলোতো খুশিরই বার্তা, ছোটরা তায় খুশিতেই মশগুল। একটা ব্যাপার থাকতে পারে সেটা হল দারিদ্রতা। রমজানে আমরা এখন যেমন খানার বন্যা বয়ে দিই তখনতো এমনটা ছিলান, ঘরেঘরে দারিদ্রতা ছিল। রমজান পার করে ঈদে সন্তানদের নতুন জামা, জুতো কিনে দিতে না পারার কান্না হয়তো লুকিয়ে আছে এখানে। আজিয়ে রোজা হালিয়ে ঈদ, তোম্মা হাঁদে ফিতফিত।
চলমান..........
বিষয়: বিবিধ
৫৬৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন