- নিতান্তই একান্ত
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ২৪ মার্চ, ২০১৬, ০২:৩১:৪৩ দুপুর
ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। প্রসঙ্গ তনু হত্যা। অপ্রসাঙ্গিক ভাবেই তনু হত্যার সাথে কিছু বিষয় যোগ করে আলোচনা হচ্ছে, বিষয়টা হলো তনুর হিজাব।
ব্লগ ফেইসবুকে কিছু লিখালিখির ধরন দেখছিলাম। যুক্তি দেখানো হচ্ছে তনু হিজাব করেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি হায়নার দল থেকে। আসলে হিজাবটা কিছুইনা, আমাদের মন মেজাজ আর চরিত্র ঠিক করতে হবে।
কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে কোন হুজুর কোন শিশুকে বলাৎকার করেছে তার পরিসংখ্যানও নিয়ে আসছেন তনুর ব্যাপারটা আলোচনা করার জন্য।
তথাকথিত আধুনিকমনাদের দুঃখটা প্রকাশ করতে পারছেনা তায় ইনিয়ে বিনিয়ে বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা হচ্ছে। দুঃখটা হলো তনু কেন হিজাব করতো, এই হিজাব এর জন্য মৌলবাদি মৌলবাদি একটা ভাব আছে, তায় উপরে মিছিল মিটিং আন্দোলন হলেও এটা বোঝাতে চাইছে যে, আমারা হিজাব এর জন্য আন্দোলন করছিনা, আমরা তার সংস্কৃতিমনার জন্যই আন্দোলন করছি। তনু সংস্কৃতিমনা ছিলো। হিজাব আসলে ব্যাপারনা, এটা থাকার কোন প্রয়োজন নেই। হিজাব করে চলেও তনু নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি। কেউ কেউ এটাও বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, তনু হিজাবী নয়, সে হিজাবটা করেছে বাধ্য হয়ে, বখাটেদের উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে, তায় হিজাবটা করার প্রয়োজন নেই।
তনুকে দিয়ে এটাই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে যে, তনুর বিচার চাই এবং অন্তর্নিহীত উদ্দেশ্য এটাও হিজাব এর উৎখাতও চাই। সবাইকে অনুরোধ করবো, তনুর ছবিগুলো আবার দেখবেন, বার বার দেখবেন, অনেকবার দেখবেন। তারপর নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনার কাছে এই ছবিটা দেখে কি মনে হলো? নিজের বোন? বান্ধবী? গার্লফ্রেন্ড? আপনার মনে এমন কোন ইচ্ছে কি জাগরিত হয়েছে যেটার প্রকাশ হয় ইশ শব্দটা দ্বারা?
এমন একটা নিশ্পাপ ছবি, চেহারা এবং হিজাব দেখে পাড়ার নোংরা ছেলেরা একে অপরকে দেখিয়ে কি বলতে পারবে, এই দেখ দেখ জিনিস যায় বা মাল যায়? আমি নিশ্চিত পারবেনা, তাদেরও জিভ আটকে যাবে, তারা বলতে পারবেনা কারন হিজাবটাই তাকে একটা সম্মান এনে দিয়েছে, তাকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে দিয়েছে। হিজাব মানে এটা মনে করার প্রয়োজন নেই সে ধর্মান্ধ মৌলবাদী। তনুর হিজাব হলো শালিনতা, হিজাবে কারো আপত্তি থাকলে আপনার এটাই ভেবে নেবেন যে তনু শালীন পোশাক পড়তো।
এবার আসুন জেনে নিই তনু কেন নিজেকে রক্ষা করতে পারলনা, শালীন পোষাকেও সে কেন আক্রমনের শিকার? তনুর উপর অত্যাচরটা হয়েছে তার জন্য আপনারা তার শালীনতাকেই দায়ী করে দিচ্ছেন জেনে বা না জেনে। তনুর উপর আক্রমণটা হয়েছে কারন আমরা একটা শালীন সমাজ উপহার দিতে পারিনি। এখানে সরকারী ব্যাবস্থাপনা, উশৃংখল মিডিয়া, অশালীণ সিরিয়াল, অশালীন ছায়াছবি ইত্যাদি উপকরণ জড়িত। আমাদের অনেক বোন আছেন যারা খোলামেলা পোশাক পরে বের হোন যাদের দেখে পাড়ার বখাটেরা বলে জিনিস বা মাল। তনুর ক্ষেতে সেটা হবার সম্ভবনা খুবই কম বলে আমি বিশ্বাস করি। এখন কথা হলো উপরের উপকরণগুলোর জন্য বখাটেরা মুখিয়ে থাকে অশালীন কাজটা করার জন্য এবং জাপিয়ে পড়ে কোন দূর্বল কাউকে পেলে, তনু তাদের কাছে দূর্বল ছিলো তায় তারা ঝাপিয়ে পড়েছে, তারা তনুকে দেখে উত্তেজিত হয়নি, তারা উপরের উপকরনগুলো থেকেই উত্তেজিত ছিল এবং তনুকে তারা ব্যাবহার করেছে। শুতরাং ভেবে দেখুন হিজাব বা শালিনতার প্রয়োজন আছে কিনা? কেউ যদি এমন শালীনতা করতে চায় তার জন্য কারো উপকার না হোক কিন্তু ক্ষতিতো দেখছিনা, তবুও এমন হিজাব বা শালীনতার বিরোধীতা কেন?
তনুর আমার কাছে বিরাট একটা আইকন। এই বোনটাকে আমি কখনোই ভুলবনা। আজীবন আমি তনুর উদহরণ দিয়ে যাবো। আমি তোমাকে শ্রদ্ধা এবং সম্মান করি হে বোন। কারন তনু আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছে, শিল্প সংস্কৃতি চর্চা করা মানে উলংগ হয়ে চলা নয়। এটা শালীনভাবে থেকে চর্চা করাই বাংগালী সংস্কৃতি। এটাই আমার বাংলা। আমরা শিল্প সংস্কৃতি চর্চা করবো এবং শালীনও থাকবো। এটাই তনু আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। আল্লাহ আমার এই বোনটাকে কবুল করে নিবেন এটাই আমার শতভাগ বিশ্বাস। কেননা এই বোনটা একটা জাতীকে সুপথে চলার একটা দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, কি করে পর্দা করে শিল্প সংস্কৃতি চর্চা করা যায়। এশী এবং প্রভাদের আমরা দেখেছি তারা কেমন করে আধুনিকতা আর শিল্পচর্চা করে আর তনু আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন কোনটাকে আধুনিক বলে আর কোনটাকে শিল্পচর্চা বলে।
সেলুট হে আমার বোন...........।
বিষয়: বিবিধ
১০৮৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন