ইন্টার(মি)ইডিয়েট (শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:০১:১১ দুপুর
মনির এর লিখাপড়ার ওখানেই ইতি, সে আর কলেজ আসেনা। এদিকে কিছু স্টুডেন্ট গ্রুপ বেঁধে গেল আসফিয়া মেডাম এর বাসায়, ইংরেজটিা শেষ মুহুর্তে একটু ঝালাই করার জন্য, প্রাইভেট পড়বে সবাই একসাথে, মেডাম সবাইকে আপ্যায়ন করে বিদায় করল, আর পড়াবে কিনা উনার মতামত পরে জানানো হবে। হুম, মেডাম দায়িত্বটা নিয়েছিল কিন্তু সবাইকে পড়াবেনা, রাহিন এর নামটা লিষ্ট থেকে বাদ দিতে হবে, কেননা সে পাশ করলে মেডাম শিক্ষকতা ছেড়ে দেবে, শুধু শুধু বদনাম এর ভাগীদার হতে মেডাম চাননা। পরে অবশ্য শিক্ষকতা ছাড়তে হয়নি, রেজাল্ট দেবার আগেই হাজব্যান্ড এর বদলি সূত্রে ঢাকা বা খুলান চলে গিয়েছিলেন।
মেডাম এর কাছে প্রাইভেট পড়ার সেই ব্যাচে অবশ্য পরী কিংবা মিরু দুজনই ছিলনা, মিরুর টিউশনি পড়ার সামার্থটা যদিও ছিল কিন্তু পরীর ছিলনা, পরী ছিল পিতৃহীন, বড় ভাই এর সংসারে থাকতো সে, নিঃসন্দেহে পরী ভাল ছাত্রী ছিল এবং সব সময় মুখে হাসি লেগেই থাকতো, সব সময় হাস্যজ্বল চঞ্চল ছিল সে, রাহিন এর সাথে বসে পরী অনেক কথাই বলত তবে কখনো তার নিজের ফ্যামিলির কথা বলতনা, একদিন কথা প্রসংগে বাবা সম্পর্কিত ব্যাপার নিয়ে রাহিন একটু ঠাট্টা করেছিল, পরী কেঁদে দিযেছিল, রাহিন জানতনা পরীর বাবা নেই, জানলে সে ঠাট্টা টা করতনা।
পরীর সম্ভবত ইন্টার এর পর আর পড়ালিখা হয়নি, ইন্টার পাশ করার পর যখন সবাই অনার্স পড়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দিকে ছুটল তখন কে কোনদিকে গেল আর জানা গেলনা, রাহিন যখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে তখন একদিন বাস এর জানালা দিয়ে দেখল পরী বাস ষ্ট্যান্ড এ দাঁড়িয়ে আছে, তার মন সেদিন খুব কেঁপেছিল, কেন সে বাস থেকে নেমে পরীর সাথে কথা বলেনি, কেন তার ঠিকানাটা নেয়া গেলনা, কেন জানতে পারলনা পরী এখন কি করছে, কেমন আছে! ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের শেষের দিকে রাহিন যখন মিরুকে সময় বেশী দিচ্ছিল তার জন্য পরী খুব কষ্ট পেয়েছিল, মুখ ফোটে কখনো বলেনি তবে রাহিন সেটা অনুভব করেছিল।
সময় আরো অনেক গড়িয়েছে, রাহিন এর লড়াই তখন সোনার হরিণ নামক একটা চাকুরীর সন্ধানে, মাষ্টার্স শেষ করার পর বেকার থাকাটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের জন্য খুবই কঠিন একটা সময়, না পারে নিচে নামতে না পারে উঠতে, এমনই দশা। এমনই সময় একদিন পথে দেখা বেলাল এর সাথে, বেলাল এখন বেশ ভালই আছে, একটা ইন্টান্যারশনাল শীপে জব করছে, বছরে নয় মাস পানিতে তিন মাস থাকে ডাঙ্গায়, কথাবার্তায় আগের সেই গ্রাম্যতা বা জড়তা আর নেই, কেমন যেন আল্ট্রা মডার্ণ একটা ভাব এসেছে, আকারে ইংগীতে প্রকাশ করতে চাইছে সে এখন অনেক টাকা পয়সার মালিক, কোথায় ফ্ল্যাট কিনেছে, গাড়ী কেন কেনা হলনা এসব। পরীরা বেলালদের কাছেই ভাড়া বাসায় থাকতো, বেলাল এর কাছে জানা গেল পরী পরে গার্মেন্টস এ চাকরী নিয়েছিল, সেটা অনেক আগের ঘটনা, এখন জানা নেই কোথায় আছে কেমন আছে পরী, মনির, মিরু বা অন্তর-সেলিনারা।
বেলাল ষ্টুডেন্ট লাইফ এ এমন ছিলনা, ভীষণ সাদামাটা ছিল, হয়তো অর্থ প্রাচুর্য মানুষের চরিত্র, চিন্তা-চেতনা সবকিছুর আমুল পরিবর্তন এনে দেয়, এই বেলাল টেম্পু ভাড়া বাঁচানোর জন্য সাইকেল চালিয়ে কলেজে যেত, সেই সাইকেলে চড়ে দুই বন্ধু কত দূর চলে যেত মাঝের মধ্যে পালা করে চালিয়ে, আর এখন কেমন যেন আন্তরিকতা শূন্য। বেলাল এর সাইকেলে চড়েই দুই বন্ধু মিরুদের বাসায় গিয়েছিল একবার। ইন্টার পরীক্ষার পর রাহিন খুব ফিল করছিল মিরুকে এবং সেটা বেলাল এর সাথে শেয়ার করতেই বেলাল বলে বসল, চল মিরুদের বাসায় যাই, খবর নিযে আসি, মিরুর আম্মু চা'বিস্কিট এর আয়োজন করেছিল সেদিন, আর বলেছিল মিরুতো দেশের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছে, কথাটা সত্য বলে মানতে পারেনি রাহিন কিংবা বেলাল কেউই, তাদের ধারণা হযেছিল মিরু ভেতরের রুমে আছে, দেখা করতে দেয়া হয়নি, মিরুর সাথে আর দেখা হয়নি রাহিন এর, এমনকি যেদিন ইন্টার এর রেজাল্ট দিযেছিল সেদিনও মিরু আসলনা রেজাল্ট নিতে, পরে মিরু কিভাবে যেন বাসার এড্রেস যোগাড় করে নিজেই এসেছিল রাহিনদের বাসায়, কিন্তু তখন রাহিন বাসায় ছিলনা বলে দেখা হলনা, রাহিন এর বড় আপা এটা নিয়েও ঠাট্টা মশকরা করত রাহিন এর সাথে, রাহিন এর যে বান্ধবী থাকতে পারে সেটা একটা আশ্চর্য বিষয় হয়তো!
রাহিন এর আজ কি হল জানিনা, তার কেবল সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো ভেসে আসছে তার মানষপটে, কে কোথায় আছে! কেমন আছে!
সমাপ্ত
(বি.দ্র. চরিত্র ঘটনা কাল্পনিক)
পর্ব তিন : Click this link
বিষয়: বিবিধ
১২৭৪ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দিলেন ৩৮তম পর্ব ১ম পর্বের জন্য বুঝি ডাইবিং কর্তে হবে ডীপ সী তে!
কারন আমি ৩৮তম পর্বে কি মন্তব্য করে আসছি দেখেন, হা হা হা
যাইহোক, টেংক্যু ভাইয়া
অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা
মন্তব্য করতে লগইন করুন