দুনিয়ায় থেকে জান্নাতে ঘর দেখা
লিখেছেন লিখেছেন সালাম আজাদী ০৪ মার্চ, ২০১৫, ০৯:২৬:১৪ রাত
ইতিহাসে ঘটেছে কয়েক বার। দুনিয়ায় থেকে মানুষ দেখে গেছেন জান্নাতে তার ঘর কি রকম হবে। ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া, নবী মুহাম্মাদ (স), তার স্ত্রী খাদিজা কিংবা হতে পারেন সাহাবী সা'আদ ইবন আররাবী' (রা)।
আসলে ঈমান ও আমল যদি ভালো থাকে মানুষ দুনিয়া থেকেও তার জান্নাতের ঘর দেখতে পারে। আমার মায়ের ফুফাতো বোনের মেয়ে যিনি আমার স্ত্রীর দাদীও, সেই বাস্তবতা দেখিয়ে আল্লাহর কাছে চলে গেলেন।ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্লাহে রাজিঊন। আল্লাহুম্মা আজিরনা ফী মুসীবাতিনা, ও ওয়াখলুফ লানা খায়রান মিনহা।
গত আগস্টে দেশে ছিলাম। কয়েকবার তার সাথে দেখা হয়েছে। আসার সময় হাত বাড়িয়ে মাথায় বুলিয়ে দিয়েছেন। হাউ মাউ করে কেঁদেছেন আমার হাত ধরে। বলেছেন, তোমার সাথে আর দেখা হবে না, মাফ করে দিয়ো। চোখে দেখতেন না ঠিক মত, কানে শুনতে পারতেন না কিন্তু গন্ধ শুঁকে বুঝে নিতেন কে তার পাশে।
সাধারণ মানুষের কথা বুঝতে পারতেন না, অথচ আযানের শব্দ হলেই টের পেতেন। হাত কুরআনে গেলেই বুঝতেন ওটা কুরআন। পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ এলেই তা পড়তে হবে অনেক সময় নিয়ে, যিকির করতে হবে অনেক সময় নিয়ে। কুরআনের বিভিন্ন সূরা পড়তে হবে যথা নিয়মে। এই সব দেখেছি নিজেই।
ছোটবেলায় তার চেহারা দেখেছি মনে পড়েনা, সব সময় মানুষের উপকারে ছিলেন ই তিনি।
আসুখ শুরু হবার পর থেকে প্রায় ই বেহুঁশ থেকেছেন। সাধারণ কথা বলতে পারতেন না। নামাজের সময় হলে নামাজের কথা স্মরণ করায়ে দিলে মাঝে মাঝে বুঝেছেন, তাই পড়েছেন। কখনো কখনো বুঝেন নি তাই কাজা করেছেন। তবে সব সময় কুরআনের সূরা, তাওবা ইস্তেগফার এবং আল্লাহ তুমি মাফ কর কথায় কথায় বলেছেন।
অসুখ বেড়ে যাওয়ার পর থেকে একটা কথায় আমরা তাজ্জব হতাম: তোমরা আমাকে আমার ঘরে নিয়ে যাও। এমন করে এই ভাংগা চোরা ঘরে, এই নদীর তীরে আমাকে রেখেছো কেন?
বোন, আবার দাদী শাশুড়ি, ঠাট্টা করে বল্লাম একদিন: দাদী তোমার ঘরটা দেখতে কেমন। বললেন, সালাম, সুন্দর দুইতলা। শাদা পরিস্কার। তোমরা এমন নোংরা বেপর্দা যায়গায় আমাকে রেখেছো কেন? ভাবনা তাড়িত হতাম।
কাল ৩ ফেব্রুয়ারী থেকে তিনি অনেক ভালো বোধ করছিলেন। রাত বাড়ার সাথে সাথে তার ঘরে নেয়ার আবদার করতে ছিলেন। হঠাৎ বলে উঠলেন তার মারহুম ছোট বোন এসেছেন, সবাইকে বললেন তার খেদমাত করতে, খানা দিতে। তার সাথে তার নিজের ঘরে ফিরে যাবেন বলে জানিয়ে দিলেন। যে ঘরে যাওয়ার জন্য তিনি এতদিন ব্যাকুল, মারহুম বোন সেই ঘর যেন তাকে দেখালেন। কী খুশি, কী অনন্ত তৃপ্তি, এবং এর কিছুক্ষণ পরেই ইন্তেকাল করলেন।
'হে প্রশান্ত আত্মা, ফিরে যাও তোমার প্রভূর কাছে, তুমি ও সন্তষ্ট, তিনিও সন্তষ্ট। আমার বান্দাদের মিছিলে তুমি যুক্ত হয়ে যাও, আমার জান্নাতে তুমি প্রবিষ্ট হও'।
আহ, এমন মরণ কি আমার ভাগ্যে হবে, জান্নাতে কি হবে এই সব মানুষের সাথে মুলাক্বাত!!!!
বিষয়: বিবিধ
১৫১৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় সুহৃদ ভাইয়া। মহান দয়াময় সকল ঈমানদারগণকে তাঁর আপন দয়ায় ক্ষমা করে অনন্ত জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নিন এই প্রত্যাশা এবং প্রার্থনা। মৃত্যু কষ্টের সংবাদ হলেও এরকম মৃত্যু সত্যিই সৌভাগ্যের। খুব ভালো লাগলো জেনে। জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন