- নিতান্তই একান্ত / শিয়া (৫)
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ১২ জুলাই, ২০১৫, ০৪:১৩:৪২ রাত
ভিনিটা দাসোআর। ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান। তিন ভাই এক বোন এবং বাবা মা। পারিবারীক ভাবেই হিন্দু ধর্ম চর্চা করে আসছিলেন এবং প্রধনা ধর্মীয় উৎসব ছিল দিওয়ালি। বাকিটা শুনা যাক ভিনিটা দাসোআর এর কাছ থেকেই।
" আমার বাবা মা ইন্ডিয়া ছেড়ে কানাডা এসেছিল নিশ্চয় তাদের সন্তানদের ভালো জীবন যাপন এর নিশ্চয়তার জন্য। এবং আমি মনে করি যারা এভাবে দেশ ছেড়ে কেনাডার মতো দেশে চলে আসে তাদের মধ্যে অনেকেরই মনে এটা কাজ করে। এবং তার জন্য তারা তাদের সন্তানদের পড়ালিখার প্রতি খুবই যত্নশীল হয় এবং স্কুলে ভাল রেজাল্ট করার জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকে এবং ভার বন্ধু নির্বাচন ইত্যাদি ব্যাপারগুলো লক্ষ্য রেখে সন্তানদের গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
আমি আমার ইউনিভার্সিটি জীবনে হিন্দুইজম এর প্রতি উৎসাহী হয়ে উঠি। আমি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী ছিলাম। এবং আমার মনে অনেকগুলো প্রশ্ন কাজ করতো, আমি কে? কোথা থেকে আসলাম এমন ধরনের অনেক প্রশ্ন আমার মনে সক্রিয় ছিল, আর আমি সেগুলোর সন্ধান করছিলাম। আমি যদিও বিজ্ঞান এর ছাত্রী তবুও দর্শন আর হিন্দুইজম এর বিষয়ে আমি কিছু কোর্স করেছি । তখন আমি দারম, করমা, দুনিয়া, হিন্দুইজম এর নৈতিকতা, উপাসনার আইডল ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে আমি চর্চা করছিলাম।
আমার মনে হল হিন্দুধর্মটা অনেক প্রাচীন এবং আমি তায় অন্যান্য ধর্ম যেমন বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রীষ্টান ধর্ম, ইসলাম ধর্ম এসব বিষয় এর উপর তুলনামুলক চর্চাটাও করতে থাকলাম।
হিন্দু ধর্মে মৃত্যুর পরে আত্মাটা আবার ফিরে আসে কোন জীব জন্তুর আত্মা হয়ে এবং পূণপূণ চক্রাকারে আসতেই থাকে, এই বিষয়টা আমার কাছে কিছুটা ধোয়াসা মনে হলো। আমার মনে হলো ব্যাপারটা আরো বিশেষ কিছু। হিন্দু ধর্মে প্রতিদিনের প্রার্থনার (নামাজের মতো) বাধ্য-বাধকতা নেই, আসলে কোন সুনির্দিষ্ট অবয়ব নেই যেমন ইসলামের মতো কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম কানুন নেই।
আমার ব্যাক্তিগত ভাবে ধর্ম চর্চাটা তখন একটু বেস কঠিনই হয়ে পড়ল যখন আমি দেখলাম এখানে কোন নির্দিষ্ট পথ বা উপায় নেই। যেন কোন সংযোগ নেই মনের সাথে আর বিশ্বাস এর সাথে। হিন্দু ধর্মের আইডল এর ব্যাপারটা আমি অনুপযুক্ত মনে হল আমার কাছে। এই বিষয়টার প্রতি খুব আগ্রহী ছিলাম আর তাই আমাকে আরো সংগ্রামি হতে হল এবং আরো গভীরে যেতে হল।
তখন আমার মনে হল সবচেয়ে ভালো হয় ধর্মগ্রন্থগুলো চেখে দেখা। হিন্দু ধর্মে যেমন ভগবত গীতা আছে, আমি এটার উপর একটা কোর্স করাটা অধীকতর যুক্তিযুক্ত মনে করলাম, কারন তখনো আমি ষ্টুডেন্ট ছিলাম তাই ব্যাপারটা সহজ হবে এর ফাঁকে ফাঁকে অন্যান্য ধর্মগুলো নিয়েও চর্চা করতে থাকলাম, বিশেষ করে সব ধর্মের একটা আন্তসংযোগ এর ব্যাপারে।
আমার মা-বাবা প্রথমদিকে আমার এই ধর্ম বিষয়ক অনুসিদ্ধাৎসু প্রবণতা উৎসাহ দেয়নি, কারন প্রত্যেক মা-বাব স্বভাবতই প্রত্যাশা করে তাদের সন্তান নিজেদের ধর্মটাই চর্চা করবে। আমার বাবা-মা হিন্দু ধর্ম থেকে আসলেও প্রবাসী হবার কারনে ধর্ম চর্চার বিষয়ে কিছুটা শুণ্যতা বিরাজ করছে স্বভাবতই, আমি আমার প্যারেন্টস এর কাছে হিন্দু ধর্মের বেসিক বিষয়গুলো জানতে চাইতাম তবে জুৎসই উত্তর পেতামনা, আসলে হিন্দু ধর্মটা কালচার এর উপর ভিত্তি করে চর্চাটা হয়। এটা বুঝার চাইতে উদযাপনটাই হয় বেশী।
আমার ইউনিভার্সিটি এর তৃতীয় বর্ষে আমি যখন খুব কৌতুহলি হয়ে পড়েছিলাম এবং ধর্ম বিষয়ক বিভিন্ন কোর্সগুলো করছিলাম তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম যে আমি আর হিন্দু ধর্মে থাকছিনা। চতুর্থ বর্ষে আমি খ্রীষ্টান এবং ইসলাম বিষয়ে জানার চেষ্টা করছিলাম। এবং শেষ বর্ষে খ্রীষ্টান এবং ইসলাম ধর্ম এই দুটোর মধ্যে আমি ইসলামকেই বেছে নিলাম।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে গিয়ে আমাকে আরো একটা বিষয় খুব ভাবতে হয়েছিল কারন সেখানে শিয়া আর সুন্নী দুইটা ধারা আছে, আমি কোনটাকে বেছে নেব? পরে আরো রিসার্চ করে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম শিয়া পন্থাটাই আমার কাছে যুক্তিযুক্ত। আমার ব্যাক্তিগত অভিমত হলো এসব বিষয়ে শতভাগ যু্ক্তি এবং বিশ্বাস রাখতে হবে, মনে যাতে কোন দ্বিধা না থাকে, আমি তাই করেছিলাম, আমি সব পর্যালোচনা করে চুড়ান্ত সীদ্ধান্ত নিয়েছিলামযে আমি শীয়া পন্থাী মুসলমান হবো।
আসলে আমার অনেক মুসলিম বন্ধু ছিল যারা সুন্নী এবং শীয়া উভয় ধারার, আমি তাদের কাছে জানতে চাইতাম, প্রশ্ন করতাম, এবং উত্তরগুলো যাচাই করতাম। কারন আমাকে প্রথমে বিষয়গুলো জানতে হবে। তাদের উত্তরগুলো পাবার পর আমি টেক্সট এর সাথে মেলানোর চেষ্টা করতাম। তাদেরকে আমি যখন টেক্সট এর কথা বলতাম তখন শিয়ারা বলতো ওওও এটাতেরা সুন্নী লজিক, আবার সুন্নীরাও এমনভাবে বলতো। তখন আমাকে বিষয়গুলোর উপর আরো অনুসন্ধান চালাতো হতো, এভাবে আমি আমার যুক্তি এবং প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজতে লাগলাম এবং অবশেষে আমার কাছে শীয়া মতবাদটা অপেক্ষাকৃত উত্তম মনে হলো এবং আমার শাহদা গ্রহণ করলাম।
ইমাম হোসাইন (আ) এর দ্বারা আমি উদ্বিপ্ত হলাম, লক্ষ্য লক্ষ্য ভক্ত তার মাজার দর্শনে যায়, যেটা আমার মনযোগ আকর্ষণ করেছিল। কোন সে মহান ব্যাক্তি সবাই যার দ্বারা উদ্বিপ্ত! পুরো বিশ্ব থেকে তার মাজার এর আসে। কারবালার মতো বিষয়গুলো আমি জানতাম তবে প্রথম দিকে আমার মনে হলো এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার, একটা বিয়োগান্তক ইতিহাস, পরে যখন আমি বিষয়গুলো নিয়ে আরো ভাবতে এবং জানতে লাগলাম, ডকুম্যান্টরীগুলো যখন ভিডিও দেখছিলাম আর বিভিন্ন জনের সাথে আলাপ করে প্রকৃত ঘটনাগুলো জানলাম তখন সত্যিই আমি আবেগতাড়িত হয়ে পড়লাম। আমার কান্না পেতে লাগল। তাদের অবদান আর সেক্রিফাইস এর মতো বিষয়গুলো, তাদের ন্যায়বিচার, চালচলন এর মতো বিষয়গুলো এবং ইমাম হোসাইন অনেকেরইতো স্বচ্ছ ধারনা নেই। আমার ২৩ বছরের কানাডার জীবনে আমি কখনো ইমান হোসাইন সম্পর্কে শুনিনি।
আল্লাহ বলেছেন যখন তুমি ইসলাম গ্রহণ করবে তখন তুমি নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেন একটা শিশুর মতো, আমি খুব সৌভাগ্যবান আল্লাহ আমাকে এই সুযোগটা দিয়েছেন। আমি যেন একটা নতুন জীবন পেলাম। আমার হিজাব, আমার স্কার্ফ প্রথমে অনেকে মেনে নিতে পারনি, এমনকি আমার মা-বাবা, কিন্তু এখন ধীরে ধীরে তারাও ব্যাপারগুলো মেনে নিয়েছে।
ইসলাম এমন একটা ধর্ম এখানে কিছুই লোকানেরা নেই, খুবই স্বচ্ছ এবং যুক্তিযুক্ত। তাই প্রত্যেকের উচিত অন্যের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে নিজের যুক্তি জ্ঞান এবং অনুসন্ধানের সমন্বযে যেন শতভাই শঙ্কামুক্ত ঈমাণ গ্রহণ করা, আমার মতো যারা ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। আমার খুব মনে পড়ে যখন আমি ইসলাম গ্রহণ করি, হাজার এর উপর বোনরা আমাকে চুমো দিয়ে আলিঙ্গন করেছিল। আমি ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানে মসজিদ এবং লেবাননি মসজিদেও গিয়েছি, তারা সবাই আমাকে সাদরে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এবং তারা আমাকে জানিয়েছে যদি কোন প্রয়োজন থাকে, যদি কিছু জানার থাকে তাহলে যেন তাদের সাহায্য গ্রহণ করি, এমনকি ইমেইলেও আমি তাদের সাহায্য পেতে পারি সেটাও জানাল।
আল্লাহ বলেছে যে কোন মূল্যে আমি যেন আমার মা-বাবাকে সম্মান করি শুধুমাত্র ঈমাণ ভঙ্গ এর কারন না হযে দাঁড়ায়, আমি তাই সে ব্যাপারে সজাগ থাকি। শিয়া বোনগুলো যেন আমার দ্বিতীয় পরিবার। আমি তাদের পরিবারে যাওয়া আসা করি, তাদের মা বাবার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়, তারাও আমাকে নিজ কন্যার মতো গ্রহণ করে।
........................................................................................................................................................................................................"
(ভাবানুবাদ / বাকপ্রবাস)
এবার একটু আমার ব্যাক্তিগত অভিমত প্রকাশ করা যাক। প্রথমেই অভিনন্দন জানাই বোন ভিনিটা দাসোআর কে প্রকৃত ধর্মটা খুঁজে নিতে পেরেছেন বলে। তিনি এসেছেন হিন্দু ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে, আমরা জানি হিন্দু ধর্মে অবতার এর একটা ব্যাপার আছে, যারা মানুষ এবং দেবতা দুটোর সমন্বয়, আর তাই ব্যাক্তি পুজা, মাজার পুজা হিন্দু ধর্মের একটা অনুষঙ্গ। আমরা দেখি মুসলমান এর পীর আউলিয়া এর মাজার যেখানে হিন্দুরা কোন অংশে কম শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেনা, আর শিয়া অনুসারীরা যেহেতু মাজারকে প্রাধান্য দেয় এই দিকটার প্রতি বোন আকৃষ্ট হবার সম্ববনা প্রবল। তিনি বারবার বলছিলেন যে, তিনি আইডল খোঁজার চেষ্টা করছেন, আর বোন এর কাছে আইডল হয়ে গেল হযরত আলী, শেষের দিকে এমনটাই বলেছেন (সংক্ষীপ্ত রাখার জন্য পুরোপুরো অনুবাক করা হয়নি)।
আরো একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যেটা হলো বারবার শীয়া সুন্নি প্রসংগ নিয়ে আসছিলেন, এটা আসলে শীয়া প্রভাবিত হবার কারনে। একজন মুসলমনা ইমাণ আনার পর শীয়া সুন্নি এমনটা বিভাজনে পড়লেও এটা তেমন গুরুত্ব না দিয়ে নিজের চর্চাটাই করে থাকেন, কারন শাহদাহ পড়ে যে ঈমাণ আনা হয় সেখানে শীয়া সুন্নির ব্যাপার থাকেনা। আমরা এর আগে যাদের আলোচনা এনেছিলাম সেখানে কেউ শীয়ার সুন্নি ব্যাপারটা আনেনি। কেননা এতে অমুসলিমরা দ্বন্দে পড়ে যাবে এবং দূর সরে যাবে।
আমি ভাবতে লাগলাম এই ব্যাপারটা কেন আসলো। কেন বার বার শিয়া সু্ন্নির ব্যাপার চলে আসলো? এটাতো এক দুইবার বললেই হতো আমি শিয়া পন্থা অবলম্বন করি। কারন উদঘাটন করতে গিযে আমার চোখ গেল একটা লগো এর দিকে। সাক্ষাৎকারটা নিযেছে Ahlulbayt TV যেটা ভিডিওতে লগো দেখা যাচ্ছিল, আপনারা ছবিতে দেখতে পাবেন লগোটা।
আমি সেই লগোর অনুসন্ধান করতে গিয়ে যা পেলাম তা হলো ২০১০ দশ সাল থেকে Ahlulbayt TV এর যাত্র শুরু হবার পর থেকে বর্তমানে ইউকে, আমেররিকার যুক্তরাষ্ট্র, পূর্ব আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং অষ্ট্রেলিয়ায় তাদের শাখা বিস্তার করেছে, এবং অন্যান্য চেনেল এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েও তারা প্রচার ও প্রসার এর দিকে এগিয়ে চলেছে, উদ্দেশ্য শিয়া মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করা।
----চলবে-----
বিষয়: বিবিধ
১২৫৬ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাই এই মহিলা যে সত্যি বলছে সেটাতেই আমি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি
তবে কষ্ট করে লেখাটি লিখেছেন তাই নিন
তাকিয়া: মানে হচ্ছে মুখে এক অন্তরে আর আর এক। মানে মিথ্যা বলা।
মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের জন্য নও-মুসলিম হওয়ায় বেশ টাফ সিটুয়েশন ফেস করা লাগে।
এটাই স্বাভাবিক যে তিনি সম্ভবত কোন শিয়া শিক্ষক এর কাছ থেকে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জেনেছেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন