সূচী ও হাসিনার জয় পরাজয়
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১১:৪৮:০৯ সকাল
সূচি এবং শেখ হাসিনা দু'জনই পড়ালেখা সংক্রান্ত ব্যাপারে একটা সময় পার করেছেন ভারতে। সেই সূত্রে ভারত এর সাথে তাদের একটা ভালো সম্পর্ক বা যোগাযোগ থাকতেই পারে। পরবর্তীতে এরা দূজন যখন রাজনীতির ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠলেন তাদের সাথে ভারত এর সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনেকটা সহজ হয়ে যায়। দু'জনের সাথেই ভারতের সেই সম্পর্ক মধূর এবং সৌহার্দপূর্ণ।
চিনও রাশিয়ার সাথেও এই দু'জনের ভালো সম্পর্ক। দুইটা ভেটো পাওয়ারের অধিকারী দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক সেটাও ভালো সংবাদ। স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে একচেটিয়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল গোটা বিশ্বে সেই অবস্থানে চিড় ধরতে শুরু করেছে। চিন রাশিয়ার ভূমিকা এখন জোড়ালো হচ্ছে, আর বর্তমান বাংলাদেশ সরকার চীন রাশিয়ার ব্লকের দিকেই ঝুকে গেছেন সরাসরি। আমাদের মন্ত্রী এমপিরাও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করতে ছাড়েননি, নির্বাচনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায়ও কাজ হয়নি।কিছুটা এমন বেপরোয়া কথাবার্তা ও রাজনীতি সেটা ভারত, চীন ও রাশিয়ার ক্ষমতা বলেই সম্ভব হয়েছে। তাতে করে এটাও ফুটে উঠেছে যে যুক্তরাষ্ট্র তার গর্জনের তেজ কমতে শুরু করেছে। সেই স্নায়ূ যুদ্ধ হয়তো আবারও শুরু হবার দাঁড়প্রান্তে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত, চীন ও রাশিয়া বার্মার সাথে এক হয়ে গেছে, এ ব্যাপারে তাদের আর রাখঢাক নেই। সরাসরিই প্রকাশ করে দিচ্ছে আমরা আছি মায়ানমার এর সাথে। চীন দিচ্ছে ভেটো, রাশিয়া বলছে সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার আর ভারত বলছে, ‘ঢাকাকে বুঝতে হবে, দিল্লির পক্ষে এর বেশি কিছু করা সম্ভব নয়’ ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কানওয়াল সিবাল।
যাদের কল্যাণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিষয় হতে পারলনা সেটা হল এই তিনটা দেশ। না হলে নির্বাচনিক দমন ও পিড়ন এবং পাঁচই মে শাপলা ট্রাজেডির ছুতো ধরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিষয় হলেও হতে পারতো। সেটাও একটা স্বস্তির ব্যাপার, একদিকে ঝুঁকে আছে, দুইদিক দিকে ঝোঁক আসলে সামাল দেয়া সম্ভব হয়না। সিরিয়াতে বহুমুখি ঝোঁক থাকার দরুণ সেটার আর সমাধান হচ্ছেনা।
যাদের দিকে ঝুঁকে আমাদের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে তারা যখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে পিঠ মুড়ে দিয়েছে এখন আমাদের পথ একটাই নেটো, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ। ওআইসি না জিন্দা না মৃত সেটাই দেখার বিষয়। সার্ক এর ওআইসির একই অবস্থা। কবর দেয়াটা বাকী। এখন কথা হলো বাংলাদেশ কতোটা পারবে নেটো, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের সাথে সমন্বয় করতে। কেননা তারা সবাই এই দেশে এসেছিল নির্বাচনিক বিষয়ে কিন্তু তাদের সেই আসা যাওয়ার ফলাফলটা সুখকর হয়নি।
সূচি যেখানে শতভাগ সফল সেখানে আমাদের চরম ব্যর্থতা। তাহলে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সাথে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোন ফাঁকা বাষ্প অবস্থান করছে? সেটা ধরা এবং বোঝার সময় হয়েছে এবং দায়িত্বটা যতোটা দেশের প্রয়োজনে ঠিক ততোটা প্রয়োজন বর্তমান সরকারের। সামনে আবার নির্বাচনের হাওয়া। নির্বাচন যদি ন্যূনতম সুষ্ঠু করতে চায় তাহলে সরকারের সাথে রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের ভূমিকা এসবের প্রভাব পড়বে নির্বাচনে। যাদের সাথে এতো ভালো সম্পর্ক কোন কাজেই আসলনা বিপদে কথাটা ওঠবে নির্বাচনের হাওয়ায়।
একটা দুঃখের এবং শংকার ব্যাপার হলো আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলো খুবই অপরিপক্ব এসব আন্তর্জাতিক সমস্যা মোকাবেলায়, তাদের বোধে এখনো এই বোধটা জন্ম নেয়নি কোনটা দেশের স্বার্থ আর কোনটা দলিয় বা ব্যাক্তি স্বার্থ। এখানে যে চর্চাটা হয় সেটা হলো ব্যাক্তি আগে তারপর দল তারপর দেশ। আর তায় একটা নোবেল এর জন্য আমরা মরিয়া হয়ে যাই এবং আন্তার্জাতিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সূচির কাছে সম্পূর্ণ পরাস্ত সেটার বুঝ ব্যবস্থা আমাদের হয়ে উঠেনি। আর তায় সতেরোবার আমার আকাশ সীমা লংঘণ হয় আর আমরা প্রতিবাদ জানায়, আঠারোবার লংঘণ হয় তারপর কড়া প্রতিবাদ। তারপর ঊনিশবার হলে কি প্রতিক্রিয়া সেটাই দেখার বিষয়। হয়তো একটা আত্মঘাতি ঘোষণা আসবে, আমাদের সীমারেখা ক্রস করেনি বলে স্বস্থির ঢেকুর তুলবে কামরুল, হাসানরা আর মনে মনে খুশিতে ঢোল বাজাবে বিরোধী জোট। কারণ একটাই, দেশের চাইতে দল বড়, দলের চাইতে ব্যাক্তি।
বিষয়: বিবিধ
৬৪৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন