প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন চাই (আজকের আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত)

লিখেছেন লিখেছেন এম এম ওবায়দুর রহমান ২২ জুলাই, ২০১৩, ০৩:২০:২১ দুপুর



সরকারি চাকরিতে ৫৫% কোটা এবং ৪৫% মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রক্রিয়া বহুদিন ধরে চলে এলেও অতি সম্প্রতি ৩৪তম বিসিএস’র ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায় পিএসসি পরীক্ষার্থীদের খাতার মূল্যায়ন করেছে সম্পূর্ণ ভুতুড়ে নিয়মে। অর্থাত্ সাধারণ ছাত্ররা ৮০ নম্বর পেয়ে পাস করেছে, অপরদিকে কোটাধারীরা ৫০ পেয়ে পাস করেছে! স্বভাবতই তরুণরা এরকম তুঘলকী সিদ্ধান্তে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা অবস্থান নেয় শাহবাগে। নতুন নাম দেওয়া হয় ‘মেধাচত্বর’! একই সঙ্গে ৩৪তম বিসিএস-এর ফল এবং অন্যায্য কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে সারা বাংলাদেশে একযোগে রাজপথে নামে। তবে এবার আর নতুন প্রজন্মের তরুণদের প্রতি আবেগী আচরণ করেনি সরকার। বরং পুলিশ এবং ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় রাজপথ হয় রক্তাক্ত! দাবির কাছে পরাস্ত হয়ে পরবর্তী সময়ে সরকার ৩৪তম বিসিএস প্রিলি. পরীক্ষার ফলাফল পূর্ণমূল্যায়ন করলেও কোটা প্রথা আগের মতোই থেকে যায়। এই ব্যাপারে সরকার ও তাদের চেতনা ব্যবসায়ী সহকর্মীদের নানান উদ্ভট যুক্তি জনগণকে হতাশ করে। ১৯৭২ সালে সরকারি কর্মচারী নিয়োগে মাত্র ২০% ছিল মেধা কোটা, ৪০% ছিল জেলা কোটা, ৩০% ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা আর ১০% ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত নারী কোটা। ১৯৭৬ সালে এই কোটা ব্যবস্থার পরিবর্তন করে মেধা কোটায় বরাদ্দ হয় ৪০%, আর জেলা কোটায় ২০%। মুক্তিযোদ্ধা কোটা আগের মতোই ৩০% রাখা হয়। ১৯৮৫ সালে এ ব্যবস্থা আবারও বদলানো হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৪৫%, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০%, নারীদের জন্য ১০% এবং প্রথমবারের মতো উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্যে ৫% বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমান সরকার নতুন করে একধাপ এগিয়ে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনী কোটাও চালু করে। স্বাধীন দেশের সংবিধানে লেখা আছে সকল নাগরিক সমান সুবিধা ভোগ করবে। কিন্তু এই কোটা প্রথায় যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে তা অমানবিক। তুলনামূলক কম পরিশ্রমী একজন ছাত্র যখন পরিশ্রমী ছাত্রকে টপকিয়ে কাঙ্ক্ষিত চাকরিটা পেয়ে যাচ্ছে, তখন বেশি পরিশ্রমী ছাত্রটার মন ভেঙে যায়।

এই কোটা প্রথা কখনো স্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে কোটাপ্রথা ঠিক ছিল। কিন্তু এখন এই ধরনের সব কোটা অমানবিক বলে মনে করে দেশের বেশিরভাগ মানুষ। তাই শাহবাগের মেধা চত্বরকে মানুষ সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছিল। মেধা চত্বরের তরুণরা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নিয়ে যায়নি। রাষ্ট্রকে তাদের অধিকার জানাতে গিয়ে ছিল। এটা কোনো দলের ছিল না। কিন্তু তারপরও তাদের জেল-জুলুম সইতে হলো। গুজব ছড়িয়ে বলা হলো, এখানে নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের গাল দেয়া হয়েছে। গণজাগরণ নামের নাস্তিকদের একটি সাজানো রাজনৈতিক আন্দোলনের ব্যাপারে মিডিয়া যে রকম সাপোর্ট দিয়েছিল এই মেধাচত্বরের ব্যাপারে সম্পূর্ণ উল্টো আচরণ করা হলো। বলা হলো রাজপথে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও যখন তরুণদের আটকানো যাচ্ছিল না। তখন শুরু হলো সেই পুরনো খেলা। নতুন ইস্যু দিয়ে পুরাতনটা ঢেকে দেয়া। জামায়াতের দুই নেতার রায় ঘোষণার মাধ্যমে জনগণের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিল সরকার। শফি সাহেবের তেঁতুল তত্ত্ব নিয়ে কৃত্রিম ঝড় তোলা হলো। আপাতদৃষ্টিতে সরকার হয়তো ভাবছে রুখে দেয়া গিয়েছে তরুণদের। কিন্তু ইতিহাস বলে বঞ্চিত তরুণদের কখনো রুখে দেয়া যায়নি, যাবেও না। আমি মহান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তাদের অবদান কোনোদিনই আমরা শোধ করতে পারবা ন। এমন কি ১০০% কোটা দিয়েও না। তারা না হলে আমরা এই দেশ পেতাম না। তাই তাদের কোটাটা সরকার একটি যৌক্তিক পর্যায়ে রেখে দিলে কারও কোনো আপত্তি থাকবে না। দেশের বেশিরভাগ মানুষ চায় কোটা নিয়ে চলমান সমস্যার একটা যৌক্তিক সমাধান। একজন নাগরিক হিসেবে আমি বলতে পারি—

১. সরকারি সব চাকরিতে কোটাপ্রথার একটি যৌক্তিক পুনর্বিন্যাস হোক।

২. একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাকে যুগোপযোগী ও মানসম্মত করা হোক। তারা সচ্ছলভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পারে।

৩. দুস্থ ও অনাগ্রসর নারীদেরকেও ভাতার আওতায় আনা যেতে পারে।

৪. প্রতিবন্ধীদের রাষ্ট্র বিশেষ সাহায্যের ব্যবস্থা করতে পারে।

কিন্তু স্বাধীনতার ৪৩ বছরে এসে কোটাপ্রথার চরম বৈষম্য আর চলতে দেয়া যায় না। কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোটা নিয়ে বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে পিএসসির বিরুদ্ধে। সরকার সব সময় তার পছন্দের দলীয় লোকজনকে পিএসসিতে বসায় যারা কোটার নাম ভাঙিয়ে মূলত নিজ দলের অথবা টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরিতে নেয় বলে অভিযোগ করেন অনেকেই। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে আমি মনে করি, কোটা প্রথার একটা যৌক্তিক পুনর্বিন্যাস করা হোক। আমি চাই সংবিধান সবাইকে সমান অধিকার দিক।



http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/07/22/209076#.UeyawsDcOIV

বিষয়: বিবিধ

১৫১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File