জোড়া অণুগল্প
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ২২ আগস্ট, ২০১৭, ০৪:৫২:৩৬ রাত
- উথান
***************
তোমাকে আরেকটু ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হতে হবে, রাসেল কেন তোমার চেয়ারে হেলান দিয়ে দাঁড়াবে? দেখিয়ে দেবার ভান করে ঝুঁকে পড়বে তোমার দিকে, আর তুমিইবা কেন মেনে নেবে? নিষেধ কেন করনা। রাসেলকে তোমার এড়িয়ে চলা উচিত।
নাবিলা নিরুত্তর। নিরবতা সম্মতির লক্ষণ হলেও এই নিরবতার অর্থটা আর বোঝে উঠতে পারলনা সাহাদাত। নাবিলা আর সাহাদাতের সম্পর্কটার এখনো কোন শিরোনাম দেয়া চলেনা। তারা দু'জনে সহপাঠী ছিল। পড়ােলেখার পাঠ চুকিয়ে সাহাদাত অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এই চাকরীটাতে এসে থিতু হল। নাবিলার সাথে মাঝেমধ্যে হাই হ্যালোর সম্পর্ক থাকলেও সেটা ছিল সহপাঠীর সম্পর্ক। কোন এক ব্যাক্তিগত টানাপোড়নের নির্যাস ভুলে থাকার উপায় খুঁজতে গিয়ে নাবিলার মনে হলো চাকরী করাটাই উত্তম হবে, সেই সুবাদে সাহাদাত এর সাহায্য নেয়া। সাহাদাত তার বসকে বলে নিজ অপিসেই নাবিলার জন্য একটা ব্যাবস্থা করে দেয়।
অপিসে এখন নতুন মুখ। সবার দৃষ্টি নাবিলার দিকে। রাসেল বিভিন্ন ঠুনকো অজুহাতে নাবিলার চেয়ার ঘেষে দাঁড়াবে, সাহাদাত দেখেও না দেখার ভান করবে, পিয়ন হেঁটে যাবার সময় একটু মুচকি হাসবে, সুজন এসে হায় বলবে ইত্যাদি। সবার কাছে এই ধারণটা স্পষ্ট হলো যে, নাবিলা এবং সাহাদাত এর সম্পর্কটা প্রেমের না হলেও সাহাদাত এর প্রচন্ড দূর্বলতা আছে নাবিলার প্রতি।
আজ কেন যেন কাজে মনে নেই সাহাদাত এর। লাঞ্চ আওয়ার শেষে এসে চেয়ারে বসে চা এর কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবছিল নাবিলাকে কি করে কথাটা বলা যায়। এখনতো আর প্রেম করার বয়স নেই, সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিলে কেমন হয়! কানে ভেসে আসল হাতুড়ি পেটানোর শব্দ। " নাবিলা তুমি চাইলে আমার সাথে যেতে পারো, আমি ড্রপ করে দেব তোমাকে, তোমার বাসাতো আমি যাবার পথেই পড়ে"। নাবিলা শুধু বলেছিল ঠিক আছে।
সেই থেকে অপিসে সাহাদাত মানে একটা হাস্যকর বস্তু। নাবিলার অপিসে আসা যাওয়ার দায়িত্বটা এখন রাসেলের কাছে চাকরীর চাইতেও আরো বেশী কিছু।
পতন
*************
মা আমি আসছি, রাতে ফিরতে লেইট হবে। তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়ল নাবিলা। আজ বৃহষ্পতিবার, অর্ধবেলায় অপিষ ছুটি। কাল শুক্রবার বন্ধ। অপিষ থেকে এসে গোসলটা সেরে ভেজা চুলেই তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে পড়ল নাবিলা।
প্রিন্স এর জন্মদিন। ছোটখাট একটা বার্থডে পার্টির আয়োজন প্রিন্স এর বাসায়। নাবিলা আজ স্পেশাল গেষ্ট। তার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে প্রিন্স। প্রিন্স হলো রাসেল এর বন্ধু। আর রাসেল হলো নাবিলার অপিষ কলিগ। কলিগ সেটা অপিষে, অপিষ থেকে বের হলেই তারা বন্ধু হয়ে যায়। অপিষ ছুটির পর প্রায়ই এদিক সেদিক বেড়াতে যায় দু'জন। নাবিলার ফ্যামিলি ব্যাপারটা জানে। তাই রাত করে বাসায় ফিরলেও তারা বুঝে নেয় রাসেল এর সাথে আছে।
এইতো সেদিন রাসেল প্রিন্স এর সাথে নাবিলাকে পরিচয় করে দিয়েছে। অনেক বড় শিল্প পতির ছেলে প্রিন্স। দুই হাতে পয়সা খরচ করে। গত দু'সপ্তাহ যাবত নাবিলা আর রাসেল যেখানে যেখানে ঘুরতে বা শপিং করতে গেছে সাথে অবধারিতভাবে প্রিন্স এর উপস্থিতি ছিল। ভালোই হলো, তাদের খরচ এর ভারটা প্রিন্স যেন নিজের দায়িত্ব হিসেবেই নিয়েছে। নাবিলারও ইদানিং রেষ্ট্রুরেন্ট এর খাওয়া আর মার্কেটিং করার নেশাটা পেয়ে বসেছে।
বার্থদে পার্টিটা আসলেই অন্য রকম ছিল। প্রিন্স এর বাসাটা আজ ফাঁকাই ছিল, ওর বাবা মা থাইলেন্ড গেছে বেড়াতে। বছরে নাকি তারা দু'বার থাইল্যান্ড যায় রিফ্রেশম্যান্ট এর জন্য। ঘরোয়া আয়োজনে বার্থডে পার্টিটা ঘরেই হল। আরো দু'চারজন বন্ধু বান্ধব এসেছিল রাত বাড়তেই তারা বিদায় নিয়ে চলে গেছে।
ড্রিংস করার অভিজ্ঞতা আজ এই প্রথম নাবিলার, গ্লাসটা যখন হাতে নিয়েছিল কাঁপছিল রিতিমতো। রাসেল বলল এক প্যাক নিয়ে দেখ কেমন মজা! ঢুলতে ঢুলতে একটা স্বপ্নের জগতে প্রবেশ করবে। তখন রাত দু'টা। নাবিলার প্রবেশ স্বপ্নের সেই দেশে।
শনিবার সকালে অপিষে অনুপস্থিত নাবিলা এবং রাসেল দু'জনই। হয়তো একটু লেইট করে আসবে, সবাই ব্যস্ত যে যার কাজে। পিয়ন খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে সাহাদাত সাহেব এর কাছে এসে বলল, " স্যার দেখেনতো আমাদের নাবিলা ম্যাডামনা? ওনার মতোইতো লাগছে।" সাহাদাত সাহেব পেপাড়টা হাতে নিয়ে দেখলেন, হুম ঠিকই আছে, নাবিলা মেডাম এর ছবি। ভেতরের খবরটা আর ভেতরে থাকলনা, সবার মুখে মুখে। টক অফদা টাউন ছাড়িয়ে দেশ, বিদেশ, ফেইসবুক, টুইটার সবখানে, সবার মুখে মুখে নাবিলা।
বিষয়: বিবিধ
৬৮৪ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখন তো মিডিয়ারা মহিলাদের পরিচয় প্রকাশ করে না , বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন