শংকা এবং আশংকা
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০২:২০:৩৬ দুপুর
অর্থনীতি ও ভূরাজনীতি বিচারে নাফ নদী ও বঙ্গপোসাগর এর মোহনা একটা গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এই জায়গাটা দখলে থাকলে ব্যাবসা বাণিজ্য ও পুরো অঞ্চলটা সামরিক আওতায় এনে নিয়ন্ত্রণ করে শাসন করা খুবই সহজ। তায় চীন ও আমেরিকা উভয় এর লোলোপ দৃষ্টি এই জায়গাটার প্রতি। এখনো বন্দর নির্মাণ এর উছিলায় হলেও প্রবেশ এর চেষ্টা দু'জনেরই।
এমনতর পরিস্থিতে রোহিঙ্গা ইস্যু একটা গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি হিসেবে ধরা দিয়েছে।আমার কাছে বিষয়টা একটা প্রজেক্ট এর আওতায় মনে হচ্ছে সবকিছু। সেখানে দাবা খেলছে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো বিশেষ করে চীন এবং দাবার ঘুটি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশ ও বার্মা এবং আরো খোলসা করে বলতে চাইলে বলা যায় শেখ হাসিনা ও সূচীকে দিয়ে। এখানে সরকার পরিবর্তন হলেও যেই আসুক ক্ষমতায় তাকেও এই দাবার ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
আমাদের দূর্বলতা হলো আমরা পররাষ্ট্রনীতিতে চালকের আসনে বসতে পারিনা, এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিরও একটা দূর্বলতা। আমরা যোগ্যতার ভিত্তেতে একজন দলনেতা ও রাষ্ট্রনেতা ঠিক করতে পারিনা তায় আমাদের দলীয় ব্যাবস্থাটা রাজতন্ত্রের আদলে রূপান্তর হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায়ও রাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মিথষ্কৃয়ায় বিদঘুটে পরিস্থিতির সম্মুখীন হল বর্তমান অবস্থা। আমরা নিজেকে নিজে চালিত না করে আন্দোলন সংগ্রাম শেষে শাসন করার দায়িত্বটা দিয়ে দিই অন্যের হাতে। সেই সূত্রেই রাজনীতিতে প্রবেশ বেগম খালেদাজীয়া এবং শেখ হাসিনার। তাদের আসার প্রকৃয়াটা গণতান্ত্রিক ছিলনা, যেটা ছিল সেটা হলো যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে রাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
রোহিঙ্গা প্রজেক্ট এর আওতায় সূচী নিজের এক্সিট এর পথটা নিজেই অবরূদ্ধ করে ফেলেছেন, সেনাবাহিনীর দায় দায়িত্ব এবং গণহত্যার বোঝাটা নিজের কাঁধেই নিয়ে ফেলেছেন। পুরো বিশ্বকে হুমকি দিয়ে বসে আছেন যে, "আমরা কারো চোখ রাঙ্গানিতে ভীত নই," কথাগুলো বলার জন্য যে হিম্মত থাকা দরকার তার রসদ নিয়েছেন প্রথমত চীন, তারপর রাশিয়া এবং তৃতীয়ত ভারতও এসে যোগ হল ব্যাবসায়িক স্বার্থে। বাকী রইল ন্যাটো এবং যুক্তরাষ্ট্র। ন্যাটো এ বিষয়ে সরাসরি জড়িত না হলেও যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষণে রেখেছে, কেননা সূচীর দোষত্রুটি, দায় দায়িত্ব সব হিসেবে নিয়ে পরবর্তীতে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা যাবে, সে যদি যুক্তরাষ্ট্রকেও ভাগের অংশ না দেয় তাহলে গণহত্যার বিচার এর প্রসঙ্গটা বাজারে ছেড়ে দিয়ে বশে আনা যাবে। আর সেটা এড়াতে হলে চীন রাশিয়াকেই উজাড় করে দিতে হবে তার ব্যাবসা বাণিজ্য। তার উচ্ছিষ্ঠে ভাগ বসাবে ভারত।
ঘটনা সামাল দিতে মায়ানমারকে শুধু দিয়েই যেতে হবে আজীবন একপাক্ষিক। সেই প্রজেক্টে ঢুকে গেছে বাংলাদেশ। যেকোন কারণেই হোক হাসিনা সরকারকেও চাপে ফেলে দিয়েছে পরিস্থিতি। দেশবাসী যখন মানবিকতার কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার পক্ষে সেখানে প্রথমদিকে পরিস্থিতি বোঝার জন্য কিংবা রাজনীতির কৌশল হিসেবে ব্যাক্তি হাসিনা খুব একটা কথা বলেনি, টুকটাক যা বলেছিলেন তা হলো রোহিঙ্গাদের জায়গা বা সাহায্য করার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশের নেই, সেটা মায়ানমার সরকার এর বিষয়। সেই কথার রেশ ধরে দলের নেতাদের কথার ভাষাও রোহিঙ্গাদের বিপক্ষে ছিল। পর যখন তূর্কি দৌঁড়ঝাপ ও সাহায্য প্রতিশ্রুতির খবর আসতে থাকলো তখন তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য পথখুলে দিতে রাজি হলেন, সেখানে ভোটেরও একটা হিসেব আছে, আগামী নির্বাচনে যাতে মুসলিম ভোট বিগড়ে না যায় সেটাও দেখতে হবে।
বর্তমান সরকার জনগণের কথা রাখলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য পথ খুলে দিলেন কিন্তু যে ভয়টা রয়ে গেল সেটা হলো তাদের ফেরত পাঠানোর যে কূটনীতি ও কৌশল সেখানটাতে বাড়ছে ফাঁপা জায়গা। এবং আমার মনে হয় এখানেই আমাদের দূর্বলতা এবং রোহিঙ্গা প্রজেক্ট বোঝার সূত্র।
মজার ব্যাপার হলো দোকলাম সংকট নিয়ে যুদ্ধাবস্থা থেকে সরে এসে দুই শুকুন উড়ে এসে বসলো আরাকান বৃক্ষে। তাদের মধ্যে যে ঝগড়াঝাটি সেটা এখন বন্ধুত্বে রূপ নিল এবং তাকিয়ে রইল আরাকানসহ বাংলাদেশের দিকে।খাবার যোগান হচ্ছে, একসাথেই বসে খাওয়া যাবে। সূচীর সাথে অটল বসে বাংলাদেশকে সামলানোর কাজটা সেরে নিলেন হয়তো। সেই সূত্র ধরেই কী ঘোষণা আসলো রোহিঙ্গা আসুক খাওয়ানো যাবে। তাদের খাবার যোগান হবে কিন্তু ফেরত পাঠানোর যে রাজনীতি ও কূটনীতি সেটা থেকে যাবে ফাঁপা। এখানেই দাবার চালটা। সূচীর আপাত জয় এখানেই।
বাংলাদেশ যেহেতু খাবার যোগান দেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তাহলে রোহিঙ্গারা উৎসাহিত হবে চলে আসার, জায়গাটা খালি হয়ে গেল বিনা বাঁধায়। চলে আসার সময় টুকটাক লাশ পড়বে একতরফা। এদিকে সরকারও জনগণের কথা রাখলো, জায়গা করে দিতে বলেছো, করে দিয়েছি, এখন যেন অন্যকথা না উঠে। কথা রেখেছি এবার ভোট দাও।
বাংলার আকাশ সীমা আঠারোবার লংঘন হয়, কড়া প্রতিবাদ হয়েছে কথায়, কিন্তু কাজের দিক দিয়ে এখনো শূণ্যতায়। আমরা সীমান্ত এলার্টনেস দেখাতে পারিনি, আরেকবার আসলে যে প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ হবে সামরিক ভাষায় সেটাতো দেখানো হলোইনা তার উপর চাল সংকট মোকাবেলায় গেলাম চাল আনতে। যেখানে স্বাভাবিক দ্বিপাক্ষিক ট্রেড হতে পারে সেখানে নিশ্চয় ঝগড়া বাঁধার পরিস্থিতি নেই। সামনের দরজায় দাঁড়িয়ে যদি বলা হয় তোমার লোক তোমাকে নিতে হবে আর পেছনের দরজায় গিয়ে যদি বল হয় খালা চাল হবে? তাহলে খালার বুঝতে আর বাকী থাকেনা প্রজেক্ট এগুচ্ছে ঠিক মতো। আমাকে ভয় না পেলেও পাশের বাড়ির কর্তার কথা রেখেছে, আমার কাছে এসে জানান দিয়ে গেছে প্রজেক্ট এর প্রবলেম হবেনা।
উপরের কথাগুলো শংকার, আশংকার কথা হলো, রোহিঙ্গারা এখানে দীর্ঘ মেয়াদে থাকতে হবে, আরাকান হয়ে যাবে বাণিজ্যিক জোন, আর সেই জোন ঠেলতে ঠেলতে নাফ নদী পেরিয়ে চট্টগ্রাম। হয়তো সময় লাগবে একশো বছর কিন্তু বীজটা লাগানো হচ্ছে।
এদিকে আমাদের প্রজেক্ট এর বুদ্ধিজীবিগুলো কাজ শুরু করে দিয়েছেন, ক্লাস এইট এর বইয়ে গল্পের আওতায় ঢোকানো হয়ে গেছে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে গেছে, পরে গল্পগুলো রেফারেন্স হবে। মায়ানমার আমাদের দেখিয়ে বলবে দেখো তোমরাইতো পাঠ্য বইয়ে লিখেছো এগুলো:
পাঠ্যপুস্তকের ক্লাস ৮ এর বইতে ‘মংডুর পথে’ (লেখক-বিপ্রদাশ বড়ুয়া) শিরোনামের ভ্রমণ গল্পে বলা হয়েছে-
১) “সারা মিয়ানমারে আমাদের রিকশার বদলে পাইক্যা। স্থানীয় মুসলমানরা এর একচেটিয়া চালক। মংডুর ব্যবসাও ওদের দখলে, আর হিন্দুরাও আছে। এরা চট্টগ্রাম থেকে এসেছে”।
২) “রান্নাঘর থেকে ছুটে এলো একটি মেয়ে। বাঙালী। লুঙ্গি এবং কোমর-ঢাকা ব্লাউজ পরেছে। মেয়েটি দিব্যি চট্টগ্রামী ভাষায় এটা ওটা আছে জানিয়ে রাখতে লাগলো। ওর নাম ঝর্ণা। পূর্ব পুরুষের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে, আমার পাশের থানা। ওর মত আরো একজন বাঙালী মেয়ে রান্না বান্না করে। চেহারা ও স্বাস্থ্য গরীব ঘরের রোগা পটকা নারীর মত। পোড়া লংকা কচলে নুন তেল দিয়ে ভর্তা করলো। একটা প্লেটে তার সঙ্গে দিলো কিছু কচি লেবু পাতা। বাহ্ খাস চট্টগ্রামের খাবার।”
৩) “দোকানটির দিকে এগিয়ে গেলাম।......রোয়াইংগা মুসলিম বয় আছে দুজন। ওরা মূলত চট্টগ্রামের।”
৪) পাঠ পরিচিতিতে বলা হয়েছে- “আমাদের পূর্ব দিকের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার। .....মিয়ানমারের পশ্চিম সীমান্তের শহর মংডু......বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে অনেকে মংডুতে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে।”
আর রোহিঙ্গা সমাধান এর পথযে রুদ্ধ সেটা বোঝার জন্য বুঝতে হবে এই বিষয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর মান অভিমান সূলভ মন্তব্য ট্রাম্পকে নিয়ে এবং তার পেছনে বক্তৃতা যতো জোড়ালো হবে কূটনীতি হবে দায়সারা গোছের।শেখ হাসিনা বলেন, "তিনি (ডোনাল্ড ট্রাম্প) শুধু জিজ্ঞেস করেছিলেন, বাংলাদেশ কেমন আছে? আমি বলেছিলাম, 'ভালো, তবে আমাদের একমাত্র সমস্যা মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীরা। কিন্তু শরণার্থীদের নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।"
শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন, শরণার্থীদের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান পরিষ্কার। সেজন্য রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের বিসয়ে ট্রাম্পের সহায়তা চাওয়া কোনও কাজ হবে না।
"আমেরিকা ঘোষণা করেছে যে, তারা শরণার্থীদের গ্রহণ করবে না। আমি তার কাছ থেকে কী আশা করতে পারি? বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে। তিনি এরই মধ্যে তার মনোভাব প্রকাশ করেছেন। সুতরাং আমি তাকে কেন জিজ্ঞেস করতে যাব?" রয়টার্সকে বলছিলেন শেখ হাসিনা।
সবশেষে বলা যায় শংকার চাইতে আশংকার আতংকে আছি। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিনা, খুব বেশীদিন নেই বার্মা আমাদেরে থ্রেট দেবে। রাশিয়ার সাথে পারমাণবিক চুক্তি হচ্ছে কথা শোনা যায়, তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে দিনকে দিন। আর আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবি বুদ্ধি দেয় আমাদের সামরিক ব্যাবস্থাপনার দরকার নাই, ভারতের সাথে পারবনা আর চেষ্টা করে পয়সা খরচ করা কেন? আর বেশীদিন নেই মায়ানমার এর উৎপাত শুরু হবার। আঠারোবার লংঘন এর পর সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে কতোতে বাড়ে আর সেটা কিভাবে সামলানো হবে সেটাই দেখার বিষয়।
বিষয়: বিবিধ
৬৮৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাদের জমি চাই, আরও জমি । দরকার হলে নামকরা ভুমিদস্যুদের লেলিয়ে দিতে হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন