খেটে খাওয়া শ্রমজীবীদের কথা কেউ ভাবছে না। সামনে নিকষ কালো আধার!

লিখেছেন লিখেছেন এম এম ওবায়দুর রহমান ০৮ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:২৭:২৭ দুপুর





কর্মসূত্রে আমি প্রায়ই ছয় হাজার মানুষের সাথে প্রতিদিন আট ঘন্টা কাজ করি। এই মানুষ গুলোর বেশির ভাগই নিম্নমধ্যেবৃত্ত । জীবন ধারনের জন্য তাদের প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়।আমি বিকেল পাচটায় চলে যাবার পরও এই শ্রমজীবী মানুষ গুলো আরো অতিরিক্ত চার ঘন্টা ওভার টাইম করে। অথাৎ দিনের সূর্যের আলো তারা দেখতে পায়না। সকাল আটটা থেকে রাত নয়টা পযন্ত তাদের কাজ করে যেতে হয়।

তারা পারেনা সন্তানকে বা বৃদ্ধ বাবা মাকে সময় দিতে। তাদের জীবনে নেই পযাপ্ত বিনোদন। খাবারের মেন্যুতেও নেই পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাবার। মেশিনের মত শুধু কাজ করে যেতে হয়। আমি দেখি শ্রমজীবী নারীরা সকালে ভেজা চুল নিয়ে অফিসে চলে আসে। হাতে টিফিন ক্যারিয়ার।

গত দশ বছর আমি তাদের সাথে আছি। আমি হলফ করে বলতে পারি এই খেটে খাওয়া মানুষ গুলো কখনোই আওমীলীগ বা বিএনপি নিয়ে মাথা ঘামায় না। তারা রাত জেগে টিভির টকশো দেখে না। পত্রিকা পড়েনা। সরকারের সমালোচনা করেনা। তারপরও রাজনৈতীক অস্থিরতায় তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কোন গামেন্টর্সই হরতালে বন্ধ থাকেনা। পাচ টাকার বাস ভাড়া তাদের পচিশটাকা দিয়ে রিকসায় আসতে হয়। হরতালের কারনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হয়, রাস্তায় পুলিশের পিটুনি খেতে হয়। আরো কত যন্ত্রনা!

আমি গত দশ বছর চারটি প্রথম শ্রেনীর গামের্ন্টস এ কাজ করেছি। অভিজ্ঞতার আলোকে বলবো, কোন গামের্ন্টস এই শ্রমিকের নায্য পাওনা দেয়না। বরং নানান কসরতে তাদের ঠকানো হয়। আজ আমি সেসব নিয়ে লিখতে চাচ্ছি না।

আমি লিখতে চাই হরতাল নিয়ে, আমি লিখতে চাই সরকারের খাম খেয়ালী আচরণ নিয়ে।

শ্রমজীবী মানুষ গুলো যেখানে থাকে তা গ্রামের গরুর গোয়ালের চেয়ে খারাপ। পযাপ্ত অক্সিজেন পৌছানোর ব্যবস্থা নেই। খুপরি ঘরের একটি মাত্র কক্ষে তাদের থাকতে হয়। কিন্তু বিদুৎ এর লোড সিডিং এর কারনে তারা ভালো করে ঘুমুতে পারেনা। গ্যাসের প্রেসার না থাকায় তারা খাবার রান্না করে খেতে পারেনা।

দ্রব্য মূল্য ক্রয় সিমার বাইরে চলে যাওয়ায় তারা পেট পুরে খেতে পারছে না। পযাপ্ত স্বাস্থ্যে সেবাও নেই দেশে। এমন সংকট যখন চার দিকে তখন সরকারের এই দিকে তাকানোর সময় নেই। সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্ট চাওয়া পাওয়ার দিকে সরকারের বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই। জন কল্যানে কাজ করার কথা থাকলেও নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা আছেন নিজেদের পকেট ভারী করার ধান্দায়। ফুলে ফেপে উঠেছে তাদের সম্পদ। শোনা যাচ্ছে তারা সেই সব সম্পদ নাকি পাচার করছেন দেশের বাইরে!

আমজনতার দিকে না তাকিয়ে সরকার যেন তার সর্ব শক্তি প্রয়োগ করছে বিরোধী দলকে ধ্বংশ করে দেওয়ার জন্য। একের পর এক ইস্যু সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে রাজনৈতীক সংকট।

আদালতকে এতটা কদর্য ভাবে ব্যাবহার করছে যে খোদ বার সভাপতি বলছে কোর্টে এখন বিচার নয় বরং সাজানো নাটক চলছে!! সরকারের লেখা রায় পড়ছে বিচারকগণ!!!

ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি দেশ দুটি ধারায় বিভক্ত, এখন তা বেড়ে কয়েকটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

সরকার তাদের সিমাহীন দুর্নীতি ঢেকে রাখার জন্য দেশকে যে ভাবে বিভক্ত করছে তা আপামর জনসাধারণের জন্য চরম অস্বস্থিকর। বিপদজনক।

আমাদের ফ্যাক্টরীতে প্রতিদিন তিন ঘন্টার মত বিদূৎ থাকেনা, নেই গ্যাস প্রেসার। তাই প্রতিদিন প্রায়ই নয় হাজার লিটার ডিজেল ব্যাবহার করতে হচ্ছে।

বছর খরচ বেড়ে যাওয়ায় কমছে মুজুরী। বাড়ছে শ্রমিক অসন্তোষ।

কিন্তু উত্তরনের পথ নেই।

সামনে কোন আলো নেই।

শুধুই নিকষ কালো আধার।

কেবলি খবর পেলাম আমার বড় মামা মার গিয়েছে। চলছে হরতাল চলবে আরো ৪৮ ঘন্টা ঢাকা থেকে কেমনে যাবো গ্রামে ভেবে অস্থির হয়ে যাচ্ছি।

বিষয়: বিবিধ

১৪৫৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File