তারাবিহের ২০ রাকাআত নামাজ পড়া ফরজ, আর ৮ রাকাআত নামাজ পড়া যায়না, যায়নি, যাবেনা

লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ২৭ মে, ২০১৬, ০১:৫৯:২১ দুপুর

ফতোয়া টা আমার না, এটা কিছুক্ষণ আগে শোনা একটা ধমকি। আমাকে এই ধমকিটা দিয়েছেন আমার খুব প্রিয় একজন মুরব্বি। আমি নতুন এসেছি মসজিদে; কিছু চেঞ্জ নিয়ে আসতেছি; এই চেঞ্জ এর আওতায় তারবিহ কে যেন না নিয়ে আসি তার আগাম পরামর্শ। আমাকে ভালোবাসেন বলেই তিনি অত মোটা গলায় কথাটা বলেছেন। এখন আমি ঢোক গিললাম। সময় নিলাম, এবং মুরুব্বিদের কে কিভাবে বিষয় টা বুঝাবো তার একটা কন্সেপ্ট ম্যাপ বানালাম।

চাচা, তারাবিহ নামাজ আমাদের নাবী (সা) জামাআতের সাথে কয়েকদিন পড়েছেন। ৮ রাকাত করে। এরপর তিনি আর জামাআতে পড়েননি। কারণ জামাআতে পড়লে মানুষের উপর এটা ফরদ্ব হয়ে যেতে পারে এই ভয় ছিলো।

কিন্তু তিনি ঐ ৮ রাকাআত নামাজ জামাআতে পড়ার সময়ে এত লম্বা করে পড়েছেন যে অনেক সাহাবা মনে করতেন, ও আল্লাহ সাহুর করব কখন। মানে খুব লম্বা সময় ধরে নামাজ হত। যেহেতু এটা ফরদ্ব না, আর সাধারণ মানুষের কষ্ট হতে পারে তাই আমাদের নবী বাকী ৮ বছর আর জামাআতের সাথে এই নামাজ আদায় করেননি। সায়্যিদুনা আবু বকর (রা) এর যুগেও জামাআতে আর তারবিহ হয়নি।

সায়্যিদুনা উমার (রা) এর যুগে এসে তারাবিহ এর নামাজের আবার শুরু হয় জামাআতের সাথে। তিনি একজন কে ইমাম বানায়ে দেন। হাজার হাজার সাহাবা ও তাবেয়ীন সেই জামাআতে শরীক হতেন। রাকাআত নিয়ে অত বেশী চিন্তা কোন সাহাবির মধ্যে ছিলো না। ইমাম মালেক যখন মসজিদে নাবাওয়ীর শিক্ষক, সাহাবীদের কেও তখন বেঁচে নেই। তিনি দেখলেন মদীনা বাসী তাবেয়ীণ গন ৩৩ রাকাআত নামাজ পড়েন মসজিদে নাবাওয়ীতে। সেটাকেই তিনি পালন করা যায় বলে মনে করতেন।

আমার উস্তায আতিয়্যাহ মুহাম্মাদ সালেম (র) মসজিদে নাবাওয়ীতে কিভাবে তারাবিহ হত তার একটা ঐতিহাসিক ক্রমধারা উল্লেখ করেছেন। তাতে তিনি দেখায়েছেন সেখানে উমার (রা) এর পর থেকে নাকি ২০ রাকাআতের নিচে তারাবিহ অদ্যাবধি হয়নি।

মাদীনায় ৪ বছরে আমি ২০ রাকাআতের কম তারাবিহ পড়িনি, বরং শেষ ১০ দিনের আরো ৮ রাকাআত সহ ২৮ রাকাআত কিয়ামু রামাদ্বান করেছি।

চাচা হাসলেন, বললেন, বাবা আপনার উপর আমার আস্থা আছে। আপনি ভুলেও ৮ রাকাআত চালু করবেন না। সোয়ান্সি ইউনিভার্সিটি মসজিদে ৮ রাকাআত হয় আমার মোটেই পছন্দ না।

আমি বললাম চাচা, চাচি যদি আপনাকে বলে, ও গো, শরীর টা খারাপ, ৮ রাকাআত নামাজ পড়ে একটু রেস্ট নিতে পারবো? আপনি কি করবেন?

চাচা বললেন, বাবা, আপনার চাচি আসলেই রোগগ্রস্ত, সে ৮ রাকাআত পড়তে পারবে, মনে হয়।

আমি বললাম, এই তো এখানে আমাদের নবী (সা) হলেন রাহমাতুললিল আলামীন। তিনি জানতেন উম্মাতের কষ্ট হবে। আপনি চাইলেও কিন্তু ৮ রাকাআত পারবেন।

চাচা, কেও যদি মনে করে আমি রাসূলের (সা) সুন্নাত ৮ রাকায়াত পড়বো, কোন সমস্যা নাই। পড়তে পারবে। তবে রাকাআত কিন্তু অনেক লম্বা হতে হবে।

কেও যদি মনে করে রমাদানের রাত, আর আমাদের নাবী (সা) তো নামাজ পড়েছেন, আর বলেছেনঃ যে রামাদ্বানের রাত জেগে জেগে (বেশি সময় দাঁড়িয়ে) নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। এখানে তিনি কত রাকাত পড়তে হবে বলেন নি। এই জন্য সাহাবা গণ বুঝেছিলেন ২০ রাকাআত, ৩০ রাকাআত পড়তে কোন মানা নেই। এই চিন্তা করে কেও যদি বেশি করে পড়ে তাতে ক্ষতি নেই।

চাচা, সবচেয়ে খারাপ লাগে দুইটা জিনিষঃ

১। যারা ২০ রাকাআত পড়ে তারা এত দ্রুত পড়ে যে কি পড়তেছে, কেন পড়তেছে কিছুই বুঝা যায়না। হাফিযদের তেলাওয়াত খুব দ্রুত হয়, ধরা যায় না কোথায় কি পড়তেছে। আমার কাছে এটা পছন্দ নয়। তাছাড়া এটা ফরদ্ব নয়, নফল। কিন্তু মানুষ এই ২০ রাকাআত তারাবিহ কে ফরদ্ব মনে করে নিয়েছে। এতা খুব ই খারাপ। শরিয়াতে এইটা করার অধিকার কারো নেই। আর আবশ্যক নয় এমন কিছু আবশ্যক করে নেয়া কিন্তু বড় বিদআত।

২। যারা ৮ রাকাআত পড়তেছেন তাদের অনেকেও নবী (সা) এর মত লম্বা করে পড়তেছেন না। মানে সংক্ষেপ করাটাই যেন তাদের একমাত্র লক্ষ্য।

এবার চাচার হাত ধরে বললামঃ চাচা, আমি মসজিদে নবওয়ীতে অনেক মানুষ দেখেছি যারা ৮ রাকাআত নামাজ পড়ে বাজারে যেতো শপিং করতে। মেয়েদের মাঝে ঘুরে বেড়াতো। আমি একজন কে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই নামাজ রেখে বাজারে যান কেন, তিনি বললেনঃ এই বেদাআত করার চেয়ে বাইরে যাওয়া ভালো।

এই ভাইকে আল্লাহ এখন বড় মৌলানা বানায়েছেন, ওয়াজ আর ওয়াজ। এখন ও আমি দেখি এই ভাই কিভাবে আমাদের রেখে ৮ রাকাআত নামাজ পড়ে দৌঁড়ে মদীনার মার্কেটে মেয়েদের সাথে শপিং করছেন। এই দৃশ্যকে আমি কোন দিন ইসলামি মনে করিনি।

কারন মসজিদে নাবাওয়ীতে বা কা'বার চত্তরে এখন তারাবিহের নামে যা করা হয় তাকে বিদআত মনে করা কে আমি পাগলামি মনে করি। তাহলে আমার উস্তায ইমাম হুযায়ফী, ইমাম আইউব (র), ইমাম ইবরাহীম আলআখদার, ইমাম সুদাইস, ইমাম শুরাইম বা সবাইকে বড় বেদাতি নাম দিতে হবে। আমার মন তাতে সাঁয় দেয় না............

(ব্লগার সবুজ কবির ভাই এর নির্দেশে এখানে দেয়া হলো)

বিষয়: বিবিধ

৫৫৭০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

370252
২৭ মে ২০১৬ বিকাল ০৪:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ২০ রাকাত ও কুরআন খতম করতে হবে। এই বিষয়টাকে আমাদের দেশেও অনেক মানুষ বাধ্যতামূলক মনে করেন। সেই জন্য ৩-৪ দিনে তারাবিতে কুরআন পড়া শেষ করার একটা প্রবনতা কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে। মালয়শিয়াতে শুনেছি নামাজ ২০ রাকায়াত ই পড়ান হয় মসজিদে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ আট রাকাত পড়ে চলে যায়। আর কুরআন খতম এর নামে যা হয় সেটা তো....
370253
২৭ মে ২০১৬ বিকাল ০৪:৫৩
আহমদ মুসা লিখেছেন : খুব সুন্দর উপকারী পোস্ট। সবুজ ভাই এর গুরুত্ব অনুধাবন করে হয়তো অনুরোধ করেছেন। তার অনুরোধে আমার মতো অজ্ঞ পাঠকও উপকৃত হলাম ব্লগে পড়ার সুযোগ পেয়ে।
আমাদের দেশে তারাবী নামাজের নামে যাকিছু হয় তা আমার কাছে কেমন যেন অদ্ভুদ মনে হয়। সারা বছর নামাজের ধারে কাছেও নেই। এমনকি সাপ্তাহিক জুময়া'র সালাতে কদাচিত শরীক হয়- এমন কতক লোককে দেখা যায় সারাদিন রোজা রাখে, দিনের পাচঁ ওয়াক্ত নামাজে ইরেগুলার অথচ দিনের শেষ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর তারাবীর নামাজে খতমে কোরআন "ধরা"কে ফরজের চেয়েও বড় ফরজ মনে করে। আর মা'শায়াল্লাহ! "খতমে কোরআনের" তারাবীতে কোরআন তেলওয়াতের যে স্প্রীড!" মনে হয় সুপারসনিক জেট বিমানের চেয়েও হাফেজ সাহেবদের কোরআন তেলওয়াতের দ্রুততা অনেক বেশী। ইল্লা মা'শায়াল্লাহ গোটা বাংলাদেশে হয়তো শ'খানেক মসজিদ খুজে পাওয়া যাবে কিনা জানি না ইলমে তাজওয়ীদের নির্দেশিত নিয়ম অন্তত "হাদ্বর" স্পীড নিয়ে কোরআন তেলাওয়াত হয়। আরব জাহানের কোর্রাদের "তাদ্বওয়ীর"-এ যে গতি তা আমাদের দেশের ক্বারীদের "তারতিল"-এ গতিতে স্পীড আরো বেশী মনে হয়।
370255
২৭ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:১৮
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

এই ভাইকে আল্লাহ এখন বড় মৌলানা বানায়েছেন, ওয়াজ আর ওয়াজ। এখন ও আমি দেখি এই ভাই কিভাবে আমাদের রেখে ৮ রাকাআত নামাজ পড়ে দৌঁড়ে মদীনার মার্কেটে মেয়েদের সাথে শপিং করছেন। এই দৃশ্যকে আমি কোন দিন ইসলামি মনে করিনি।

কিন্তু আপনার ঐ ভাইয়েরা তো আমজনতাকে ভাগ-যোগ করে ভেজে খাচ্ছেন!!
তাঁদের কারো কারো অবদানে সমাজটা এখন খন্ড-বিখন্ড হয়ে গেছে!
কিন্তু অতীতে মতপার্থক্য থাকলেও এত প্রকট সামাজিক বিভাজন ছিলনা!


মসজিদে নাবাওয়ীতে বা কা'বার চত্তরে এখন তারাবিহের নামে যা করা হয় তাকে বিদআত মনে করা কে আমি পাগলামি মনে করি। তাহলে আমার উস্তায ইমাম হুযায়ফী, ইমাম আইউব (র), ইমাম ইবরাহীম আলআখদার, ইমাম সুদাইস, ইমাম শুরাইম বা সবাইকে বড় বেদাতি নাম দিতে হবে। আমার মন তাতে সাঁয় দেয় না........

Praying Praying
জাযাকাল্লাহ
370257
২৭ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১৬
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ পিলাচ
370263
২৭ মে ২০১৬ রাত ০৮:২৪
শেখের পোলা লিখেছেন : তারাবীর নামাজ নিয়েও সমস্যা। আমাদের দেশে ২০ রাকাতই চালু ছিল। বর্তমানে ৮ ১২ আর বিশের মধ্যে টানা হিচড়া চলছে। যেহেতু ফরজ নয় অতএব, যার যার সাধ্য মত আদায় করুক। তবে খতমের স্পীড অবশ্যই ধীর আর বোধগম্য হওয়া উচিৎ বলে মনে করি। ধন্যবাদ।
২৮ মে ২০১৬ রাত ০৮:৫৮
307327
আবু জান্নাত লিখেছেন : আপনার মতামত দারুন লাগলো।
370332
২৮ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩৭
কুয়েত থেকে লিখেছেন : রমদানে বেশী ইবাদত করাটাই উত্তম, বিশেষ করে তারাবিহর নামাজ ৮ এর বেশী না করে দীর্ঘ করাই উচিৎ। লেখাটি ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে
370346
২৮ মে ২০১৬ রাত ০৯:০২
আবু জান্নাত লিখেছেন : আমিরাতের ইসলামি এ্যপেয়ার্স এর ফতোয়ায় ২০ রাকাতের পক্ষে ইমাম মালেক রাহঃ এর মতামত কে অগ্রাধিকার দিয়ে ফতোয়ার বই ছাপানো হয়েছে।

কিন্তু এটি এখতিয়ারি বিষয় হওয়ায় ইমামদের উপর চেপে দেওয়া হয়নি। মিসর, সুদান ও মরোক্কোর ইমামগণ ৮ রাকাত পড়ান, আর উপমহাদেশের ইমামগণ ২০ রাকাতই পড়ান।

জাযাকাল্লাহ খাইর

370516
৩১ মে ২০১৬ সকাল ০৬:৪৭
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : এখানে অতি গুরুত্বের সাথে মনে রাখতে হবে যা, ইসলামে “তারাবী” নামের কোন নামাজ নেই। রাসূল সঃ এরূপ কোন সালাতের সংযোজন কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন। (বোখারী-মুসলিম) খলিফা ওমর “বিদ্‌আত” বলে এটাকে চালু করে এ বলে যে, “যারা শেষ রাতে উঠে রমজানে তাহাজ্জুদ পড়বেনা, তারা রাত্রের প্রথমার্ধে হাট বাজারে আড্ডা না দিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে ক্বোরআন শুনুক। তবে এটি একটি বিদ্‌আত”। রাসূল সঃ যা করেন নি, ধর্মে তা করাই বিদ্‌আত। বিদ্‌আত দাঁড় করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু রমজান মাসে মস্‌জিদ কমিটি চাঁদা তোলা ও হাফেজ ভাড়া করে অতিরিক্ত আয়ের ব্যবস্থা করতে এ বিদ্‌আতকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে যে, তার চাপে মাহে রমজানে ক্বোরআন বুঝার ফরজই চাপা পড়ে হারিয়ে গেছে। তারাবীর তারাহুড়ায় হাফেজ, ইমাম ও মুসল্লী সবাই ক্বোরআন শুনে বুঝে, ক্বোরআনের গভীরে পৌঁছার সুযোগ চীরতরে হারিয়েছে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাই হি রাজিউন।
370653
০১ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:১০
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : মন্তব্যটি পোস্ট রিলেটেড নয়।
রমজান নিয়ে ব্লগীয় আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। অংশ নিতে পারেন আপনিও। বিস্তারিত জানতে-
Click this link
১০
376150
১২ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৭:০৩
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! কাজের কাজ বাদ দিয়ে অহেতুক তর্ক বেকুবী ছাড়া আর কিছুই নয়। জাযাকুমুল্লাহ্
১১
378290
০৪ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০৮:৪২
নাবীল লিখেছেন : কি আর বলবো ,
হুদা পেচাল পারি লাভ আছে।
মক্কার জমিনে ,মদিনার জমিনে থেকে অনেকেই ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজই পড়েনা।
দোয়া করি তাদের আল্লাহ পাক হেদায়েত নছিব করুক।
আমিন।
তারাবির নামাজ রমজানের জন্য বিশেষ একটি এবাদত। রোজা ফরজের সাথে তারাবির নামাজ ফরজ এমন কোন কথা আছে নাকি।
যার বিশ রাকাত সয্য হবে সে পড়বে।নেককার পরহেজগার লোকরা তো সওয়াবের আসায় পড়বে। তার সওয়াব হবে এটাই স্বাভাবিক।সুতারাং এই টা মনোমালিন্যর কোম মানে হয় না।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুন। আমিন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File