- গল্পের গল্প
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:২৭:৩১ দুপুর
বড় ভাইয়ার প্রথম কবিতার বই প্রকাশ করার সময় দেখেছিলাম সব কিছু ঠিক আছে কেবল যে কাগজটা নির্বাচন করেছেন সেটা বাজারে নেই, তার জন্য অপেক্ষা করেছেন আরো ক'মাস। কথাটা বললাম এজন্য যে বই এর সাথে কাগজ এর একটা নিবিড় সম্পর্ক। ঠিক তেমনি ফন্ট নির্বাচন এবং সাইজ ইত্যাদি ব্যাপারগুলো সুচারুর উপর একটা বই এর ভাবগাম্ভির্জতা বা ভারিক্কি ফোটে উঠে।
মোহসিন ভাই সদ্য এসেছেন কাতারে, সাথে নিয়ে এসেছেন 'অপেক্ষা' নামক গল্পের বইটা। লেখক মোহাম্মদ আল মামুন খান প্রকাশিত প্রথম গল্পের বইটার একটা কপি আমার জন্য উপহার স্বরুপ পাঠিয়েছেন। এ এক অনন্য অনুভূতি। আমার বন্ধু বান্ধব বা চেনা জানার পরিধি সংক্ষিপ্ত হওয়াতে উপহার নামক বিষয়টাও খুবই সংকুচিত সেটা দেয়া এবং নেয়া দুটোর ক্ষেত্রেই। গল্পকার তার নিজের গল্পের বইটা যখন নিজ থেকেই দেশ থেকে প্রবাসে পাঠিয়েছেন এবং সেটা হাতে পাবার পর অনুভূতির মাত্রাটা আকাশচূড়ায় গিয়ে ঠেকেছে।
মামুন ভাই এর সাথে পরিচয় ব্লগ থেকেই, এখনো দেখা সাক্ষাৎ হয়নি, ইদানিং ব্লগ ছাড়িয়ে ফেইসবুকে যোগাযোগ হয় এইটুকুনই। বইটা পেয়ে হাত বোলালাম, কোমল মসৃণ আর শীতলতা অনুভব করলাম, রাতের বেলায় মার্কেট এর সামনের রাস্তায় ল্যাম্পোষ্ট আর রেস্তোরার আলোকসজ্বার আলোতে চোখ বোলালাম একটু করে।গেটআপ দেখেই বুঝতে বাকি রইলনা এখানে মেধা, আন্তরিকতা আর পেশাদারিত্বের সমন্বয় হয়েছে ষোল আনা।মুগ্ধ হয়েছি পেপার সিলেকশান হতে শুরু করে প্রচ্ছদ সব কিছুতেই। ধন্যবাদ তাই জানিয়ে রাখলাম কুঁড়েঘর প্রকাশনীকে।
একটানা বই পড়ার অভ্যাস নেই আমার, চাকুরি জীবনে এখন সময়ও বের করে নিতে হয় পড়ার জন্য। গল্প উপন্যাস পড়তে কিছুদূর না যেতেই মাথায় আবার অন্য চিন্তা ঘুরপাক খায়, চরিত্র গুলো থেকে কিছু করা যায় কিনা, কিংবা অতীত এর কোন চরিত্রের সাথে মিলে গেছে কিনা ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে মূল চরিত্র থেকেই ছিটকে পড়ি। কতদূর যাবার পর বই বন্ধ করে অন্যকাজে যোগ দেয়া, ফিরে এসে কত পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়া হয়েছে ভুলে যাওয়া, একই পড়া আবার পড়া ইত্যাদি আমার পড়ার ধরন, 'অপেক্ষার' বেলাতেও তায়।
গল্প লিখা কি খুব সহজ? মামুন ভাইযে লিখেন। প্রতিদিনকার দেখা, চেনা-জানা বিষয়গুলো অবলীলায় লিখে যান একের পর এক ক্লান্তিহীন। যতই পড়ি আর ভাবি এই দেখাগুলোতো আমরাও দেখি তবে গল্প হয়না কেন। মামুন ভাই লিখলেই যে গল্প হয়ে যায়।আসলে আমরা যা দেখি তা কেবল দেখার দেখি, চাক্ষুষ দেখাটাই দেখি। একজন লেখক সেই দেখাটা দেখতে পায়না, সে দেখে অন্য কিছু। এখানেই পার্থক্য।
হাসলাম, কাঁদলাম, ভাসলাম গল্প জোয়ারে। শহর থেকে গ্রামে, বিত্ত আর সংগ্রাম, প্রেম-বিচ্ছেদ সকল মাধ্যম ব্যাবহার হয়েছে গল্পে গল্পে। ঘুরে বেড়িয়েছি গ্রাম থেকে শহর হয়ে প্যরিস আবার দেশ। পরতে পরতে ভাবিয়েছে আমাকে প্রতিটা গল্প। কিসব উপমা আর উপলব্ধি কোথা থেকে আসে ভেবেছি বারবার। " এভাবেই নদীরা নারী হয়ে ওঠে, নারীরা নদী..." কিংবা " মেয়ে বিজ্ঞের মতো হাসে। যেন কত বুঝেছে সে।" কথাগুলো মাঝখান থেকেই তুলে নিলাম মুক্তোর মতো। এই শব্দগুলোতো গল্প ছাড়াই সুন্দর, ফুলের মতো ফুুটে উঠে, গন্ধ ছড়ায়।
লিখতে মন চাইছে অনেক কিছুই, পরিধি বাড়িয়ে অপাঠ্য হবার ভয়ে ইতির দিকেই এগুতে হচ্ছে। যাবার আগে 'অপেক্ষা' বই এর 'অপেক্ষা' গল্পটার রেশ টেনেই ইতিটা টানতে চাইছি। একটা লাইন তুলে ধরলাম, " এবার এলে শিহাবকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করবে, সে যাবার সময় আর একবার কেন পেছনে ফিরে তাকায় না? কিন্তু কোনোবারেই মিলির এটা জিজ্ঞাস করা হয়না।" লাইনটা পড়তে গিয়ে কান্নাটা আবার পেল। সেই গল্পটাই বলি। প্রবাস জীবন। যে পরিবারের সদস্যরা একা প্রবাসে থাকে তারাই বুঝবেন কেমন বেদনায় নীল হবার যন্ত্রণাটা।
আমার প্রথম কন্যা উমামা হবার পর তাকে দেখতে গিয়েছিলাম দু'বার, অনেক কষ্টে ইমার্জ্যান্সি ছুটি নিয়ে। প্রথমবার ১৫ দিনের জন্য। খরচপাতি নিয়ে ভাবিনি, ছয়মাস পর গিয়ে প্রথম দেখা হবে সেটাই পাওয়া। বছর পর যখন আবার গেলাম, আসার সময় সবাই আসলো বিদায় দিতে ইয়ারপোর্টে, দিয়া আসতে চায়নি, বোনেরা জোর করেই নিয়ে গেল, সে কেমন যেন নির্বাক তাকিয়ে ছিল। উমামা ছিল বাবার কোলে। আমি বাবার কোল থেকে উমামাকে নিলাম, কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলাম, তারপর বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সোজা হেঁটে ঢুকে গেলাম ভেতরে, কারো সাথে কলা বলিনি, এমনকি দিয়ার দিকেও তাকালামনা, পেছনে ফিরে তাকাইনি। এই প্রথম আমি কান্না চেপে ধরে রাখতে পারিনি, আমি চাইনি আমর জল তারা দেখুক। পরে দিয়া আমাকে প্রশ্নটা করেছিল, " আচ্ছা, আমাদের ছেড়ে যেতে আপনার কষ্ট হয়না কেন?" আবার কাঁদলাম শেষের শব্দগুলো লিখতে গিয়ে..............
বিষয়: বিবিধ
৯৫৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনিও কিন্তু চমৎকার লিখেন। এতো ঘন ঘন কবিতা কিভাবে লিখেন! আমি চেষ্টা করেও কবিতা লিখতে পারিনা।
অপেক্ষা নামটি উনি কেন দিয়েছে, আপনার উল্লেখিত লাইনটা থেকেই বোঝা যায়, কেন পেছন ফিরে তাকায়না! আসলে আমিও বাড়ি থেকে আসার সময় পেছন ফিরে তাকাইনা, তাকালে মায়ের মায়া বেড়ে যাবে, যাবে আমারও, তখন আমার রেখে আসতে যেমন কষ্ট, আমাকে ছাড়তেও মায়ের খুব কষ্ট হবে।
অপেক্ষা জিনিসটা আপনাদের মত যারা দূরে থাকে, তাদের হজম করা স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ালেও ভেতরের কষ্টগুলো কিন্তু ঠিকই দুমড়ে মুচড়ে দেয়।
সম্ভব হলে দেশে এসে কিছু করুন, থাকুন স্ত্রী সন্তানের পাশে, সময়টা উপভোগ করুন সবাই মিলে একই সাথে।
আপনাদের অপেক্ষার শিগগিরই অবসান হোক,এটাই কামনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন