- নিতান্তই একান্ত / শিয়া (৬-ক)
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ১৩ জুলাই, ২০১৫, ০৭:১৯:৪১ সকাল
আমার নাম মর্ন, বয়স ২২বছর। আমাদের পরিবার অ-খ্রিষ্টান তবে নাস্তিক নয় এবং অন্যান্য খ্রিষ্টানদের মতোও নয়। আমার বেড়ে উঠা অন্যান্য আট দশজনের মতোই স্বাভাবিকতার মধ্য দিয়ে এবং তার মধ্যে ধার্মিকতার প্রভাব ছিলনা।
আমার পিতামাতা আমাকে ধর্ম বা গড সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা দেয়নি, আমার দাদিমা ধর্মচর্চা করতেন যার কাছ থেকে আমি ধর্ম সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছি, খানিকটা খ্রিষ্টান ধর্মের মতো আবার খ্রিষ্টান ও নয় এমন এক ধরনের চর্চা। যারা এক প্রকার দোয়া পাঠ করতো যেটা উপাসনা নয় এক প্রকার গীত বলা চলে, যেখানে গড এর গুণগান করা হয়।
আমি সবসময় গড বিশ্বাসী ছিলাম এবং আমার ভেতর একটা অনুভূতি কাজ করতো গড সম্পর্কে তবে সেটার ধরণটা ধোয়াসাচ্ছন্ন ছিল। আমার বয়স যখন ১৫/১৬ বছর তখন আমি চার্চ এ যাতায়াত শুরু করলাম, কারন আমি মনে করতাম আমার কিছু একটা করা প্রয়োজন।
আমি ঘনঘন চার্চে যাওয়া আসা শুরু করলাম কারন আমার মনে শূণ্যতা কাজ করতো কিছু একটা খুঁজে বের করার। আমার মনে যেসব প্রশ্ন উদয় হতো আমি তার যথাযথ উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলামনা। আমি তাই চার্চ থেকে চার্চে ঘুরতে লাগলাম, এমনকি ক্যাথলিক চার্চও বাদ যায়নি, তবে আমি আমার ধর্ম খুঁজে পায়নি।
আমি বোঝাতে পারবনা আমার মনে একটা অনুভূতি কাজ করতো, আমার চারপাশে কোথাও যেন কিছু একটা আছে। আমার পরিবার আমার এ ব্যাপারটাকে ভালভাবে নেয়নি, তারা ভাবলো কেন শুধু শুধু চার্চে যাওয়া, গড বিশ্বাস করা ইত্যাদি। আমি নিজেকে খ্রিষ্টান ভাবতাম এবং একজন ধার্মিক খ্রিষ্টান হবার চেষ্টা করছিলাম।
মিডিয়ার কারেন আমি কখনো ইসলাম পছন্দ করিনি। মিডিয়ার কল্যাণে ইসলাম আমার কাছে খুব খারাপ একটা ব্যাপার ছিল, ইসলাম বলতে আমি বুঝতাম খারাপ লোক, আত্মঘাতী বোমা এমন সব বিষয়। আমি দেখতাম মুসলমানদের ব্যাবহার ভাল ছিলনা তাই আমি ভাবতাম এটা যদি ইসলাম হয়ে থাকে তবে আমি এটার উপর ভরসা করতে পারিনা। এতগুলো খারাপ ধারনা থাকার পর ইসলাম এর কাছে আসা আমার জন্য কঠিন একটা ব্যাপার ছিল।
অন্যদিকে আমার কখনো মনে হয়নি যিশু গড এর পুত্র। আমার কাছে গড বলতে অদ্বীতিয় এবং স্বতন্ত্র একটা ব্যাপার ছিল, পিতা পুত্রের মতো ব্যাপারটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য ছিলনা, তাই সত্য খোঁজাটা আমার জন্য জরুরী হয়ে পড়েছিল।
পরে যখন আমি নিজেই ইসলাম সম্পর্কে খোঁজ খবর নিলাম এবং জানতে থাকলাম তখন মনে হলো এটার উপর বিশ্বাস রাখা যায়। আমি যখন সিদ্ধান্ত নেব ভাবছিলাম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করব এবং কখন কিভাবে তা ঠিক জানিনা, তখনো আমি কিছুটা দোটনায় ছিলাম, প্রস্তুত ছিলামনা। সে সময়টায় আমি কিছু ইসলামিক গ্রুপ এর সাথে পরিচিত হলাম, যারা মুসলিম এবং ননমুসলিমদের সাথে কাজ করতো, প্রধানত ননমুসলিমদের সাথে। আমি তাদের অনুসরন করতে থাকলাম। তাদের মধ্যে একজনের সাথে আমার সখ্যতা বেড়েছিল, সে (বোন) আমাকে বলল, " তুমি তাড়াহুড়ো করোনা, তোমার পছন্দ না হলে ধর্ম পরিবর্তন এর প্রয়োজন নেই, তুমি তোমার সময় নাও।" আমি বললা, " না না আমি এখনই ইসলাম গ্রহণ করছিনা, আমার আরো সময় এর প্রয়োজন।"
তাদের কাছ থেকে আমি জানতে পেরেছিলাম যে, অমুসলিমরা কখনো জান্নাতে যেতে পারবেনা, এমনকি তারা ভালো কাজ বা ব্যাবহার করে থাকলেও। তারা আমাকে তাগাদা দিচ্ছিল যে, আমি যদি ইসলাম গ্রহণ করতে চাই তাহলে তাড়াতাড়ি যেন করে ফেলি, যতদ্রুত সম্ভব। কিন্তু আমি বললাম, আমি এখনো প্রস্তুত নই, যদিও আমি ইসলাম অনুভব করছি তবে আমি মনে করি আমার আরো একটু সময় নেওয়া প্রয়োজন, এটা আমার নিজের জন্য, আমার কাছে আমি আগে স্বচ্ছ হতে চাই। কিন্তু তারা সেটা বুঝতে নারাজ, তারা আমাকে জোর করতেই লাগল, তাদের যুক্তি হলো আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে অন্যান্যরা তাতে অনুপ্রাণিত হবে, তারা বুঝবে ইসলামই সঠিক পথ, তাই তোমার অতি তাড়াতাড়ি ইসলাম গ্রহণ করা উচিত। আমি তবুও তাদের বলে যাচ্ছিলাম, আমি ইসলাম গ্রহণ করবো তবে তোমরা যেভাবে চাইছো সেভাবে অবশ্যই না, কারন আমি ইসলাম গ্রহণ করলে সেটা করবো আমার নিজের জন্য, অন্য কারো জন্য নয়, তাছাড়া আমার পরিবার আছে, বন্ধু-বান্ধব আছে তাদের সাথে সমন্বয় এরও একটা ব্যাপার আছে। তবুও তারা বুঝতে চাইলনা, তারা আমাকে জোর করতেই থাকলো, আমার এখনই ইসলাম গ্রহণ করা উচিত, অন্যদের দেখানো উচিত তুমি ইসলাম গ্রহণ করেছ, তাতে তারা উৎসাহিত হবে। তারা আরো যুক্তি দেখাল ব্যাপারটা তুমি আর তোমার বন্ধু-বান্ধব এমনটা নয়, ব্যাপারটা আসলে তুমি আর তোমার গড এর মধ্যে। তবুও আমি বললাম আমি ইসলাম গ্রহণ করব তবে সেটা আজকে নয়।
তারপর একটা ধর্মান্তকরন এর একটা অনুষ্ঠানে এক মহিলা আমার কাছে আসলো এবং আমাকে বললো, " তুমি জাননা তুমি কোন মহৎ কাজটা করতে যাচ্ছ, এখানে সবাই উৎসোক হয়ে অপেক্ষা করছে এ কারণে যে, তারা একজন অমুসলিম তার ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হবার দৃশ্যটা দেখবে, এবং একমাত্র এই কারনেই তারা এখানে এসেছে। আমি বললাম তারা এখানে এসেছে সেটা তারা ভালো জানে, কিন্তু তারাতো জানেনা আমি আজকে ইসলাম গ্রহণ করব, আমি নিজেওতো সিদ্ধান্ত নেইনি এখনো, সম্ভবত তারা অন্য কেউ মুসলমান হবে সেটা জেনেছে তাই এসেছে। কিন্তু তারা আমাকে বোঝাতে লাগল, আমি যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করি তাহলে অন্যান্যরাও পিছিয়ে যাবে। আমি বললাম, আমি তাদের জানিনা, তারাও আমাকে জানেনা, আর এভাবেতো হয়না, এটা সঠিক পন্থা নয়। কিন্তু তারা আমাকে জোর করতেই থাকলো, আমি কেন মুসলমান হবোন, আমি কি ইসলাম পছন্দ করিনা! তাহলে দ্বিধা কেন? আমার অবশ্যই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা উচিত।
তাদের পিড়াপিড়িতে অবশেষে আমি রাজি হলাম। আমি ভেবেছিলাম প্রকৃয়া বা আনুষ্ঠানিকতাটা একটা প্রকৃয়ার মধ্য দিযে হবে এবং কিছুটা সময় লাগবে, কিন্তু হঠাৎ করেই অনুষ্ঠান সঞ্চালক মঞ্চে চেয়ার থেকে উঠে ঘোষণা দিয়ে দিলেন, এখানে আজ এক বোন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন। আমি ভাবলাম অন্য কেউ কিন্তু সঞ্চালক আমার দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশনা দিল এবং বলল, দয়া করে কোন বোন কি ওনাকে সাহায্য করবে?
আমি আমার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালাম, দু'জন বোন এগিয়ে আসলো, এবং বলল আমাদের অনুসরন করুন। তারা আমাকে মঞ্চ এর একটা কোনায় নিয়ে গেল, যেটা মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল, আমি বিস্ময়ে হতবাক ছিলাম এবং কি করতে হবে বুঝতে পারছিলামনা। আরো বিস্ময় এর ব্যাপার হলো এখানে কোন এগ্রিম্যান্ট এর বিষয় ছিলনা, আমাকে যেন হুটহাট করেই বলল, হ্যায়ার, কামঅন, কনভার্ট। ব্যাপারগুলো আসলে একপাক্ষিকই ছিল, যেন এটা আমার কিছু করার নেই, তারাই করবে তাদেরটা। আমার মনে হলো তাদের শুধু একজন সদস্য বৃদ্ধির ব্যাপার ছিল তাদের কনভার্ট ব্যাংকে।
আমি শাহদাহ গ্রহণ করলাম, সবাই আমাকে অভিনন্দন জানালো, তারা আমাকে একগুচ্ছ বউ উপহার দিল এবং পর্বটা সেখানে শেষ হলো। তারপর দেখা গেল আমার সাথে অনেকেই যোগাযোগ করতে থাকলো, যাদের আমি চিনিনা, জানিনা, তারা আমার সাথে সখ্যতা গড়ার চেষ্টা করতে থাকল, তারা আমাকে পছন্দ করছে কারন আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি বলে, যেটাকে আমি পছন্দ করিনি।
তারা আমাকে মসজিদে নিয়ে গেল, এবং আমাকে একটা কোর্স করালো, যেটা মুলত কনভার্টেট কোর্স। আমি সেখানো অন্যান্য বোনদের সাথে পরিচিত হলাম। তারা শিক্ষা দিয়ে থাকে কি করে মুসলিম হওয়া যায়। যেমন ধরুন তারা আমাকে বলল, তুমি মুসলিম হয়েছো, এখন তোমার দায়িত্ব তোমার পরিবারের অন্যান্যদের মুসলমান বানানো, যদি তারা মুসলিম না হয় তাহলে তোমার উচিত তাদেরকে ত্যাগ করা।
বি.দ্র. বাকিটা পরের পর্বে দেয়া হবে, সময় কুলালনা, রাত শেষ হবার পথে
চলবে............
বিষয়: বিবিধ
১৩২৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খ্রিষ্টান থেকে শিআ, কুয়া খেকে উঠে খালে............
মন্তব্য করতে লগইন করুন