আমার রুপবতী স্ত্রী ও সমসাময়িক রূপচর্চার করূন পরিনতী! (রম্য গল্প)
লিখেছেন লিখেছেন এম এম ওবায়দুর রহমান ০৩ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৩:৩৬:৫২ দুপুর
আমার স্ত্রী কুলসুম বানু যথেষ্ঠ রুপবতী। তার রুপ দেখে যৌবনের সেই উত্তাল সময়ে আমি প্রথম ভুলটি করি।
মনে পড়ে হাজারটা ছন্দ লিখে পাতার পর পাতা ভরে ফেলে ছিলাম। আর চিঠি লিখে তাদের বাড়ির ময়লার ঝুড়ি ভরে ফেলে ছিলাম। হারিকেনের কেরোশিন পুড়ে কি সব কথা-বার্তা লিখতাম!
তখন মোবাইল ফোন ছিলনা, তাই সকাল দুপুর তাদের বাড়ির সামনে ঘুরতে ঘুরতে মহল্লার নেড়ি কুকুরটার সাথে পযন্ত আমার ভাব হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কিছুতেই তৎকালিন সেই রুপসী আলতা বানুর মন জয় করতে পারতে ছিলাম না।
বাড়ির ধান চাল শরিষা এমনকি ঝোপের বাঁশ পযন্ত বিক্রি করে সব ব্যায় করতে ছিলাম আলতাবানুর জন্য।
ভালবাসা মোরে ভিক্ষারী করেছে .. .. তোমারে করেছে মহান.. টাইপের গান গাওয়ার সময় চলে এল। এমন বিদিক অবস্থায়
তাই শেষ ভরসা হিসেবে বন্ধু এরশাদের কাছে গিয়ে দাড়ালাম। ঐ সময় এরশাদ হাফ ডজন ছ্যাকা খেয়ে এই লাইনে তার দক্ষতার প্রমাণ করতে পারছিল মহল্লায়!
এরশাদ আলতাবানুর সার্বিক কাজ কর্ম শখ বিশ্লেষন করে আমারে পরামর্শ দিয়ে বললো, এই মেয়ে রুপচর্চায় দূবর্ল! তুমি ওরে রুপচর্চার সামগ্রী কিনে দাও বস্তায় বস্তায়!
বন্ধুর কথামত তারে রুপচর্চার নানা বিলাসি সামগ্রী গিফট করতে থাকি। এতে একপর্যায় সে আমার উপর মুগ্ধ হয়! না-না বলা উচিৎ সে বুঝতে পারে যে একটু কুলুর বলদ পাওয়া গিলাছে। মনে মনে হয়ত ভাবে আজীবন এই গর্দভটার মাথায় কাঠাল ভেংঙ্গে খাওয়া যাবে! তার ধারণা ঠিক আছে। আমি শুধু ত্যাগ করেই যাচ্ছি!
আম পুরুষকুল অবশ্য এমনি। তারা শুধু দিয়েই যায়!
খেয়াল করুন সম্মাট সাহজাহান আঙ্কেল মমতাজের জন্য কত বড় এক আর্শ্চয্য ইমারত তৈরী করেছিল। কত ধনবান মহিলার স্বামিইতো পৃথিবীতে মারা গেল কৈ কেউতো একটা টিনের ঘরও তৈরী করলো না!
এতে কি প্রমান হয়?
সেই ভাবনা আপনাদের উপরই ছাড়লাম।
আমার স্ত্রী কিছুতেই তার বয়সকে স্বীকার করেনা। সেদিন এক ডাক্তারের কাছে গিয়ে ছিলাম। ডাক্তার বয়স কত জিজ্ঞাসা করতেই কুলসুম বলল তেইশ বছর! গত দশটা বছর তার বয়স এক জায়গায় ঠেকে আছে!
ইদানিং আমার স্ত্রী তার রুপ নিয়ে হঠাৎ একটু টেনশনে পড়েছে।
তার ধারণা একটু যতœাদি করলে সে ঐশীরিয়া জেনিলিয়াদের পেছনে ফেলে দিতে পারবেন। তাই তিনি যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে বাজার থেকে নানান ধরণের কসমেটিকস কিনছেন এবং ব্যাবহার শেষে কোম্পানি ওয়ালাদের গালাগাল দিচ্ছেন।
টিভির বিজ্ঞাপনে অবশ্য প্রমাণ(!!)সহ বলা হয়েছিল, সকল গৌরবর্ণদের সাত দিনে ধবধবে ধবল করবে হাবিজাবি লাভলী ক্রিম!
কথাটা বলেছিল আবার আমাদের আহলাদি টাইপের চেহারার এক টিভি নায়িকা। তিনি বলতে ছিলেন তার সুন্দরী হইবার গোপন রহস্য! গোপন জিনিষ এই ভাবে টিভি পর্দায় বলার পর কেমনে গোপন থাকে এটা অবশ্য গবেষনার ব্যাপার!
যাই হোক ঐ ক্রিম কিনে আমার কল্পনা বিলাসি বউ এখন চরম হতাশ। তার সারা মুখে ব্রনে ভরে গিয়েছে। মুখের ত্বক লাল হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় আলতা বানু কাঁদো কাঁদো গলায় সকালে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,
- ওগো তুমি দেখেছো আমার এ কি হলো? এখন আমি এই দাগ উঠাবো কি দিয়ে?
তার চোখ মুখের অভিব্যাক্তি দেখে মনে হল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বুলডেজারটা বুঝি তার মুখের উপর দিয়ে গিয়েছে।
মুখের সারা জমিন জুড়ে ব্রন, কালো রাষ উঠে বিশ্রি অবস্থা ওর।
যদিও আমি ডাক্তার নই, তবু বাঙ্গালী বলে জন্ম সূত্রেই আমি পেয়েছি উপদেশ দেবার এক বিশেষ ক্ষমতা!
তাই তাকে বললাম,
- এক কাজ করো তুমি কাঠ ঘসার শিরিস কাগজ দিয়ে সারা মুখ ঘসে দেখতে পারো। ভাল ফিনিসিং পাবে!
আমার হালকা রসিকতায় সে খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়ল।
আগামী তিনদিন বাসায় আমার খানা বন্ধ বলে সে জানিয়ে দিল। হাতে থাকা পত্রিকাটাও সে একটানে ছিড়ে ফেললো। ভ্যাগিস সে আমাকে টেনে ছিড়ে ফেলেনি!
নারী শাষিত সমাজ ব্যাবস্থায় এসব শোষনকে নিয়তি বলেই মেনে নিয়েছি।
ইংরেজ লাট সাহেবরা দেশটাকে ছিবড়ে খেয়ে এক সময় চলে গিয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওরা আবার ফিরে এসেছে। গরীব রাষ্টের বিপনি-বিতান গুলোর কাঁচের শোকেসে থরে থরে সাজানো বিদেশি ব্যান্ডের কসমেটিকস। ঝকমকে আলো আর বিজ্ঞাপনের ফাঁদে ফেলে জন্ম সূত্রে কম মস্তিস্ক নিয়ে জন্মানো নারীকুলকে নানা কেমিক্যাল ব্যবহার করিয়ে দেশের টাকাকে নিয়ে যাচ্ছে মোড়ল রাষ্ট্র গুলো। বিভিন্ন টাইপের ক্রিম,সাবান,লোশন এরগায়ে সাদা ধবধবে অর্ধ্বউলংঙ্গ নারীদের ছবি যুক্ত সেই সব পন্য কিনলেই যেন আধুনিক হওয়া যাবে। জাতে উঠা যাবে। ইশ্বর প্রদত্ত চামড়াকে সাদা করতে পারলেই যেন স্বর্গ সুখ! বিজ্ঞাপনে দেখানো হয় নারীর চামড়া সাদা হলেই সে ভাল চাকুরি পাবে! বাবা মায়ের মুখ উজ্জল করতে পারবে। কালো চামড়া যেন সকল ভাল কাজের অন্তরায়। হায় নারীকুল!
আমার অস্থির চরিত্রের স্ত্রী আলতাবানু এখন শসা, পিয়াজ, মুসরির ডাল, কাঁচা হলুদ, গোল আলু সহ কাঁচা সবজির উপর ঝুকে পড়েছে। সবজির মূল্য বৃদ্ধিতে নারীকুলের অবদান যে কম নয় তা বেশ বুঝতে পারছি।
বাজারের থলে হাতে শুকনো মুখে সবজি কিনছি কিন্তু পাতে পড়ছে ডাল! পুরুষ নির্যাতনের কথা নিয়ে সবাই ভারি নিশ্চুব!
চোখের ভ্রু তুলতে গিয়ে আমার স্ত্রী যন্ত্রনায় কেঁদে ফেলেন প্রায়ই। তাই তাকে প্রশ্ন করলাম, কেন তুমি এতো কষ্ট করে ভ্রু তুলে বেড়াল সাজছো?
আমার কথায় তার গরম কড়াইতে যেন তেল পড়লো। তেড়ে এলো সে। তবে সে কিছু ছুড়লো না আজ। প্রায়ই সে হাড়ি পাতিল ছুড়ে মারে আমার টাক মাথায়। আশংকাজনক ভাবে ওর হাতের নিশানা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাবছি একটা হেলমেট কিনে ফেললে কেমন হয়? ওরে জব্দ করা যাবে। ভয়ে হো-া চালানো শিখিনি। হেলমেট পড়ার শখটা অন্তত মিটবে!
কুলসুম বানু আমাকে টেনে নিয়ে গেল টিভি রুমে। হিন্দি পুরাতন একটা সিনেমা চলছিল, যেখানে নায়ক অনিল কাপুর আর অক্ষয় কুমারের গা ভর্তি কালো লোম। ও চ্যানেল পাল্টে সদ্য মুক্তি পাওয়া একটা সিনেমা দেখালো। বিস্ময়ে হতবাক হলাম।
স্ত্রী বললো
- আমরাতো মাত্র চোখের ভ্রু প্লাগ করছি আর তোমরা পুরুষরা সারা শরীর প্লাগ করছো!
মুখ ঝামটা দিয়ে ও চলে গেল। যার বুকে লোম নাই সে নাকি মায়াদয়াহীন সিমার! তাই আগের দিনের নারী সমাজে লোম ওয়ালা পুরুষের খুব কদর ছিল। আহা পুরুষরাও এখন লোম প্লাগ করছে? আশংকা করছি অচিরেই হয়ত মেয়েদের মত মুখে ডাল মেখে আর চোখে শসার টুকরো দিয়ে পথে নামবে পুরুষ কুল।
বিষয়: বিবিধ
১৭২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন