কুরআন বুঝবা, মাথা খারাপ!!
লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ১২ মার্চ, ২০১৫, ০৫:৪৬:০৩ সকাল
আমি দাখিল পরীক্ষা দিয়ে ক’দিনের জন্য একটা দাওয়াতী গ্রুপের সাথে সময় দিয়েছিলাম। ঐ গ্রুপে ছিলো মক্কার জনৈক আরব। আমাকে বলা হলো, কা’বা শরীফের একজন ইমাম আছে আমাদের সাথে, তুমি কিছু সময় আমাদের সাথে দিলে, ঈমান এক্বীনের কাজ ও হলো, আরবী ও শিখতে পারলে। দলের সাথে বিভিন্ন যায়গা ঘুরা শুরু করলাম। আরব হুজুরের পরিচয় জানার চেষ্টা করলাম ভাংগা ভাংগা আরবীতে। তিনি মক্কায় থাকেন, তবে মূল ইয়ামেনের। কা’বার তিনি ইমাম নন। তিনি শুদ্ধ আরবী জানেন কম। তবে কথ্য ভাষায় বক্তৃতা করতে জানেন। মজার ব্যাপার হলো তিনি হাদীস কুরআন কম জানতেন এবং সামান্য কিছু কথা বলতেন। যিনি অনুবাদ করতেন তিনি পরিচয় করাতেন কাবার ইমাম হিসাবে এবং তার আলোচনার অনুবাদ কখনো তিনি করতেন না। যা বলতেন তা ঐ গৎ বাঁধা কথা, ছয় উসূলের আলোচনা, জামায়াতে সময় দেয়ার কথা, বুযুর্গদের বিভিন্ন সতোপদেশ। সব যে মিথ্যা ছিলো, তা বার বার বলা সত্যেও অনুবাদক সাহেব মনে করতেন, দ্বীনের জন্য সেটা নাকি জায়েয আছে।
আমাকে ফাজায়েলে আমল পড়তে হত। বয়ানুল কুরআন ও মাআরিফুল কুরআন নিয়ে গিয়েছিলাম মাঝে মাঝে পড়বো বলে। কিন্তু মুরুব্বিরা তা হতে দিলেন না। আমাকে জাহান্নামের ভয় দেখানো হলো। কুরআন বুঝার চেষ্টা যে কেও করতে পারবে না। কারণ কুরআনের তাফসীর করতে গেলে বা বুঝতে গেলে ভুল হলে নিঘঘাৎ জাহান্নামে যেতে হবে। মোটা মোটা দুই খন্ডের তাফসীর কোন দিন খুলে পড়তে দেয়া হয়নি। ফলে উনাদের সাথে চিল্লার ৪০ দিন পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তবে হৃদয়ে ‘রেখায়িত’ বা ‘খোদিত’ হলো কুরআন বুঝার চেষ্টা করা যাবেনা।
সেদিন লন্ডনের একটা বাংলা ইসলামিক টিভিতে জনৈক আলিমে দ্বীন তথা আল্লামা কে এই বিষয়ের উপর আলোচনা করতে শুনলাম। তার নব্বই মিনিটের আলোচনা শুনে বুঝলাম, কুরআনের অর্থ বুঝা আমাদের কারো জন্য সম্ভব না। শুধু মাত্র আল্লামারা ছাড়া এই কিতাব বুঝার সাধ্য কারো নেই। এটা বুঝতে গেলে বালাঘাত জানতে হবে, উসলূব শিখতে হবে, মরফোলোজীর নানান বিষয়ে বুৎপত্তি আনতে হবে। অর্থ, অর্থের অর্থ, অর্থের পেছনের অর্থ, ইলমুল লুঘাহ, কাওয়ায়িদ ইত্যাদি ইত্যাদি জানতে হবে। না হলে কুরআন বুঝা যাবেনা। অর্থ করা যাবেনা। কেও করলেও শুদ্ধ হবেনা।
নব্বই মিনিট ধরে আল্লামার বক্তৃতা শোনার পর আমার স্ত্রীকে জিগালামঃ উনার কথা কি কিছুই বুঝেছো?
তিনি আমতা আমতা করে বললেনঃ আসলে, আসলে ব্যাপার টা হলো কি, মানে ব্যাপারটা হলো, আমি আল্লামার কথা কিছুই বুঝতে পারিনি।
আমি বললামঃ আচ্ছা বলোতো, ‘যালিকাল কিতাবু লা রায়বা ফীহ’ মানে কি? তিনি গড় গড় করে বলতে থাকলেন এর অর্থ, যালিকার তাৎপর্য, ‘রায়বা’র শাব্দিক ও প্রায়োগিক অর্থ ইত্যাদি।
শেষে বল্লাম, আল্লামা সাহেব যে বললেন, কুরআন বুঝা সহজ না, এটা কি মানো? তিনি বললেনঃ তা কি করে হয়? আল্লাহ তো বলেছেনঃ আমি কুরআন কে স্মরণের (যিকির) জন্য সহজ করে দিয়েছি, কে আছো তার থেকে শিক্ষা নেবে?
আমি মনে মনে বললাম কুরআন সহজ হওয়ার ব্যাপারে কে সত্যবাদি? উক্ত দলের মুরব্বি, ইক্বরা বাংলার জনৈক আল্লামা, নাকি আল্লাহ স্বয়ং?
অমান আসদাক্বু মিনাল্লাহি হাদীথা?- তাছাড়া আল্লাহর চাইতে বেশী সত্য কথা আর কার হবে!
বিষয়: বিবিধ
২২৪৩ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকাল্লাহু খায়রান
যাহোক, হাজার হাজার অমুসলিম কেবল কুরআন পড়েই ইসলাম গ্রহণ করছে! তথাকথিত তাবলীগের মুরুব্বীকে তথ্য গুলো জানানো যেতে পারে,---- সেই সকল -- অর্থ, অর্থের অর্থ, অর্থের পেছনের অর্থ, ইলমুল লুঘাহ, কাওয়ায়িদ--জ্ঞান ছাড়া, কেউ যদি কুরআন নাই বুঝবে, এই যে অমুসলিমরা ‘মুসলিম হয়ে যাচ্ছে- তারা কুরআন না বুঝেই কি করে ইসলাম গ্রহণ করল?
তবে একটা ব্যাপার মনে রাখা দরকার – জানাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ ‘মানা’। এই মানার নাম ইসলাম!
কুরআনের অনেক দুশমনও কুরআনের সমস্ত জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করছে, ইসলামকে আক্রমণ করার জন্য! কাজেই কুরআনের জ্ঞান অর্জনে তথা আল্লাহ্র পাঠানো ‘মেসেজ অনুধাবন করতে অন্যদের বাধা দেয়ার চেষ্টা যেমন মারাত্মক অন্যায়, জানার পর, তা না মানাও অনেক বড় অপরাধ!
মাওলানা সা'দ নিজে বলেছেন আমি নিজ কানে শুনেছি।
হতভাগালিখেছেন : ক্বুরআন বুঝে পড়া এবং সে অনুযায়ী আমল করার কথা বলা আছে ।
-একমত।
আপনি তাবলীগে গেছেন আপনাকে তাফসীর পড়দে দেয় নাই, এটা তার বোকামী হতে পারে, আমি ছাত্র জিবনে তাবলীগে গেছি, অবসর সময় আমি আমার ক্লাসের কিতাব অধ্যায়নও করেছি, আমাকে তো বাধা দেয়নি বরং উৎসাহ দিয়েছে, কেন যে আপনারা সমালোচনায় ব্যস্ত থাকেন। অন্যদিকে আপনাদের সমালোচনার সুযোগ নিচ্ছে নাস্তিকরা। সবাই নিজেরদের নিজেদের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ুন। জাযাকাল্লাহ খাইর
জী চাচাজান আমি মামনির সাথে আমি ও কয়েকদিন গিয়েছিলাম এরকম প্রগ্রামে উনারাও বলত কোরআনের তাফসীর পড়া যাবে না । শুধু কয়েকটা হাদীস পড়ে তার ও কোন ব্যাক্ষা করে না তারপর তাদের ফাজায়েলে আমল পড়ে ।
এই উপদেশ অনেকের মুখেই শুনেছি। এর পিছনে আমার মনে হয় আছে সেই পুড়ান ব্রাম্মন্যবাদি মানসিকতা। শাস্ত্রজ্ঞান শুধু ব্রাম্মন এর জন্য। আর সেই বিধান দিয়ে তারা সবাই কে শাসন ও শোষন করবেন। আমাদের দেশে এই অবস্থা অতি প্রাচিন বলেই মনে হয়। তা না হলে শেখ আবদুল হাকিম ১৫ শতকে এই কবিতা লিখতেন না।
"আরবি-ফার্সি শাস্ত্রে নাই কোন রাগ,
যে ভাষায় লিখা আল্লা-নবির ছিফত
যে দেশে যে বাক্যে বুঝে নরগন
সেই বাক্য বোঝে প্রভু আপ নিরঞ্জন"
প্রায় কাছাকাছি আপনার মতই অভিজ্ঞতা নিয়ে আমারো তাবলীগ জামায়াত থেকে ছিটকে পড়া
তাবলীগের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই গোঁড়া নন, অনেকেই আন্দোলনকে মহব্বত করেন, স্বেচ্ছায় খোঁজ-খবর নেন, আর্থিক কুরবানী করেন!
আমি যদি আচরণে আমার মান রক্ষা করি তবে সাধারণ পর্যায়ে তাবলীগের অনুসারীদের সাথে সমস্যা হওয়ার কথা নয়! তবে তাদের সাথে অবশ্যই বিতর্ক এড়িয়ে চলতে হবে- আল্লাহতায়ালার পরামর্শও এমনটাই!
এ,কে,এম,ইউসুফ (রাহঃ) বলতেন-
মুরীদরা তো পীরের মাধ্যমে আল্লাহকে পেতে চায়,
কিন্তু
পীরসাহেব চান মুরীদের মাধ্যমে দুনিয়া পেতে
*
তাবলীগেও একই সমস্যা!!
আবুল হাকাম ছিল মক্কার সবচাইতে জ্ঞানী ব্যাক্তি - তিনি কোরান বুঝলেন না এবং আবু জাহেল হয়ে গেলেন।
তো আমার মনে হয়না কোরান বুঝার জন্য আবুল হাকাম হওয়া কোন পূর্বশর্ত। তবে কোরান শিক্ষা দেবার জন্য, কোরানের প্রচার ও প্রসারের জন্য আবুল হাকাম হলে অবশ্যই এক্সট্রা সুবিধা পাওয়া যাবে। সে জন্যই তো বিদ্যার্জনকে ফরজ বলেছেন নবীজি সঃ।
ধন্যবাদ চমৎকার সুখপাঠ্য প্রয়োজনীয় লিখা উপহার দেবার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন