তন্ত্রমন্ত্র
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০১:১৫:৩৫ দুপুর
কাতার এবং বাংলাদেশ দুটোই দেশই গ্যাস উত্তোলন বা উৎপাদন করে। কাতার বিক্রি করে এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস আর বাংলাদেশ পাইপলাইন দিয়ে মিটার বিহীন ঘরেঘরে এবং কলকারখানায়। দুটোর বিক্রির ধরণ দুই রকম তার একটা অন্যতম কারণ হলো আমরা শটকার্ট পছন্দ করি। শর্টকাট শব্দটা আমাদের জাতীয় চরিত্র বলা যায়, আমরা কোন কিছুু দীর্ঘ মেয়াদী চিন্তা করিনা, আমাদের গণতন্ত্র হতে শুরু করে সবকিছু যেন শটকার্ট পদ্ধতি, আমরা শটকার্ট ভাবেই ধনি হতে চাই।
আমরা যে পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস সাপ্লাই করছি তার কারণ হলো উত্তোলনকারী কোম্পানীর সাথে আত্মঘাতি চুক্তি। চুক্তিতে উল্লেখ থাকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন হবে এবং উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান সেই গ্যাস বিক্রি করবে, যদি অন্য কোথাও সে বিক্রি করতে না পারে তাহলে বাংলাদেশ সেটা তাদের নির্দিষ্ট দামে কিনে নিবে। উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ সরকার এর গ্যাস প্রয়োজন না হলেও নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন হবে এবং সেটা কিনতে বাধ্য। তায় গ্যাস আমাদের পাইপলাইন হয়ে আসে, প্রয়োজন না হলেও যখন কিনতে হবে তাহলে কিনে ফেলা দেয়া আরকি। আপনি একটা জিনিস অপ্রয়োজনে কিনতে বাধ্য হলে শুধু টাকা দিয়ে আসবেননা, জিনিসটা কিনে এনে আছাড় দেবেন এমন ধরনের একটা ব্যাপার।
এবার আসা যাক গ্যাস এর উদাহরণটা কেন আনলাম। আনলাম এজন্য যে রাজতন্ত্র আর গণতন্ত্রের একটা তুলনা করার জন্য, গণতন্ত্র যদি শটকার্ট আর ভেজাল হয় তাহলে সেটা রাজতন্ত্র চাইতেও মন্দ হতে পারে। আধুনিক বিশ্বে গণতন্ত্রকেই সর্বত্তোম সুন্দর এবং ভালো শাসন ব্যাবস্থা বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেটার যদি ভালো চর্চা না হয় তাহলে অপকারও ঢের বেশী। রাজতন্ত্র নিজের দেশের সম্পদ ধরে রাখতে পারছে বলেই মধ্যপ্রাচ্য আমাদের চাইতে ধনি ও উন্নত, আমরা শ্রমিক পাঠাচ্ছি মধ্যপ্রাচ্যে। তারা যদি নিজেদের সম্পদ পাইপ লাইনে ছেড়ে দিত তাহলে তাদের তেল গ্যাস দিয়ে দেশের উন্নতি হতোনা, লাভের গুড় পিপড়ায় খেতো।
মধ্যপ্রাচ্য আর রাজতন্ত্র এর কথা যখন উঠলো সেখানে রাজতন্ত্রের পুরোধা সওদি আরব এর কথা আনতেই হয়। কাতার আর সওদি আরব এর রাজতন্ত্র দেখতে একই রকম হলেও কিছুটা ভিন্নতা আছে। সওদি আরব এর চাইতে কাতার এর চিন্তা এবং ধ্যান ধারণা অনেক আধুুনিক এবং চলামন যুগের সাথে খাপ খাওয়ানো। সেখানে ধর্মীয় গোড়ামি এভয়েড করার একটা মানসিকতা আছে। যেমন ধরুণ নারীরা গাড়ি চালাতে পারেন, সেখানে ঘরের মা নিজের সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে, মার্কেটে যাচ্ছে এবং সেটা পর্দা মেন্টেইন করেই। কিন্তু সওদি আরবে নারীদের ড্রাইভিং এলাও না। কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল এর আয়োজক হবার মতো অসাধ্য সাধন করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। সওদি আরব সেই তুলনায় স্থবির বলা যায়, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি টালমাটাল আর বিদেশীদের উপর বিভিন্ন ট্যাক্স ধার্য করে অভ্যন্তরীণ ব্যাবসা বাণিজ্য থমকে থাকার মতো অবস্থা।
সওদি আরব সম্পর্কে যে কথাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো পৃথিবীর মুসলিম সম্প্রদায় এতদিন মক্কা-মদিনা এবং সওদি আরব সবগুলো বিষয় এক হিসেবে ভেবে আসছিলেন। অর্থাৎ সওদি সরকার ও কাবা এবং মদিনা শরিফ বিষয়গুলো ভেঙ্গেচুড়ে বা পৃথকভাবে ভাবতে অভ্যস্ত ছিলনা। কিন্তু সম্প্রতি কাতার সরকারের সাথে দ্বন্দ এবং পূর্বে আরো অনেক কিছু বিষয়যোগে মুসলমানদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে সওদি সরকার ও মক্কা-মদিনা দু'টো ভিন্ন বিষয়। মক্কা-মদিনা সমগ্র মুসলিম জগতের আর সরকার তাদের নিজস্ব সরকার ব্যাবস্থা। বিষয়টা আরো স্পষ্ট করে তুলছে সম্প্রতি তুরষ্ক সরকার তথা এরদোগান এর ওঠে আসা, মুসলমানদের আপদে বিপদে সওদি সরকার এর ব্যর্থতা এবং তুরস্ক এগিয়ে আসার যে একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাতে সমগ্র মুসলিম জগৎ এর দৃষ্টি তুরস্ক এর দিকে মোড় নিচ্ছে। মুসলমান এখন তুরস্ক এর দিকে তাকিয়ে থাকছে। সর্বশেষ মুসলিম বিপর্যয় রোহিঙ্গা ঘটনাটাই তার প্রমাণ। তুরস্ক এগিয়ে আসলো আর সওদি যে জোট কাতার এর সাথে দ্বন্দে গেছে তাদের নিষ্কৃয়তা এবং হজ্ব এর খোৎবায় রোহিঙ্গা ইস্যু এভয়েট ইত্যাদির ফলাফল ভবিষ্যতে হয়তো মুসলিম নেতৃত্ব তুরষ্কই দেবে বলে আপাতত মনে হয়।
বিষয়: বিবিধ
৬৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন