নিতান্তই একান্ত
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ২০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৪:৪৮:১০ বিকাল
গতবারের আগের বার দেশ থেকে রিটার্ন হবার একদিন আগে যখন বিমান অপিসে গেলাম টিকেট কনফার্ম করার জন্য তখন উমামা আর ওর আম্মুকে সংগে নিয়েছিলাম, যখন দেখলাম সিরিয়াল অনেক দূরের, সকালটা দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবে, তখন গেলাম উপরে আড়ং সেন্টর এ, ঘুরাঘুরি টুকটাক কেনাকাটা করলাম কিন্তু সময় পার হয়না, ভাবলাম এতক্ষণ ওদের ধরে রেখে কষ্ট দেয়া হবে, তাই ওদের পাঠিয়ে দিলাম উমামার নানুর বাড়িতে, ওখানেই যাবার কথা ছিল কাজটা সেরে, ওরা চলে গেল আর আমি বসে আছি কখন ডাক পড়বে
ভাবছিলাম এমন অদ্ভূত সার্ভিস, সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় কনফার্ম করা টিকেট রি কনফার্ম করার জন্য তবুও এত ভীড় বিমান এ চড়ার জন্য, অন্যান্য এয়ারতো ভাল সার্ভিস দেয় বিমান এর চাইতে, তবুও আমরা বিমান বাংলাদেশ এয়ার এ চড়ি, তার কারণগুলো আমার কাছে যা মনে হয় তা হল
* নিজের দেশের বিমান, তাই একটা টান থাকে
* লাগেজ এর ওজন বেশী নেয়া যায়, এটাই অন্যতম প্রধান কারন, অন্যান্য এয়ার এ এই সুবিধাটা নেই, বিমানের মতো, কিছু মজার কান্ডও হয়, সেটা একটু বলা যাক, দেশে যাবার জন্য এয়ারপোর্টে গিয়ে দেখি বিমান আসতে লেইট হবে, এয়ারপোর্টে ওয়েটিং সিট খালি নেই সবাই বশে আছে আর অপেক্ষা করছে, কতৃপক্ষ দেখল বিমান এর প্যাসেঞ্জার এর জন্য অন্য এয়ার একটু অসুবিধা হচ্ছে তাই ঘোষণা দিল বাইরে অপেক্ষা করতে, যখন বিমান আসবে তখন আবার ঢুকতে পারবে, সবাইকে বের করে দিল, বিমান লেইটে এসে তাড়াহুড়া শুরু করল, আমার ভয় ছিল আমার লাগেজ এর ওজন অনেক বেশী, জরিমানা গুণতে হবে, তাই একটা ব্যাগ ওজন না দিয়ে নিজের কাছে রাখলাম, চার্জ দেয়ার চাইতে ওগুলো রেখে দেয়াই বেটার কেননা ওগুলোর মূল্যের চাইতে চার্জ হাজারগুণ বেশী, ব্যাগটা বহন করতে কষ্ট হলেও সেটা নিয়ে যেতে পেরেছি, কর্মকর্তারা লেইট হবার জন্য এসব নিয়ে আর মাথা ঘামাইনি, সবাইকে নিয়ে প্রথমে এয়াপোর্টের ভেতরে হোটেলে খাওয়ালো, যেটা ছিল বিমান এর এক্সট্রা কষ্ট, খাওয়ার পর আরো অনেক্ষণ ওয়েট করতে হল, অবশেষে যাত্রা শুরু, এক ঘন্টার মতো ট্রানজিট ছিল দুবাইতে, দুবাই এর প্যাসেঞ্জার নামবে এবং যারা দেশে যাবে তারা উঠবে, আর ক্লিনিং এর কাজ ও হবে। তারপর শুনলাম এক মজার কথা, " আপনারা চাইলে সিট চেন্জ করে যেখানে খুশী বসতে পারবেন, ক্রুরা বলল, যাদের ইচ্ছে জানালার পাশে বসবে তাদের জন্য ভালই হল, আর আমার মনে হল কলেজ যাচ্ছি বাসে উঠলাম যেখানে সিট পাব বসে পড়ব, দুবাই প্যাসেঞ্জার উঠা শুরু, আর এক অভিজ্ঞতা, ওদেরকে আসলে সিট নাম্বার দেয়া হয়না, তাই ওরা হুড়োহুড়ি করে যে যেখানে ইচ্ছে বসতে পারে, তাদের অনেকের কথাবার্তা বডি ল্যাংগুয়েজ আমাদের দেশের বাসের প্যাসেঞ্জার এর চাইতে নিম্ন মানের, সেটাও বলা যাক একটু, এক ভদ্রলোক সিটের উপর পা তুলে তার লাগেজ একটার পর একটা রাখছে উপরের রাখার বক্সে, ক্রু এসে দিল ঝারি, এসব কি, এটা সেটা বলে গেল আর সবাইকে রিকুয়েষ্ট করল নিজের সিটে বসে পড়তে দশ মিনিট এর জন্য, কারন ক্লিনিং কো:এর লোকেরা সাফাই করে আবার চলে যাবে, কে শুনে কার কথা, ভদ্রলোকটা আবার তার কাজ শুরু করল, ক্রুরা প্রতিবাদ করলে ঝগড়াও করছে, আবার কাউকে সিট থেকে তুলে দিয়ে বলছে ওখানে বসেন এখানে একজন বৃদ্ধ মহিলা বসবে, এটা সেটা, কারো কারো পানির পেপাসায় জান যায় যায়, সেটা অবস্য জানের না মনের
*বিমানের ক্রুরা যেহেতু বাংলাদেশী তাই তাদের সাথে ভাব বিনিময় কথাবার্তা আদান প্রদান করতে সুবিধা, আর যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যের অনেকেই একটু কম শিক্ষিত তাদের জন্য এটা সুবিধার এবং তারা সাচ্ছন্দবোধ করে
* ওপেন টিকেট থাকে তাই রিটার্ন যখন হবে তখন ইচ্ছেমত ডেইট চয়েস করা যায় এক্সট্রা ফি লাগেনা
*বিমানের খাবারটা সুস্বাদু হয়, আমার ধারনা, জানিনা অন্যদের কাছে কেমন লাগে
* আরো কিছু কারণ থাকতে পারে তবে উপরের কারণগুলোই মূখ্য
সিরিয়াল এখনো আসেনি তাই সময় কাটানোর জন্য পাশে বসা লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলাম কোথা যাবেন উনি, বলল সৌদি আরব, সেখানে ছোটখাট ব্যাবসা করেন, জানতে চাইলাম ধড়পাকড় কেমন চলছে উনার অবস্থা কি? যা বলেছেন তার সংক্ষেপ হলো সবাই আতংকে আছে, অনেককেই দেশে ফেরত আসতে হল কোন কারন ছাড়াই, সে ও ভয়ে আছে কোনদিন রেসিড্যান্ট পারমিট রিনিউ এর জন্য সাবমিট করতে দিলে, বলবে হবেনা, রিটার্ন যাও, আর ওর কফিল / স্পন্সর ওকে একদিন সরাসরিই বলে দিল, তোমরা তোমাদের সরকারকে বলতে পারনা তাদের পলিসির জন্য তোমরা এমন হেনস্থা হচ্ছ!! সেই থেকে ভদ্রলোক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেক্সট ইলেকশানে ঘরের খবর নেবেন, বউ ভাই বোন এমন কেউ যদি বর্তমান সরকারকে ভোট দেয় তাহল সম্পর্ক আর রাখা হবেনা, আর আমাদের বর্তমান সরকার হয়তো সেই খবর জানতেন, তারা চাইছিলনা তাদরে জন্য বিদেশে হেনস্তা হতে হলেও যেন ঘরে ঘরে ঝগড়া বিবাদ না হয় ভোট নিয়ে, তাই বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ভোট বিহীন নির্বাচন এর ব্যাবস্থা করলেন
অবশেষে আমার টিকেট কনফার্ম হল, আমার জন্য না খেয়ে অপেক্ষায় ছিলেন উমামার আম্মু ফোন করে বলে দিলাম হোটেলে খেয়ে নিচ্ছি তুমিও খেয়ে নাও, বাসায় যখন পৌঁছলাম উমামা আমার কোলে উঠে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আমাকে, চোখ বন্ধ, কোন সাড়াশব্দ নেই, তখনো সে কথা বলতে শিখেনি, মিনিট সাতেক পর সে চোখ খুলল, আর একটু শান্ত হল, তাকে জিজ্ঞাসা করা গেলনা কি হয়েছে, তারতো কোন ভাষা নেই, রহস্যই রয়ে গেছে কেন সে এমনটা করল, সেতো জানেনা আমি টিকেট কনফার্ম করে আসলাম......
(ছবিটা সেদিন আড়ং এর তোলা)
বিষয়: বিবিধ
২২৩৭ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
----উমামার জন্য দুআ থাকলো।-------
আমি বিমান বালা
-ঠিক বলেছেন খালা
আপনি বিমান বালা ভালা
খালা বললি কেন?
ডাকতে পারতি ম্যাম
-ম্যামতো ডাকছিলাম
করতে চাইছে প্রেম
ওরে আমার নাঙর
কি যে চুরুত বহর
-ঢের হয়েছে কথা
বেশ ধরেছে মাথা
হুম....
-তুম....
বিমানের চিনিগুড়া চালের পোলাউ আর মুরগী ভুনা কিন্তু একটি প্রসিদ্ধ খাবার।
* ওপেন টিকেট থাকে তাই রিটার্ন যখন হবে তখন ইচ্ছেমত ডেইট চয়েস করা যায় এক্সট্রা ফি লাগেনা - এখন কিন্তু নানা কৌশল প্রয়োগ করে এক্সট্রা ফি নিচ্ছে। যেমন : আপনাকে বলা হবে, আপনার ক্লাসের সিট খালী নেই। অন্য ক্লাসের সীট নিতে হলে এত টাকা লাগবে...।
Thanks for sharing.
মন্তব্য করতে লগইন করুন