দ্বিধা

লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ১৪ এপ্রিল, ২০১৮, ০৯:৩০:১৪ সকাল

সম্পর্কটাতে ছিলনা কোন দাঁড়ি, কমা বা সেমিকোলন। খন্ডত, চন্দ্রবিন্দু এসব ছিল হয়তো কিংবা তাও ছিলনা। তায় এটা যে একটা সম্পর্ক সেটাও নিশ্চিত ছিলনা। তাদের মাঝে ফোনে কথা হ'তনা, কোন বিশেষ উপলক্ষ্যে দেখা হ'তনা। তবে টান ছিল পৃথিবীর। পৃথিবীর টানে আমরা যেমন পৃথিবী ঘেষে থাকি, ছিটকে পড়িনা মহাশূণ্যে, কিন্তু টানটা অনুভব করা যায়না, চুম্বক যেমন সজোরে টেনে নেয় বা ধাক্কা দেয় পৃথিবীর টানটা তেমন জোরালো নয়। আমরা যখন উপরের দিকে লাফ দিই তখন আবার পড়ে যাই, টানটা বুঝিনা কিন্তু পৃথিবী ঠিকই টানে।

পরিচয়টা কলেজেই। হায়, হ্যালো, কেমন আছ ইত্যাদি। সবাই যেমন সবার সাথে কথা বলে তারাও বলেছে সেসব কথা। কেউ ভাবেনি, কেউ বোঝেনি বা কেউ দেখেনি সেখানে আরো কথা ছিল। বুঝবে কী করে, তারাতো আরো যে কথাটা আছে, সেটাতো নিজেরাই বলেনি কখনো। শুধু মনে হয়েছে সব কথা শেষ হলে আরো কথা আছে। সেই না বলা কথাটা রেখে যখন বলা হয়, আসি বা চল যাই তখন নিশ্চুপ হেঁটে চলা কলেজ গেইট অবধি। তারপর গন্তব্য ভিন্ন, বাহন ভিন্ন, জগৎ ভিন্ন।

তারা কেউ কখনো দেখেনি অপরের জগৎটা, যেখানে তারা থাকে নিজেদের পরিবারের সাথে। কথা প্রসঙ্গে ব্যাক্তি, বস্তু, অবস্থান এসব বিষয় যখন আসতো সেটা তারা কল্পনায় রোমন্থন করে ভেবে নিত একটা চিত্রপট।

একটা নীল রঙ্গের চৌকাঠ, উঠোন, টিনের চালা, কাঠের জানালা, যৌথ পরিবার, বাড়ির পাশে পুকুর, ওপাশে চাষের ক্ষেত সব কল্পনায় গড়া। বুঝায় যাচ্ছে তাদের মাঝে, মাঝেমধ্যে যেসব কথাবার্তা হতো সেসব এর বিষয় পাঠ্য বই, হিন্দি সিনেমা ইত্যাদি বিষয়গুলো ছিলনা। কল্পনায় যখন মাঠ-ঘাট এর বিষয় উঠে আসে নিশ্চয় সেসব আলোচ্য বিষয়ও ছিল।

সম্পর্কটা গড়িয়েছিল আরেকটু দূর। যদিও কেউ কারো জন্মদিনে কোন গিফ্ট করেনি কোন বছর। সেসব নিয়ে তাদের উৎসাহ ছিল কী না সেটা বোঝা যায়নি। তবে কোন উপলক্ষ্য ছাড়াও তারা কিছু উপহার আদান প্রদান করেছিল, এই যেমন কিছু বই, গানের ক্যাসেট, কলম, ক্যালেন্ডার এবং আরো কিছু যেগুলো কোন বস্তু নয়। তারা একে অপরের ভেতরে প্রবেশ হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু সেখানে নেই কোন দরজা, ছিল কেবল দ্বিধা।

শেষ দেখাটা হয়েছিল যেদিন ভাইভা ছিল মাষ্টার্স এর। ভাইভ পরীক্ষা দিতে এসেছে দু'জন অন্যান্য সহপাঠীদের মতোই। টিচার্সরুমে একে একে প্রবেশ করছে আর বের হয়ে আসছে। তাদের নাম বা রোল নাম্বার ডাকা হলে তারাও ফেইস করে আসবে। তেমন কোন কথা হলনা তাদের, চোখের কোনে জল জমাট হয়েছিল শুধু। রোল নাম্বার কাছাকাছি না থাকাতে ভাইভাটা তারা ফেইস করেছিল এক ঘন্টা ব্যবধানে। তারপর যে যার গন্তব্যে।

একদিকে চাকরীর তোরজোড়, অন্য দিকে বিয়ের। তারা সেটা জানতো বলেই দ্বিধাটা পুষে রেখে দিয়েছিল দুই মনে। এই দ্বিধা নিয়েই তাদের অন্য গন্তব্যে চলে যাওয়া। তারপর আর জানা যায়নি কে কোথায় কেমন আছে.............

এখানেই শুরু কিংবা শেষ।

না গ্রীষ্ম, না বর্ষা, দ্বিধাটা জেগে উঠার কোন ঋতু নেই। না দিন কিংবা রাত। চাই কেবল শূণ্যতা। শূণ্যতা যখন ভর করে মনে হোক সেটা নির্জনে বা জনাকীর্ণ মেলায়, পাহাড়ের চুড়ায়, ঝর্ণার কাছে, নদীর কিনারে, সাগরের ঢেউ এর উপর সূর্যের কিরণে দ্বিধাটা জেগে উঠে। যে বাতাস বয়ে গেছে সেটা কী প্রেম ছিল? নাকি অন্য কিছু!

বিষয়: বিবিধ

৬৫৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385113
১৫ এপ্রিল ২০১৮ রাত ১০:২২
নূর আয়েশা সিদ্দিকা জেদ্দা লিখেছেন : ভালো লাগলো লিখার ধরণ। মাঝে মাঝে গদ্য লিখায় হাত লাগাতে পারেন। লিখাটি বোধহয় দু'বার এসে গেছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
১৬ এপ্রিল ২০১৮ দুপুর ০১:০০
317564
বাকপ্রবাস লিখেছেন : ধন্যবাদ আপু

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File