- বিবেকের তাড়না

লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ২০ মে, ২০১৬, ০৩:২৪:০৩ রাত

ফেইসবুকে লিখালিখি করা মানে একটা বড় দুশ্চিন্তার বিষয় যদি সাবজেক্ট রাজনীতি কেন্দ্রিক হয়। তাই এড়িয়ে চলার চেষ্টা থাকে। এমনকি একটা লাইক দিতেও ভয়। তবুও মাঝে মাঝে মাথাটা ঝিম ধরে যায়, বিবেকটা নেড়ে ওঠে। পারা যায়না।

লেখা যদি জামাত শিবির এর পক্ষে যায় তাহলে বিপদ এর শেষ নেই। স্বাধীনতার বিপক্ষ সীল ছাপ্পড় পড়ে যাবে। দেশদ্রোহ এর ভয় আছে। মৌলবাদের তকমা আছে। ইত্যাদি।

যারা শিল্প সাহিত্য চর্চা করেন তারা নিশ্চয় হত্যা, মৃত্যু, খুন এসবকে খুব ঘৃণা বা ভয় পান আমার ধারণা। কারন তাদের মনটা সবসময় কাদা মাটির মতো নরম থাকে। তারা অধিক চিন্তা করেন বলে এসব বিভৎসতা তাদেরকে খুব নাড়ায়। একাত্তুর এর বিভৎসতা তাদের খুব তাড়া করে, তায় তারা স্বভাবতই জামাত শিবির নামটা শুনলেই তেলে বেগুনে জলে উঠেন। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব একটা অস্বাভাবিক বলে মনে হয়না। যদিও অনেক আলোচনার প্রয়োজনীয়তা রাখে। সেই ইতিহাস আর টানলামনা।

সেদিন এক কবি টাইমলাইনে লিখলেন, ফাঁসি ব্যাপারটা তার পছন্দ নয়। তবে একটা ফাঁসি বাকি আছে সেটা হলো দেলোয়ার হোসাইন সাইদী। সেটা হয়ে যাবার পর তিনি ফাঁসীর দন্ডের বিরোধীতা করতে আগ্রহী। সেখানে সহমত জানিয়ে জনৈক পাঠিকা কমেন্ট করলেন তারা যেহেতু মানুষ এর পর্যায়ে পরেনা শুতরাং ফাঁসীটাই ন্যায্য বিচার।

ফাঁসীর ব্যাপারটা আমারও পছন্দ না। তবে কি সেটা সাইদীদের প্রতি দূর্বলতা আছে সেই কারণে? ভাবলাম অনেক্ষণ। ফাঁসী যে আমার পছন্দ না সেটাতো আগে কখনো আমি বলিনি, আজ কেন বলছি? নিজামীদের রক্ষা করার জন্য? নিজেকেই প্রশ্নটা করলাম।

কিছুদিন আগে রাষ্ট্রপতি জনৈক ছাত্রলীগ এর ফাঁসী মওকুফ করেছেন। আমি ব্যাপারটা ইচ্ছেকৃত ভাবেই ফেইসবুকে প্রকাশ করিনি। রাষ্টপতির প্রতি বিষেদাগার করলে হয়তো দু'চারটা লাইক পেতাম ফেইসবুকে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে রাষ্ট্রপতি ক্ষমাটা করেছেন আমার খুব একটা মন্দ লাগেনি। একটা জীবন আরো কিছুদিন বেঁচে থাকলো। তবে একটা ব্যাপার মনে হয়েছে রাষ্ট্রপতি কি সেই আসামীর খোঁজ খবর নিয়েছিলেন? সেই আসামীর চরিত্র কি বদল হয়েছে? মৃত্যুর হাত হতে বেঁচে গিয়ে আসামী কি অনুধাবন করতে পারছে কেন তার মৃত্যুদন্ড হয়েছিল? একদিন হয়তো সেও মুক্ত হবে, সেদিন কি সে অন্য একজন মানুষ এর বিপদে এগিয়ে আসবে? নাকি বীরদর্পে প্রতিশোধ নেবে যার বা যাদের জন্য সে জেল খেটেছে। আবারো দুচারটা লাশ ফেলে দিয়ে ঘোষণা দেবেন আমি মহারাজ। রাষ্ট্রপতির এই দায়িত্বটা ছিল। আসামী সম্পর্কে জানা এবং বুঝা তার মনমানসিকতার কি পরিবর্তন হলো সেটা জানা। এটা একটা নৈতিক ব্যাপার, কেউ কাউকে বাধ্য করতে পারেনা।

এইযে মূল্যবোধের জায়গাটা আমরা সংকুচিত করে ফেলছি তার ফলটা যে নিম্নগামী হয়ে আমাদেরকেই গিলে খাবে তার ধারাবাহিকতা একটু দেখুন। নিজামী সাইদীরা যেহেতু মানুুষ নয় তাদের ফাঁসী দিতেই হবে। বিষয়টা যেখানে স্বাভাবিকতা এবং উল্লাস এর ব্যাপার হয়ে গেছে তার পরের স্তরটা কোথায এবং কেমন? নতুন প্রজন্ম যারা একাত্তুর দেখেনি, তারা যখন নিজামী সাইদের দলটাকেই নিজেদের আদর্শ প্রচার এর বাহন হিসেবে মানতে ইচ্ছুক তাদেরও কি ফাঁসি দিতে হবে? সেই কবির কি মতমত আমি জানিনা। তবে সেই পাঠিকা হয়তো বলবে অবশ্যই। এরাও মানুষ না।

একটু কি ভেবে দেখবেন দয়া করে? একজন ছাত্র, থেলাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। তিন মাস পর পর রক্ত বদলাতে হত। ঘরের বাইরে খুব একটা বেরুতেন না।

পুলিশ তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যাকণ্ডে জড়িত বলে পুলিশেরই হেফাজতে ছাত্রের মৃত্যু। এই ছেলের কি ক্ষমতা আছে একটু খুন করার? দৈহিক এবং মানসিক? আপনারা শিল্প চর্চা করছেন আপনাদের চিন্তাশক্তি কিছুটা ভিন্ন। তায় সাধরণদের কথা আনলামনা। যারা লিখালিখি করছেন তারা একটু ভাবতে পারেন।

ব্যাপারটা এখানেই কি থামছে? এবার আসুন রাজনীতিমুক্ত একটা হত্যাকান্ডে, যেটা একই সময়ে সমসাময়িক।

নরসিংদীতে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে দ্বীন ইসলাম (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এই ঘটনা ঘটে। দ্বীন ইসলাম শহরের ভেলানগর মহল্লার (আজিজ বোর্ডিং) মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।

পুলিশের দাবি গ্রেফতার এড়াতে পালানোর সময় গণপিটুনিতে আহত হওয়ার পর জেলা হাসপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে নিহতের পরিবারের অভিযোগ সকালে তাকে ঘুম থেকে তুলে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। পরে পুলিশের দাবি অনুযায়ী ৫ লাখ টাকা দিতে না পারায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

বুঝতে কি পারছেন? মৃত্যুগুলোর ধারাবাহিকতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াল? প্রথম মৃত্যুটা রাজনৈতিক এবং একাত্তর, দ্বিতীয় মৃত্যুটাতে একাত্তর বিয়োগ হয়ে শুধুই রাজনৈতিক, আর শেষটাতে? হুম। যে অন্যায়টাকে অন্যায়ভাবে ন্যায্য ভেবেছেন সেই অন্যায়টা ন্যয্যভাবেই ন্যায্যতা পেয়েছে শেষ মৃত্যুটাতে।

আমরা অনেকেই ভালো আছি এসব চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে। তবুও বলি, কিছুই করতে না পারুন চিন্তাটা যেন নিজের কাছেই স্বচ্ছ থাকে। আমার বিবেক বলেছে অন্তত দুইটা লাইন যেন লিখি তাই সেটা প্রকাশ করলাম। দেশটাকে সত্যিকারেই ভালোবাসি। বাংলাদেশ তুমি চিরজীবি হও।

বিষয়: বিবিধ

১০৪৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

369632
২০ মে ২০১৬ রাত ০৪:৫৫
শেখের পোলা লিখেছেন : মানুষ মানুষকে মানুষ বলেই চিনে ফেলে,কিন্তু অমানুষরা মানষকে চিনতে পারেনা। কারণ তাতে নিজেদের হেও হতে হয়, তাই মানুষের উপস্থিতি তাদের সমাজে কাঁটার মত ফুটতে থাকে। আর সেজন্যই তাদের ইচ্ছাটাও অমানুষেরই মত। ধন্যবাদ।
369644
২০ মে ২০১৬ সকাল ১০:২৬
হতভাগা লিখেছেন : এসব বিবেক আলমারির তাকে লুকিয়ে রাখবেন । উল্টাসিধা কিছু বের হলে সোজা র‍্যাবের কাছে চলে যাবে।
369658
২০ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বিবেক বলতেকিছু নাই এখন। সবই চেতনা!
369682
২০ মে ২০১৬ রাত ১১:১৪
আমীর আজম লিখেছেন : ভাল লাগল। ধন্যবাদ।
369686
২১ মে ২০১৬ রাত ১২:৪৪
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

পড়লাম, দোয়া করি, আপনার বিবেক জাগ্রত থাকুক, কলম আরো শাণিত হোক!!

তবে জাগ্রত বিবেক ও শাণিত কলমের জন্য দুনিয়া কখ্‌খনো নিরাপদ হবার নয়- এটা মনে রাখলে উপকৃত হবেন!

জাযাকাল্লাহ..

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File