নীশিতা ভাবি ডেকেছিল তার ফাঁকা ফ্লাটে গল্পটি প্রাপ্ত বয়স্কদের।

লিখেছেন লিখেছেন এম এম ওবায়দুর রহমান ২৬ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৮:০৫:৫৪ রাত



বিয়ে নামক অদ্ভূত সর্ম্পকটার প্রতি আমার আগ্রহ ছিলনা কোন কালেই। র্ভাসিটি থেকে বের হবার পর তাই অন্যদের মত একটা চাকুরি জোগাড় করার প্রানন্তকর প্রচেষ্টা আমার করতে হয়নি। সকাল বিকেল গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরতে পারছি। প্রতিদিনই নিয়ম করে শাহবাগ কাটাবন বাকুশাহ মাকের্টে চক্কর দিতে পারছি।

জিন্স ফতুয়া আর টি র্শাট পড়ার আনন্দ থেকে নিজেকে সরাতে হয়নি। অন্য বন্ধুদের মত বউর কাছে সকাল-বিকাল হাজিরা দেবার যন্ত্রনাও নেই। আহা কি আনন্দ বাধাহিন এই পথচলা। ব্যাচালর জীবন মানেই প্রকৃত স্বাধীন জীবন।

বাবার মৃত্যুর পর বড় ভাই ধরেছে পিতার ব্যাবসার হাল। সংসারে তাই আমার কোন পিছু টান নেই। এভাবেই চলতে ছিল গতকাল পযন্ত সব কিছু ঠিকঠাক। কিন্তু গতকাল সকাল থেকে আমার এই সাজানো জীবনে ছন্দ পতন ঘটেছে। কি ঘটেছে?

সকাল ১০টার মত বাজে। বাসা থেকে বের হচ্ছি এমন সময় সিড়িতে দেখা হল নিশীতা ভাবির সঙ্গে। তার ঠোটে সেই মাথা নষ্ট করা হাসি। নীশিতা ভাবির হাসি ছুড়ির মত বুকে বিধে গেল। ঢোক গিলে পাশ কাটাতে চাইলাম। কিন্তু নীশিতা সামনে এসে দাড়ালো।

- কি ভাইয়া কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

- এই, একটু বাইরে যাচ্ছি।

- তাতো বুঝতে পারছি, কিন্তু এতো সকাল সকাল? আমি মুচকি হাসি দিলাম। কিন্তু হাসিটা তেমন ভাল হলোনা। ভয়ংঙ্কর সুন্দরী টাইপের মেয়েদের সামনে ভাল করে হাসাটা যে এত কষ্টের, কে জানতো! নীশিতা ভাবি আমার হাতে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললো, “ভাইয়া একটু ধরোতো ব্যাগটা। আমি দরজার তালাটা খুলবো।”

আমি ব্যাগ হাতে নিয়ে নীশিতার ফ্লাটের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি। নীশিতা আমার গা ঘেসে দাড়িয়ে দরজার তালা খুলছে। ওর শরীর থেকে পারফিউমের তীব্র গন্ধ টের পাচ্ছি। মাথা ঝিমঝিম করছে। এটা কোন ব্যা-ের পারফিউম? নাকি নীশিতার শরীর থেকে এমন সুগন্ধ বের হয় আমি ঠিক বুঝতে পারিনা। তালা খুলে ভিতরে ঢুকে হাত বাড়িয়ে নীশিতা আমার কাছ থেকে ব্যাগটা নেয়। ওর ঠোটে দুষ্ট হাসি দেখি।

- কি হলো ভেতরে আসো!

আমি নীশিতার দিকে তাকাই। বুঝতে পারিনা ওকি সত্যি আমাকে যেতে বলছে? নাকি ও শুধুই কথার কথা বলেছে। ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা। নারী রহস্যময় হয় বলে শুনেছি, তবে সুন্দরী নারীরা যে ভয়ংঙ্কর রকম রহস্যময় একথাটা বুঝতে পারি। সিধান্তে পৌছাতে পারিনা। মাথার ভেতর নীশিতার শরীরের তীব্র গন্ধটা ঢুকে আছে।ওর দিকে তাকাতে ভয় করছে। কি আর্শ্চয্য কি হলো আমার! অন্যদিকে তাকিয়ে কিছুটা শীতল গলায় তাই বলি, ভাবী আপনি কখনোই কিন্তু আমাকে ভেতরে যেতে বলেন নি। এমনকি ঈদের সেমাই খেতেও বলেননি। তাই বলতে পারেন এটা আমার একটা প্রতিবাদ!

বোকার মত কথা গুলো বলে নিজেই বিব্রত হয়ে পড়ি। ধুর কি বলছি এসব! নীশিতা আমার কথা শুনে শব্দ করে হাসে। ওর হাসিতে চারপাশে যেন বিদূৎ চমকে গেল। কি আর্শ্চয্য এমন সুন্দর হাসি আগে কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়লো না!

নীশিতা আমার সামনে এসে দাড়ায়। বাতাসে ওর সাম্প্যু করা চুল উড়ছে। ঠোটে রহস্যময় হাসি।

- কি খোকা বাবু, তুমি কি আমার উপরে রেগে আছো? ঠিক আছে ওখানে দাড়িয়ে থাকো। আমি তোমার জন্য একটা গিফট কিনেছিলাম পরসুদিন, সেটা এখন তোমাকে দিবো। দাড়াও আসছি।

নীশিতা ভেতরে ঢুকলো। আমি দ্রুত সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলাম। নীশিতার হঠাৎ গায়ে পড়া কথা-বার্তায় আমি বেশ বিব্রত!

কাটাবনের ফুটপাত দিয়ে হাটতেছিলাম। খাচায় বন্দি বিদেশি কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে একটা দোকানের সামনে দাড়ালাম। কুকুরটাকে শেয়ালের মত লাগছে। ঘন লোম,লম্বা লেজ আর চোখে মুখে তীব্র বিরক্তি নিয়ে কুকুরটা দোকানিকে ঘেউঘেউ করে যেন বলছে আমাকে ছেড়ে দে শয়তান!

ঢাকার আকাশে কাক ছাড়া আর কোন পাখি নেই। তবে কাটাবনে দোকানিদের খাচায় রঙ্গিন পাখি দেখা যায়। তারা কি সব পাখি ধরে খাচায় বন্দি করে রাখছে? এত সুন্দর পাখি গুলো ধরে খাচায় বন্দি করে রাখা কি ঠিক হচ্ছে? খরগোস বানর সহ অনেক প্রানিকেই দেখলাম খাচায় বন্দি অবস্থায় অসহয় চোখে বাইরে তাকিয়ে আছে।

তবে আশংঙ্কা করছি হয়ত তারা কিছুদিন পর বেওয়ারিশ কুকুরও ধরে খাচায় বন্দি করে বিক্রি শুরু করবে!

কুকুরটাকে যেই খাচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে আয়তনে তা খুব ছোট। ঠিক মত দাড়াতে পারছে না বেচারা। কুকুরটার অসহয় চোখে আমার চোখ পড়লো। আমার পকেটে মাত্র সত্তর টাকা আছে। এই টাকা দিয়ে কুকুর কেন একটা ছোট পাখি কেনাও সম্ভব নয়। প্রতিজ্ঞা করলাম কোন বিশেষ শুভদিন যদি আমার জীবনে আসে তবে সেদিন অন্তত একটা কুকুরকে আমি খাচার বাইরে বের করে মুক্তি দিবো।

সজিব কে ফোন দিলাম কয়েক বার। ফোন বন্ধ। বোধ হয় ওর মোবাইলে চার্জ নেই। ফোনে কোন এক তরুনীর সঙ্গে যেন ওর প্রনয় হয়েছে। সেই ফোনকন্যার সাথে রাতভর গল্প করে সজিব। সারা রাত জেগে কথা বললে মোবাইলে র্চাজ থাকবে কেমনে?

চাদে ঘুরে আসার একটা বিজ্ঞাপন ওয়ালা ফোন সেটটা ওর কেনা দরকার বলে মনে হচ্ছে। সবুজ আমার দুইব্যাচ জুনিয়র। বেচারা ভাল কবিতা লিখে। তবে আজ পযন্ত কোন পত্রিকাই সেই কবিতা ছাপাতে রাজি হয়নি! তবে সম্প্রতি বাংলা ব্লগে সবুজ কবিতা শেয়ার করছে। কিন্তু ওর কবিতা ভুগছে তীব্র পাঠক সংকটে। সম্প্রতি আমার এক বন্ধু প্রকাশক হয়েছে। সজিবের ধারণা আমি রিকোয়েষ্ট করলে নাকি দেব-জ্যোতি ওর কবিতার বইখানি প্রকাশ করবে।

কিন্তু আমি ভাল করেই জানি। প্রকাশকরা খুজে রসময় গুপ্ত টাইপের লেখকদের। যাদের লেখা বিক্রি করে কাচা পয়সার মুখ দেখা যাবে। তবে সবুজকে এসব বলে লাভ নেই, ও যখন আমার পেছনে ঘুরে আনন্দ পাচ্ছে তাহলে পেতে থাকুক। তাছাড়া কবি সাহিত্যিকরা একটু পাগলা টাইপের হয়। তাদের ঘাটতে নেই।

ফ্লাস্কে করে যা বিক্রি করছে মধ্যে বয়স্ক এক লোক। আমার সামনে দাড়িয়ে মিনমিনে গলায় বলে, মামা চা খাইবেন নাকি?

আমি চা সিগরেট খাইনা। কিন্তু লোকটার চোখের ভেতর তাকিয়ে কেমন মায়া হল। কুকুর অবমুক্ত করতে না পারা দুঃখ ভুলতেই যেন আমি চায়ের অর্ডার দিলাম। সাথে একটা টোস বিস্কিটও নিলাম। চায়ে একটা চুমুক দেওয়ার সাথে সাথেই ফোন বেজে উঠল। ভাল করে না দেখেই সবুজ ভেবে রিসিভ করে গাল দিলাম।

- কি অসভ্যরে তুমি! এত বাজে ভাষায় কেউ কাউরে বকা দেয়?

- কে আপনি?

- আমি যে নীশিতা সেটা তুমি ভাল করেই জানো। ঢং করছো কেন?

- আস সালামু আলাইকুম। ভাবি আপনি ভাল আছেন?

- ছিলাম, কিন্তু তোমার বকা খাবার পর ভাল নেই।

- আপনি আমার মোবাইল নাম্বার কোথায় পেলেন?

- কোথায় পাব মানে! তোমার নাম্বার আমার কাছেতো বহুদিন আগে থেকেই আছে।

- তাই নাকি! তাহলে কোনদিন ফোন দিলেন না যে?

- তুমি এখন কি করছো?

- ফুটপাতে দাড়িয়ে চা খাচ্ছি।

- ছিঃ ওসব চা খেতে নেই। ঐ চায়ে জীবানু থাকে। সকালে ওভাবে পালিয়ে গেলে কেন?

নীশিতা ভাবির কণ্ঠে অনুযোগ। আমি নীশিতা ভাবির হাসবে-ের কথা ভাবছি।বিসাল লম্বা আর্ফিকান টাইপের ভদ্রলোক এর লাল চোখের দিকে তাকালে কেমন ভয় লাগে। ভেবে অবাক হই এই লোকটাকে কেমনে পছন্দ করলো নীশিতা ভাবি? অবশ্য বিয়ের ক্ষেত্রে সুন্দরী মেয়েরা বেশিরভাগ সময়েই ঠকে।

- কি কথা বলতে ইচ্ছে করছে না?

- হ্যা ভাবি বলেন, তারপর?

- আমি যে তোমার চেয়ে বয়সে ছোট এটা জানো?

- না,এখুনি জানলাম।

- কেন তোমার কি ধারণা, আমি বুড়িয়ে গেছি?

- সত্যি বলতে কি কোন মেয়ের ব্যাপারেই আমার ধারণা নেই।

- আজ বুঝলাম, কেন তোমার কোন মেয়ে বন্ধু নেই,আর কেনইবা তোমার কেন তোমার কোন গতি হচ্ছেনা?

- কেন হচ্ছেনা?

- তুমি খুব বেশি অহংঙ্কারী, সুন্দরীদের অর্নার করতে শিখোনি!

- মানে কি?

- মানে হল সব সুন্দরী মেয়েরা চায় তাকে সবাই সমীহ করুক। তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকুক। প্রসংশা করুক।

- ও আচ্ছা! দীর্ঘশ্বাসের সাথে উচ্চারণ করি।

- কি আমার কথা তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না?

- এসব কথা বিশ্বাস না করলেও আপনার তেমন ক্ষতি হবে বলে মনে হয়না। তবে অস্বিকার করার উপায় নেই যে আপনি সুন্দরী। আপনার দিকে তাকিয়ে থেকে হাটতে গিয়ে আমার বন্ধু রহমান একদিন ড্রেনে পড়ে গিয়েছিল। হাঃ হাঃ আমি হাসতে থাকি।

আমার হাসি শুনে বেশ গম্ভীর হয়ে যায় নীশিতা। ওকি রাগ করলো? কি জানি! সিরিয়াস কণ্ঠে নীশিতা বলে, সৌরভ তুমি কি আগামী কাল সন্ধায় আমার ফ্লাটে একটু আসতে পারবে?

- সন্ধায়?

- হুম। তোমার ভাইয়া তখন বাসায় থাকবে না। কি আসবা না? নীশিতার কণ্ঠের আন্তরিক আহব্বান আমার শরীরের ভেতর আচমকা বিদুৎ তরঙ্গ বয়ে যায়। বলে কি মেয়েটা! ভুল শুনছি নাতো?

- কি আসবা না?

- ভাবী বুঝতে পারছিনা, কি এমন দরকার হল আপনার?

নীশিতা হাসে। ফোনের স্পিকার ভেদ কওে সেই হাসি যেন আমার শরীরের প্রতিটি রক্ত কনায় শিহরন তোলে। হাসি চেপে নীশিতা বলে তুমি বোঝনাই কেন তোমারে ফাঁকা ফ্লাটে ডাকছি!

ইাহ! এরপর আর কোন প্রশ্ন করা চলে না। আমার কেমন যেন গলা শুকিয়ে আসছে। শরীরটা অবশ হয়ে আসতে চাচ্ছে। শরীরের ভেতর কেমন যেন করছে। অস্থির লাগছে। সুন্দরী মেয়েরা কাউকে ফ্লাটে ডাকলে এমন অস্থির অস্থির লাগে, আমার অভিজ্ঞতা ছিলনা।

আগামী পর্বে বাকিটা জানাবো। অনেক বড় হয়ে গেল বলেই পর্ব করলাম। কারণ ব্লগের পাঠকদের সময় কম..

বিষয়: সাহিত্য

২৬৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File