নিতান্তই একান্ত

লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ১৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০২:২৭:৫৯ রাত

আমি আর আমার বউ এর কাবিন নামা হল সংবিধান, এই সংবিধানে লিখা নেই আমি অফিস করব, বাজারে যাব, আর আমার বউ রান্না করবে আর আমার জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করবে, তবুও আমরা এই নিয়ম মেনে চলি এটা একটা অলিখিত নিয়ম যা লিখে লিখে খাতা কলমে নিয়ন্ত্রণ কখনো সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি একটা জাতির চাল চলন আচার আচরণ একটা নৈতিক সূত্রে গাঁথা থাকে যাকে আমরা কাষ্টম বা প্রথা বলি।একটা রাষ্ট্রের আসল মূল চালিকা শক্তি হল এই কাষ্টম বা প্রথা, সংবিধান আর প্রথার মধ্যে পার্থক্য হল সংবিধান লংঘণ করা যায়না কিন্ত কাষ্টম বা প্রথা লংঘণ করা যায় তাতে নৈতিক অধপতন হয় তবে আইন লংঘন হয়না।

ধরা যাক একটা ছেলে সিগারেট ধরাল এবং যখন দেখতে পেল তার সামনে দিয়ে এক সিনিয়র বা মুরুব্বি চলে যাচ্ছে সে সিগারেট লুকিয়ে রাখল এটা হবে প্রথা, আর যদি ছেলেটি যদি আরো বখাটে হয়ে বলে আমার পয়সায় সিগারেট খাব কে দেখল না দেখল তাতে কার কি আসে যায় তাহলে সে একটা প্রথা বা কাষ্টমকে হত্যা করল কিন্তু এমন কাজের জন্য তাকে কোন জবাবাদিহী করতে হবেনা।

কথাগুলো বলার সূত্র হলো, আইন আদাল সংবিধান মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু মানব জীবনের প্রকৃত সুন্দর প্রকাশ পায় প্রথার উপর, যে ব্যাক্তি বা জাতি এই প্রথাকে যত বেশী ধারণ করবে, চর্চা করবে সে ব্যাক্তি বা জাতি তত বেশী সুন্দর স্বাচ্ছন্দময় জীবন যাপন করবে। আইন আদালত সংবিধান ব্যাপারগুলো কখন আসে? তখনই আসে যখন ব্যাক্তি বা রাষ্ট্র ব্যার্থ হয় প্রথা বা কাষ্টমকে ধারণ করতে। আইন বা সংবিধান যদিও আধুনিক রাষ্ট্র ব্যাবস্থার অপরিহার্য একটা বিষয় তবে আমাদের একটা বিষয় মনে রাখতে হবে আইন বা সংবিধান কখনও মানুষকে পুর্ণাঙ্গ সমাধান দিতে পারবেনা। আমি যেমন আমার বউকে বাধ্য করতে পারবনা " তোমাকে রান্না করতে হবে, কারন আমাদের কাবিন বা সংবিধানে লিখা নেই, এসব ব্যাপার সেপার, সবকিছু যদি এভাবে লিখে সমাধান করতে হয় তাহলে মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় একটা ঘন্টা অতিবাহিত করা, জড় বস্তুর মতো স্থির হয়ে যাব, ঠিক তেমনি একটা রাষ্ট্র সংবিধান হাতে নিয়ে বলে এখানে এটা লিখা আছে করতে হবে, ওটা লিখা নেই করা যাবেনা তাহলে সেই রাষ্ট্র স্থবির হতে বাধ্য।

আধুনিক রাষ্ট্রে সংবিধান এর বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করে আলোচনা করা হয় যেমন সুপরিবর্তনীয় এবং দুষ্পরিবর্তনীয় অথবা লিখিত সংবিধনা বা অলিখিত সংবিধান ইত্যাদি, সংবিধান যখন সহবে পরিবর্তন করার ব্যাবস্থা থাকে সুপরিবর্তনীয় বলে আর অন্যথা হলে দুষ্পরিবর্তনীয়, অন্যদিকে লিখিত সংবিধান মানে সহজেই অনুমেয় যে সংবিধান লিখিত থাকে তাকে লিখিত সংবিধান বলে ব্যাত্যয় হল অলিখিত সংবিধান, অলিখিত মানে একেবারে অলিখিত নয়, যেমন ব্রিটেন এর সংবিধানকে অলিখিত সংবিধান বলা হযে থাকে, এটার কারণ হল তাদের সংবিধান আছে এবং সেটা লিখিতই, তবে তারা প্রথার উপর যোর দিয়ে থাকে, নিয়ম কানুন আচার ব্যাবহার ইত্যাদি তারা প্রথা দিয়েই বিবেচনা বা খেয়াল রেখে চলে, আর তাই কথায় কথায় সংবিধানে হাত দিতে হয়না তাই তকে বলে অলিখিত সংবিধান।

বাংলাদেশ আজ সাংবিধানিক সংকট, কথায় কথায় দোহাই দেয়া হচ্ছে সংবিধানের, আর চলছে নিজের মনগড়া ব্যাখ্যা এবং অপব্যাখ্যা, সংবিধানের বাইরে একচুলও নড়বেনা বলে হুমকির মুখে আজ রাষ্ট্র, এসব বিবেচনায় আমার সেই নষ্ট হওয়া ছেলেটির কথা মনে পড়ছে খুব যে সিগারেট ধরিয়ে বলবে আমার পয়সায় আমি সিগারেট খাচ্ছি কে দেখল না দেখল কার তাতে কি! তবে কি রাষ্ট্র চালনার দায়িত্ব চলে গেছে আজ সেই সব নষ্টদের হাতে!

বিষয়: বিবিধ

১০৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File