আমার জীবনে বইয়ের প্রভাব

লিখেছেন লিখেছেন এম এম ওবায়দুর রহমান ৩০ মার্চ, ২০১৩, ০৮:৫৬:৩৪ রাত



স্কুলে বয়সে রোমানা আফাজের দুশ্য বনহুর সিরিজ পড়তে গিয়ে আমি বই পড়ার প্রেমে পড়েছিলাম। রোমানা আফাজ আর কাজি আনোয়ারের সেবা প্রকাশনীর বইগুলো আমার কিশোর জীবনে আলোড়ন তুলে ছিল।

তারপর রাশিয়ার অনুবাদ গল্প গুলিও ছিলো ভীষণ মুগ্ধকর।নেশায় পড়ে গিয়েছিলাম আমি। স্কুল নানা বাড়ির কাছে থাকায় আমি থাকতাম নানা বাড়িতে।

আমার নানা বাড়িতে ছিল বইয়ের স্তুব। হাত বাড়ালেই বই পাওয়া যেত। পাগলের মত বই পড়েছি তখন। রাত দিন বইয়ে ডুব দিয়ে থাকতে কতযে আনন্দ পেতাম!

অবশ্য বইয়ের নেশার কারনে ব্যাক্তিগত জীবনে বেশ কিছু দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছিলো। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি আমার প্রথম প্রেমকে হারিয়ে ছিলাম বই পড়ার জন্য।

ও প্রশ্ন করেছিল, কে বেশি গুরুত্বপূর্ন বই নাকি আমি?

আমি বলেছিলাম বই আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু । একটা ভাল বই পেলে আমার তখন আর কিছু মনে থাকেনা। আর তুমিতো আছোই!

আমার জবাব তার ভাল লাগেনি। সে চলে গিয়েছিল চোখে রাজ্যর অভিমান নিয়ে।

আমি তাকে ফেরাতে যাইনি। যে আমাকে বোঝেনা তাকে কেন ফেরাবো?

সর্বশেষ পড়েছি হুমায়ূন আহমেদের দেয়াল। আর এখন হাতে আছে জিয়াউল হকের টাইন নদীর ওপার থেকে।

আমি লিখতে শিখেছিলাম খুব ছোট বেলায় । নিজের ভেতরকার চিন্তাকে প্রকাশ করার জন্যই কলম তুলে নিয়ে ছিলাম।

কাঁচা হাতে লিখে ছিলাম ছড়া। সেই লেখার হয়ত মান ছিলনা।কিন্তু নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশ করার আকাঙ্খা থেকে আর সৃষ্টির আনন্দে বিভোর হতেই কলম হাতে খাতায় আকিবুকি করতে থাকি। এখনও আমার বইয়ের সেলভে সেই কাচা হাতের লেখা গুলি সংরক্ষিত আছে। মাঝে মাঝে সেই সব লেখা পড়ে আমি অতীতে ফিরে যাই। মনের ফ্রেমে ভেসে উঠে আমার হারানো শৈশব, কৈশোর!

আমি এখনতো প্রতিদিনই লিখছি। ইন্টারনেট বদলে দিয়েছে আমায়। ব্লগে যা খুশি লিখছি। বন্ধুরা তাতে লাইক দিয়ে কমেন্ট দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছে। একদিন না লিখলে মনে হয় দিনটা অপূর্ণ, বুকের ভেতর কেমন অস্থির লাগে। ব্লগে এসে প্রিয় কয়েক জন বন্ধুর লেখা খুজি না পেলে মন খারাপ হয়।

কলেজে ভর্ত্তি হবার পর একজন সহপাটি আমাকে ভালবাসার অফার করে। সে ছিল অনেকের স্বপ্ন কন্যা। তার মত এত সুন্দরী নারীর যোগ্য হয়ত ছিলাম না। তারপরও তাকে ভালবাসলাম। তাকে মুগ্ধ করতে লিখলাম পাতার পর পাতা, কবিতা ছড়াসহ কত বড় বড় চিঠি!

তবে ভালবাসার সুখ কপালে সইলনা। সে ছিল বহুগামী। অকারনেই আমাকে ছেড়ে গেল। তার দেওয়া বেদনার নীল দংশন ভুলতে আর জীবনে কিছু একটা হয়ে তাকে দেখিয়ে দিতে সাহস দিয়ে ছিল আমার পুরানো বন্ধু বই। বইয়ের ভেতর মুখ গুজে যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেয়ে ছিলাম। তাই এখনও আমার হাতের কাছে থাকে বই।

ব্লগ লিখতে গিয়ে হয়ত নিজের কথা বলি সবাই। নিজের ভাবনাগুলি ছড়িয়ে দিতে চাইছি সবাই বিশ্বময়।

কিন্তু ভালো লিখতে হলে আমাদের বই পড়তে হবে অনেক। ভালো পাঠক না হলে কখনোই ভালো লেখক হওয়া যাবেনা। আসুন বেশি বেশি বই পড়ি। প্রতি মাসে একটা হলেও বই কিনি।

পাশাপাশি আসুন চেষ্টা করি সৃষ্টিশীল কিছু করতে। নিজের পেশার পাশাপাশি সমাজ আর দেশের উন্নয়নে যেকোন একটা ভালো কাজ করি আমরা। দেশকে ভালবাসি। দেশের মানুষ কে ভালবাসি। ভালোবাসার খুব প্রয়োজন আমাদের। প্রয়োজন নিজেকে বদলানো। অনুরোধ করছি আসুন সত্য আর ন্যায়ের পক্ষে কলম ধরি।

দেশের জন্য কাজ নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে বদলে দেই প্রিয় বাংলাদেশ কে।

আপনাকে দিয়েই হয়ত অনেক বড় কোন কাজ হতে পারে।

শুভ কামনা থাকলো।

বিষয়: বিবিধ

১৭৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File