আমার জ্ঞানের চৌহদ্দি
লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ২৯ মার্চ, ২০১৮, ০২:৫৯:৩৫ রাত
জ্ঞানের প্রথম যে কথা আল্লাহ তাআলা আমাদের বলেছেন তাহলো পড়তে। পড়ার সীমানা নাই। যা কিছু পড়তে যেয়ে আল্লাহর নাম পাওয়া যায় তা সব পড়া যায়। তার খালিক্ব নামের অভিধা তো সৃষ্টি তত্বের জানার মাঝে, তার মালিক নামের বুঝ আসে সমাজের বাঁধন ও অধিকারত্বের স্তর স্তরে। ওয়াদূদ, রাহীম, লাতীফ, রহমান, কারীমের নামে পড়তে যেয়ে দুনিয়ার তাবৎ প্রেম ভালোবাসা এতটুকুন হয়ে আসে আমার কাছে। সীমাহীন বই এর জগতে আমি ঢুকে পড়ি। অবশ্য যে সব পড়া আমাকে আল্লাহর নাম ভুলায়ে দেয়। চোখে আটকে দেয় বিভ্রান্তির চশমা, মনে নিয়ে আসে নোংরামীর ধুকপুকানি, চিন্তায় দিয়ে যায় গ্রন্থীবহুল জট, আর পথ রচনায় বাড়িয়ে দেয় সংশয় তা আমি পড়িনা। ঐ সব পড়ে সময় নষ্ট করতে আল্লাহ নিজেই নিষেধ করেছেন।
তবে তিনি আমাকে পড়ে পড়ে জ্ঞান বাড়াতে বলেছেন। এমনকি “রীডিং ফর প্লেজার” ও হতে হবে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য। আল্লাহ এই একটা জিনিষই আমাদের বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নামতে বলেছেন। দুআতে চাইতে বলেছেন, বলো, হে আমার রব্ব, আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দাও। এই জ্ঞান বাড়ানোর প্রক্রিয়াতে তিনি কখনো পড়াটাকেই একমাত্র মাধ্যম করেননি। তিনি বের হতে বলেছেন লেখা পড়ার জন্য। তিনি প্রশিক্ষন নিতে বলেছেন 'ইস্তেনবাত' তথা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন আবিস্কার করার উপযুক্ত হতে। তিনি রাতে দিনে গভীর মনোযোগী হয়ে তাদাব্বুর (গবেষণা), তাফাক্কুর (গভীর চিন্তা) ও তাহান্নুস (একাকী বসে ইবাদাতে মশগুল থাকা) ইত্যাদির মধ্য দিয়ে থিঙ্কট্যাঙ্ক, তথা উলুল আলবাব, উলুল আবসার, আহলুয যিকর ও উলুল ইলম হবার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
এই জ্ঞান শেখার পথে যতটুকু আপনি অর্জন করলেন, তাতে আপনাকে গর্ব করতে মানা করেছেন আল্লাহ। আমরা কেন গর্ব করবো। গত ৫০টা বছর আমি জ্ঞান শেখার পথে রাত দিন ব্যয় করেছি। সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়েছি একাধিক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এই আমি যখন জ্ঞানের বিভিন্ন জগতের একটা একটা অর্গল খুলে সামান্য ফাঁক দিয়ে দেখার চেষ্টা করি, বিস্ময়ে মূক হয়ে যাই, হতবাক হই, নিজের ক্ষুদ্রতা পলে পলে উপলব্ধি করতে পারি।
সেদিন গভীর রাতের সোয়ানসীর আকাশে তারা গোণার ফাঁকে আমার প্রিয়তম তারা 'আদম সূরাতের' দিকে তাকালাম। তার পাশে ভাসা 'যুগল তারার' প্রতি নযর দিয়ে মৃদ হেসে সোজা নীচে চোখ রাখলাম। মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন আমার উস্তায শায়খ যায়দ আলজুহানীর দেখানো ঋতু পরিবর্তনের জানান দেয়া তারাদের মেলা দেখতে থাকলাম। আল্লাহর সৃষ্টির এই মেলায় নিজকে ভাসিয়ে দিতেই মনের মাঝে ঝংকৃত হলোঃ ওয়মা ঊতীইতুম মিনাল ইলমি ইল্লা ক্বালীলা। ও মানুষ এই বিশাল সৌর মন্ডলে কী বা দেখেছো তুমি। স্টিফেন হকিংস তো তোমার চেয়েও আরো জানতো। এখানে থাকা ব্লাকহোল তার নযরে পড়েছে, এখানে ঘটা বিগ ব্যাংএর ধ্বনি তার হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। আমি বুঝে ফেললাম, আহারে কত ক্ষুদ্রতম জ্ঞান নিয়ে আমি আব্দুসসালাম গর্বের বেলুন ফুলাই। ওয়মা ঊতীইতুম মিনাল ইলমি ইল্লা ক্বালীলা।তোমাদের জ্ঞান যদি দেয়া হয়ে থাকে, তা খুব ই সামান্য। হেসে উঠি; সেরা সেরা বিজ্ঞানীরা কত বিনয়ী ছিলেন। ওরা কেউ কেউ বলেছেনঃ সারা জীবন জ্ঞান সাগরের তীরে কয়টা নুড়ি নিয়েই খেলেছি আমি এক মানব শিশু।
আমি গর্বের কাঁচ ঘেরা ক্ষণভংগুর গহ্বব থেকে বের হই। দেখতে পাই জ্ঞান সাগরে বয়ে চলা জাহাজের সারি। কেও চলে ধেয়ে, কেও চলে বেয়ে, কেও যায় চরে চরে জীবনের জয়গান গেয়ে। আমি আমার ছোট তরী নিয়ে ঢেও গুণি, পাথরের নুড়ির মাঝে শৈবালের নাচ দেখি। আর হেলে দুলে পড়তে থাকিঃ ফাওক্বা কুল্লি যি ইলমিন আলীম। আব্দুস সালাম জেনে রেখো, জ্ঞানের পথের যাত্রীদের মাঝে সবার চেয়ে নিজকে বড় মনে করোনা। প্রতিটা জ্ঞানবানের চেয়েও বড় জ্ঞানবান কিন্তু রয়েছে। ফাওক্বা কুল্লি যি ইলমিন আলীম।
আমি ধাতস্ত হই। চোখ দিয়ে ঝরে যায় মাধবকুন্ডের প্রাকৃতিক ঝরণা। বলে উঠি, আ আনতুম আ’লামু আমিল্লাহ। তোমরাই বেশী জানো, না কি আল্লাহ বেশি জানেন??!! আল্লাহ, আমি সসীম কত ক্ষুদ্র একজন বান্দাহ তোমার!
বিষয়: বিবিধ
৮৭১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সত্যই আমরা মানুষ কতো ক্ষুদ্রাজ্ঞানের অধিকারী। মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলের এলম্ বাড়িয়ে দিন। আমিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন