নিতান্তই একান্ত
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ২৮ জুলাই, ২০১৫, ১১:৫৬:৩০ সকাল
কাষ্টম, কালচার বা সংস্কৃতি এগুলো মানুষের রক্তে মিষে থাকা একটা উপাদান এর মতো। তার সাথে যখন ধর্ম যোগ হয় তখন এগুলোর কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। কারন ধর্ম এমন একটা বিষয় যা অলঙ্ঘনিয়। এখন ব্যাপার হলো কালচার বা কাষ্টম যদি ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক না হয় তাহলে চলমান থাকবে কিন্তু সাংঘর্ষিক হলে তা ধীরে ধীরে পরিবর্তন করার প্রয়াস চালাতে হবে।
ধীরে ধীরে কথাটা বলার একটা কারণ হলো, বিষয়গুলো সাদামাটা চোখে খুবই সহজ, যেটা সাংঘর্ষিক সেটা ছেটে ফেলা, কিন্তু এই ছেটে ফেলা কাজটা যে কত কঠিন সেটা যখন প্রয়োগ এর ব্যাপার আসে তখন বুঝা যায়। মানুষের সিম্পল একটা অভ্যাস পরিবর্তন করার জন্য আপনাকে হয়তো একটা প্রজন্ম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারন যে অভ্যাসগুলো শতশত বছর ধরে বংশপরম্পরায় চর্চা করে আসা হচ্ছে সেটা ছেটে ফেলতে হলেও হয়তো একটা প্রজন্ম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ধরুন পায়ে ধরা সালাম করা। সাদামাটা একটা বিষয়, মুরুব্বীদের পায়ে ধরে সালাম করবে এটা তো বাপ দাদার আমল থেকেই হয়ে আসছে, সমস্যা কোথায়? সমস্যা আগে ছিলনা কিন্তু এখন হচ্ছে এবং সেটা হলো এটার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে নত হবার মতো একটা বিষয়, ইসলামে নত হওয়া যায় একমাত্র আল্লাহর কাছে, মুরুব্বীদের কাছে যেমন নয় তেমন মাজার এর কাছেও নয়। তাই পায়ে ধরে সালাম করতে গিয়ে যে নত হতে হয় এখানে ইসলাম এর সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে। তাই এটা পরিবর্তন এর জন্য বর্তমান সচেতন প্রত্যেক মুসলমান একমত প্রায়ই। কিন্তু সমস্যা হলো এটা বুঝতে বা মানতে নারাজ অনেক প্রবীনরাই।
কাষ্টম, প্রথা, কালাচার বা সংস্কৃতি এগুলো অনেক সময় ধর্মের সাথে মিশে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে, এবং অবশেষে দেখা যায় এটাও ধর্মের অংশ এমন একটা রূপ ধারণ করে, অথচ ধর্ম এটাকে গ্রহণ করেনা। পায়ে ধরে সালাম বিষয়টা ঠিক এমনটা। আমরা অনেকেই এটাকে বর্জন করতে আগ্রহী কিন্তু ব্যাপার হলো এতোদিন যাকে পায়ে ধরে প্রনাম করে আসছি তাকে দেখলে শুধু মুখে সালাম দেব সংকোচ এর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় এবং প্রবীন এর কাছে হয়ে দাঁড়ায় মান অভিমান এর বিষয়, যেহেতু এখানে দুইটা পক্ষ জড়িত। সুতরাং আমরা যারা ব্যাপারগুলো নিয়ে দ্বিধায় থাকি এটা স্বাভাবিক হতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, কারন আমাদের মা বাবা আমাদের শিখেয়েছে পায়ে ধরে সালাম করতে হয়, আমরা মাঝপথে এসে জানলাম প্রয়োজন নেই, সুতরাং মনোজগতে একটা দ্বন্দ থেকেই যায়, এতদিনের চর্চা হঠাৎ ছেড়ে দিই কি করে। এটা কিন্তু আর সমস্যা হয়ে দাঁড়াবেনা পরবর্তী প্রজন্ম এর কাছে, কারন তাদের শেখানো হবে, মুখে সালাম দিলেই হবে এটাই ইসলাম বলে এবং এটাই সত্য।
না, এ ব্যাপারে আমাদের বাপ দাদাদের দোষারূপ করতে আমি আগ্রহি নই। আমাদের ভারত বর্ষে হিন্দু কালচার ছিল, সেখানে ইসলাম আসল তারপর ধর্ম গ্রহণ বা পরিবর্তন এর ব্যাপার আসল। মানুষ গ্রহণ করল ইসলাম কিন্তু আগের যে চর্চা সেগুলো ছেড়ে নতুন একটা চর্চা গ্রহণ করেছে সেটাইতো বেশী, পূজা ছেড়ে দিয়েছে চারটিখানি কথা নয়। তাই খুটিনাটি অনেক বিষয় চর্চা রয়ে গেছে। সালাম এর মতো ব্যাপারগুলো তখন মূখ্য ছিলনা, তখন মুখ্যা ছিল অন্য ব্যাপারগুলো, সেগুলোতে তারা উতরে আজকে আমাদের হাতে ইসলাম ধরিয়ে দিয়েছে।
পাড়ার যে হুজুরটা হয়তো কিছুটা ভুল উচ্চারণ করে থাকতে পারে, কিন্তু সেই হুজুর এর হাত ধরে আমরা আলিফ বে তে সে শিখে ইসলাম এর একটা চেইন ধরে রেখেছি, এখন যদি আমরা বুঝতে পারি, আলিফ, বা, তা সা হবে এবং আরো সুদ্ধ পদ্ধতি তাহলে আমরা সেটা সুধরে নেব। ঠিক যেমন পায়ে ধরে সালাম এর ব্যাপারটা
এমন করে একটা একটা বিষয় ছাটায় করতে হবে আমাদের, যেমন ধরুন তাবিজ এর একটা ব্যাপার আছে, এটাও ইসলাম এর সাথে মিশে আমরা মনে করে আসছিলাম এটাও ইসলাম এর একটা অংশ। কিন্তু এসবে শিরক এর উপাদান আছে, আমি তাবিজ এর কাছে সাহায্য প্রত্যাশী এটা হতে পারেনা, অথচ তাবিজগুলো দেয় পাড়ার হুজুরেরাই।
তাই এখন সময় হলো কাস্টম, প্রথা বা কালচার এ যদি ইসলাম এর সাথে সাংঘর্ষিক কিছু থেকে থাক তা ধীরে ধীরে পরিবর্তন এর একটা হাওয়া তোলা। একদিন হয়ে যাবেনা, বলাবলি লিখালিখি থেকে প্রচার প্রসার এবং চর্চা হতে থাকবে।
এবার আসুন একটা বাস্তব উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাক। আমাদের অগ্রজ শ্রদ্ধেয় মোহাম্মদ লোকমান ভাই এর একটা ফেবু ষ্ট্যাটাস শেয়ার করা যাক এবং কমেন্ট দেবার ভাবনা থেকেই আমার এই লিখার সূত্রপাত:
Mohammed Lokman
"পায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়লিনা, সেটা আবার সালাম হলো!!
বছর কয়েক আগের ঘটনা। এক নিকটাত্মীয় আমার বাসায় বেড়াতে আসলে যথা সম্ভব হক আদায় করে মেহমানদারী করার চেষ্টা করেছি। কয়েকদিন পর অন্যান্য আত্মীয়ের মুখে শুনলাম, উক্ত মেহমান আমার বাসায় এসে সন্তুষ্ট হতে পারেনি, কারণ আমার মেয়ে তাকে সালাম করেনি।
আমরা দীর্ঘদিন সপরিবারে আরব দেশে অবস্থান করেছি, যেখানে হাটতে, বসতে, চলতে ফিরতে সর্বত্র সালামের সয়লাব। হিন্দু-বৌদ্ধ-ইহুদী-নাসারা থেকে শুরু করে নাস্তিকেরাও সালাম বিনিময়ে কার্পণ্য করেনা এখানে। এমন একটি দেশে যে মেয়েটি শিশু শ্রেণী থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত লেখা পড়া করে আসলো, সে এদেশে এসে কিভাবে সালামের অভ্যাস ত্যাগ করলো?
মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম, ওমুককে সালাম করোনি কেন? মেয়ে খুবই অবাক হয়ে জবাব দিয়েছিল, ‘আমিতো সালাম করেছি, আব্বু!’ তখন আমরা ধরে নিয়েছি, মেয়ে নিশ্চয়ই এমন ক্ষীণ কণ্ঠে সালাম দিয়েছে, যা ঐ আত্মীয় শুনতে পায়নি। আগন্তুকের কানের পর্দায় সালামের বাণী পৌঁছাতে ব্যর্থতার কারণে সেদিন মেয়েকে বেশ বকা দিয়েছিলাম।
ঘটনাক্রমে এবারের ঈদে কিছু সময় উক্ত আত্মীয়ের সাথে কাটানোর সুবাদে লক্ষ্য করলাম, সে পায়ের উপর হুমরি খেয়ে পড়াকেই সালাম মনে করে। “আসসালামু আলাইকুম” শব্দদ্বয় তাকে সন্তুষ্ট করতে পারে না। আমাদের ভুলটা ভাংতে বেশ সময় নিয়েছিল।
পায়ে হাত রেখে কপালে ঘষা নয়, জীবনভর পায়ের ওপর কপাল ঘষলেও একবার ‘আসসালামু আলাইকুম’ আর ‘ওয়া আলাইকুম সালাম’ এর সমতুল্য হবে না। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তাওফিক দান করুন।"
বিষয়: বিবিধ
১০৯৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি ঠিকই বলেছেন, আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিকে ভাঙ্গা খুবই কঠিন। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যেদিন কাবা থেকে মুর্তি গুলো উৎপাটন করেন, সেটিন মুর্তীর গুলোর খুঁটি সহ উৎপাটন করতে চেয়েছিলেন। তিনি করেন নাই! কারণ ও বলেছেন! সেটা হল সেই সাংস্কৃতির গুরুত্বের প্রতি খেয়াল।
তিনি স্ত্রী আয়েশাকে ডেকে বললেন, 'তোমার জাতি যদি আমাকে সবকিছু উৎপাটন কারী ব্যক্তি হিসেবে নিন্দা না করত, তাহলে আমি মুর্তিকে দাড় করিয়ে রাখার এই খুটিগুলোও উৎপাটন করতাম'।
নবীজি এই ব্যাপারটিকে কতটুক গুরুত্ব দিয়েছেন, তলিয়ে দেখলে তাজ্জব হতে হয়।
বলা হয়েছে কোন জাতিকে গোলাম বানাতে চাইলে তার সাংস্কৃতিকে দখল করো। ভারতীয় সাংস্কৃতি দেশ দখল করেছে বলেই, ভারতের মত ছেলেদের হাতে রাখিবন্ধন, চুড়ি, কানে দুল, গলার হার ইত্যাদির প্রভাব বেড়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন