- নিতান্তই একান্ত / শিয়া (৬-খ) (গত পর্বের শেষাংস)
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ১৪ জুলাই, ২০১৫, ১২:১৮:০৪ রাত
আমি বললাম না হয়না, আমি আমার পরিবারকে ছাড়তে পারিনা, ইসলামও এভাবে ছাড়তে বলেনি। তবুও তারা তাদের যুক্তিতে অটল থাকল। তারা আরো অনেক কথা বলেছে যেগুলো অতি বাড়াবাড়ি মনে হল আমার কাছে। কেউ কেউ আমাকে ওহাবি এবং সালাফির কথাও বলেছে, কিন্তু সে বিষয়ে বিশেষ কিছু জানতামনা, আর না জেনে আমি সে বিষয়ে এগুতে পারিনা। তারা তাদের মতো করে আমাকে ব্যাখ্যা দিতে লাগল এটাই ইসলাম। আমি ভাবলাম হয়তো তারাই ঠিক, কারন তারা আগে থেকেই সব জেনে আসছে, চর্চা করে আসছে তাই তাদের কথা হয়তো সঠিক, কিন্তু তাদের সাথে মানিয়ে নিতে পারছিলামনা এবং পরবর্তীতে আমি তাদের সংগ ছাড়তে বাধ্য হলাম।
তারা যখন আমাকে জোর করে বোঝাতে চাইছিল আমি যদি তাদের সেসব কথাগুলো অনুসরন না করি তাহলে আমি একজন ভাল মুসলমান হতে পারবনা। (কান্নারত অবস্থায়) তারপর আমি ইসলাম থেকে সরে আসি। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ব্যাপার, অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে, তাদের অনেক কিছু জানার থাকে, ইসলাম একটা পূর্ণঙ্গ জীবন ব্যাবস্থা আর এসব কিছু জানার জন্য অন্যজনের সাহায্য লাগে, তারা সাহায্য করতে এগিয়ে আসে কিন্তু সেটা তাদের মতো করে। ব্যাপারগুলো আমার উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলেছিল, আমার ব্যাক্তিগত জীবন, চিন্তা সবকিছু বিষময় হয়ে গিয়েছিল। তাদের কাছে সবকিছু যেন হারাম। তখন আমার আর উপায় ছিলনা, আমি ইসলাম ত্যাগ করলাম।
আলহামদুলিল্লাহ, তারপরবর্তী সময়ে আমি আরো কিছু লোকের সাথে পরিচিত হলাম। যারা আমার ব্যাপারগুলো বুঝতে সক্ষম হয়েছিল, এবং তারা বলেছিল আমাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল সবকিছু। এরা আমার প্রতি অনেক সজাগ ছিল এবং এরা ইসলাম এর প্রতি আমার যে অনুভুতি সেটা ধরতে পেরেছিল। এরা আমাকে এদের মসজিদে নিয়ে গেল, এবং বলল আমি যেন আমার মতো করেই সবকিছুকে ধীরে গ্রহণ করি, তাড়াহুড়োর কিছুই নেই, সবকিছু একদিনে হয়ে যায়না, আস্তে আস্তে হবে। যত সময় লাগুক আমি যেন আমার মতো করেই ব্যাপারগুলো গুছিয়ে নিই। আমি বললাম অবশ্যই আমি এটাই চাই।
এবার আমি আমার সেই আগের অনুভুতি ফিরে পেতে লাগলাম, ইসলাম এর জন্য প্রথম দিকে যে টানটা অনুভব করতাম। আমি শিয়াইজম সম্পর্কে এবার জানতে লাগলাম। ইসলাম এর ইতিহাসগুলোতো একই আমরা সেটা জানি, আমি নবী সম্পর্কে তার নাতি হাসান হোসাইন সম্পর্কে যা জানতাম তা হলো তারা শিশু ছিল, খেলধূলা করতো এমন সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু পরে জানতে পারলাম আরো অনেক ব্যাপার যা আগে আমার কাছ থেকে লুকানো হয়েছিল। কারবালার ব্যাপারগুলো জানলাম যেগুলো সুন্নি ইসলাম আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিল।
শিয়া ইসলামে যে কোন প্রশ্ন করা যায়, তবে সুন্নী ইসলাম তেমনটা নয়, সেখানে সব প্রশ্ন করা যায়না, তারা একটা গন্ডীর মধ্যে থাকে। তারা বলতো এমন প্রশ্ন করা উচিত না, এটা এভাবে ওভাবে না। কিন্ত প্রশ্নটা আমার কাছে বড় ব্যাপার ছিল, প্রশ্ন ছাড়া আমি কিভাবে সত্য এবং স্বচ্ছ ধারনা পাব।
আমি এখন এই নতুন মসজিদে স্বাচ্ছন্দ হতে লাগলাম, এখন আমার কাছে সবকিছু সহজ মনে হতে লাগল। তারপর আমি শিয়া মুসলিম হলাম। আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন অনেক হ্যাপী, আমার এখন অনেক ভালো বন্ধু হল।
আমি জানি আমার এই নতুন জীবন নতুন একটা চ্যালেঞ্জ আমার জন্য, আমার পরিবার এবং বন্ধ বান্ধব সবার সাথে মানিয়ে চলা, তাদের অনেক কৌতুহল এব প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া, এসবের মোকাবেলার ব্যাপার আছে। আমার খাবার হতে শুরু করে ড্রেস এর ধরন, হিজাব পালন এসবের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া ইত্যাদির ব্যাপার আছে।
এখন আমার মা-বাবার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক আছে। তারা ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে। এখন আমি আর ঘুম থেকে উঠতে দেরী করিনা, আমার জীবন ব্যাবস্থা এখন অনেক বদলে গেছে যেটা আরো সুন্দর এবং সুখময়। আমি ইসলাম এর জন্য বিশেষ কিছু করিনা আপাতত কিছু অনুবাদ এর কাজ করে সাহায্য করি।
ভাবানুবাদ / বাকপ্রবাস
ব্যক্তিগত অভিমত : অনেক জায়গায় অসগলগ্ন লক্ষ্য করা গেছে এবং শিয়া সুন্নীর একটা বিভেদ করার চেষ্টা হয়েছে যেটা আদৌ প্রয়োজন ছিলনা। যেহেতু সাক্ষাৎকারটা নিয়েছে আহলুল বায়াত টিভি তারা সেটা সূক্ষভাবে ব্যাবহার করেছে শিয়া সুন্নীর ব্যাপারটা। বর্তমানে ইউরোপে যারা দায়ী হিসেবে খুব পরিচিত তাদের লক্ষ্য করলে বুঝা যাবে তারা কি পরিমাণ যুক্তি, মেধা, অধ্যবসায় দিয়ে ইসলাম এর দাওয়াত দিয়ে আসছে, আহমদ দিদাত, ডা. জাকির নায়েক, আব্দুর রহীম গ্রীন, ইউসুফ ইসতিস, ডা.বিলাল এদের লেকচারগুলো ইউটিউবে পাওয়া যায়। তারা নিজেদের শিয়া সুন্নী বলে বিভাজন করেনা, তাদের কথাগুলো শুনলে উপরের বক্তব্যের কিছু অংশ হাস্যকর মনে হতে পারে। তবুও বলছি বোন যেন ইসলাম এর শান্তিটা খুঁজে পায়।
বিষয়: বিবিধ
১২০৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন