বইমেলা নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা
লিখেছেন লিখেছেন এম এম ওবায়দুর রহমান ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৫১:৫১ সন্ধ্যা
ফেব্রুয়ারী মাস আসলে ফেসবুকে বেশ কিছু ভাবগম্ভীর উচু দরের সাহিত্যিক কে আমরা তাদের নতুন বইয়ের প্রচ্ছদসহ মৌসুমী পাখির মত হাজির হতে দেখি! সারা বছর ওনারা নানান কাজে ব্যস্ত থাকেন, আমাদের মত আমজনতা বন্ধুরা ওনাদের ইনবক্স করেও কোন জবাব পাইনা কিন্তু ফেব্রুয়ারী আসলে তারাই উল্টো আমাদের ইনবক্স করেন! বইয়ের প্রচ্ছদ্ নিয়ে কমেন্ট প্রত্যাশা করেন।
এসব মৌসুমী ফেসবুক বন্ধুদের দেখে আমার বেশ মজা লাগে। তারা আছেন বলেই মেলায় না গিয়েও অনেক কিছু জানতে পারি। গতবছরের ঘটনা আমি একজন কে ফোন করে বললাম ভাইয়া আমি আপনার বই কিনতে চাই কোন স্ট্রলে পাবো?
তিনি আমাকে সংগে সংগে স্ট্রলের নামার এসএমএস করলেন। আমি তার বই কিনলাম। স্ট্রলের ছেলেটাকে বললাম ভাই এই বই কেমন চলছে?
ছেলেটা জবাব দিলো গত এক সপ্তায় আপনারটা সহ চার পিছ বিক্রি হলো!
যাইহোক কিছুক্ষন পর দেখি লেখক মহাদয় স্ট্রাটাস দিয়েছেন, আজ মেলায় যাবার কোন ইচ্ছে ছিলনা। কিন্তু ভক্তদের অসংখ্য ফোন আর প্রকাশকের যন্ত্রনায় এখুনি বেরুচ্ছি। থাকবো দুই ঘন্টা .....স্ট্রলে আমার পাঠকদের আমন্ত্রণ!!
আসলে বই যতটা না পাঠের তারচেয়ে বেশি হলো দর্শনীয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ডের স্ট্রলে দাড়িয়ে ছিলাম। তখন আমি দেখেছি তরুনীরা যায় বইয়ের প্রচ্ছদ দেখতে আর প্রেমিকের হাত ধরে ঘুরতে আর মহিলারা যায় বাচ্চাদের জন্য বই কিনতে। সেই বই কেনার সময় স্ট্রলের দোকানিকে মাছের দোকানি মনে করে দরদাম করতে থাকেন। এক সময় চুড়ান্ত বিরক্তি নিয়ে তারা ঠকে গেছেন খুব এমন ভাব নিয়ে বই কিনেন। বির বির করে দোকানীর উপর রাগ ঝাড়েন!
মধ্য বয়স্ক পুরুষরা অপেক্ষাকৃত ভালো পাঠক। তারা বই কিনেন দরদাম ছাড়াই। সন্তানদের ও বই কিনতে স্বাধীনতা দেন।
আর কিছু বয়স্ক গ্রাহক থাকেন যারা অদ্ভূদ কিছু বইয়ের নাম বলেন, স্ট্রলে দাড়ানো তরুন বিক্রয় প্রতিনিধিকে তারা বিব্রত করার জন্য নানান জ্ঞানী কথা বলেন। সামনে থাকা সকল প্রবন্ধ টাইপের বই আর অনুবাদ গ্রন্থর অর্ধেকটা পড়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্য কিছু আতেল পাঠক ও মেলায় যায়। তারা কবিতার বই নেড়ে চেড়ে দেখেন। চোখ মুখ শুকনা করে ইনডিয়ার লেখকের বই চান!
গ্রাহক হিসেবে সবচেয়ে ভাল শিশুরা। তারা স্ট্রলের সকল বই কিনে ফেলতে চান!
লেখকদের জন্য স্ট্রলে দাড়ানো অনেক সময় বিব্রতকর। এক টিনেজ মেয়ে আমার প্রকাশিত গল্পের বই কেনার পর যখন প্রকাশক আমাকে দেখিয়ে তাকে বললো, এই বইয়ের লেখক উনি, অটোগ্রাফ নিয়ে নেন!
টিনেজ পাঠক আমাকে লেখক হিসেবে সম্ভবত পচ্ছন্দ করতে পারেননি। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে কোনমতে বইটা এগিয়ে দিলেন। আমি বেশ বিব্রত ভংগিতে অটোগ্রাফ দিলাম।
মনে হলো লেখক হওয়ার চেয়ে পাঠক হওয়াই বেশি আনন্দের!
বিষয়: বিবিধ
১২৬৫ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তো এবারের বইমেলায় কি কোনো নতুন বই বেরুলো আপনার?
বই পড়া যত সহজ কেনা ততই কঠিন। হোটেলে বসে ষাট সত্তর টাকার নাস্তা , দিনে দেড় প্যাকেট বেনসন খাই কিন্তু পেপারটা পড়ি চেয়ে চিন্তে । সেখানে বই কিনার লোক কই ? এই হলাম আমরা বাংগালী শিক্ষিত সমাজ । শত অব হেলা সহ্য আর পরিশ্রম করে তবুও লেখক-লেখিকা বই বের করে কারন। লেখার প্রসব বেদনা প্রকাশ না করে তিষ্টাতে দেয় না ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন