দায় এবং দায়বদ্ধতা
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৫:০৯:১৩ বিকাল
বাংলাদেশের সেকুলার ভারত বান্ধব সমাজ এক ঘোর সংকটে আছে রোহিঙ্গা নিয়ে। তাদের অবস্থান কি হবে নিজেরাই বুঝতে পারছেনা। তারা নিজেরাও ক্লিয়ার না তারা কী বলতে চায় বা করতে চায়। বর্ডার উন্মোক্ত হলো কিন্তু তাদের মনে দ্বিধা, কেন করা হল, ওদিকে বলাও যাচ্ছেনা কেন উন্মোক্ত করা হল উচিত হয়নি। কারণ একাত্তর এর চেতনা এখানে এসে কিছুটা আটকে ধরে। আমরাও আশ্রয় নিয়েছিলাম ভারতে। এদেরকে যদি আশ্রয় না দিই তাহলে চেতনায় টান পড়ে।
- একটা যুক্তি দেখলাম রোহিঙ্গাদের নেতা নেই। তাই তাদের সাহায্য করা চলেনা। কারন তারা স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবেনা তায় তাদের সাহায্য করে কোন লাভের আশা নেই।
- একটা যুক্তি হল আমরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছি, ভারত এবং আমরা উভয়ই জানতাম আমরা স্বাধীন হবো তায় সেই আশ্রয়টা সাময়িক, কিন্তু রোহিঙ্গাদেরটা সাময়িক হবেনা, আমাদের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
উপরের যুক্তিগুলো খুব সুন্দর চতুরতা দেখা যায়, এমন সুন্দর যুক্তি দিয়ে আমাদের দায়টা থেকে বাঁচা গেল আবার একাত্তর এর সাথে একটা ব্যবধান সৃষ্টি করা গেল। তাহল সাধারণ মানুষ আর নতুন প্রজন্মকে একটা বুঝ ব্যাবস্থায় ফেলা গেল, তাদের মনে আর কোন প্রশ্ন থাকলনা, তারা বোঝে নিল রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার আর তেমন প্রয়োজন দেখিনা। এভাবে শঠতার আশ্রয় নিয়ে আমরা হয়ে উঠছি চতুর প্রজন্ম। যেখানে নেই চিন্তার শততা, মানবিকতা আর আত্মবিরোধীতা, আমি যখন সাহায্য চাইব বা পাব সেটা ঠিক আছে, অন্যকে দেবার বেলায় দাঁড় করাতে হবে বিভিন্ন অজুহাত, কেননা সবাইকে হতে হবে স্বার্থবাজ।
- প্রসঙ্গ আসল শরণার্থীর সাথে আসবে অস্ত্র আর ইয়াবা।
অস্ত্র কিভাবে আসবে বোধগম্য নই। আমার জানামতে অস্ত্র পেলে তারা নিজেরাই রুখে দাঁড়াতো, সেটা বাংলাদেশে আনার প্রয়োজন নেই। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল তারা যারা সেখানে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে জাষ্ট একটা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে, ভয়ে আর সেনাবাহিনী বা মগরা আর এগুয়নো, রাস্তার পাশে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে, কিন্তু পাহাড়ে বা জঙ্গলে যাবার সাহস পায়না। টুকটাক ইয়াবা আসতে পারে, যারা এসব করে তারা এই সুযোগ নিতে পারে, তবে কথা বলে জানা গেল এই হত্যাযঙ্গে ইয়াবা কারবারীদের চেইন অফ কমান্ড ভন্ডুল হয়ে গেছে, কারণ মগরা রোহিঙ্গা যাদের দিয়ে সীমান্ত পার করাতো তারা আর কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেনা, ওদিকে মগদরে শেল্টার নিয়ে যারা এসব করতো তারা এতোদিন দাপট দেখালেও এখন উভয় সংকটে আছে, আরসাও তাদের ছাড়বেনা ওদিকে মগরাও বিশ্বাস করছেনা, তারা প্রকাশ্যেও আসতে পারছেনা, দুইদিক থেকেই ভয়।
- জামাত ইসলাম এর সাথে রোহিঙ্গাদের জড়ানো
জামাত ইসলাম এর সাথে জড়িয়ে নানান কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। দায় এড়ানোর এটাও একটা অজুহাত মাত্র। তাদেরকে ঠিক মতো হ্যান্ডেল করা গেল জামাত ইসলাম ইস্যু তোলার মতো পরিবেশ হবার কথা নয়।
- মুসলিম বিশ্ব এবং তুরস্ক
মুসলিম বিশ্ব এবং তুরস্ক এর নামে এটাসেটা বলে বিষয়টাকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াসও চলছে, সেটার ব্যাখ্যার আর প্রয়োজন, নেই। আমরা নিজেরাই বুঝি কোন কথার কি মানে।
শেষ কথা হলো নাচতে গিয়ে ঘোমটা টানা হচ্ছে। আমরা শেষ পর্যন্ত জায়গাটা দিলাম, কিন্তু হিনমন্যতা ছাড়তে পারছিনা, জায়গা দেবার যে উদারতা সেটাও দেখাতে পারছিনা, গর্ব কররতেও পারছিনা, আবার ওদিকে রোহিঙ্গাদের কুৎসাও রটাচ্ছি। তাই অবস্থাটা হল না ঘরকা না ঘটকা।
অবশেষে বলতে চায় দেশের সেকুলার ও ভারত বান্ধব সমাজ খুব অসহায় অবস্থায় আছে। চুপ মেরে শুধু পরিস্থিতি দেখছে আর টুকটাক কুৎসা রটাচ্ছে। দুই নৌকায় পা দিয়ে চলার চেষ্টা করছে। বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষকে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের নিজেদের মতো করে প্রকাশ করে চলেছে তাদের উদারতা আর দায়বদ্ধতা, যে যেভাবে পারছে অর্থ, কাপড়, খাবার ইত্যাদি তুলে দিচ্ছে ভূক্তভোগির পাতে। জয় হোক সত্যের জয় হোক সুন্দর এর।
বিষয়: বিবিধ
৬১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন