বাকশালের প্রেতাত্মা ও অনিশ্চিত বাংলাদেশের গণতন্ত্র! (আজকের আমারদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত)
লিখেছেন লিখেছেন এম এম ওবায়দুর রহমান ০৮ জুলাই, ২০১৩, ১০:১৭:৫০ সকাল
লিংক : বাকশালের প্রেতাত্মা ও অনিশ্চিত বাংলাদেশের গণতন্ত্র
একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে যুদ্ধটা একাত্তরে হয়েছিল তা অর্জিত হয়নি আজও। স্বাধীন একখণ্ড জমি পেলেও রাষ্ট্র এখনও পরাধীন। এখনও প্রতিবেশী আর মোড়ল রাষ্ট্রের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় চলে বাংলাদেশের রাজনীতি। স্বাধীন রাষ্ট্রের ন্যূনতম সুবিধা এ দেশের জনগণ ভোগ করতে পারেনি। জনগণের জন্য রচিত সংবিধান এখন রাষ্ট্রের গণনিপীড়নের বড় হাতিয়ার। সংবিধানকে রাষ্ট্র পরিচালকরা ইচ্ছামত পরিবর্তন কর্তন করে এর যথেচ্ছা ব্যবহার করা হয়।
শুরুটা হয় শেখ মুজিবের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তে। স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষক এই নেতা রাষ্ট্রপতি হয়ে প্রথম সংবিধানের বুকে ছুরি চালান। গণতন্ত্রকে বাতিল করে বাকশাল প্রতিষ্ঠিত করেন। জনগণের মৌলিক অধিকার রহিত করা হয়। বন্ধ করে দেয়া সব বেসরকারি গণমাধ্যম।
একদলীয় বাকশালের আড়ালে রাজতন্ত্র চালু করা হয়। ব্যাংক ডাকাতি থেকে শুরু করে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে রাষ্ট্রপ্রধানের পরিবার। আইন-আদালত সবই চলতে থাকে শেখ মুজিবের আঙুলের ইশারায়। অঢেল ক্ষমতা থাকায় তার অপব্যবহার বাড়তে থাকে। বাড়ে ক্ষোভ। অতঃপর এর পরিণামে ১৫ আগস্ট ইতিহাসের সৃষ্টি হয়।
১/১১ অবৈর্ধ সরকার একটি আন্তর্জাতিক নীলনকশার মাধ্যমে ক্ষমতায় আনে আওয়ামী লীগকে। তারপরও জনগণ স্বপ্ন দেখে ছিল এ মহাজোট সরকার হয়তো দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। বন্ধ হবে হানাহানি। থামবে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা। হাসিনা সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেয়া হবে। ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানো হবে। বিদ্যুত্ সংযোগ দেয়া হবে সর্বত্র। দুর্নীতি বন্ধ করা হবে।
কিন্তু এসবের কিছুই মনে রাখেনি মহাজোট সরকার। বরং বাকশালের প্রেতাত্মা যেন প্রথম দিন থেকেই ভর করেছে এ সরকারের ওপর। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে স্বাধীন সব গণমাধ্যম। একমাত্র সরকারের পদলেহন করা আওয়ামীপন্থী মিডিয়াই চালু রাখা হয়েছে। যারা প্রতিদিন কয়েকটন করে হলুদ সংবাদ সরবরাহ করছে।
সমাজে এখন মিথ্যার সুদিন বইছে। মিথ্যা-মনগড়া দলীয় নিউজ লিখলে ডাক পড়ে টকশোতে। বড় বুদ্ধিজীবী হওয়া যায় যদি ইসলাম ধর্মকে গাল দেয়া যায়। সত্য বললে জেল-জরিমানা। স্রোতের বিপরীতে গিয়ে সত্য বলার দায়ে জেল খাটছেন মাহমুদুর রহমানের মতো সাহসী সম্পাদক। দেশ ছাড়তে হয়েছে অলিউল্লাহ নোমানকে।
মুখে সরকার খুব গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলছে, কিন্তু গণতন্ত্রকে আজ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বরং বাকশালের কালো থাবায় বিপর্যস্ত হয়ে গেছে এ দেশের মানুষের জীবন। খুন আর গুমের অভয়ারণ্য হয়ে পড়ছে দেশ। ছাত্রলীগের বেপরোয়া সন্ত্রাসের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে পাসের হার বাড়াতে গিয়ে আজ কমে গেছে শিক্ষার মান। কোথাও শান্তি নেই। নিরাপত্তা নেই। রাজপথও আজ হায়নাদের দখলে। বিশ্বজিতের মতো যে কেউ খুন হয়ে যেতে পারে। বেড রুমের নিরাপত্তা নেই বলে সাগর-রুনি খুন হয়েছে মানলাম, তাই বলে রাজপথে খুন হওয়ার পরইবা কি বিচার হয়েছে ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের?
আজ ভিন্নমতের নেতা-কর্মীদের ওপর ব্রাশফায়ার করা হচ্ছে। রাজপথে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। গত ২২ বছর ধরে খুঁড়িয়ে চলা গণতন্ত্রকে এ সরকার যেন গলাটিপে হত্যা করছে। বিরোধী মতের ওপর রাষ্ট্র মামলা সন্ত্রাস চালাচ্ছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকানো হচ্ছে জাতীয় নেতাদের। বিচার বিভাগের ওপর সরকারের অপরিচ্ছন্ন হস্তক্ষেপের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার পাচ্ছে না ভিন্নমতের অনুসারীরা।
বিচারপতির আলোচিত ডায়লগ ‘... সরকার গ্যাছে পাগল হইয়া তারা একটা রায় চায়!’ স্কাইপ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে জনগণ জানতে পেরেছে বিচার বিভাগের ওপর সরকার আসলে কী পরিমাণ হস্তক্ষেপ করছে। স্বাধীন বিচার বিভাগ বলা হলেও তা তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। না হলে একই ধারায় মামলা হলেও নাস্তিক আসিফ মহিউদ্দিন সরকারের কাছের লোক হওয়ায় তাকে জামিন আর মজলুম সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ড দেয়া হয়েছে। বেশিরভাগ জনগণই আদালতের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।
সরকার জনগণের পয়সায় একজন জোকারকে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদে বসিয়েছে। যাকে রানা প্লাজায় ধসের পর খুঁজে পাওয়া যায়নি। যাকে রাজপথে পুলিশের গুলিতে পাখিরমত মানুষ মারার পরও খুঁজে পাওয়া যায় না, বিশ্বজিেক নিয়ে যিনি নিশ্চুপ! অথচ র্যাবের গুলিতে পা হারানো নিরপরাধ লিমনের মামলা তুলে নেয়ার জন্য সরকারের পক্ষে দালালি করতে দেখি তাকে।
এ সরকার গত সাড়ে চার বছরে শুধু গণতন্ত্র নয় বরং সরকারের প্রতিটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানকেই ধ্বংস করেছে।
আজ তাই দুর্নীতি দমন কমিশনকে নিয়ে মানুষ ব্যাঙ্গ করে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের মাধ্যমে কমিশন আর দুর্নীতির দরুন বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ঋণ বাতিল করলেও আমাদের দুদক হাসি দিয়ে বলছেন, না না এ প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি! এমনকি রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত ঘুষের টাকার বস্তাসহ ধরা পড়েও পার পেয়ে গেছেন। আমাদের দুদক বলেছে, তারা কোথাও কালো বিড়ালের অস্তিত্ব পায়নি!!
বাংলাদেশ সত্যি এখন খুব বিপদে আছে। বহির্বিশ্বে আমাদের সম্ভ্রম নষ্ট হয়ে গেছে। আজ আমেরিকা আমাদের জিএসপি সুবিধা বাতিল করেছে। অন্য দেশের প্রতিনিধিরাও চোখ রাঙাচ্ছেন। দেশের অন্যতম পোশাক শিল্প আজ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি।
ভয়াবহ গ্যাস আর বিদ্যুত্ সঙ্কটের কারণে দেশে নতুন শিল্পায়নও নেই। নতুন কর্মসংস্থান দূরে থাক বরং বিভিন্ন কল-কারখানা বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে যাচ্ছে মানুষ। আদম সম্পদ রফতানিও নেই আগের মতো।
ইন্ডিয়াকে প্রাধান্য দেয়া এবং অন্য রাষ্ট্রকে উপেক্ষা করার পররাষ্ট্রনীতির কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো উন্নয়ন হয়নি। ক্রমেই যেন পিছিয়ে পড়ছে দেশ।
রাজনৈতিক অস্থিরতা নির্মূলে সরকারকে কখনোই পজেটিভ মুভমেন্টে দেখিনি। বরং গণজাগরণ মঞ্চের নাটক সাজিয়ে সরকার দেশকে বিভক্ত করেছে। রাজনীতিবিমুখ হেফাজতকে ময়দানে টেনে এনে তাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে।
সাড়ে চার বছরে বিরোধী দলের সব দাবিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। সংসদে তাদের নেতার নামে আপত্তিকর কথা বলে এবং নানা কায়দা-কানুন করে বিরোধী দলকে সংসদের বাইরে রাখা হয়েছে। সংসদকে কার্যকর করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সরকার, যার ফলে সংসদ অকার্যকর অবস্থায় আছে। বিরোধী দল সংসদে না গেলেও বেতনভাতা তুলে তারও প্রমাণ করেছে যে দেশের জনগণের প্রতি তাদের কোনো রকম অনুভূতি নেই। বিরোধী দল নিলজ্জের মতো নির্বিকার থেকেছে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় তাদের কার্যক্রমও উল্লেখ করার মতো নয়।
এখন বিরোধী দলসহ দেশের ৯০ ভাগ মানুষের দাবি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পুনর্বহাল। কিন্তু সরকার গো ধরেছে ক্ষমতা না ছেড়ে হাসিনা সরকারের নিয়ন্ত্রণে একটি সাজানো নির্বাচন করবেই। জনগণ অবশ্য তা মানবে না, সেটা পাঁচ সিটি কপোরেশনের ভোটের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে।
এ অবস্থায় সংর্ঘাত অনিবার্য। আরেকটি ১/১১ আসার সম্ভাবনার কথাও বলছে কেউ কেউ। এ দেশের মানুষ কখনোই জুলুম আর অন্যায় সহ্য করেনি, করবেও না। তাই সরকারের উচিত একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে দেশকে সংর্ঘাতের পথ থেকে রক্ষা করা।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/07/08/207263#.Udou7kouLDc
বিষয়: বিবিধ
১৬৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন