সাদা ইদুর কালো ইদুর
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:৪৭:০৯ সকাল
ঘুম নিয়ে যত মুশকিল অতুলের, সেটা দিন হোক আর রাত হোক ঘুম থেকে উঠেই দেখে পরনের লুংগিটা আর নেই, কি লজ্বার ব্যাপার কেউ দেখেনিতো! কোথায় গেল লুংগিটা খুঁজেওতো পাচ্ছেনা, বালিশ কাঁথা সরিয়ে ব্যাডশিড অর্ধেক ঝুলছিল বাকিটাও নাড়াচড়া করে লুংগির দেখা মেলেনা, অবশেষে পাওয়া গেল খাটের নিচে, এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে অতুলের।
মাঝের মধ্যে ঘুম ভেংগে জেগে ভাবে এখন কি সকাল নাকি বিকেল! বুঝে উঠতে পারেনা, চোখ খুলে খাট ছাড়ার আগে কিছুক্ষণ চুপ মেরে থাকে সে, আর আশপাশের শব্দগুলো খেয়াল করে গভীর মনে, পাখীর কিচির মিচির কিংবা কাকের কা কা, নাকি উঠোনে ছেলে পুলের চেচামেচি, প্রথমটা হলে ধরে নেয় সকাল আর পরেরটা হলে নিশ্চয় বিকেল।
বিকেল হলে হাফ ছেড়ে বাঁচে সে, সন্ধ্যা বেলায় পড়তে বসতে হবে তার আগে এক দফা খেলাধুলা। সন্ধ্যায় পড়তে বসার আগে কিছুক্ষণ দরুদ চলে পড়ার টেবিলে, ইয়া নবি সালা মলাইকা, ইয়া রসুল সালা মলাইকা কিংবা পাঁচ কলেমা, তারপর পড়া। সব ঠিক আছে কিন্তু সাত সকাল ঘুম থেকে উঠে হুজুর এর কাছে কোরান পড়তে যাবে সেটা খুবই বিরক্তকর অতুলের কাছে, এমন মজার ঘুম ছেড়ে উঠা তার উপর খালি পেটে হুজুর এর দরবার, এটার প্রতি দারুণ অনিহা তার, দিন গুনে সে, আর মাত্র একটা বছর, ক্লাশ নাইনে উঠলে পড়ালিখার ভীষণ চাপ হবে, তারপর থেকে সে হুজুর এর কাছে কোরান পড়তে যাবেনা আর, একটু বেশী ঘুমিয়ে তারপর স্কুলের পড়া পড়বে, এমনটাই দেখে আসছে ছোটবেলা থেকে, যারা ক্লাশ নাইনে উঠে যায় তারা আর হুজুর এর কাছে পড়তে আসেনা, আর হাবভাবে সিনিয়র সিনিয়র একটা ভাব আসে, অতুলও মনে মনে ঠিক করে রেখেছে ক্লাশ নাইনে উঠে গেলে আর যাবেনা হুজুর এর কাছে।
অতুলদের পাশের বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে, আগের ভাড়টিয়াটা খুব ভাল ছিল, খালাম্মাটা অতুলকে খুব আদর করত, এটা সেটা এনে খাওয়াতো, তাদের কোন ছেলেপুলে ছিলনা, কেন ছিলনা সেটা অতুলের জানার কথা না, সে মজার খাবার দাবার খেতে পেত তাতেই খুশী, নতুন ভাড়াটিয়া কেমন! কি জানি, কিছুদিন গেলে তারপর বুঝা যাবে।
“আপা আপনাকে দেখতে আসলাম, আপনিতো দেখতে আসলেননা আমাদের, তাই আমি নিজেই চলে আসলাম,” শব্দগুলো শুনে অতুলের ঘুম ভেংগে গেল, নিশ্চয় পাশের বাসার নতুন খালাম্মা এসেছে বাসায়, অতুলের সাথে বেশ কবার চোখাচোখি হয়েছিল তবে এখনো পরিচয় হয়ে উঠেনি তাদরে কারো সাথে, পাশের রুমে বসে গল্প করছিলেন নতুন খালাম্মাটা অতুলের আম্মুর সাথে, “আপা আমার কিচেনে যখন কেউ থাকেনা তখন এক মজার কান্ড হয়, ইদুর আসে, সাদা ইদুর, দেখতে খুব সুন্দর, আমার যখন কোন কাজ থাকেনা আমি কিচেনে কিছু খাবার দিয়ে রাখি, আর ইদুর এসে ওসব খায়, আপনাকে ডেকে পাঠাবো নেক্সটবার, আপনাকেও দেখাব” অতুলের কৌতুহল হলো খালাম্মাকে একটু ভাল করে দেখার তাই পর্দাটা সরিয়ে একটু উকি দিতে চেয়েছিল, অমনি খালাম্মা বলে উঠল, এটা অতুল না? এদিকে এসো বাবা বলে কাছে ডেকে নিল, কিসে পড়ে, রোল নাম্বার কতো এসব শেষে পাশে বসা পুতুলটাকে দেখিয়ে বলল কাল থেকে স্কুলে যাবার সময় সামিয়াকে সংগে করে নিয়ে যাবে সাথে করে, ওকে তোমাদের স্কুলেই ভর্তি করিয়েছি, সেও ক্লাশ এইটে পড়ে। অতুল সামিয়ার দিকে তাকাল, ঠিক যেন পুতুল একটা, অতুলের হার্টবিটটা বেড়ে গেল সামিয়ার দিকে তাকাতেই, আর কেমন যেন একটু লজ্বা বোধও হলো, চোখাচোখি হতেই আবার চোখ সরিয়ে ফেলে অতুল, আচ্ছা ঠিক আছে বলেই ওখান থেকে চলে আসে অতুল।
সেদিনের পর থেকেই সাদা ইদুর দেখার নেশা পেয়ে বসে অতুলের, সেইদিন রাতে তার প্রথম ঘুম ভাংগে কালো ইদুরের উপদ্রপে।
বিষয়: বিবিধ
১০৭২ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই বয়সেই হাটবিট বেড়ে যায়......একত্রে চলাফেরা করা উচিত নয়।
অনলি কালার?
অতুলঃ ইন্টার(দেম)ইডিয়েটস
নেহায়েৎ লিখেছেন : সুন্দর গল্প জীবন থেকে লেখা মনে হচ্ছে!!?
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ইন্দুর না বান্দর এর গল্প!!!
মেয়ে দেখলে বুকে ঢিপ ঢিপ করে- ব্যাপার না, একটা বয়সে এমন হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেমন বেয়াক্কেল মা একই বয়সী একটা মেয়েকে দেখাশোনার ভার এই বয়সের একটা ছেলের হাতে ন্যাস্ত করেন তা নিয়ে ভাবিত হচ্ছি।
ইঁদুরের তাৎপর্য বুঝলাম না- মহিলা কি মানসিকভাবে বিকৃত বলে ইঁদুরকে ঘরে ডেকে খাওয়ান, তাই মেয়েকেও অপরের খোরাক বানিয়ে আনন্দ পেতে চান? এটাই কি বোঝাতে চাইলেন?
মন্তব্য করতে লগইন করুন