কেমন ছিল বাকশাল?
লিখেছেন লিখেছেন এম এম ওবায়দুর রহমান ০১ আগস্ট, ২০১৫, ১১:২৫:০২ রাত
১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে বাকশাল নামের একটি অকল্পনীয় ভূতড়ে শাসন ব্যবস্থা চালু করেন তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান। তখন বাকশালকে জাতীয় রাজনৈতিক দল বলা হলেও মূলত এটা ছিল রাজতন্ত্রের আদলে তৈরী করা একটি শাসন ব্যবস্থা । জনগনের শাসক নির্বাচনে জনগনকে সম্পৃক্ত না করে প্রেসিডেন্টের একটিমাত্র আদেশের ফলে অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দল কে বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়।
আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রের মালিক ছিল দেশের নাগরিকরা। কিন্তু সেই নাগরিকদের অনুমোদন না নিয়েই বাকশাল চালু করা হয়। সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের নাগরিকরা যখন স্বাধীনতা আর গনতন্ত্রের স্বপ্নে বিভোর ছিল, তখন হঠাৎ করে চাপিয়ে দেওয়া বাকশাল তাদের কাছে ছিলো দুঃস্বপ্নের মতই।
এই সিধান্ত ছিল স্বৈরশাসকদের মত। যারফলে হতাশা প্রকাশ করল সারা বিশ্বের গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদরা। বাংলাদেশের জনগনের ভেতর তৈরী হল শূন্যতার।
পিতার আসনে থাকা শেখ মুজিবর রহমানের প্রতি জনগনের আশা ভরসার স্থলটি নষ্ট হতে থাকলো দ্রুতই। অনেকেই বিশ্বাস ঘাতক বলতে লাগলেন। জনপ্রিয়তার পারত নিচে নামলেও সেসব অগ্রাহ্য করলো তৎকালীন ক্ষমতাধর শাসক গোষ্টি।
বাকশালের দর্শন আদর্শ বাস্তবায়নের অন্যতম বাধা ছিল মুক্ত গণমাধ্যম। তাই ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন এক সরকারী আদেশবলে দেশের সবক’টি সংবাপত্র বিলুপ্ত করে দিয়ে বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হল।অবশ্য বাকশালের প্রচারণার জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ অবজারভার এবং বাংলাদেশ টাইমস এই চারটি পত্রিকা চালু রাখা হলো।
মুক্তচিন্তা বা ভিন্নমতের লেখকদের নানান ধরনের হয়রানীর কবলে পড়তে হলো। উপায় না দেখে দলে দলে বিভিন্ন পেশার লোকজন বাকশালে যোগ দিতে থাকলো।
জোর করে চাপিয়ে দেওয়া বাকশালের দল পরিচালনা এবং দলের যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাই কেউ তার সমালোচনা বা ভুল ধরিয়ে দেবার সুযোগ পায়নি। যারা কাছের মানুষ ছিল তারা শেখ মুজিবুর রহমানকে বিভান্ত করতে থাকলো। ব্যবহার করতে থাকলো। সাধারণ জনগন থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিলেন বাকশাল প্রেসিডেন্ট ।
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করার ফলে বাংলাদেশের গনতন্ত্র যেই ক্যান্সারে আকান্ত্র হয় তার থেকে আজো বের হতে পারিনি আমরা।
অদ্ভূত এই বাকশাল শাসনব্যবস্থার সময়ে দেশে শুরু হয় নানান ধরনের অরাজকতা। শেখ পরিবার বা দলীয় লোকের পরিচয় দিয়ে অবাধে চলে আইন ভাংঙ্গার কাজ। সরকারী ক্ষমতার বলে রাষ্ট্রের সরকারী প্রশাসন মুখ থুবড়ে পড়ে। আইনের শাসন দূর্বল হয়ে পড়ায় দেশে চুরি ডাকাতী রাহাজানী হত্যা গুম ধর্ষনের অভয়রান্যে পরিনত হয় । বাংলাদেশের এই অবস্থা দেখে নড়েচড়ে বসেন মোড়ল রাষ্ট্রের কর্তারাও। তারাও কিছু করার চেষ্টা করেন।
তখন দিনে দুপুরে চলতে লাগলো চুরি ডাকাতী। বিবাহযোগ্য মেয়েদের রাতে ঘরে থাকাও অনিরাপদ হয়ে দাড়ায়। অরক্ষিত হয়ে পড়ে ব্যাংক সহ সেবামূলক সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলিও ।বাকশাল সরকারের বিরুদ্ধে গনরোষ বাড়তে থাকে। চাপা উত্তেজনার মধ্য দিন কাটতে থাকে ।
বাকশালের জন্মের সময়ে তাজ উদ্দিন সহ বেশ কিছু আওয়ামী নেতা এর বিরোধিতা করেছিল। তবে তারা সংখ্যায় কম ছিল । চাটুকারের সংখ্যা বেশী থাকায় তারা দল থেকে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় আবার কেউ গলা ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়লেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান তার বাকশালের কিছু নেতার চক্রান্ত্রের শিকার হলেন।
কাছের মানুষের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে স্বপরিবারে নিহত হলেন।
১৫ অাগষ্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটিতে যখন হামলা কা হলো। তৎকালীন সেনা প্রধান জেনারেল কেএম শফিউল্লাহকে ফোন করে সাহায্য চাইলেন শেখ মুজিবুর রহমান। শফিউল্লাহ তখন কোন সাহায্য দুরে থাক বরং তাকে চোরের মত পালিয়ে যেতে পরামর্শ দিলেন !
অথচ এই শফিউল্লাহকে কিন্তু সিনিয়রাটি উপেক্ষা করে সেনা প্রধান করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।
তখন সেনা বাহনীরচেয়েও বেশী ক্ষমতাধর ছিল রক্ষীবাহিনী । তোফায়েল অাহমদ ছিলেন রক্ষীবাহিনীর প্রধান । তাকেও ফোন করা হলো কিন্তু তোফায়েল সাহেব কোন রকম সহয়তা করতে এগিয়ে আসলেন না। পালিয়ে গেলেন। অসহয় অবস্থায় চরম অমানবিক ভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের উপর আক্রমন হলো। একে একে সবাই লুটিয়ে পড়লো।
যার অাহবানে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করেছিল সেই নেতার করুন মৃত্যু হলেও পরদিন কোন প্রতিবাদ হলোনা।রাজপথে ও হলোনা কোন প্রতিবাদী মিছিল। সরকারী ইত্তেফাক বরং হত্যার পক্ষে সম্পাদকীয় লিখলো। মিষ্টি বিতরনের খবর দিল সরকারী মিডিয়া !
দুঃখজনক এই দৃশ্যের সময়ে দেখা যায় বাকশালের বেশীরভাগ সংসদ সদস্য খুনি মুশতাকদের গঠিত মন্ত্রী সভায় যোগ দিয়েছেন।যখন মুশতাকের শপথ গ্রহনের অনুষ্ঠান চলতেছিল তখনো স্বাধীন বাংলার অন্যতম রুপকার শেখ মুজিবর রহমানের লাশ পড়ে ছিল বারান্দায়। বাকশাল গঠনের ফলে যারা উপকৃত হয়েছিল। সুবিধা পেয়েছিল সেই চাটুকারদের আর খুজে পাওয়া যায়নি। তারা ষড়যন্ত্রকারীদের সাথেই মিশে গিয়েছিল।
ইতিহাসের কাছ থেকে আমরা কতটুকু শিখতে পেরেছি সেই প্রশ্ন রয়ে গেল। শেখ মুজিবুর রহমানের মত এতবড় মাপের নেতাও পারেনী গনমত উপেক্ষা করে তার বাকশাল কে বাচাতে।
তার মৃত্যুর পর পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে আবার বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু করা হয়। খুলে দেওয়া হয় সকল গণমাধ্যম। পতন হয় বাকশালের।
ঢাকা
০১/০৮/২০১৫
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৭ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জামানত হারনো ইনু মিয়া নিজ দায়িত্বে সবার দেখভালে নিয়োজিত হয়েছেন।
ইদানিং ওয়াজও নাকি করেন। ফিলিপস বাত্তি থেইকা আরো বেশী তামশার জিনিষ!
মন্ত্রীবর্গ এখন জাতিকে বিনোদিত করার মহান ব্রতে নিয়োজিত
না টক না মিষ্টি না ঝাল..?
ধন্যবাদ তথ্যভিত্তিক পোস্টটির জন্য..
মন্তব্য করতে লগইন করুন