বোধদয়
লিখেছেন লিখেছেন বাকপ্রবাস ১৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:৪১:১৩ দুপুর
৫০ দিন জেল খেটে বোধদয় রনির
মিছে ঘানি টেনে টুনে পেলনা আর পনির
যার জন্য করে চুরি সেই বলে চোর
এতদিনে বুঝল রনি কাটল ঘুমের ঘোর
যে নৌকায় চড়ে রনি চাইল ফুলসিরাত
মাঝি মাল্লা দিক চিনেনা শূন্য তাই বরাত
আবার যদি জেল খাটে থাকে ৫০ দিন
হয়তো রনি বলবে আল্লাহ একটু নাজাত দিন
আসুন সবাই ধরে ধরে জেলে দিই পুরে
মানুষ যদি হওয়া যায় আসলে জেল ঘুরে
তবেই শান্তি দেশের দশের পুরো জনপদ
শিকল ছাড়া আওয়ামীরা ভীষণ বিপদ
কেন আমি মনোনয়ন পত্র কিনলাম না!
17 Nov, 2013
আমার এলাকায় কয়েক লাখ লোক, দেশ বিদেশের শত সহস্র বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীর একই প্রশ্ন- আমি কেনো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পত্র কিনলাম না। নানা জনের নানা মত, নানা উপদেশ আর কারো কারো বিভিন্ন আশংকামূলক সতর্কবার্তা-এ সব নিয়ে আমার দিনকাল যেনো কেমন কেমন ভাবে দুলতে দুলতে পার হয়ে যাচ্ছে।
৫০ দিন জেল খাটার পর- নিজের বিশ্বাস, ভালবাসা আর নির্ভরতার জায়গায় প্রচন্ড একটি হোচট খেয়েছি। নিতান্ত নির্বোধ হবার পরও বুঝতে কষ্ট হয়নি- যার মুকুট মাথায় নিয়ে ঘোরাফেরা করতাম, তিনি তার সেই স্বীকৃতি ফেরত নিয়ে গেছেন জেলে ঢোকানোর মধ্য দিয়ে। ফলে জেল থেকে বের হবার পর সংসদে যায় নি। কারণ, আমার মনে হয়েছে ওখানে যাবার নৈতিক অধিকারের যে কেন্দ্র তা থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে কোন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই।
দলটির সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক সেই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই। আর আমার সম্পর্ক শৈশব থেকে। যে আদর্শের কথা আমরা গর্ব ভরে প্রচার করি মনে প্রাণে সেই আদর্শ ধারণ করে কথাবার্তা, চালচলন ও বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে আসছিলাম। এখন মনে হচ্ছে প্রচারের বিষয় কখনো শতভাগ অনুসরণ করতে নেই।
দীর্ঘদিন বাজারে জোর গুজব ছিলো যে, আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে না। আমি বিশ্বাস করিনি। এমন কি জেলে যাবার পরও। কিন্তু জেল থেকে বের হবার পর দেখলাম অন্য এক দুনিয়া- দলের কেউই আমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এমনকি আমার স্ত্রী উপযাচক হয়ে অনেকের সঙ্গে ফোনে কথা পর্যন্ত বলতে পারে নি। এক নাগারে পনের দিন চেষ্টা করেও গণভবনে ঢুকতে পারে নি। এই অবস্থায় ধরে নেয়াই স্বাভাবিক- আমাকে খরচের খাতায় ফেলে দেয়া হয়েছে।
বৃন্ত থেকে বিচ্যুত হওয়া ফুলই বুঝতে পারে তার কষ্ট। সেই কষ্টের সঙ্গে যদি নতুন অপমান জোটে তা আমি বা আমার পরিবার বা শুভানুধ্যায়ীদের পক্ষে বহন করা কষ্টকর হবে। অর্থ্যাৎ আমাকে মনোনয়ন দেয়া হবে না- এই ইঙ্গিতটি স্পষ্ট হয়েছে জেল থেকে বের হবার পর। তাই বেদনার পরিমান না বাড়িয়ে আত্ম মর্যাদা রক্ষার্থে নিরাপদ দূরে থাকাই বোধ হয় শ্রেয় হবে- এই ধারনার বশবর্তী হয়ে মনোনয়ন ফর্ম কিনলাম না।
অনেকে বলবেন- আপনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি বা আপনি কি আদৌ নির্বাচন করবেন কি না? আমার বক্তব্য হচ্ছে- সামনের দিনগুলোই বলে দিবে আমার অবস্থান। কারণ- সময়, সুযোগ এবং আল্লার ইচ্ছা ব্যতিত কোন সফলতা মানুষের হাতে ধরা দেয় না। সেরকম কিছু হলে আমি অবশ্যই স্বতন্ত্র নির্বাচন করবো ইনশাআল্লাহ।
জয় বা পরাজয় নিয়ে আমি আদৌ চিন্তিত নেই। জয়ের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। আবার পরাজয় নিয়েও কোন মাথা ব্যাথা নেই। শতভাগ জয়ের স্বপ্ন দেখে কেবল কল্পনা বিলাসী কাপুরুষরা। জীবনের কোন কোন জয় যেমন পতন ডেকে নিয়ে আসে তেমনি কোন কোন পরাজয় অমিত জয়ের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করে দেয়- আমার জন্য কোনটি হবে তা আমি জানি না। জানতেও চাইনা। আমার কাজ কর্তব্য সম্পাদন করা। সফলতা বা ব্যর্থতা দেবার মালিক আল্লাহ। আল্লার কর্মটি বান্দারা যখন করতে চায় তখন আসমানের গজবের দরজাগুলো আপনা আপনি খুলে যায়- এই নির্মম সত্য আমাকে অনেক কিছু করা থেকেই বিরত রাখে।
আমি মনে করি দল হিসেবে এখনো আওয়ামী লীগই শ্রেষ্ঠ। সারা বাংলাদেশের কোটি কোটি নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের সঙ্গে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে থাকার মজাটাই আলাদা। আমি সেই আনন্দ থেকে নিজেকে পারতপক্ষে বঞ্চিত করবো না। আওয়ামী লীগের এই মুহুর্তের সবচেয়ে বড় সমস্যা কতিপয় অপরিপক্ক, বিশ্রী চরিত্রের এবং যাদের দেখলে বা কথা শুনলে মানুষের বমি বমি ভাব আসে কিংবা সারা শরীর চুলকানীর উদ্রেক হয় এমন সব মানুষ- যারা যোগ্যতার পরিবর্তে দালালী করে স্ব-স্ব স্থানে বসেছে এবং দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
ঐ সব লোকের কারণে আমি যদি দল থেকে দূরে চলে যাই তবে বঙ্গবন্ধুর আত্মা কষ্ট পাবে। আমার বিশ্বাস আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দূর্গন্ধ ছড়ানো নেতারা কোথায় যে যাবে তা নয়ে গবেষণার দরকার হবে। যদি যেনো তেনো নির্বাচন হয় তবেও তারা পাশ করবে না। আর তত্ত্বাবধায়ক কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা মাঠেই যাবে না। আল্লাহ না করুন আরো কড়া বা কঠিন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে- তারা শুরু করবে দৌড়! সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারপর চিন্তা করবে কেনো আসলাম, কোথায় আসলাম। কেউ কেউ হয়ত ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় স্বস্তিত হারাবে, কেউবা কাঁদবে- আর পথচারীরা দয়া পরবশ হয়ে তাদেরকে খাদ্য- পানীয় বা বস্ত্র দিয়ে সাহায্য করবে- যদি তখন তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে পারে।
সময়ের সাহসী সন্তানেরা সব সময় দলটির জন্য ত্যাগ করেছে- বারে বারে তারা ফিরে গেছে আপন কুঠুরিতে কেবল ত্যাগের জন্য। ভোগের জন্য নয়। এমনটিই হয়ে আসছে সেই পঞ্চাশের দশক থেকে আজ অবধি। আগামী দিনেও তাই হবে- যা হয়েছিলো অতীতে। সেই ত্যাগের সংগ্রামে একজন কর্মী হিসেবে পদচিহ্ন রাখার প্রত্যয় নিয়েই প্রার্থনা করছি -হে আল্লাহ! ভোগীদের জন্য তোমার ক্রোধ যেনো ত্যাগীদের প্রতি নিপতিত না হয়। ত্যাগীদের রক্ত, জীবন আর ধন-সম্পদের সর্বনাশ যেনো ভোগীদের অপকর্মের কাফফারা না হয়।
লেখক: গোলাম মাওলা রনি, সংসদ সদস্য।
বিষয়: বিবিধ
১০৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন