মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানী ও ট্রাভেল এজেন্সির নৈরাজ্যবাদ
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০১:৪০:৪৬ রাত
মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানী প্রক্রিয়ায় শ্রমিকরা ট্রাভেল এজেন্সির কাছে মোটামোটি জিম্মিই বলা চলে। ইউএই, কুয়েত এর মতো দেশগুলো বাংলাদেশের শ্রমিক নিচ্ছেনা অনেক বছর যাবৎ, কিছু সংখ্যক পথ খোলা ওমান, বাহারাইন কিংবা সম্প্রতি কাতার।
বেশ কিছুদিন পূর্বেও কাতারে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক যাচ্ছিল এবং তা গড়পড়তা সওদী আরব এর পরের অবস্থানে ছিল কিংবা এখনো আছে। মাঝের সেই সময়টাতে বেশ কিছু ভিসা প্রতারণা হয়েছিল, দালালপক্ষরা সেখানকার স্থানীয় আরবদের মেনেজ করে মিথ্যে অপিষ এর ঠিকানা ব্যবহার করে বেশ কিছুু ভিসা ইস্যু করেছিল এবং পরবর্তীতে কাতার হুকুমাত (সরকার) সেটা বুঝতে পেরে তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করার ফলে প্রবণতাটা কমে গেছে। কাতার ছোট রাষ্ট্র হবার দরুণ খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারে সবকিছু।
সওদি আরবে দীর্ঘ বিরতির পর ভিসা চালু হলে হুররে বলে সবাই (বাংলাদেশীরা) যাওয়া শুরু করল, বিশেষ করে ইউএইতে চাকরীহারা হয়ে যারা কাফালা (স্পন্সর) পরিবর্তন করতে না পেরে দেশে যেতে বাধ্য হয়েছিল। কেননা বাংলাদেশীদের কাফালা পরিবর্তন এর সুযোগটা ওরা আর দিচ্ছেনা। কাতারে যেতে খরচ পড়ে ৩/৪ লাখ টাকা আর সওদি আরবে ৫/৬ লাখ টাকা।
কাতার এর ভিসা ব্যবস্থাপনা সওদি আরব হতে কিছুটা সহজ, কেননা সেখানে ভিসা ইস্যু হবার পর যে কোন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়া যায়। আর কাতার হুকুমাত এনশিওর করার চেষ্টা করে শ্রমিকদের থাকা, কর্মস্থলে যাওয়া আসা ইত্যাদির এবং খাওয়া খরচটা নিজেকেই বহণ করতে হয় বেশীরভাগ কোম্পানীতে। কোম্পানী এসব খরচ বহণ করতে গিয়ে তাদে অতিরিক্ত যে টাকা খরচ হয় সেটা পুষিয়ে নেয় সেলারীটা একটু কম দিয়ে। কাতারে নিম্ন কেটাগরীর শ্রমিকদের বেতনটা একটু কম উপরের স্তরের চেয়ে। আর সেলারীটা যেন প্রতিমাসে ঠিকমত দেয় হুকুমাত সেটার প্রতি কঠোর নজরদারীর ব্যবস্থা করেছে আর বেতনটাও এখন ব্যাংক এর মাধ্যমে দেয়া বাধ্যতামূলক করেছে।
অন্যদিকে সওদি আরবে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় এজেন্সিগুলো রীতিমত নৈরাজ্যকর আচরণ করে, তারা সরকারকে মেনেজ করার মাধ্যমে এমন প্রকৃয়া সৃষ্টি হয়ে আছে যে, তাদের কাছে জিম্মিই বলা চলে। সওদি হুকুমাতও এমন একটা প্রকৃয়া জারি রেখেছে যার কারনে এজেন্সিগুলো আরো স্বেচ্ছাচারী। সেটা হল, ভিসা ইস্যু হবার পর তালিকাভূক্ত এজেন্সি গুলোর যে কোন একটার নামে (ওকালা) রি'ইস্যু করতে হবে, সেই এজেন্সির নামে রেজিষ্ট্রি হবার পর এজেন্সি যদি বাড়তি ফি দাবি করে কিংবা বিভিন্ন অজুহাতে প্রসেসিং এর সময় দীর্ঘসূত্রিতায় ফেলে দেয় তাহলে আর কিছুই করার থাকেনা। এমনও হয় সব ঠিকঠাক হবার পরও টিকেট ইস্যু করতে অনেক সময় ক্ষেপণ করে, তারা চায় কম মূল্যে অনেকগুলো টিকিট একসাথে ক্রয় করার। এমতবস্থায় যাত্রী যদি তার ভিসাটা অন্য কোন এজেন্সিকে ট্রান্সফার করতে চায় তাহলে প্রায় এক লাখ টাকা বাড়তি গুনতে হবে ফি বাবদ।
এখানে উল্লেখ্য যে মধ্যপ্রাচ্যে ফ্রি ভিসা বলতে কিছু নেই। যেটাকে সবাই ফ্রি ভিসা বলে সেটা মূলত অবৈধ। কাতারে তুলনামূলক খুবই কম হলেও সওদি আরবে অনেক বেশী পরিমানে তথাকথিত ফ্রি ভিসায় কাজ বা ব্যাবসা করে আসছে প্রবাসীরা।
কাতার ও সওদিআরব দ্বন্দে এবং অন্যান্য কারনে কাতার থেকে প্রচুর প্রবাসী দেশে চলে যাবার খবর পাওয়া গেছে তবে সওদি আরবের অবস্থা বর্তমানে শোচনীয় বলা যায়। সেখানে ভীশণ ২০৩০ ঘোষণার আওতায় এমন নীতিমালা আর ট্যাক্স এর মতো ফি এবং ভ্যাট কার্যকর হবার ফলে প্রবাসীরা আতংকে দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে ফ্রি ভিসায় থাকা প্রবাসীরা। কোম্পানীগুলোকে হুকুমাত এর আইনকানুন মানতে বাধ্য করা এবং নির্দিষ্ট ক্যাটাগরীতে সওদি জনগণ ছাড়া অন্যদের ব্যাবসা পরিচালনা নিষিদ্ধ এবং প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট অনুপাতে সওদি নাগরিক রাখা বাধ্যতামূলক তার সাথে কাফালা নিয়ম এর যাতাকলে নিষ্পেষিত হয়ে অনেক প্রবাসী দেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে এবং যাদের আয় রোজগার ভাল ছিল, তাদের পরিবার নিয়ে নির্ঝঞ্জাট দিন যাপন করছিল, তারাও বাধ্য হল পরিবার দেশে পাঠিয়ে দেবার। ফলে সওদিআরবের স্কুুলগুলোতে ষ্টুডেন্ট সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে।
আমাদের সরকার আগে হিসেব দিত কতো লোক প্রবাসী হয়েছে, এখন সেটা আর উল্লেখ করেনা, কারন এখন হিসেব দিতে হবে কতো রিটার্ন আসছে। অবাক হবার কিছু নেই একটা এজেন্সীর বিজ্ঞাপন দেখে, মাত্র এক লাখ বিশ হাজার টাকায় তারা শ্রমিক পাঠাবে সওদি আরবে। সংকট এতো তীব্র আকার ধারণ করেছে যে এজেন্সিগুলো জিম্মি করাতো দূরের কথা টিকে থাকাটায় দূরহ হয়ে পড়ার কথা। এজেন্সিগুলো সরকারের সাথে কিভাবে বোঝাপড়ায় কাজগুলো করে থাকে সেটা বুঝার জন্য একটা উদাহরণ দেয়া যাক। সওদি আরব যেতে হলে দেশে মেডিক্যাল টেষ্ট করাতে হয়, বিশেষ করে ঢাকায় অনেক মেডিক্যাল সেন্টার গড়ে উঠেছে যেগুলোর মালিক এর মেনপাওয়ার এজেন্সিও আছে বা যোগসূত্র থাকে এজেন্সির এবং সেইসব এজেন্সিগুলোতেই রেফার করা হয় ম্যাডিকেল টেষ্ট করার জন্য। এখন যেহেতু বৃহৎ বাজার সওদি আরবে মানব সম্পদ রপ্তানী শূণ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে নিশ্চয় ম্যাডিক্যাল ক্লিনিকগুলো রুগ্ন হয়ে চুপসে যাবে রোগীর অভাবে।
শেষ করা যাক সেই বিজ্ঞাপন দিয়ে, যেটা দেখে আমার এই লেখাটার সূত্রপাত।
★জরুরী ভিত্তিতে সৌদি আরবের বিখ্যাত AL MARAI COMPANY এর জন্য এসিসট্যান্ট সেলসম্যান আবশ্যক।
★বেতন: ১১১০+ওভারটাইম।
★মোট খরচ মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার।
★বাসস্থান,আকামা,মেডিকেল কোম্পানি বহন করিবে।
★খাওয়া নিজের।
★শর্ত
(১)এসএসসি পাস হতে হবে।
(২)ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।
(৩)বয়স ২৪-২৮ এর মধ্যে থাকতে হবে।
★সরাসরি বাছাইয়ের জন্য অফিসে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা যাচ্ছে।বাছাইকৃতরাই চুড়ান্ত ডেলিগেটে অংশ নিতে পারবেন।
#ডেলিগেট কর্তৃক ইন্টারভিউ তারিখ:২৪ ফেব্রুয়ারি।
বিষয়: বিবিধ
৫৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন