রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে দেশ একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ হারালো
লিখেছেন লিখেছেন ফেরারী মন ২০ মার্চ, ২০১৩, ০৯:২২:৫৬ রাত
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকর্মী, বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান আজ বিকেল পৌনে ৫ টায় সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তাঁর এ মৃত্যুকে সারা জাতি আজ শোকে মুহ্যমান।
সারাটা জীবন দেশ, মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করে যাওয়া এই বণার্ঢ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে সামান্য কিছু না বললেই নয়।
প্রারম্ভিক জীবন
১৯২৯ সালের ৯ মার্চ জিল্লুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে জন্মগ্রহণ করেন। তার স্ত্রী আইভি রহমানও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জিল্লুর রহমান তার সহধর্মিনী ও মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী আইভি রহমানকে হারান।পারিবারিক জীবনে তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান প্রাপন নামীয় এক পুত্র এবং তানিয়া ও ময়না নাম্নী দুই কন্যা সন্তানের জনক।
শিক্ষা
জিল্লুর রহমান ময়মনসিংহ জেলা শহরে তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৯৪৫ সালে ভৈরব কেবি হাই স্কুল থেকে তিনি মেট্রিক, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আই. এ. এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে সম্মানসহ এমএ এবং এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।
রাজনীতি ও আন্দোলন
১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছাড়াও জিল্লুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ বিভিন্ন সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনসহ '৭৩, '৮৬, '৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর-ভৈরব আসন থেকে জিল্লুর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। '৯৬ এর আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে তিনি এলজিআরডি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালের ১১ জানুয়ারি ফখরুদ্দীন আহমদের তত্তাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে যখন শেখ হাসিনা গ্রেফতার হন তার পর থেকেই জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ:
২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করলে জিল্লুর রহমান সংসদ উপনেতা হিসেবে নির্বাচিত হন।
এর পর তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ১৯-তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গত ৯ মার্চ ছিল তার ৮৫তম জন্মদিন। অবশ্য এ দিনটিতেই তাকে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাংলাদেশের ১৭-তম রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের মেয়াদ ছিল ২০০৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। নবম সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ায় তার মেয়াদও দীর্ঘায়িত হয়।
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
দীর্ঘদিন রোগে আক্রান্ত হয়ে ১০ মার্চ, ২০১৩ তারিখে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে কিডনী ও মূত্রপ্রদাহে আক্রান্তজনিত কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন জিল্লুর রহমান। এর পূর্বদিন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ফুসফুসের সংক্রমণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।অতঃপর ২০ মার্চ, ২০১৩ তারিখে তাঁর দেহাবসান ঘটে। সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মাহবুব উজ জামান স্থানীয় সময় ৬:৪৭ ঘটিকায় জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান। ঐ সময় তাঁর সন্তানেরা সেখানে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পূর্বেই ১৪ মার্চ, ২০১৩ তারিখে জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল হামিদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে বাংলাদেশে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালন করা হবে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ
উইকিপিডিয়া
বাংলানিউজ২৪
আরটিএনএন
প্রধানমন্ত্রীর শোক
বিরোধী দলীয় নেত্রীর শোক
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির শোক
ঢাবি ভিসির শোক
বিষয়: বিবিধ
২৮৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন