মধুসুদনের ভূত! (বাস্তব ঘটনার ছায়া অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন এম এম ওবায়দুর রহমান ১২ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:৪৪:০৪ রাত
হারিকেনের ফ্যাকাসে লাল আলোতে ঘুম পাচ্ছিল খুব। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা তাই কিছুটা জোর করে জেগে লেখা পড়া করছি। আমার পড়ার ঘরটা খুব নির্জন। বাড়িটা অনেক পুরাতন। ৭১মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পালিয়ে ভারত চলে যাওয়া শান্তি বাবুর কাছে থেকে এই বাড়ি কিনেছেন দাদা । বিশাল বাগান বাড়ি। তিন পাশেই বিশাল বাগান আর পূর্ব পাশে বিরাট এক পুরাতন পুকুর। আশেপাশে আর কোন বাড়ি ঘর নেই। গাড়ি চলার জন্য দাদা নিজের পয়শায় কাচা রাস্তা তৈরি করেছে বটে, তবে একটু বৃষ্টি হলে রাস্তায় নামা ভারী কষ্টের কাজ। আজ বিকেলে বৃষ্টি নেমেছিল। তাই বাড়ির উত্তরপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় জনমানুষের কোন শব্দ নেই।
আমি হাতঘড়িতে সময় দেখলাম। রাত এগারোটা বাজে। পুরাতন এই তিনতলা ভবনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। অনেক জায়গায় ইট খুলে গিয়েছে। আমার কক্ষটা দোতলায়। তিনতলায় কেউ থাকেনা। জালালী কবতুর ওখানে আশ্রয় নিয়েছে। নিচতলায় একপাশে আমার দাদা অন্যপাশে মা বাবা থাকেন। দোতলার আমার কক্ষের সামনে বড় একটা বারান্দা। বারান্দায় বসে আমি মাঝে মাঝে কবিতা লেখার চর্চা করি।
হঠাৎ খচখচ শব্দ পেয়ে আমি বাইরে তাকালাম। তিনতলায় একসংগে যেন সকল কবতুর বাইরে উড়ে গেল! অনেক সময় সজারু আসে কবুতরের বাচ্চা খেতে। তখন কবুতর এরকম শব্দ করে। আমি বারান্দার দিকে তাকালাম। তাকিয়ে আমি ভয়ানক এক দৃশ্য দেখলাম।
ভয়ে আমার শরীর জমে গেল যেন! বারান্দার রেলিং এর উপর মধুসুদন বসে আছে! ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ভয়ানক বিশ্রী লাগছে ওর হাসি। ওর ফ্যাকাশে সাদা মুখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে আমার শীড়দাড়া কেপে উঠল। কি করব ভেবে পেলাম না। এটা কেমন করে সম্ভব? আমি কি স্বপ্ন দেখছি?
শরীরে চিমটি কেটে দেখলাম, নাহ! জেগেইতো আছি!
তাহলে এটা কেমন করে সম্ভব? মধু মারা গিয়েছে প্রায়ই একমাস হলো। আমি নিজে ওরে চিতায় জ্বলতে দেখেছি। এ অসম্ভব!
- কিরে ওবায়দুর ভয় পেয়েছিস?
- কে, কে আপনি?
- একমাসেই ভুলে গেলি আমাকে! আমি মধুসুদন। ডাকনাম বাবু। ঘোষ বাড়ির ছেলে মধুকে সবাই ভুলে গেলেও তুই মনে রাখবি ভেবেই তোর কাছে আসা।
- কিন্তু মধুতো আত্মহত্যা করে মারা গিয়েছে।
- ভুল কথা। মধু কেন আত্মহত্যা করবে? তুইতো আমার সব কথা জানতি।
- কি!
- মধুকে হত্যা করে তার লাশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল!
- বলিস কি!!
আমি বিস্ময়ে বিমূড় হয়ে ওর দিকে তাকাই। ওর খালি গা অন্ধকারে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। লুংঙ্গি টা এখনো কাছামারা। আমার ভয়টা তখনো কাটেনি। কেন যেন মনে হচ্ছে এটা স্বপ্ন হয়ত। কিন্তু আবার ওর কথায় আমি বাস্তবে ফিরে আসি।
- আমি মরতে চাইনি। আমার বাচার খুব শখ ছিল। অই পিচাশ দুইটা আমাকে গলা টিপে মেরেছে। আমি বাচার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি পারিনি। লক্ষন আমার বুকের উপর উঠে বসে, আর ওর বউ আমার মুখের উপর বালিস গুজে দেয়। নি:শ্বাস নেবার জন্য আমি পা দাপিয়ে ছিলাম। টিনের বেড়ার সংগে পা লেগে আমার পা কেটে যায়। মরা সহজ নয়। ভয়ানক কষ্টের!
মধুর চোখ শেয়ালের মত রাতের আধারে জ্বলজ্বল করে। অন্ধকার ছাপিয়ে ওর রাগে জ্বলজ্বল করা চোখদুটি আমি দেখতে পাই। হিস হিস করে শাপের মত ও শব্দ করে। তারপরে শরীর বাকিয়ে বলে, আমি এর প্রতিশোধ নিবো চরম প্রতিশোধ! কেউরে শান্তিতে থাকতে দিবো না।
চোখের পলকে মুহূর্তেই ও যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। আমি হারিকেন নিয়ে বারান্দায় অনেক খুজলাম। কোথাও নেই কেউ! চারপাশে নিশ্চুব । একটা পাতা নড়ার শব্দও নেই। কিন্তু পচা একটা বিদঘুটে গন্ধ টের পাচ্ছি। ক্রমশ সেই গন্ধ মিলিয়ে যেতে লাগল। আগর বাতির একটা গন্ধ দুর থেকে ভেসে আসছে শুধু।
মধু ছিল আমার বন্ধু। প্রাইমারী স্কুলে আমরা এক সংগে লেখা পড়া করতাম। ও ছিল প্রতিবন্ধি। এক হাত এবং এক পা ছোট ছিল। তাই হাটতে হতো খুরিয়ে খুরিয়ে। কথাও বলতো নাকে জড়িয়ে। তাই সবাই তাকে এড়িয়ে যেতো। কিন্তু মানুষ হিসেবে মধু ছিল অসাধারণ। ক্লাসে তেমন পড়া না পারলেও ওর ভাল আচরণের কারনে শিক্ষকরা খুব পছন্দ করত ওরে। ও আর আমি এক সংগে আসতাম। গ্রামের মেঠো পথ ধরে আমরা হেটে চলতাম। আমাদের চান্দেরচর বাজারের পূর্বপাশে ছিলো শিকদারদের বিশাল বাশঝাড়। সেখানে বাশের সংগে হাজার হাজার বাদুর ঝুলে থাকতো। আমরা সেই বাগানের ভেতর একটু বিশ্রাম করে নিতাম। ওর দুই পা সমান না হওয়ার কারনে কিছুটা লাফিয়ে চলতে হত। এতে করে মধু খুব দ্রুতই ক্লান্ত হয়ে যেতো।
প্রায়ই দেখতাম ওর মুখ শুকনো । সকালে না খেয়েই স্কুলে আসত অনেক সময়। মধুর মা বাবা ছিলনা। সৎ ভাইয়ের সংসারে অনাহূত ভাবে সে থাকতো। ওর অবশ্য কারো উপর অভিযোগ ছিলনা। শত কষ্টের ভেতরও থাকত হাসি মুখে।
আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। ওর লেখা পড়া থেমে গিয়েছে প্রাইমারীতেই। ওর ভাই বলেছে লেংড়া খোড়া মানুষ লেখা পড়া করে কি করবে? তাছাড়া ছাত্রও সুবিধার নয়। চাউলের দোকানের ক্যাশে বসলে বরং কাজ হবে।
একদিন ঘুম ভাংগতেই শুনলাম মধু মারা গিয়েছে। নিজের কাছে বিশ্বাস হতে চাইল না! গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করার কথা শুনে আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। দ্রুত গেলাম ওদের বাড়ি। সেখানে তখন অনেক মানুষের ভিড় জমে গিয়েছে। আমি গিয়ে দেখলাম মধুদের পাশের বাড়ির একটি রান্নাঘরের আড় বাশের সংগে ও ঝুলছে! খালি গা। লুংগি কাছা দেওয়া। মাটি থেকে দুই ফুট উচুতে ওর লাশ ঝুলছে। পায়ের সংগে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ! চোখ দুটি খোলা। শরীরের সংগে ধুলা মাটির দাগ। গলায় পাটের দড়িটি একেবারে নতুন।
আমার হাত পা কাপতে ছিল। কষ্টে গলার কাছে কান্নারা যেন দলা পাকিয়ে উঠে আমার নি:শ্বাস বন্ধ করে দিতে চাইছে। গতকালও ওর সংগে আমার কথা হচ্ছিল। ওর সৎ ভাই নাকি কি একটা কাগজে ওরে সই দিতে বলেছে। আমি প্রশ্ন করতেই বললো, বাবার জমিন সব তার নামে লিখে দিতে বলছে।
আমি প্রতিবাদ করে বললাম ছি: এসব কি বলছে তোর ভাই!
ও মলিন হেসে বলল, এইযে আমি একটা প্রতিবন্ধি মানুষ, কাজ কর্ম করতে পারিনা। বসে বসে খাই। এই জন্য ভাই চায় যেন আমার সব জমিন তারে লিখে দেই।
সন্ধা পযন্ত আমরা নদীর পাড়ে বসে রইলাম। তখনো কি জানতাম মধুর সংগে আর কখোনোই আমার দেখা হবে না!
পূলিশ আসলো। ময়না তদন্ত্রের জন্য লাশ নিয়ে যেতে চাইলে পাড়ার মুরব্বীরা এবং ওর সৎ ভাই কাদতে কাদতে বললো আমার ভাইর মাথা খারাপ আছিলো। প্রতিবন্ধি আছিলো তার লাশ কাইটা টুকরা টুকরা কইরেন না স্যার।
পুলিশকে টাকা পয়সা দিলে তারা চলে যায়। বাড়ির উত্তর পাশের বাগানে মধুর দেহ পোড়ানো হয়। গ্রামবাসিরা খুব আফসোস করে। কিন্তু কেন ছেলেটা এভাবে আত্মহত্যা করলো তার উত্তর পেলোনা।
আমি সন্ধা পযন্ত নদীর পাড়ে বসে রইলাম। বামপাশের সেই ঘাসের টিবিটা তখনো আছে অথচ নেই মধু।
একমাসে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। ওর ভাইকে দেখতাম বাজারে পাইকারী চাউলের দোকান বেশ জমিয়ে ফেলছে। সৎ ভাই যে ভাল ভাই নয়, সেটা জানতাম মধুর কাছে থেকেই। কিন্তু একটা মানুষ এতদিন একঘরে থাকার পরেও যে সামান্য জমির লোভে তারে হত্যা করা যায় এটা কখনোই ভাবিনি।
পড়ায় আর মন বসবেনা বলে সেই রাতে আমি দরজা জানালা ভালকরে বন্ধ করে শুয়ে পড়ি। কিন্তু গা ছমছম করতে ছিল। গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। কয়েকবার উঠে পানি খেলাম। কিন্তু রাতে ভাল ঘুম হল না।
আমি সকালে স্কুলে গিয়ে শুনলাম মধুদের বাড়িতে কাল যেন কারা রাতে অনেক ঢিল ছুড়েছে। রাতভর ঢিল ছুড়লেও টর্চ লাইট নিয়ে বের হয়ে কাউকে খুজে পাওয়া যায়নি !
আমি চুপ করে শুনলাম। তবে গতরাতের ঘটনাটা কাউকে বললাম না। এসব বলার মত ঘটনাও নয়। ঢিলের ব্যাপারটা তেমন সিরিয়াসলি নিলোনা কেউ। এক সপ্তাহ কেটে গেলো মধুকে আমি আর দেখলাম না। ওর সৎভাই লক্ষন ঘোসের চালেও ঢিল মারেনি কেউ। আমি কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেলাম। ভৌতিক সেই রাতের ঘটনাটা আমার ভাবনার জগতে আলোড়ন তুলছিল। কেন জানিনা প্রতিদিন রাতেই আমি মধুসুদনের অপেক্ষায় থাকতাম।
প্রায়ই দশদিন পরে ঘটলো ঘটনাটা। সারা গ্রামে আংতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। আমাদের এলাকার মেম্বার হাসান খালাসীকে পাওয়া গেলো গলাকাটা ঝিলের উত্তরের ঝোপের পাশে অজ্ঞান অবস্থায়। ডাক্তার এসে চিকিৎষা করার পরে হাসান খালাসীর জ্ঞান ফিরলো বটে তবে সে অসংলগ্ন কথা বলতে লাগল। সে বললো, গত রাতে বাজার থেকে ফেরার পথে মধু নাকি তাকে রানদা নিয়ে তাড়া করেছে! সারারাত সে দৌড়াদৌড়ি করেছে! একটু পর পর আংতঙ্কিত আর ভয়ে কুকড়ে যেতে লাগলেন তিনি।
বাড়ির সবাই প্রথম দিকে বললো, হাসান মেম্বার মনেহয় পাগল হয়ে গিয়েছে। তবে এলাকার মুরব্বীরা সেটা মানতে নারাজ। তারা বললো অপঘাতে মারা যাওয়া লাশের আত্মা অনেক সময় পৃথিবীতে থেকে যায়। সেই আত্মা নানান অপকর্ম করে!
ভিড়ের এক কোনে দাড়িয়ে আমি বললাম, মধুর ভূত সবাইকে রেখে হাসান চাচাকে কেন দৌড়ানী দিলো?
সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
তাইতো। হাসান মেম্বারের সংগে জীবিতবস্থায় কোন ঝামেলা হয় নাই। পাশ থেকে একটা ছেলে ফোড়ন কেটে বললো, কাকারতো আবার স্বভাব ভালনা। দ্যাখেন রাইতে কোথায় গিয়ে ঠ্যাঙ্গানী খাইছে! সে অশ্রীল ইংগিত করে হাসতে থাকে।
আলোচনা ক্রমশ ডাল পালা ছড়িয়ে এগিয়ে যেতে লাগল। তবে মধু যে ভূত হয়ে হাসান মেম্বারের ঘাড় মটকাতে পারে এইটা তেমন কেউ বিশ্বাস করল না।
রাত তখন তিনটার মত বাজে। প্রচুর পানি খাওয়ার কারনে মাঝরাতে অনেক সময় আমার প্রসাবের বেগ দেয়। বাথরুম থেকে বেরিয়ে নিজের কক্ষে আসার সময় গা কেমন ছমছম করে উঠলো। একটা বিদঘুটে গন্ধও পাচ্ছি। অস্বস্তিকর । চারপাশের পরিবেশ খুব ভারী ভারী লাগতে ছিল। মাথার কাছ থেকে টর্চলাইট বের করে বারান্দায় আলো ফেলতেই দেখি মধু সেদিনের মত রেলিং এর উপর বসে আছে। উদাস দৃষ্টি। আমি জানালার পাশে দাড়িয়ে কিছুটা ভিতুস্বরে বললাম মধু তুমি কখন আসছো?
- এইতো আধাঘন্টা আগে। তুমি আমাকে খুজতে ছিলে বলে আসলাম।
- মনে মনে তোমাকে খুজেছি সত্য, তবে তুমি জানলে কেমনে?
- ভূতরা মানুষের মনের খবর জানে।
- বলো কি! আশ্চর্য!!
- আশ্চর্য হয়ে লাভ নেই। তোমার বন্ধু ছিলাম বটে কিন্তু কখনো তুমি বলোনাই যে সমীর সাহার মেয়েকে তুমি পছন্দ কর!
ওর কথা শুনে আমি থমকে যাই। থতমত খেয়ে বলি, এসব কি বলার মত কথা? সে হিন্দু আমি মুসলমানের ছেলে। লোকে জানলে কি বলবে?
মধু হাসে। ওর হাসিটা বিশ্রী লাগছে। কোন প্রাণ নেই। ও বলে, তুই আমাকে আজ তুমি করে বলতেছিস কেন? আবার নাক মুখ খিচিয়ে কথা বলছিস কেন? গন্ধ লাগছে? লাগবেই না কেন। সারা দিন ঝোপে ঝাড়ে থাকি।
- না, না সম্যসা নেই। তোমাকে খুব বিষণ্ন লাগছে।
- হাসান মেম্বারকে দৌড়ানী দিয়ে ছিলাম গতরাতে। ডোবায় নিয়ে কয়েকটা চুবানীও দিয়েছি।
- উনি কি করেছে?
- ঐ হারামী লক্ষনের কাছে থেকে টাকা খেয়ে দারোগা কে দিয়ে খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিছে। রাতেই লক্ষন মেম্বারকে তিনলাখ টাকা দিছে।
- কি আশ্চর্য!
- কাউরে আমি ছাড়মুনা।
মধুর ঘোলাটে চোখ জ্বল জ্বল করে উঠে। হঠাৎ প্রচণ্ড এক বাতাশে আমার ঘরের জানালার কপাট আছড়ে পড়ে। কপাট খুলে দেখি কেউ নেই কোথাও
মধু হঠাৎ চলে যাওয়ায় বেশ হতাশ হলাম, ওরে বেশ কিছু প্রশ্ন করার ছিল কিন্ত সেটা করা হলো না। বিছানায় শুয়ে কাথাটা গায়ে টেনে চুপ করে পড়ে রইলাম। ঘুম আসছে না। ভেবে পেলাম না সমির সাহার বড় মেয়ে শ্রাবন্তীকে যে আমার ভাললাগে সেটা মধু কেমন করে জানলো ?
ভূতদের অনেক ক্ষমতা আছে হয়ত। তারা চাইলেই অনেক কিছু করতে পারে। আচ্ছা মধুরভূত টা কি শ্রাবন্তীকে গিয়ে বলতে পারবে যে একটা ছেলে তাকে ভয়ানক ভালবাসে! মধু কি বলতে পারবে সাহস করে, শ্রাবন্তী কেউ একজন তোমার জন্য বুকের ভেতর এক সমুদ্র ভালবাসা নিয়ে বসে আছে!
ধুর কি ভাবছি এসব! পাশ ফিরে শুয়ে রইলাম। বুকের ভেতর কেমন শূন্য শূন্য লাগছে।
সকালে ঘুম ভাংগলো ছোট ভাইর ডাকে। ও যা বললো সেটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
গতরাতে নাকি মধুর ভাই লক্ষন আত্মহত্যা করেছে!
আমি গায়ে কাপড় পরে দ্রুত মধুদের বাড়িতে গেলাম। সবার চোখে মুখে তীব্র আতংঙ্ক । পুলিশ লক্ষনের লাশ পাটি দিয়ে পেচিয়ে ভ্যানে তুলেছে। লক্ষনের স্ত্রীর অবস্থাও ভাল না। সে কথা বলতে পারছেনা। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আমার কাছে কেমন অস্বস্তী লাগছে। মধুর সব কিছু জানার পরেও কেন জানিনা লক্ষনের এই অকাল মৃত্যু আমাকে পীড়া দিল।
ভ্যান গাড়িতে পড়ে থাকা লক্ষনের লাশের দিকে তাকিয়ে মনে হল পৃথিবীটা আসলেই কত বিচিত্র। যেই সম্পদের লোভে আমরা রক্তের সম্পর্ক কে অস্বিকার করি, হত্যা করি, অবিচার করি মানুষের সংগে, তা কতটুকু প্রয়োজন আমাদের। মৃত্যুর সংগে সংগে লাশ সৎকারের জন্য সবাই উতালা হয়ে যায়। কবরে রেখে আসার পরে এক সময় সব কিছু ভুলে যায় স্বজনেরা। পাপের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ আমাদের জন্য অভিশাপ হয়েই থাকে।
আমি হাটছি। ভয়ানক মন খারাপ। মধুর কথা মনে পড়ছে। মরার সময়ে ও খুব কষ্ট পেয়েছিল। বুকের উপর চড়ে বসা বড় ভাইকে দেখে ওর বিশ্বাসেই হয়নি সামান্য সম্পত্তির লোভে বড় ভাই তাকে খুন করতে পারে!
- এই যে এদিকে আসবে একটু !
আমি পাশ ফিরে তাকাতেই দেখি শ্রাবন্তী দাড়িয়ে আছে। ওর চোখে লাজুক চাহনী। আমি ওর পাশে গিয়ে দাড়ালাম। কিছু বলার আগে শ্রাবন্তী নিচুস্বরে বললো, তোমার চিঠিটা পড়েছি। এত ভাল করে তুমি লিখতে পারো, আমার জানা ছিলনা !
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, চিঠি!
ও মিটি মিটি হেসে বললো, কি এখন আবার বলবে নাতো যে তুমি চিঠিই লিখোনি। কোন ভূত এসে গতরাতে আমার শোবার ঘরের জানালার পাশে চিঠি রেখে গিয়েছে!
আমি বিস্মিত হয়ে শ্রাবন্তীর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
নারায়ণগঞ্জ
২৭/০৯/১৪
বিষয়: বিবিধ
১৯৩০ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক শুভ কামনা রইল
জাযাকাল্লাহ
মৃত মানুষ যদি বলতে পারত সেই সত্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন