প্রসঙ্গ ধর্ম এবং রাজনীতি
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ১১ অক্টোবর, ২০১৭, ০৮:৩০:২৯ রাত
আধুনিক যে সর্বোৎকৃষ্ঠ শাসন ব্যবস্থা তা হল গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্র প্রাচীন যুগ গ্রীক সূত্রে পাওয়া। ধর্ম ও রাজনীতির যে সম্পর্ক এবং দ্বন্দ ইউরোপে (মধ্যযুগ ১০৬৬-১৪৮৫) সেটার অবসান হয় মধ্যযুগ এর অবসান এর মধ্য দিয়ে। আর ধর্ম বলতে সেটা খ্রীষ্টান ধর্ম। তখন গীর্জার কাছে অঢেল সম্পদ ও ক্ষমতা ছিল সেই ক্ষমতা পরবর্তীতে রাজার হাতে এসে গীর্জাকে রাজনীতি হতে পৃথক করার মাধ্যমে যে রাজনীতির চর্চা তার ধারাবাহিকতায় আধুনিক যুগ এর সূত্রপাত।
ক্ষমতা, রাজনীতি, আধিপত্য ও প্রভাব সূত্রে আমরা যে রাজনীতি চর্চা করি সেটা ইউরোপ কর্তৃক নির্ধারিত ও নির্বাচিত শাসন ব্যাবস্থা এবং বর্তমানে সেখানে যোগ হয়েছে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র। আর রাজনীতি যে তিন যুগ নির্বাচন, নির্ধারণ, সময়, প্রেক্ষাপট সবই তাদের দেয়া ও প্রভাবাধীন। প্রচীন যুগ, মধ্য যুগ ও বর্তমান আধুনিক যুগ।
বর্তমান যুগে রাজনীতিতে ধর্ম থাকলেও সেটা পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলে কারন ইউরোপ ও আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র ধর্মকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করতে আগ্রহী নয়। ইসলাম এসে এই ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারেনি বা ছুড়লেও টিকে থাকতে পারেনি যার ফলে তাদের অনুসারিত পথটিই চর্চা হয় বা হচ্ছে।
বর্তমান আধুনিক বিশ্বে ধর্ম ভিত্তিক দল আছে এবং তারা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্তও বটে। তবে সেটা গণতন্ত্রের গঠনতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক। ধর্মভিত্তিক দল গণতন্ত্রে থাকতে পারবে কিনা সেই প্রশ্নটা জোড়ালো আকারে ধারণ করেনি তার কারণ হলো ইউরোপ এই পর্বটা মধ্যযুগেই রেখে এসেছে, তারা দু'টোকে আলাদা ভাবেই চর্চা করতে আগ্রহী। কোন কোন দেশে ধর্মভিত্তিক দল থাকলেও তারা সেটা ইগনোর করে যায় কারন তাতে তাদের চার্চার গুরুত্বপূর্ণ বেঘাত ঘটছেনা। যদি ঘটতো তাহলে সেটার একটা হেনস্তা করেই ছাড়তো। আরো একটা কারণ হলো ধর্মভিত্তিক দলগুলো গণতন্ত্রকে মেনেই রাজনীতি করছে, তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভেতরেই নির্বাচন করছে তায় ধর্ম ও রাজনীতির সহঅবস্থান আপাত হিসেবে মেনে নেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো জোড়ালো প্রশ্ন আসবে যে, কি করে ধর্ম ভিত্তিক দল গণতন্ত্রে আসবে? কারণ দু'টোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভিন্ন। তখন কিন্তু ধর্মকেই পুরোপুরি সেলেন্ডার করতে হবে।
ধর্ম ও রাজনীতির এই টেক্সট এর মধ্যে ইসলাম একটা ছোট অনুষঙ্গ। কারন ধর্ম বলতে সব ধর্মের সমষ্টি। সেখানে ইসলাম একটা অনুষঙ্গ মাত্র। ঠিক তেমনি হিন্দু বা খ্রীষ্টান বা বৌদ্ধ ধর্মিয় রাজনীতিও। হিন্দু ভিত্তিক বা খ্রীষ্টান বা বৌদ্ধ বা অন্য যে কোন ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল থাকতে পারে তবে এগুলো গণতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক।
এতোসব আলোচনায় একটা অপ্রাসঙ্গিক বিষয় হলো ইসলামে রাজনীতি ফরজ কি'না? প্রসঙ্গটা আনলাম কারণ আধুনিক রাজনীতিতে কিছু কিছু ধর্ম ভিত্তিক দল আছে এবং ইসলাম ভিত্তিক দলগুলো তার মধ্যে অন্যতম। ইসলামে রাজনীতি ফরজ হতেই পারে তবে সেটা ধর্মীয় টেক্সট। ফরজ হলে প্রত্যেক ইসলাম সচেতন ব্যাক্তি যদি মনে করে ইসলামি রাজনীতি করতে সেটা করতেই পারে। কিন্তু সেই ফরজটা ইসলামি রাজনীতির, গণতান্ত্রিক রাজনীতির নয়। গণতান্ত্রিক রাজনীতি আর ইসলামি রাজনীতি নিশ্চয় ফারাক আছে। সুতরাং প্রশ্ন রইল ইসলামে কোন রাজনীতির প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং সেটা বর্তমান গণতান্ত্রিক রাজনীতির অধীনে থেকে চর্চা করা যাবে কিনা? এবং সেই চর্চাটা ফরজ এর আওতায় আসবে নাকি গণতান্ত্রিক প্রকৃয়া হিসেবে স্বাভাবিক চর্চা হবে?
বিষয়: বিবিধ
৫০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন