একটি দুঃখি মেয়ের গল্প, আর আমাদের মানবতা।

লিখেছেন লিখেছেন এম এম ওবায়দুর রহমান ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৮:৪৪:২৪ সকাল



গত বৃহস্প্রতিবার রাতে ঘুম আসছিলনা। এফএম রেডিও অন করতেই এক তরুনীর কণ্ঠস্বর আমাকে আটকে দিলো। সে তার জীবনের গল্প বলতে ছিলো। উপস্থাপক গুরুর কাছে।

তার দুইবোন,এক ভাই। বাবা হঠাৎ করে মারা যাওয়ায় মেয়েটির উপর এসে পড়ে সকল দ্বায়িত্ব। নিয়তি কে মেনে নেয় সে। টিউশনী আর সেলাই কাজ শুরু করে। চলে লেখা পড়াও। ছোট ভাইবোনরাও লেখা পড়ার পাশাপাশি টিউশনী করতে শুরুকরে। মেয়েটির স্বপন এই সমাজে একদিন সে তার ভাইবোনকে সংঙ্গে নিয়ে মাথা উচু করে দাড়াবে। সমাজ দেখবে অকালে পরিবারের প্রধান চলে গেলেও মধ্যেবৃত্ত এই পরিবারটি থেমে যায়নি। মেয়েটি তার পরিবারকে নিয়ে যুদ্ধে নামে। তার ভাই লেখা পড়ার পাশাপাশি থাই মিস্তির কাজ করতে থাকে।

চারজন মানুষের সংসারটা ধুকে ধুকে চলতে থাকে। তিন বেলা ডাল ভাতের জোগাড় করতেই কষ্ট হচ্ছিলো তাদের। তারপরও তারা থেমে যায়নি।

একসময় মেয়েটি আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন পূরন হয়। সে ঢাকায় একটি চেম্বারের সহকারী আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করে।

পরিবারটির মুখে হাসি ফুটে।

কিন্তু সেই হাসি মিলিয়ে যেতে সময় লাগেনি।

মেয়েটি একদিন জানতে পারে তার ব্রেনে জন্ম নিয়েছে টিউমার। যেটি তাকে মৃত্যু ছোবল দিতে প্রস্তুত!

আমি তার কথা শুনতে থাকি। রাত গভীর হচ্ছে। আমি টের পাই আমার বুকের ভেতর জন্ম নিয়েছে মেয়েটির জন্য ভালোবাসা। মনে হয় ও যেন আমার বোন।

সাবিনা নামের মেয়েটি কখনোই তার বুকের কষ্ট গুলি শেয়ার করতো না। অভাবী ভাইবোর আর মায়ের কাছে সে লুকিয়ে রাখছিলো তার চাওয়া পাওয়ার সকল ইচ্ছে।

খুব বেশি মন খারাপ হলে লুকিয়ে কাদতো। নিজের যন্ত্রনা সে কখনোই শেয়ার করতে চায়নি।

অথচ আজ সে এফএম এর লক্ষ শ্রোতার কাছে বলছে তার কষ্টের কথা।

অভাব অনটনের সাথে যুদ্ধকরা মেয়েটির কণ্ঠস্বর একসময় থেমে যায়। অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে সে।

সরাসরি প্রচার হওয়া এই অনুষ্ঠানের কর্মর্কতার আর স্রোতারা আতংঙ্কিত হয়ে পড়ে। রেডিও তে আমরা অপেক্ষা করি।

একসময় তাকে রেডিও ষ্টেশনের ছাদে নিয়ে রাতের ঢাকাকে দেখিয়ে উপস্থাপক প্রশ্ন করে, কেমন লাগছে তোমার?

সাবিনা আবেগ ভরা কণ্ঠে বলে আমি এত সুন্দর পৃথিবীকে ছেড়ে যেতে চাইনা, আমার ভীষণ বাঁচতে ইচ্ছে করে!

রেডিও তে আমি সাবিনার মুখ না দেখতে পেলেও তারে অনুভব করি। বুকের ভেতর শূন্যতাকে প্রশ্ন করি, কেন এমন হয়? কেন মানুষকে এতো দ্রুত চলে যেতে হয়। কেন স্বপ্নরা অধরাই থাকে???

আমার চোখ বেয়ে অশ্রু নামে।

আমি আল্লাহর কাছে অনুনয় করি, হে পরম করুণাময়, তুমিতো অসিম দয়ালু। একটু দয়া করে। প্রিয়বোন সাবিনা কে আর কটা দিন বাচিয়ে রাখো।

রেডিওতে সাবিনার মায়ের কণ্ঠ ভেসে আসে।

‍ ‍.........বাবারা তোমরা আমার মেয়েটার জন্য কিছু করো। আমার দুটো কিডনি বিক্রি করে দাও, আমার দুটো চোখ বিক্রি করে দাও। আমিতো বৃদ্ধ অক্ষম আমার আর কিছু নেই। আমার জীবনের বিনিময়ে ও বেচে থাকুক!

আমি বিছানা ছেড়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়াই। আকাশে আজ অনেক তারা, সাবিনাও কি একটি তারা হয়ে যাবে?

সাবিনার মাকে উদ্দেশ্য করে বলি,

মা বিদেশ নিয়ে সাবিনার চিকিৎসার জন্য যে পনেরো লক্ষ টাকা দরকার তা হয়ত আমার কাছে নেই।

আমি আমার সাধ্যমত দিবো। কিন্তু তা হয়ত সামান্যই। কিন্তু আমার হাতে কলম আছে। যে কলম দিয়ে কত মানুষকে আমি বিনোদন দিয়েছি।

আমি সাবিনার জন্য সেই কলম নিয়েই ভিক্ষায় নামবো।

আমি গভীর আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি আমার দেশ বিদেশের বন্ধুরা আমার চেয়ে বেশি আবেগ প্রবণ। তাদের হৃদয় অনেক বড়। মাত্র ১০০ টাকা করে যদি পনেরো হাজার মানুষ বিকাশ করে, অথবা সাবিনার এ্যাকাউন্টে ডিপোজিট করে তবে পনেরো লক্ষ টাকা হতে বেশি সময় লাগবেনা।

https://www.facebook.com/dhakafm90.4?ref=profile

এই পেজে গিয়ে বিস্তারিত জেনে আপনিও এগিয়ে আসুন।

জানিনা সাবিনাকে আল্লাহ কত দিন হায়াৎ দিয়ে পাঠিয়েছেন। তবে আমরা যে সৃষ্টির সেরা জীব ! আমরা আমাদের অসহয় একজন বোনকে এত সহযে ছাড়বো কেন?

অনুষ্ঠান শেষ হবার আগেই গভীর রাতে রেডিও ষ্টেশনে একদল মানুষ পাগলের মত ছুটে যায়। তারা সাবিনাকে অভয় দেয়। সেই সাথে তারা খিছু টাকাও তুলে দেয়। ৫০,০০০ টাকা সরাসরি ওখানেই কালেকশন হয়েছে এবার আপনার পালা...

সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা।

সাবিনা ইয়াসমিন

অ্যাকাউন্ট নাম্বার ঃ ১০০২৬৪১৭,সোনালী ব্যাংক মিরপুর সেকশন - ১ ব্রাঞ্চ।

বিকাশ করতে . ০১৭১২-৩০৭৯৫৮





বিষয়: বিবিধ

২৫৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File