ক্রিকেটের ধর্ম, রাজনীতি এবং ব্যাবসা
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ০৭ মার্চ, ২০১৬, ০১:৩১:২২ দুপুর
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকা মোটামোটি ক্রিকেট পাগল দেশ হিসেবে বলা যায়। বাংলাদেশে সম্প্রতি ক্রিকেট উম্মাদনা সবাইকে ছাড়িয়ে যাবার মতো অবস্থা। তার আগে শ্রিলংকার একটা উদাহরণ দিই।
আমি আগে যেখানে থাকতাম কাতার ইন্ডাষ্ট্রিয়াল এরিয়া বা সানায়া, সেখানে প্রচুর কন্সট্রাকশান কাজ হচ্ছে, বৃহষ্পতিবার দুপুরে দেখলাম একটা বড় প্লটে কিছু ছেলে ক্রিকেট খেলছে। একটু ভাবলাম এটা কি করে সম্ভব!! সংখ্যায় ছিলো পাঁচ/ছয় জন, প্লটটাতে পাথুরে বালির স্তুপ, সমান্তরালতো নয়ই একটু পরপর পাহাড়ের মতো স্তুপ, মাঝখানে কোনমতে ষ্ট্যাম্প গেড়ে বেট বল চালিয়ে দিচ্ছে আবার কুড়িয়ে আনছে। মধ্যপ্রাচ্যের গরম কেমন পড়ে সবাইতো জানেন, তার উপর ফিল্ড এর এই অবস্থা এবং বিকেল এখনো হয়ে উঠেনি, তারা খেলতে নেমে গেছে। কি পরিমাণ ক্রিকেট পাগল জাতি হলে এমনটা হতে পারে ভেবে দেখুন।
ভারতে দুইটা বিষয় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এক হলো ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রি এবং দুই হলো ক্রিকেট। তাদের চাল চলন, ধ্যান জ্ঞান সবকিছু যেন এই দুইটাকে ঘীরে, সেখানে যতো অদ্ভূত সামাজিক অপরাধ হয় তার জন্য ফিল্ম এবং সিরিয়ালগুলো দায়ী অনেকাংশে। আর ক্রিকেট এর অবস্থান পূজোর পরপরই, সেটাতে হারজিত পুরো জাতিকে স্বস্থি এবং অস্থির করে তোলে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্রিকেট সাফল্য আমারাও ক্রিকেট পাগল জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি। ষ্ট্যাডিয়ামে বসে আমাদের নারী দর্শকদের খেলা দেখার বিষয়টাকে পজিটিভলি প্রচার করা হয় ধারাভার্সকার হতে পত্রিকা মিডিয়া সবাই। তার মানে হলো যে দেশে এতো বিপুল পরিমাণ নারী ষ্টেডিয়াম এ বশে খেলা দেখে তাহলে তারা অবশ্যই খেলা বুঝে এবং ধারন করে, সেখানে ক্রিকেটের উন্নতি হবেই।
তবে বিষয় হলো এই ক্রিকেট খেলাটা আর খেলায় থাকেনা অনেকের কাছে, কেউ কেউ এখানে রাজনীতিও খুঁজে পান, বিশেষ করে খেলাটা যখন ভারত পাকিস্থান এর সাথে হয়। পাকিস্থানের সাথে খেলাকে একাত্তর এর সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়, ওদিকে আবার ভারত এর সাথে খেলাকে বলা হচ্ছে বন্ধুর সাথে খেলা। এসব করে আমরাযে রাজনীতিতে অপরিপক্ক এবং ঠুনকো তারই বহিপ্রকাশ ঘটায়। প্রকাশ্যে ক্রিকেটের সাথে রাজনীতি জুড়িয়ে দেখা এবং প্রকাশ করাটা খুবই নিম্ন মানের সংস্কৃতি বহন করে সেই ব্যাপারটা যতো তাড়াতাড়ি বুঝতে শিখবো ততই আমাদের রাজনীতির সফলতা আসবে ক্রিকেট এর মতো।
খেলার সাথে ব্যাবসার একটা নিবিড় সম্পর্ক, টিকেট কাটা হতে শুরু করে জার্সি বিক্রি সবখানেই ব্যাবসা পদে পদে, পুঁজিবাদ এমন একটা বিষয় সে শুধু ব্যাবসা বোঝে সেটা হোক খেলা, রাজনীতি বা ধর্ম সব ক্ষেত্রেই, তাই ক্রিকেটেও জুয়াড়ীরা হাতিয়ে নেয়, আশরাফুলরা দেশদ্রোহী হয়ে উঠে।
এবার আসা যাক ধর্মের দিকটা। ভারতে ক্রিকেটকে এতোটা গ্রহণ বা আত্মস্থ করেছে যে এটাও ধর্মের মতো একটা আবস্যিক বিষয় হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এখনো ততোটা হয়ে উঠেনি, তবে ইসলাম এর সাথে ক্রিকেট খেলাটা খুব একটা খাপ খায়না। এতোক্ষণ ধরে খেলা এবং দেখা ইত্যাদি বিষয়গুলো ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যদি কোন ধার্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়।
কেউ কেউ তাই ক্রিকেট খেলার বিরোধীতে করে থাকেন যারা ইসলাম ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টা ভাবেন, আবার অনেকে বিরোধীতা করেন কারন এই খেলাটা আসলে বাণিজ্যিক ব্যাপার, কে জিতবে কে হারবে সেটা জুয়াড়ীরা নিয়ন্ত্রণ করে এমনটাই তাদের ধারণা।
এতোগুলো কথা বলার কারণ হলো, এতো যুক্তি তর্কের পরও বলা যায় আমাদের দেশে একটা প্রজন্ম গড়ে উঠেছে ক্রিকেটকে শুধু ক্রিকেট দিয়েই বোঝে, অন্য কিছুর সাথে মেলাতে চায়না, এই বুঝ ব্যাবস্থার সাথে আছে দেশ প্রেম এর একটা মিশেল। সেটাকে আঘাত দিয়ে কেউ যদি ক্রিকেটটাকে কেড়ে নিতে চান তাহলে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারাটাই হবে, কেননা আঘাত করে মন জয় করা যায়না, বখাটে ছেলে প্রেম প্রত্যাখ্যাত হয়ে এসিড মেরে ভালোবাসা আদায় করার মতো অবস্থার মতো। তাই কেউ যদি কোন দর্শন, আদর্শ বা ধর্ম দিয়ে ক্রিকেটটাকে মোকাবেলা করতে চায় তাহলে এমন দিনে যাতে কোন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া না দেখানো হয় যখন দেশের ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে প্রতিপক্ষের সাথে। খেলা আসলে ফেইসবুক ব্লগে কিছু লেখা চোখে পড়ে ক্রিকেট বিমুখ হবার কারন বিষয় সম্বলিত। এই লিখাটা লিখতে হবে যখন ক্রিকেট খেলা চলেনা সেই সময়, খেলা চলাকালীন সময় এসব লিখলে যারা ক্রিকেট পাগল তারা বিরক্ত হবে এবং বিগড়ে যাবে, যার ফলে এখানে ধর্ম বা আদর্শ কোনটাই তার ফল আনবেনা বরংচ বিপরীত হবে।
শুতরাং এই মাছটা ধরতে হলে ভাটার সময় জালটা ফেলতে হবে, সব জোয়ারে মাছ ধরা যায়না, জাল তলিয়ে যাবার সম্ভবনাও আছে ক্রিকেট জোয়ারে জাল পড়লে।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সময়োপযোগী সুন্দর বিস্লেষণসমেত লেখাটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন