- প্রশ্ন

লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ২৯ জুলাই, ২০১৫, ০৩:১৮:৩২ দুপুর



মাতৃগর্ভে বুলেটবিদ্ধ শিশু

কেঁপে কেঁপে উঠে তার বুক

অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে যিশু

বেঁচে আছে এটাই তার সুখ।

কোথায় তোমার নিরাপত্তার বলয়

প্রশ্ন রইল আল্লাহ তোমার কাছে

মাতৃজঠরে লেগেছে আজ প্রলয়

তব্ধ শিশু কান্না ভুলে আছে।

হায় ভগবান তুমিও কেন চুপ

কোথায় গেল মা দূর্গার তীর

হাজার প্রশ্ন দিয়ে আছে ডুব

বিস্ময় মনে করছে ভীষণ ভীড়।

গৌতম তুমি শুনতে পেলে নাকি

বুলেট গেছে শিশুর বুক চিড়ে

শুনছেনা কেউ করছি ডাকাডাকি

কেমনে শিশু আসবে কার নীড়ে।



শিশুটি শ্বাস নিচ্ছে। চিকিৎসকেরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচছেন। শিশুটি ক্ষুধায় কাঁদছে, স্বজনেরা আশায় বুক বাঁধছেন। শিশুটি ঘুমাচ্ছে। স্বজনেরা উৎকণ্ঠায় প্রহর গুনছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার শিশুটি জীবনের ছয়-ছয়টি দিন পূর্ণ করেছে। মায়ের পেটে আরও কয়েক সপ্তাহ নিরাপদে থাকার কথা ছিল তার। কিন্তু মাতৃজঠরে গুলি লাগায় স্বাভাবিক সময়ের আগেই তাকে পৃথিবীতে চলে আসতে হয়েছে।

শিশুটির মা নাজমা বেগম (৩৫) আছেন মাগুরা সদর হাসপাতালে। তিনিও তো গুলিবিদ্ধ। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। নাড়িছেঁড়া ধন পড়ে আছে ঢাকায়।

মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় কারিগরপাড়ায় গত বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন অন্তঃসত্ত্বা নাজমা বেগম। গুলি মায়ের পেটের শিশুর শরীরও এফোঁড়-ওফোঁড় করে ফেলে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ও বোমায় আহত হন নাজমা বেগমের চাচাশ্বশুর মমিন ভূঁইয়া। পরদিন তিনি মারা যান।

মাগুরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শফিউর রহমান বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ায় মা ও পেটের শিশুকে বাঁচাতে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। প্রায় দুই ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর মায়ের পেট থেকে গুলিবিদ্ধ কন্যাশিশুকে পৃথিবীর আলোতে আনা সম্ভব হয়। গতকাল পর্যন্ত তার নাম রাখার ফুরসত হয়নি পরিবারের।

গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ রঙের নরম লেপের ওপর শুয়ে আছে শিশুটি। বুকের ওপর তুলার আস্তরণ। মাথার চারপাশটাও কাপড়ে ঢাকা। গোলাপি রঙের মশারির বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় ছোট্ট এক রাজকন্যা পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু মশারিটা সরালেই ভুল ভেঙে যায়। ওর ডান চোখটা ফোলা আর কালো, ছোট্ট শরীরে ধকলের চিহ্ন স্পষ্ট।

শিশুটি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের খাতায় ওর নাম ‘বেবি অফ নাজমা বেগম’ (নাজমা বেগমের বাচ্চা)। ফাইলের ওপর ‘পুলিশ কেস’-এর সিল। মাত্র দুদিন বয়সে সংকটাপন্ন অবস্থায় ২০১ কিলোমিটার দূরে মাকে রেখে চাচা-ফুফু আর পুলিশের সঙ্গে ও ঢাকায় এসেছে।

চিকিৎসক কানিজ হাসিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাচ্চাটির পিঠ দিয়ে গুলি ঢুকে বুক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। হাতে-গলায় জখম। চোখটা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ডান চোখের ভেতর রক্ত জমা। চোখটা খুলছে না। স্থায়ী কোনো ক্ষতি হয়ে গেছে কি না, সে ব্যাপারে এখনো আমরা নিশ্চিত নই।’

শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান আশরাফুল হক বলেন, পরিবার বলছে নাজমা বেগম ৩৪ সপ্তাহর গর্ভবতী ছিলেন। শিশুটি প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে জন্মেছে। ওর ওজন দুই কেজি। স্বাভাবিকের চেয়ে এই ওজন ৫০০ গ্রাম কম। শিশুটির অবস্থা এখন স্থিতিশীল। কিন্তু অপরিণত ও কম ওজনের হওয়ায় ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, এক্স-রে রিপোর্ট দেখে তাঁদের মনে হচ্ছে, ওর হৃদ্যন্ত্র, ফুসফুস অক্ষত আছে। গুলির ছোটখাটো কোনো অংশ বুকের ভেতর রয়ে গেল কি না, তা দেখতে আবাসিক সার্জারি বিভাগের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। চক্ষুবিশেষজ্ঞও দেখছেন ওকে। মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় স্তম্ভিত চিকিৎসকেরাও। তবে অনেক নিরাশার মধ্যেও স্বস্তির কথা, মায়ের পেটে শিশু স্বাভাবিকভাবে যে অবস্থানে থাকে, তার কারণে হয়তো ওর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। বুকের ভেতরের হাড়গুলোও অক্ষত আছে। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুটিকে আনা হয় গত রোববার ভোর সাড়ে চারটায়। ওর ফুফু শিউলি বেগম জানান, ওকে যখন মাগুরা থেকে আনা হয়, তখন অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। মাগুরায় চিকিৎসকদের পরামর্শেই ওকে ঢাকায় আনা হয়। তবে এখন ও একটু একটু করে খাচ্ছে। খিদে পেলে কাঁদছে।

চিকিৎসকদের গতকাল শিশুটির নাকের নিচে বারবার হাত দিতে দেখা যাচ্ছিল। তাঁরা মনে করছেন, ‘বেবি অব নাজমা’ যদি ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়, তাহলে জীবনাশঙ্কা নেই। যত উদ্বেগ ডান চোখটি নিয়ে।

বিষয়: বিবিধ

৭৩২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

332453
২৯ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৪
হতভাগা লিখেছেন : জরুরী ভিত্তিতে বাচ্চাকে নির্ধারিত সময়ের ৩ মাস আগে বের করতে হয়েছে ।

ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তারেরা এই প্রি-ম্যাচিউর ডেলিভারীকেই ফোকাস করছেন বেশী । বোঝাই যাচ্ছে যে বাচ্চাটা যদি মারা যায় তাহলে তার প্রি-ম্যাচিউর বর্নকেই দায়ী করা হবে । গুলি খাওয়ার ফলে যে এসব হয়েছে সেটা আমাদেরকে ভুলে যেতে হবে ।

অথচ প্রি-ম্যাচিউর বার্থ এবং এর ম্যানেজমেন্ট এসব হাসপাতালে খুব কমন একটা ব্যাপার ।
332461
২৯ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৯
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : সোনা ছেলেদের কারবার নিয়ে প্রশ্ন করতে নেই! অনেক ধন্যবাদ।
332479
২৯ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৯
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : সোনা ছেলেদের কারবার নিয়ে প্রশ্ন করতে নেই! অনেক ধন্যবাদ
332493
২৯ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কোন প্রশ্ন করবেন না। তাইলে আপনি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ!
332516
২৯ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৮
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : এই দেশে আরও কত কি যে দেখতে হবে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File